ব্যাংক খাতের লুকানো সংকটগুলো একের পর এক সামনে এসেছে মন্তব্য করে সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘ব্যাংক খাতের গোপন খেলাপি ঋণ, প্রভিশন ঘাটতি, পুঁজি ঘাটতি-সব সংকট একে একে সামনে আসছে। শরীরে (ব্যাংকের) যে এত রোগ তা আগে জানা-ই যায়নি।’
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ঢেকে রাখা খেলাপি ঋণের পাহাড়, প্রভিশনের গর্ত আর তারল্য সংকট- সব অসুখ এখন একে একে প্রকাশ্যে।’ এই বাস্তবতা তুলে ধরে দেশের নীতিনির্ধারণে স্বচ্ছতা ও সংস্কারহীনতার সমালোচনা করে দেবপ্রিয় বলেন, ‘একসঙ্গে ধরা পড়া এসব দুর্বলতা বাংলাদেশের সামগ্রিক আর্থিক স্থিতিশীলতা ঝুঁকির মুখে ফেলেছে।’
গত বছর গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে থেকেই দেশের আর্থিক খাতে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়টি আলোচনায় আসে। দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা তুলে ধরে শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে এ কমিটি গঠন করে সরকার, যার নেতৃত্বে ছিলেন অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয়। তিন মাসের মাথায় গেল ২ ডিসেম্বর শ্বেতপত্র কমিটি দেশের অর্থনীতির হালচাল তুলে ধরে প্রতিবেদন দেয়, সেখানে আওয়ামী লীগ সরকারের টানা দেড় দশকের শাসনামলে উন্নয়ন বাজেটের ৪০ শতাংশ অর্থ ‘তছরুপ’ বা ‘লুটপাট’ হয়েছে বলে পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়।
এ অর্থ থেকে প্রতিবছর গড়ে ১৬ বিলিয়ন ডলার বা এক লাখ ৯২ হাজার কোটি টাকা বিদেশে ‘পাচার’ হয়েছে বলেও কমিটির পক্ষ থেকে ধারণা দেওয়া হয়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিভিন্ন ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার।
দুর্দশাগ্রস্ত শরিয়াহভিত্তিক পাঁচ ব্যাংকের দায়িত্বে নিতে ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’ নামে একটি নতুন ব্যাংক গঠন করা হচ্ছে। শরিয়াহভিত্তিক পাঁচ ব্যাংক একীভূত করতে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার বাইরে সুশাসন ফেরাতে আরো কিছু করা হচ্ছে কি না, সেই প্রশ্ন তোলেন দেবপ্রিয়।
সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করেছিলাম সরকার সংস্কার ইস্যুতে রিলে রেসের মতো করে দৌড়াবে। আমরা দেখছি তারা দৌড়াতে দৌড়াতে লাঠিটা ফেলে দিয়েছেন। এখন লাঠি ছাড়াই দৌড়াচ্ছেন।’
বিনিয়োগ স্থবির, নীতিগত স্বচ্ছতা কম এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার না থাকায় অর্থনীতি চাপে রয়েছে বলে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে দেবপ্রিয় বলেন, ‘রাজনৈতিক ‘অস্থিরতা’ অর্থনীতির পথ রুদ্ধ করছে। একই সঙ্গে সংস্কার ছাড়া বিদেশি বিনিয়োগ আনা স্বপ্নের মতো।’
এলডিসি থেকে উত্তরণের পর বন্দর ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন জরুরি মন্তব্য করে তিনি বিদেশি বিনিয়োগ ঘোষণায় ‘তাড়াহুড়োর’ সমালোচনা করেন।
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন, শ্বেতপত্র অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া ইত্যাদিতে কোনো অগ্রগতি নেই। কিন্তু মাত্র ১৩ দিনে বিশাল বিদেশি বিনিয়োগ অনুমোদন ও চুক্তি করতে পেরেছে। এটা ইঙ্গিত করে, সরকারের সামর্থ্যের ঘাটতি নেই। চাইলে সংস্কারগুলোও একইভাবে এগিয়ে নিতে পারত।’
পুরানা পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম-ইআরএফ মিলনায়তনে ‘অর্থনৈতিক সাংবাদিকতা’ শীর্ষক গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ইংরেজি দৈনিক ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস সম্পাদক ও ইকনোমিক রিপোর্টার্স ফোরামের সাবেক সভাপতি শামসুল হক জাহিদ, ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাইফুল হক।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সাবেক সচিব ও শিশুসাহিত্যিক ফারুক হোসেন। ‘অর্থনৈতিক সাংবাদিকতা’ গ্রন্থটি সম্পাদনা করেছেন অনলাইন নিউজ পোর্টাল অর্থসূচক সম্পাদক জিয়াউর রহমান।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৫
ব্যাংক খাতের লুকানো সংকটগুলো একের পর এক সামনে এসেছে মন্তব্য করে সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘ব্যাংক খাতের গোপন খেলাপি ঋণ, প্রভিশন ঘাটতি, পুঁজি ঘাটতি-সব সংকট একে একে সামনে আসছে। শরীরে (ব্যাংকের) যে এত রোগ তা আগে জানা-ই যায়নি।’
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ঢেকে রাখা খেলাপি ঋণের পাহাড়, প্রভিশনের গর্ত আর তারল্য সংকট- সব অসুখ এখন একে একে প্রকাশ্যে।’ এই বাস্তবতা তুলে ধরে দেশের নীতিনির্ধারণে স্বচ্ছতা ও সংস্কারহীনতার সমালোচনা করে দেবপ্রিয় বলেন, ‘একসঙ্গে ধরা পড়া এসব দুর্বলতা বাংলাদেশের সামগ্রিক আর্থিক স্থিতিশীলতা ঝুঁকির মুখে ফেলেছে।’
গত বছর গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে থেকেই দেশের আর্থিক খাতে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়টি আলোচনায় আসে। দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা তুলে ধরে শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে এ কমিটি গঠন করে সরকার, যার নেতৃত্বে ছিলেন অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয়। তিন মাসের মাথায় গেল ২ ডিসেম্বর শ্বেতপত্র কমিটি দেশের অর্থনীতির হালচাল তুলে ধরে প্রতিবেদন দেয়, সেখানে আওয়ামী লীগ সরকারের টানা দেড় দশকের শাসনামলে উন্নয়ন বাজেটের ৪০ শতাংশ অর্থ ‘তছরুপ’ বা ‘লুটপাট’ হয়েছে বলে পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়।
এ অর্থ থেকে প্রতিবছর গড়ে ১৬ বিলিয়ন ডলার বা এক লাখ ৯২ হাজার কোটি টাকা বিদেশে ‘পাচার’ হয়েছে বলেও কমিটির পক্ষ থেকে ধারণা দেওয়া হয়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিভিন্ন ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার।
দুর্দশাগ্রস্ত শরিয়াহভিত্তিক পাঁচ ব্যাংকের দায়িত্বে নিতে ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’ নামে একটি নতুন ব্যাংক গঠন করা হচ্ছে। শরিয়াহভিত্তিক পাঁচ ব্যাংক একীভূত করতে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার বাইরে সুশাসন ফেরাতে আরো কিছু করা হচ্ছে কি না, সেই প্রশ্ন তোলেন দেবপ্রিয়।
সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করেছিলাম সরকার সংস্কার ইস্যুতে রিলে রেসের মতো করে দৌড়াবে। আমরা দেখছি তারা দৌড়াতে দৌড়াতে লাঠিটা ফেলে দিয়েছেন। এখন লাঠি ছাড়াই দৌড়াচ্ছেন।’
বিনিয়োগ স্থবির, নীতিগত স্বচ্ছতা কম এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার না থাকায় অর্থনীতি চাপে রয়েছে বলে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে দেবপ্রিয় বলেন, ‘রাজনৈতিক ‘অস্থিরতা’ অর্থনীতির পথ রুদ্ধ করছে। একই সঙ্গে সংস্কার ছাড়া বিদেশি বিনিয়োগ আনা স্বপ্নের মতো।’
এলডিসি থেকে উত্তরণের পর বন্দর ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন জরুরি মন্তব্য করে তিনি বিদেশি বিনিয়োগ ঘোষণায় ‘তাড়াহুড়োর’ সমালোচনা করেন।
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন, শ্বেতপত্র অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া ইত্যাদিতে কোনো অগ্রগতি নেই। কিন্তু মাত্র ১৩ দিনে বিশাল বিদেশি বিনিয়োগ অনুমোদন ও চুক্তি করতে পেরেছে। এটা ইঙ্গিত করে, সরকারের সামর্থ্যের ঘাটতি নেই। চাইলে সংস্কারগুলোও একইভাবে এগিয়ে নিতে পারত।’
পুরানা পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম-ইআরএফ মিলনায়তনে ‘অর্থনৈতিক সাংবাদিকতা’ শীর্ষক গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ইংরেজি দৈনিক ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস সম্পাদক ও ইকনোমিক রিপোর্টার্স ফোরামের সাবেক সভাপতি শামসুল হক জাহিদ, ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাইফুল হক।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সাবেক সচিব ও শিশুসাহিত্যিক ফারুক হোসেন। ‘অর্থনৈতিক সাংবাদিকতা’ গ্রন্থটি সম্পাদনা করেছেন অনলাইন নিউজ পোর্টাল অর্থসূচক সম্পাদক জিয়াউর রহমান।