বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কহার ২০ শতাংশ। দেশটি গত ২ আগস্ট এই ঘোষণা দেওয়ার পর তিন মাস হতে চলল। অথচ দেশটির সঙ্গে এখনো বাংলাদেশের কোনো চুক্তি হয়নি। চুক্তি হতে আরও এক মাস সময় লাগতে পারে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কের হার ঘোষণার পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, চুক্তির খসড়া তৈরির কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি (ইউএসটিআর)। আর চুক্তি হতে দুই-তিন সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানায়, ইউএসটিআর খসড়া শেষ করে বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে আগেই। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তা দেখে ও মতামত দিয়ে ফেরত পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। এতে শুল্কহার ২০ শতাংশ থেকে আরও কমানোর কথা বলা হয়েছে, তবে একটি অনুচ্ছেদের (প্যারাগ্রাফ) সমাধান হয়নি। তাই চুক্তির দিনও ঠিক হয়নি।
এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের উপকরণ ব্যবহার করে যদি রপ্তানি পণ্য তৈরি করা হয়, তাহলে যেন শুল্ক না থাকে, এটা আমরা চেয়েছি। ইউএসটিআর এ ব্যাপারে নেতিবাচক নয়। আশা করছি, চলতি মাসের শেষে না হলেও আগামী মাসে চুক্তি হয়ে যাবে।’
এর আগে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন জানিয়েছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সম্মতি সাপেক্ষে এ চুক্তি প্রকাশ করা হবে।
চুক্তি না হলেও ট্রাম্প প্রশাসনের পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, ৭ আগস্ট থেকে ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কার্যকর হয়েছে। পুরো বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে একটি যৌথ বিবৃতি আসার কথা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি বোয়িং থেকে ২৫টি উড়োজাহাজ কেনার কথা বাংলাদেশের, তবে ২০৩৭ সালে প্রথম উড়োজাহাজ সরবরাহ করতে পারবে কোম্পানিটি। বাংলাদেশ বছরে ১ হাজার ৫০০ কোটি থেকে ২ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের খাদ্যপণ্য আমদানি করে। যুক্তরাষ্ট্রও যেহেতু কৃষিপণ্যের বৃহৎ উৎপাদক, তাই তারা বাংলাদেশের বাজার ধরতে চায়।
বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যঘাটতি ৬০০ কোটি ডলারের মতো। জ্বালানি ও কৃষিপণ্য আমদানির মাধ্যমেই বাণিজ্যঘাটতি কমানো হবে। এখন তুলা, সয়াবিন, ভুট্টা, গমজাতীয় পণ্য আমদানি বাড়িয়ে ২০০ কোটি ডলার ঘাটতি কমানোর চেষ্টা চলছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, চীন থেকে বাংলাদেশ কম পণ্য আমদানি করুক, এটা যুক্তরাষ্ট্র চায়। যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য অবাধে যাতে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে ও দেশটির বিভিন্ন মানসনদ যেন বিনা প্রশ্নে মেনে নেওয়া হয়, সে দাবিও রয়েছে তাদের।
এ ছাড়া দেশটি থেকে জ্বালানি তেল ও ভোজ্যতেল আমদানি বৃদ্ধি, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানিতে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি সম্পাদন এবং গম আমদানি বাড়ানোর চাওয়া রয়েছে।
বাংলাদেশ নিট পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম এ নিয়ে বলেন, ‘যা হওয়ার, তা হয়েই গেছে। চুক্তি যখনই হোক, বাড়তি শুল্ক দিয়ে পণ্য রপ্তানি করতে হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে। চুক্তি স্বাক্ষরের আগে শুল্কহার আরও কমিয়ে আনা যায় কি না, সেই চেষ্টা চলছে বলে জানি।’
সূত্রগুলো জানায়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ইউএসটিআরের আনুষ্ঠানিক চুক্তি না হলেও যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাড়তি দামে গম, তুলা ইত্যাদি পণ্য আমদানি করছে বাংলাদেশ। তুলা আমদানি করছেন ব্যবসায়ীরা। আর গম আমদানি হচ্ছে সরকার থেকে সরকার (জিটুজি) পর্যায়ে। উভয় দেশের মধ্যে সমঝোতা অনুযায়ী ৪ লাখ ৪০ হাজার টন গম আমদানি হবে প্রথম দফায়, যার মধ্যে ৫৬ হাজার ৯৫৯ টন গম এসেছে গত ২৫ অক্টোবর। খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্প্রতি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইতিমধ্যে আরও ৬০ হাজার ৮০২ টন গম এসেছে।
বাংলাদেশ এত দিন রাশিয়া থেকেই বেশি গম আমদানি করে আসছিল। কারণ, রাশিয়ার গমের দাম যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় অনেক কম। তবে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দাবি, রাশিয়ার গমে গড়ে ১১ শতাংশ আমিষ থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের গমে তা ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ। এদিকে খোদ খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যেই আলোচনা রয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার গমে আমিষের হার নিয়ে যে তুলনা, সেটি মুখে মুখেই রচিত। এটি পরীক্ষায় প্রমাণিত তথ্য নয়।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫
বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কহার ২০ শতাংশ। দেশটি গত ২ আগস্ট এই ঘোষণা দেওয়ার পর তিন মাস হতে চলল। অথচ দেশটির সঙ্গে এখনো বাংলাদেশের কোনো চুক্তি হয়নি। চুক্তি হতে আরও এক মাস সময় লাগতে পারে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কের হার ঘোষণার পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, চুক্তির খসড়া তৈরির কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি (ইউএসটিআর)। আর চুক্তি হতে দুই-তিন সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানায়, ইউএসটিআর খসড়া শেষ করে বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে আগেই। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তা দেখে ও মতামত দিয়ে ফেরত পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। এতে শুল্কহার ২০ শতাংশ থেকে আরও কমানোর কথা বলা হয়েছে, তবে একটি অনুচ্ছেদের (প্যারাগ্রাফ) সমাধান হয়নি। তাই চুক্তির দিনও ঠিক হয়নি।
এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের উপকরণ ব্যবহার করে যদি রপ্তানি পণ্য তৈরি করা হয়, তাহলে যেন শুল্ক না থাকে, এটা আমরা চেয়েছি। ইউএসটিআর এ ব্যাপারে নেতিবাচক নয়। আশা করছি, চলতি মাসের শেষে না হলেও আগামী মাসে চুক্তি হয়ে যাবে।’
এর আগে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন জানিয়েছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সম্মতি সাপেক্ষে এ চুক্তি প্রকাশ করা হবে।
চুক্তি না হলেও ট্রাম্প প্রশাসনের পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, ৭ আগস্ট থেকে ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কার্যকর হয়েছে। পুরো বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে একটি যৌথ বিবৃতি আসার কথা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি বোয়িং থেকে ২৫টি উড়োজাহাজ কেনার কথা বাংলাদেশের, তবে ২০৩৭ সালে প্রথম উড়োজাহাজ সরবরাহ করতে পারবে কোম্পানিটি। বাংলাদেশ বছরে ১ হাজার ৫০০ কোটি থেকে ২ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের খাদ্যপণ্য আমদানি করে। যুক্তরাষ্ট্রও যেহেতু কৃষিপণ্যের বৃহৎ উৎপাদক, তাই তারা বাংলাদেশের বাজার ধরতে চায়।
বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যঘাটতি ৬০০ কোটি ডলারের মতো। জ্বালানি ও কৃষিপণ্য আমদানির মাধ্যমেই বাণিজ্যঘাটতি কমানো হবে। এখন তুলা, সয়াবিন, ভুট্টা, গমজাতীয় পণ্য আমদানি বাড়িয়ে ২০০ কোটি ডলার ঘাটতি কমানোর চেষ্টা চলছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, চীন থেকে বাংলাদেশ কম পণ্য আমদানি করুক, এটা যুক্তরাষ্ট্র চায়। যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য অবাধে যাতে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে ও দেশটির বিভিন্ন মানসনদ যেন বিনা প্রশ্নে মেনে নেওয়া হয়, সে দাবিও রয়েছে তাদের।
এ ছাড়া দেশটি থেকে জ্বালানি তেল ও ভোজ্যতেল আমদানি বৃদ্ধি, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানিতে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি সম্পাদন এবং গম আমদানি বাড়ানোর চাওয়া রয়েছে।
বাংলাদেশ নিট পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম এ নিয়ে বলেন, ‘যা হওয়ার, তা হয়েই গেছে। চুক্তি যখনই হোক, বাড়তি শুল্ক দিয়ে পণ্য রপ্তানি করতে হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে। চুক্তি স্বাক্ষরের আগে শুল্কহার আরও কমিয়ে আনা যায় কি না, সেই চেষ্টা চলছে বলে জানি।’
সূত্রগুলো জানায়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ইউএসটিআরের আনুষ্ঠানিক চুক্তি না হলেও যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাড়তি দামে গম, তুলা ইত্যাদি পণ্য আমদানি করছে বাংলাদেশ। তুলা আমদানি করছেন ব্যবসায়ীরা। আর গম আমদানি হচ্ছে সরকার থেকে সরকার (জিটুজি) পর্যায়ে। উভয় দেশের মধ্যে সমঝোতা অনুযায়ী ৪ লাখ ৪০ হাজার টন গম আমদানি হবে প্রথম দফায়, যার মধ্যে ৫৬ হাজার ৯৫৯ টন গম এসেছে গত ২৫ অক্টোবর। খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্প্রতি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইতিমধ্যে আরও ৬০ হাজার ৮০২ টন গম এসেছে।
বাংলাদেশ এত দিন রাশিয়া থেকেই বেশি গম আমদানি করে আসছিল। কারণ, রাশিয়ার গমের দাম যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় অনেক কম। তবে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দাবি, রাশিয়ার গমে গড়ে ১১ শতাংশ আমিষ থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের গমে তা ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ। এদিকে খোদ খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যেই আলোচনা রয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার গমে আমিষের হার নিয়ে যে তুলনা, সেটি মুখে মুখেই রচিত। এটি পরীক্ষায় প্রমাণিত তথ্য নয়।