কৃষি খাতে কর্মসংস্থান আবার বাড়তে শুরু করেছে। ২০১৬ সালে দেশে কৃষি খাতে কর্মসংস্থান ছিল ২ কোটি ৪৭ লাখ মানুষের। ৬ বছরের ব্যবধানে ২০২২ সালে এই খাতে কর্মসংস্থান বেড়ে দাঁড়ায় ৩ কোটি ১৯ লাখ ৮০ হাজারে। কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশে মোট কর্মসংস্থানে কৃষি খাতের অবদানও বেড়েছে। ২০১৬ সালে মোট কর্মসংস্থানে কৃষি খাতের অবদান ছিল ৪০ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০২২ সালে তা বেড়ে ৪৫ দশমিক ৪ শতাংশে উন্নীত হয়। কৃষি খাতে কর্মসংস্থান বাড়লেও কমেছে শিল্প খাতে। ২০১৬ সালে শিল্প খাতে কর্মসংস্থান ছিল ১ কোটি ২৪ লাখ মানুষের। ২০২২ সালে তা কমে ১ কোটি ১৯ লাখে নেমে এসেছে।
সরকারি গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক সেমিনারে এই তথ্য তুলে ধরা হয়। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিআইডিএসের সম্মেলনকক্ষে গতকাল মঙ্গলবার সকালে এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের কৃষিখাদ্য ব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিত শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রবন্ধটি তৈরি করেন বিআইডিএসের ফেলো এম এ সাত্তার মণ্ডল, গবেষণা পরিচালক মোহাম্মদ ইউনুস, জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো আজরীন করিম, গবেষক তাজনুরে সামিনা খানম ও রিজোয়ানা ইসলাম। তবে সেমিনারে প্রবন্ধটি উপস্থাপন করেন সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক মোহাম্মদ ইউনুস। মূল প্রবন্ধে বলা হয়, কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধির পেছনের মূল শক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রাণিসম্পদ ও মৎস্য খাত। ২০১৪ সালের পর থেকে কৃষি প্রবৃদ্ধির হার কমতে থাকলেও কর্মসংস্থান বাড়ছিল। আর কৃষির সঙ্গে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, পরিবহন, খাদ্য সেবা নিয়ে জিডিপিতে এ খাতের অবদান দাঁড়িয়েছে ২৩ দশমিক ৮ শতাংশে।
প্রবন্ধে কৃষিজমির ব্যবহার নিয়ে বলা হয়, দেশের কৃষিজমির প্রায় ৮০ শতাংশ জমিতেই ধান চাষ হয়। তবে গত ১০ বছরে পাট, দানাজাতীয় শস্য এবং ফল চাষের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। একই সময়ে মসলাজাতীয় ফসল এবং সবজির উৎপাদন বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। ফসলের উৎপাদনশীলতা নিয়ে প্রবন্ধে বলা হয়, দেশে বোরো ধানের উৎপাদনশীলতার বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধি শূন্য দশমিক ৭৭ শতাংশ। অথচ দেশে মোট ধানের ৬০ শতাংশই আসে বোরো মৌসুমে। তাই খাদ্যনিরাপত্তা বাড়াতে বোরো ধানের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে।
এ বিষয়ে মোহাম্মদ ইউনুস বলেন, ‘বিশ্বে মোট চাল ও গম উৎপাদনের মাত্র ১০ শতাংশ আন্তর্জাতিক বাজারে বাণিজ্যের জন্য নিয়ে আসা হয়। তাই কোনো কারণে উৎপাদন কমলে বিশ্ববাজারের ওপর নির্ভর করা যায় না। যেমনটা ২০০৭-০৮ সালে দেখা গিয়েছিল। তখন টাকা দিয়েও বিশ্ববাজার থেকে চাল ক্রয় করা যাচ্ছিল না।’
প্রবন্ধে আরও বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনে বড় প্রভাব পড়ছে কৃষিতে। তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় কৃষিশ্রমিকের আয় কমেছে ২০ শতাংশ পর্যন্ত। তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে চালের উৎপাদনশীলতা কমতে পারে আড়াই শতাংশ। আর গমের উৎপাদনশীলতা কমতে পারে সাড়ে ৩ শতাংশ। ডাল-জাতীয় ফসলের উৎপাদনশীলতা কমতে পারে ৪ শতাংশের বেশি।
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা বিভাগের সচিব শাকিল আকতার। বিআইডিএসের মহাপরিচালক অধ্যাপক এ কে এনামুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন এম এ সাত্তার মণ্ডল। সেমিনারে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষকেরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শাকিল আকতার বলেন, ‘খামারবাড়িতে ১৫০টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হলেও কৃষকের উন্নতি জন্য প্রকল্প কয়টি? প্রকল্প পরিচালক ও অন্যদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য এসব প্রকল্প নেওয়া হয়। রাজস্ব বরাদ্দ থেকে বেতন আর প্রকল্প থেকে গাড়ি কেনা হয়। কিন্তু গবেষণায় কোনো গুরুত্ব দেওয়া হয় না।’
কৃষি অর্থনীতিবিদ এম এ সাত্তার মণ্ডল বলেন, ‘নতুন কৃষক শ্রেণি যুক্ত হচ্ছে। তারা জমি লিজ নিয়ে কৃষিকাজ করছে। তবে ধান থেকে ভিন্ন ফসলের চাষ বাড়লে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। কারণ, স্বাধীনতার পর আমাদের দৈনিক গড় ভাত গ্রহণের পরিমাণ ছিল ৪৫০ গ্রাম, এখন তা ৩১৫ গ্রামে নেমে এসেছে।’
সেমিনারে মুক্ত আলোচনায় বলা হয়, দেশের ৫০ শতাংশ কৃষিজমিই এক একরের চেয়ে বড় নয়। অর্থাৎ নিজের খাওয়ার জন্য খোরপোশ কৃষি চাষাবাদ চলে দেশে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
বুধবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫
কৃষি খাতে কর্মসংস্থান আবার বাড়তে শুরু করেছে। ২০১৬ সালে দেশে কৃষি খাতে কর্মসংস্থান ছিল ২ কোটি ৪৭ লাখ মানুষের। ৬ বছরের ব্যবধানে ২০২২ সালে এই খাতে কর্মসংস্থান বেড়ে দাঁড়ায় ৩ কোটি ১৯ লাখ ৮০ হাজারে। কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশে মোট কর্মসংস্থানে কৃষি খাতের অবদানও বেড়েছে। ২০১৬ সালে মোট কর্মসংস্থানে কৃষি খাতের অবদান ছিল ৪০ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০২২ সালে তা বেড়ে ৪৫ দশমিক ৪ শতাংশে উন্নীত হয়। কৃষি খাতে কর্মসংস্থান বাড়লেও কমেছে শিল্প খাতে। ২০১৬ সালে শিল্প খাতে কর্মসংস্থান ছিল ১ কোটি ২৪ লাখ মানুষের। ২০২২ সালে তা কমে ১ কোটি ১৯ লাখে নেমে এসেছে।
সরকারি গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক সেমিনারে এই তথ্য তুলে ধরা হয়। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিআইডিএসের সম্মেলনকক্ষে গতকাল মঙ্গলবার সকালে এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের কৃষিখাদ্য ব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিত শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রবন্ধটি তৈরি করেন বিআইডিএসের ফেলো এম এ সাত্তার মণ্ডল, গবেষণা পরিচালক মোহাম্মদ ইউনুস, জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো আজরীন করিম, গবেষক তাজনুরে সামিনা খানম ও রিজোয়ানা ইসলাম। তবে সেমিনারে প্রবন্ধটি উপস্থাপন করেন সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক মোহাম্মদ ইউনুস। মূল প্রবন্ধে বলা হয়, কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধির পেছনের মূল শক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রাণিসম্পদ ও মৎস্য খাত। ২০১৪ সালের পর থেকে কৃষি প্রবৃদ্ধির হার কমতে থাকলেও কর্মসংস্থান বাড়ছিল। আর কৃষির সঙ্গে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, পরিবহন, খাদ্য সেবা নিয়ে জিডিপিতে এ খাতের অবদান দাঁড়িয়েছে ২৩ দশমিক ৮ শতাংশে।
প্রবন্ধে কৃষিজমির ব্যবহার নিয়ে বলা হয়, দেশের কৃষিজমির প্রায় ৮০ শতাংশ জমিতেই ধান চাষ হয়। তবে গত ১০ বছরে পাট, দানাজাতীয় শস্য এবং ফল চাষের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। একই সময়ে মসলাজাতীয় ফসল এবং সবজির উৎপাদন বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। ফসলের উৎপাদনশীলতা নিয়ে প্রবন্ধে বলা হয়, দেশে বোরো ধানের উৎপাদনশীলতার বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধি শূন্য দশমিক ৭৭ শতাংশ। অথচ দেশে মোট ধানের ৬০ শতাংশই আসে বোরো মৌসুমে। তাই খাদ্যনিরাপত্তা বাড়াতে বোরো ধানের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে।
এ বিষয়ে মোহাম্মদ ইউনুস বলেন, ‘বিশ্বে মোট চাল ও গম উৎপাদনের মাত্র ১০ শতাংশ আন্তর্জাতিক বাজারে বাণিজ্যের জন্য নিয়ে আসা হয়। তাই কোনো কারণে উৎপাদন কমলে বিশ্ববাজারের ওপর নির্ভর করা যায় না। যেমনটা ২০০৭-০৮ সালে দেখা গিয়েছিল। তখন টাকা দিয়েও বিশ্ববাজার থেকে চাল ক্রয় করা যাচ্ছিল না।’
প্রবন্ধে আরও বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনে বড় প্রভাব পড়ছে কৃষিতে। তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় কৃষিশ্রমিকের আয় কমেছে ২০ শতাংশ পর্যন্ত। তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে চালের উৎপাদনশীলতা কমতে পারে আড়াই শতাংশ। আর গমের উৎপাদনশীলতা কমতে পারে সাড়ে ৩ শতাংশ। ডাল-জাতীয় ফসলের উৎপাদনশীলতা কমতে পারে ৪ শতাংশের বেশি।
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা বিভাগের সচিব শাকিল আকতার। বিআইডিএসের মহাপরিচালক অধ্যাপক এ কে এনামুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন এম এ সাত্তার মণ্ডল। সেমিনারে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষকেরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শাকিল আকতার বলেন, ‘খামারবাড়িতে ১৫০টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হলেও কৃষকের উন্নতি জন্য প্রকল্প কয়টি? প্রকল্প পরিচালক ও অন্যদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য এসব প্রকল্প নেওয়া হয়। রাজস্ব বরাদ্দ থেকে বেতন আর প্রকল্প থেকে গাড়ি কেনা হয়। কিন্তু গবেষণায় কোনো গুরুত্ব দেওয়া হয় না।’
কৃষি অর্থনীতিবিদ এম এ সাত্তার মণ্ডল বলেন, ‘নতুন কৃষক শ্রেণি যুক্ত হচ্ছে। তারা জমি লিজ নিয়ে কৃষিকাজ করছে। তবে ধান থেকে ভিন্ন ফসলের চাষ বাড়লে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। কারণ, স্বাধীনতার পর আমাদের দৈনিক গড় ভাত গ্রহণের পরিমাণ ছিল ৪৫০ গ্রাম, এখন তা ৩১৫ গ্রামে নেমে এসেছে।’
সেমিনারে মুক্ত আলোচনায় বলা হয়, দেশের ৫০ শতাংশ কৃষিজমিই এক একরের চেয়ে বড় নয়। অর্থাৎ নিজের খাওয়ার জন্য খোরপোশ কৃষি চাষাবাদ চলে দেশে।