ভারতের মুদ্রা রুপির দাম সম্প্রতি সর্বকালের রেকর্ড তলানিতে নেমেছে। ইতিহাসে এই প্রথম ডলারের বিপরীতে রুপির দাম ৯০ পেরিয়ে গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিনের শুরুতে ডলারের বিপরীতে রুপির দাম হয় ৯০ দশমিক ১৩।
গত মঙ্গলবার ডলারের দাম ৮৯ দশমিক ৯৪ রুপি পর্যন্ত উঠেছিল। গতকাল বৃহস্পতিবারের আগপর্যন্ত সেটাই ছিল ডলারের সর্বোচ্চ দাম। নভেম্বর মাসের বেশির ভাগ সময় ডলারের বিনিময়মূল্য ৮৮ দশশিক ৫৭ থেকে ৮৮ দশমিক ৭৮ রুপির মধ্যে ঘোরাফেরা করেছে। এরপর ২১ নভেম্বর তা ৮৯ ডলারের মনস্তাত্ত্বিক সীমা অতিক্রম কয়ে যায়। তখন থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল, ডলারের দাম যেকোনো দিন ৯০ রুপি অতিক্রম করে যাবে। ৩ ডিসেম্বর ডলারের দাম সেই ৯০ রুপি পেরিয়ে গেছে। মঙ্গলবারই তা প্রায় ৯০ রুপি ছুঁয়ে ফেলেছিল।
বিষয়টি হলো, ডলারের বিপরীতে রুপির দাম ৮৯ পেরিয়ে যাওয়ার পর তা যেন ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। ভারতের সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত রুপির অবমূল্যায়ন হয়েছে ৪ দশমিক ৮ শতাংশ। ফলে চলতি বছর এশিয়ার সবচেয়ে দুর্বল মুদ্রার খেতাব পেয়েছে রুপি। শুধু ডলার নয়, সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, ব্রিটিশ পাউন্ড, ইউরো, জাপানি ইয়েন ও চিনা ইউয়ান, অর্থাৎ বিশ্বের বিশ্বের অন্য চার প্রধান মুদ্রার বিপরীতেও রুপির দর কমেছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, বিনিয়োগকারীরা এখন উদ্বিগ্ন। রুপি আদৌ স্থিতিশীল হবে কি না এবং ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্যচুক্তির বিষয়ে স্পষ্টতা আসবে কি না, বিনিয়োগকারীরা এখন সেদিকে তাকিয়ে আছেন। যখন ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যচুক্তি কার্যকর হবে, তখন রুপির অবমূল্যায়ন থেমে যাবে। এমনকি উল্টো রুপি শক্তিশালীও হতে পারে। চুক্তির অংশ হিসেবে ভারতের পণ্যে যে শুল্ক আরোপ করা হবে, তার বিস্তারিত বিবরণের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে।
রুপির এই দরপতনের প্রভাব পড়েছে ভারতের শেয়ারবাজারেও। গতকাল বৃহস্পতিবার বাজার খোলার সময় থেকেই ভারতের স্টক মার্কেটের দুই মূল সূচক নিম্নমুখী। নিফটি৫০ কমেছে ১১৯ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৪৬ শতাংশ। ফলে এই সূচকের মান ২৬ হাজারের নিচে নেমে গেছে।
সেনসেক্স কমেছে শূন্য দশমিক ৩৭ শতাংশ বা ৩১৭ পয়েন্ট। পাশাপাশি নিফটি ব্যাংকসহ গুরুত্বপূর্ণ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ খাতের সূচকও নিম্নমুখী। তবে এই বাজারেও নিফটি আইটি খাতের সূচক বেড়েছে শূন্য দশমিক ২০ শতাংশ।
চলতি বছর ডলারের বিপরীতে রুপির দরপতন হয়েছে প্রায় ৫ শতাংশ। ডিসেম্বর মাসের প্রথম দুই দিনেও সেই ধারা অব্যাহত আছে। এর প্রভাব বাংলাদেশিদের ওপরও পড়বে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ থেকে যারা ভারতে যাচ্ছেন, তারা ডলার ভাঙিয়ে আগের চেয়ে বেশি রুপি পাচ্ছেন। বাংলাদেশে ডলারের দাম অনেক দিন ধরেই স্থিতিশীল। কয়েক মাস ধরে তা ১২২ টাকার মধ্যে আছে।
একদিকে দেশের বাজারে ডলারের দাম স্থিতিশীল, আরেকদিকে ভারতে রুপির দরপতন। এই পরিস্থিতিতে ভারতে বাংলাদেশি ভ্রমণকারীরা অনেকটা দুভাবে লাভবান হবেন। সাধারণত ভারতে যেসব দেশের মানুষেরা বেশি ভ্রমণ করেন, তাদের মধ্যে বাংলাদেশিরা শীর্ষস্থানীয়। যদিও ভিসা নিষেধাজ্ঞার কারণে এখন বাংলাদেশে থেকে খুব বেশি মানুষ ভারতে যেতে পারছেন না।
দরপতনের কারণ সম্পর্কে বিশ্লেষজ্ঞরা বলছেন, বছরটা ছিল অনিশ্চয়তাপূর্ণ। চলতি বছর রুপির দরপতনের পেছনে ট্রাম্পের শুল্ক এবং ওয়াশিংটনের সঙ্গে বছরভর আলোচনার পরও দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যচুক্তি না হওয়াই মূল কারণ। সিংহভাগের মত, চলতি বছরে চুক্তি নিয়ে স্পষ্ট দিকনির্দেশনা না পেলে রিজার্ভ ব্যাংক হাজার চেষ্টা করলেও রুপির বিনিময় হার ৯০ পেরিয়ে যাওয়া ঠেকাতে পারবে না।
এদিকে মার্কিন-ইইউ নিষেধাজ্ঞার ফাঁসে রাশিয়া থেকে অপরিশেধিত তেল আমদানি কমিয়েছে ভারত। পরিসংখ্যান বলছে, যখন প্রতিদিন প্রায় ১৭ লাখ ব্যারেল রুশ তেল আসছিল ভারতে, এমন অবস্থায় নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছে। এর বিকল্প উৎস খুঁজে বের করতে হিমশিম খাচ্ছে নয়াদিল্লি। পরিস্থিতি সামাল দিতে ১৭ হাজার ৭০০ কিলোমিটার পথ ঘুরে সুদূর গায়ানা থেকে তেলবোঝাই ট্যাংকার আসছে ভারতে।
পাশাপাশি পশ্চিম এশিয়া থেকেও উল্লেখযোগ্যহারে তেল আমদানি বাড়াতে হয়েছে। এতে ভারতের বাজারে তেলের চাহিদা মিটলেও পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে অনেক। ফলে ডলারের ভান্ডারে চাপ পড়ছে।
ভারতের মুদ্রা রুপির এই দরপতন এভাবে চলবে, নাকি থামবে, তা বলা কঠিন বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মনোভাব আন্দাজ করা একপ্রকার অসাধ্য। বিশেষজ্ঞদের বড় অংশের দাবি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক সমঝোতা দ্রুত সেরে না ফেললে রিজার্ভ ব্যাংকের পক্ষেও রুপির পতন ঠেকানো কঠিন। রুপির দর আরও পড়লে আমদানির খরচ যে পর্যায়ে উঠবে, তাতে ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি যে কমে যাবে, তা বলাই বাহুল্য।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫
ভারতের মুদ্রা রুপির দাম সম্প্রতি সর্বকালের রেকর্ড তলানিতে নেমেছে। ইতিহাসে এই প্রথম ডলারের বিপরীতে রুপির দাম ৯০ পেরিয়ে গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিনের শুরুতে ডলারের বিপরীতে রুপির দাম হয় ৯০ দশমিক ১৩।
গত মঙ্গলবার ডলারের দাম ৮৯ দশমিক ৯৪ রুপি পর্যন্ত উঠেছিল। গতকাল বৃহস্পতিবারের আগপর্যন্ত সেটাই ছিল ডলারের সর্বোচ্চ দাম। নভেম্বর মাসের বেশির ভাগ সময় ডলারের বিনিময়মূল্য ৮৮ দশশিক ৫৭ থেকে ৮৮ দশমিক ৭৮ রুপির মধ্যে ঘোরাফেরা করেছে। এরপর ২১ নভেম্বর তা ৮৯ ডলারের মনস্তাত্ত্বিক সীমা অতিক্রম কয়ে যায়। তখন থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল, ডলারের দাম যেকোনো দিন ৯০ রুপি অতিক্রম করে যাবে। ৩ ডিসেম্বর ডলারের দাম সেই ৯০ রুপি পেরিয়ে গেছে। মঙ্গলবারই তা প্রায় ৯০ রুপি ছুঁয়ে ফেলেছিল।
বিষয়টি হলো, ডলারের বিপরীতে রুপির দাম ৮৯ পেরিয়ে যাওয়ার পর তা যেন ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। ভারতের সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত রুপির অবমূল্যায়ন হয়েছে ৪ দশমিক ৮ শতাংশ। ফলে চলতি বছর এশিয়ার সবচেয়ে দুর্বল মুদ্রার খেতাব পেয়েছে রুপি। শুধু ডলার নয়, সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, ব্রিটিশ পাউন্ড, ইউরো, জাপানি ইয়েন ও চিনা ইউয়ান, অর্থাৎ বিশ্বের বিশ্বের অন্য চার প্রধান মুদ্রার বিপরীতেও রুপির দর কমেছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, বিনিয়োগকারীরা এখন উদ্বিগ্ন। রুপি আদৌ স্থিতিশীল হবে কি না এবং ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্যচুক্তির বিষয়ে স্পষ্টতা আসবে কি না, বিনিয়োগকারীরা এখন সেদিকে তাকিয়ে আছেন। যখন ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যচুক্তি কার্যকর হবে, তখন রুপির অবমূল্যায়ন থেমে যাবে। এমনকি উল্টো রুপি শক্তিশালীও হতে পারে। চুক্তির অংশ হিসেবে ভারতের পণ্যে যে শুল্ক আরোপ করা হবে, তার বিস্তারিত বিবরণের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে।
রুপির এই দরপতনের প্রভাব পড়েছে ভারতের শেয়ারবাজারেও। গতকাল বৃহস্পতিবার বাজার খোলার সময় থেকেই ভারতের স্টক মার্কেটের দুই মূল সূচক নিম্নমুখী। নিফটি৫০ কমেছে ১১৯ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৪৬ শতাংশ। ফলে এই সূচকের মান ২৬ হাজারের নিচে নেমে গেছে।
সেনসেক্স কমেছে শূন্য দশমিক ৩৭ শতাংশ বা ৩১৭ পয়েন্ট। পাশাপাশি নিফটি ব্যাংকসহ গুরুত্বপূর্ণ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ খাতের সূচকও নিম্নমুখী। তবে এই বাজারেও নিফটি আইটি খাতের সূচক বেড়েছে শূন্য দশমিক ২০ শতাংশ।
চলতি বছর ডলারের বিপরীতে রুপির দরপতন হয়েছে প্রায় ৫ শতাংশ। ডিসেম্বর মাসের প্রথম দুই দিনেও সেই ধারা অব্যাহত আছে। এর প্রভাব বাংলাদেশিদের ওপরও পড়বে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ থেকে যারা ভারতে যাচ্ছেন, তারা ডলার ভাঙিয়ে আগের চেয়ে বেশি রুপি পাচ্ছেন। বাংলাদেশে ডলারের দাম অনেক দিন ধরেই স্থিতিশীল। কয়েক মাস ধরে তা ১২২ টাকার মধ্যে আছে।
একদিকে দেশের বাজারে ডলারের দাম স্থিতিশীল, আরেকদিকে ভারতে রুপির দরপতন। এই পরিস্থিতিতে ভারতে বাংলাদেশি ভ্রমণকারীরা অনেকটা দুভাবে লাভবান হবেন। সাধারণত ভারতে যেসব দেশের মানুষেরা বেশি ভ্রমণ করেন, তাদের মধ্যে বাংলাদেশিরা শীর্ষস্থানীয়। যদিও ভিসা নিষেধাজ্ঞার কারণে এখন বাংলাদেশে থেকে খুব বেশি মানুষ ভারতে যেতে পারছেন না।
দরপতনের কারণ সম্পর্কে বিশ্লেষজ্ঞরা বলছেন, বছরটা ছিল অনিশ্চয়তাপূর্ণ। চলতি বছর রুপির দরপতনের পেছনে ট্রাম্পের শুল্ক এবং ওয়াশিংটনের সঙ্গে বছরভর আলোচনার পরও দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যচুক্তি না হওয়াই মূল কারণ। সিংহভাগের মত, চলতি বছরে চুক্তি নিয়ে স্পষ্ট দিকনির্দেশনা না পেলে রিজার্ভ ব্যাংক হাজার চেষ্টা করলেও রুপির বিনিময় হার ৯০ পেরিয়ে যাওয়া ঠেকাতে পারবে না।
এদিকে মার্কিন-ইইউ নিষেধাজ্ঞার ফাঁসে রাশিয়া থেকে অপরিশেধিত তেল আমদানি কমিয়েছে ভারত। পরিসংখ্যান বলছে, যখন প্রতিদিন প্রায় ১৭ লাখ ব্যারেল রুশ তেল আসছিল ভারতে, এমন অবস্থায় নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছে। এর বিকল্প উৎস খুঁজে বের করতে হিমশিম খাচ্ছে নয়াদিল্লি। পরিস্থিতি সামাল দিতে ১৭ হাজার ৭০০ কিলোমিটার পথ ঘুরে সুদূর গায়ানা থেকে তেলবোঝাই ট্যাংকার আসছে ভারতে।
পাশাপাশি পশ্চিম এশিয়া থেকেও উল্লেখযোগ্যহারে তেল আমদানি বাড়াতে হয়েছে। এতে ভারতের বাজারে তেলের চাহিদা মিটলেও পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে অনেক। ফলে ডলারের ভান্ডারে চাপ পড়ছে।
ভারতের মুদ্রা রুপির এই দরপতন এভাবে চলবে, নাকি থামবে, তা বলা কঠিন বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মনোভাব আন্দাজ করা একপ্রকার অসাধ্য। বিশেষজ্ঞদের বড় অংশের দাবি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক সমঝোতা দ্রুত সেরে না ফেললে রিজার্ভ ব্যাংকের পক্ষেও রুপির পতন ঠেকানো কঠিন। রুপির দর আরও পড়লে আমদানির খরচ যে পর্যায়ে উঠবে, তাতে ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি যে কমে যাবে, তা বলাই বাহুল্য।