অন্তর্বর্তী সরকার তার মেয়াদ শেষের আগে কেন চট্টগ্রাম ও ঢাকার দুই বন্দর পরিচালনার ভার বিদেশি কোম্পানিকে দিলো, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেছেন, ‘নিজেদের ঘোষণা অনুযায়ী, অন্তর্বর্তী সরকার আগামী দুই-তিন মাসের বেশি ক্ষমতায় নেই। এ রকম একটা সরকার কী কারণে ৪০-৫০ বছরের এমন একটা চুক্তি করবে, যেটা পুরো অর্থনীতি ও দেশকে প্রভাবিত করবে এবং যার মধ্যে অনেক ধরনের উদ্বেগের বিষয় আছে। সেই চুক্তি সই কেন গোপনীয়তা ও অস্বচ্ছতার সঙ্গে ছুটির দিনে তাড়াহুড়া করে করা হবে? তারা এ ধরনের একটা চুক্তি করার এখতিয়ার কীভাবে পায়?’
শনিবার,(২২ নভেম্বর ২০২৫) বিজয়নগরে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) মিলনায়তনে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির এক সভায় একথা বলেন আনু মুহাম্মদ। চট্টগ্রামের লালদিয়া চরে কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনা এবং ঢাকার কেরানীগঞ্জের পানগাঁও বন্দর পরিচালনায় বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তির ‘বিচার-বিশ্লেষণ এবং প্রতিবাদে’ এ সভার আয়োজন করা হয়।
অন্তর্বর্তী সরকার গত সপ্তাহে এই দুটি চুক্তি সই করে। লালদিয়া চরে টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ডেনমার্কের এপিএম টার্মিনালসকে। পানগাঁও নৌ টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে সুইজারল্যান্ডের মেডলগ এসএ। এই চুক্তির সবটুকু অন্তর্বর্তী সরকার প্রকাশ করেনি।
আনু মুহাম্মদ বলেন, আওয়ামী লীগ আমলে যে কোম্পানিকে টেন্ডার ছাড়া বন্দর দেয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল, এই সরকার তড়িঘড়ি করে সেই কোম্পানির কাছে কেন দিতে চায়? এর পেছনে কী ব্যাখ্যা, কী যুক্তি?
তিনি বলেন, ‘সরকার একেবারে নির্লজ্জের মতো হাসিমুখ নিয়ে গত সরকারের আমলে যা যা অপরাধ, যা অন্যায়, যা যা জনস্বার্থবিরোধী তৎপরতা, সেগুলো ঠিক একইভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। শেখ হাসিনার অসমাপ্ত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য একটা ভয়াবহ বিপদের মধ্যে বাংলাদেশকে ঠেলে দিচ্ছে এই সরকার।’
আওয়ামী লীগ যা করতে চাইছিল, তাদের ক্ষমতাচ্যুতির পর অন্তর্বর্তী সরকারও কেন সেই পথে এগোচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আমলে যে কোম্পানিকে টেন্ডার ছাড়া বন্দর দেয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল, এই সরকার তড়িঘড়ি করে সেই কোম্পানির কাছে কেন দিতে চায়? এর পেছনে কী ব্যাখ্যা, কী যুক্তি? আওয়ামী লীগের অসমাপ্ত কাজটা সমাপ্ত করার জন্য এই সরকার কেন মরিয়া?’
অন্তর্বর্তী সরকার এই চুক্তি করার জন্য যতটা আগ্রহ নিয়ে এগিয়েছে, দেশের অন্য সব সমস্যায় যেমন মাজার ভাঙা, নারী নির্যাতন কিংবা মব সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ততটা তৎপরতা দেখায়নি বলে আনু মুহাম্মদের পর্যবেক্ষণ।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। সভার শুরুতে গতকাল শুক্রবারের ভূমিকম্পে হতাহতদের জন্য শোক ও সমবেদনা জানানো হয়।
আগামী বুধবার সড়ক অবরোধ, জেলায় জেলায় বিক্ষোভ
চট্টগ্রাম বন্দর ইস্যুতে শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ) আগামী বুধবার বন্দরমুখী সড়ক অবরোধ ও বিভাগের সব জেলায় বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি), লালদিয়ার চর ও পানগাঁও টার্মিনাল বিদেশি অপারেটরদের ইজারা দেয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এই কর্মসূচি দেয়া হয়। শনিবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত স্কপের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সম্মেলন থেকে এ ঘোষণা দেন জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী শেখ নুরুল্লাহ বাহার। প্রেসক্লাবের জুলাই বিপ্লব হলে এ সম্মেলন আয়োজন করে শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ) চট্টগ্রাম শাখা। এতে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে কাজী শেখ নুরুল্লাহ বাহার অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘দুটি টার্মিনাল দিয়ে দিলেন। কেউ জানে না। নিউমুরিং টার্মিনাল নিয়ে মামলা হয়েছে। আদালত বলেছেন, শুনানি না হওয়া পর্যন্ত নিউমুরিং টার্মিনাল নিয়ে চুক্তির কার্যক্রম বন্ধ রাখতে। কিন্তু এ আদেশ মানা হচ্ছে না। বন্দর নিয়ে স্কপ, বন্দর রক্ষা কমিটি, বাম দল- সবাই আন্দোলন করছে।’
সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন শ্রম সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘শ্রমিকেরা তাদের ন্যায্য অধিকারের দাবিতে কর্মসূচি দিয়ে আসছেন। কিন্তু তাদের দাবি মানা হচ্ছে না। বন্দর বিদেশিদের দেয়ার সিদ্ধান্তে প্রতিবাদ করেছেন শ্রমিকেরা। এই প্রতিবাদ সবাইকে একসঙ্গে করতে হবে। অধিকার আদায়ে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’
সভায় অন্যদের মধ্যে ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের (টিইউসি) চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি ও শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্য তপন দত্ত, স্কপের যুগ্ম সমন্বয়কারী আবদুল কাদের হাওলাদার, কেন্দ্রীয় নেতা মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ, আনোয়ার হোসেন, সাইফুজ্জামান বাদশা, আহসান হাবিব, এ এ এম ফয়েজ হোসেন, মঞ্জুরুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫
অন্তর্বর্তী সরকার তার মেয়াদ শেষের আগে কেন চট্টগ্রাম ও ঢাকার দুই বন্দর পরিচালনার ভার বিদেশি কোম্পানিকে দিলো, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেছেন, ‘নিজেদের ঘোষণা অনুযায়ী, অন্তর্বর্তী সরকার আগামী দুই-তিন মাসের বেশি ক্ষমতায় নেই। এ রকম একটা সরকার কী কারণে ৪০-৫০ বছরের এমন একটা চুক্তি করবে, যেটা পুরো অর্থনীতি ও দেশকে প্রভাবিত করবে এবং যার মধ্যে অনেক ধরনের উদ্বেগের বিষয় আছে। সেই চুক্তি সই কেন গোপনীয়তা ও অস্বচ্ছতার সঙ্গে ছুটির দিনে তাড়াহুড়া করে করা হবে? তারা এ ধরনের একটা চুক্তি করার এখতিয়ার কীভাবে পায়?’
শনিবার,(২২ নভেম্বর ২০২৫) বিজয়নগরে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) মিলনায়তনে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির এক সভায় একথা বলেন আনু মুহাম্মদ। চট্টগ্রামের লালদিয়া চরে কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনা এবং ঢাকার কেরানীগঞ্জের পানগাঁও বন্দর পরিচালনায় বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তির ‘বিচার-বিশ্লেষণ এবং প্রতিবাদে’ এ সভার আয়োজন করা হয়।
অন্তর্বর্তী সরকার গত সপ্তাহে এই দুটি চুক্তি সই করে। লালদিয়া চরে টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ডেনমার্কের এপিএম টার্মিনালসকে। পানগাঁও নৌ টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে সুইজারল্যান্ডের মেডলগ এসএ। এই চুক্তির সবটুকু অন্তর্বর্তী সরকার প্রকাশ করেনি।
আনু মুহাম্মদ বলেন, আওয়ামী লীগ আমলে যে কোম্পানিকে টেন্ডার ছাড়া বন্দর দেয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল, এই সরকার তড়িঘড়ি করে সেই কোম্পানির কাছে কেন দিতে চায়? এর পেছনে কী ব্যাখ্যা, কী যুক্তি?
তিনি বলেন, ‘সরকার একেবারে নির্লজ্জের মতো হাসিমুখ নিয়ে গত সরকারের আমলে যা যা অপরাধ, যা অন্যায়, যা যা জনস্বার্থবিরোধী তৎপরতা, সেগুলো ঠিক একইভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। শেখ হাসিনার অসমাপ্ত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য একটা ভয়াবহ বিপদের মধ্যে বাংলাদেশকে ঠেলে দিচ্ছে এই সরকার।’
আওয়ামী লীগ যা করতে চাইছিল, তাদের ক্ষমতাচ্যুতির পর অন্তর্বর্তী সরকারও কেন সেই পথে এগোচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আমলে যে কোম্পানিকে টেন্ডার ছাড়া বন্দর দেয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল, এই সরকার তড়িঘড়ি করে সেই কোম্পানির কাছে কেন দিতে চায়? এর পেছনে কী ব্যাখ্যা, কী যুক্তি? আওয়ামী লীগের অসমাপ্ত কাজটা সমাপ্ত করার জন্য এই সরকার কেন মরিয়া?’
অন্তর্বর্তী সরকার এই চুক্তি করার জন্য যতটা আগ্রহ নিয়ে এগিয়েছে, দেশের অন্য সব সমস্যায় যেমন মাজার ভাঙা, নারী নির্যাতন কিংবা মব সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ততটা তৎপরতা দেখায়নি বলে আনু মুহাম্মদের পর্যবেক্ষণ।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। সভার শুরুতে গতকাল শুক্রবারের ভূমিকম্পে হতাহতদের জন্য শোক ও সমবেদনা জানানো হয়।
আগামী বুধবার সড়ক অবরোধ, জেলায় জেলায় বিক্ষোভ
চট্টগ্রাম বন্দর ইস্যুতে শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ) আগামী বুধবার বন্দরমুখী সড়ক অবরোধ ও বিভাগের সব জেলায় বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি), লালদিয়ার চর ও পানগাঁও টার্মিনাল বিদেশি অপারেটরদের ইজারা দেয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এই কর্মসূচি দেয়া হয়। শনিবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত স্কপের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সম্মেলন থেকে এ ঘোষণা দেন জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী শেখ নুরুল্লাহ বাহার। প্রেসক্লাবের জুলাই বিপ্লব হলে এ সম্মেলন আয়োজন করে শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ) চট্টগ্রাম শাখা। এতে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে কাজী শেখ নুরুল্লাহ বাহার অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘দুটি টার্মিনাল দিয়ে দিলেন। কেউ জানে না। নিউমুরিং টার্মিনাল নিয়ে মামলা হয়েছে। আদালত বলেছেন, শুনানি না হওয়া পর্যন্ত নিউমুরিং টার্মিনাল নিয়ে চুক্তির কার্যক্রম বন্ধ রাখতে। কিন্তু এ আদেশ মানা হচ্ছে না। বন্দর নিয়ে স্কপ, বন্দর রক্ষা কমিটি, বাম দল- সবাই আন্দোলন করছে।’
সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন শ্রম সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘শ্রমিকেরা তাদের ন্যায্য অধিকারের দাবিতে কর্মসূচি দিয়ে আসছেন। কিন্তু তাদের দাবি মানা হচ্ছে না। বন্দর বিদেশিদের দেয়ার সিদ্ধান্তে প্রতিবাদ করেছেন শ্রমিকেরা। এই প্রতিবাদ সবাইকে একসঙ্গে করতে হবে। অধিকার আদায়ে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’
সভায় অন্যদের মধ্যে ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের (টিইউসি) চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি ও শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্য তপন দত্ত, স্কপের যুগ্ম সমন্বয়কারী আবদুল কাদের হাওলাদার, কেন্দ্রীয় নেতা মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ, আনোয়ার হোসেন, সাইফুজ্জামান বাদশা, আহসান হাবিব, এ এ এম ফয়েজ হোসেন, মঞ্জুরুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।