ফের বাড়তে শুরু করেছে পেঁয়াজের দাম। কোনও কারণ ছাড়াই পর্যপ্ত মজুদ থাকা স্বত্বেও দেশের খুচরা বাজারে দুই দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত। স্থান ভেদে অবশ্য গত কিছুদিন ধরে পেঁয়াজের দামে হেরফের লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে ব্যবসায়ীরা বলছেন, উৎপাদন অঞ্চল থেকে সরবরাহ কমে যাওয়ায় পাইকারি বাজারেই দাম বাড়ছে, যা দ্রুত প্রভাব ফেলেছে খুচরা বাজারে। অন্যদিকে, বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মজুতদাররা সিন্ডিকেট করে পেঁয়াজ আটকে রেখে দাম বাড়াচ্ছে। একইসঙ্গে দাম বাড়ার অজুহাত তুলে ভারত থেকে আমদানির জন্য সরকারকে চাপ দিচ্ছে।
শনিবার,(০৬ ডিসেম্বর ২০২৫) রাজধানী ঢাকার কারওয়ান বাজার, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, ইব্রাহিমপুর, কচুক্ষেত, ভাসানটেকসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, দেশি পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। দুই দিন আগেও এই দাম ছিল ১১০ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘ফরিদপুর, রাজবাড়ী ও পাবনার হাটে দুই দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজ পাইকারি কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেড়েছে।’
খুচরা বিক্রেতারা জানান, ক্রেতারা দাম শুনে হতবাক হচ্ছেন, কেউ কেউ তর্কেও জড়াচ্ছেন। তাদের দাবি, নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসা এবং আমদানি শুরু হলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই দাম কমতে পারে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সরেজমিন উইংয়ের অতিরিক্ত পরিচালক (মনিটরিং ও বাস্তবায়ন) ড. জামাল উদ্দীন বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে বাজারে সরবরাহের কোনও ঘাটতি নেই। আমদানির অনুমতি দিতে সরকারকে বাধ্য করতেই সিন্ডিকেটচক্র কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়াচ্ছে। অথচ, এখনও এক লাখ টনেরও বেশি পুরোনো পেঁয়াজ আছে।’
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত মৌসুমে কৃষকরা ন্যায্য দাম না পেয়ে সব পেঁয়াজ বিক্রি করে ফেলেছেন। ফলে, এখন তাদের কাছে পেঁয়াজ নেই। এই সুযোগে অসাধু মজুতদাররা সিন্ডিকেট করে পেঁয়াজ আটকে রেখে দাম বাড়াচ্ছেন। একইসঙ্গে দাম বাড়ার অজুহাত তুলে ভারত থেকে আমদানির জন্য সরকারকে চাপ দিচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সরেজমিন উইংয়ের অতিরিক্ত পরিচালক (মনিটরিং ও বাস্তবায়ন) ড. জামাল উদ্দীন বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে বাজারে সরবরাহের কোনো ঘাটতি নেই। আমদানির অনুমতি দিতে সরকারকে বাধ্য করতেই সিন্ডিকেটচক্র কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়াচ্ছে। অথচ এখনো এক লাখ টনেরও বেশি পুরোনো পেঁয়াজ আছে।’
এদিকে কারসাজির মাধ্যমে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি)। এরপরও সীমিত পরিমাণে পেঁয়াজ আমদানির সুপারিশ করেছে বিটিটিসি। খুচরা বাজারে প্রতিকেজি পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ায় কমিশন এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন সরকারের বিবেচনার জন্য বাণিজ্য সচিব ও কৃষি সচিবকে পাঠানো হয়েছে।
কমিশন জানায়, কিছু মধ্যস্বত্বভোগী কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বাজার অস্থির করার পাঁয়তারা করছে। এ সময় প্রতিকেজি পেঁয়াজের দাম ৯০ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। অথচ বাজারে তা ১১৫ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে। বিপরীতে পার্শ্ববর্তী দেশে একই পেঁয়াজের দাম বর্তমানে ৩০ টাকার মধ্যে।
গত অর্থবছরে দেশে ৪৪ লাখ ৪৮ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। সংরক্ষণ সমস্যাসহ নানা কারণে পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গত অর্থবছরে ৩৩ লাখ টনের মতো পেঁয়াজ বাজারে এসেছে।
বাংলাদেশের পেঁয়াজ আমদানির প্রধান উৎস দেশ ভারত। মোট আমদানির ৯৯ শতাংশই করা হয় ভারত থেকে। এছাড়া তুরস্ক, পাকিস্তান, মায়ানমার, চীন ও মিসর থেকেও পেঁয়াজ আমদানি হয়। গত অর্থবছরে মোট ৪ লাখ ৮৩ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। বর্তমানে পেঁয়াজের ওপর মোট ১০ শতাংশ শুল্ককর প্রযোজ্য আছে।
গত চার বছরে পেঁয়াজের উৎপাদন বেড়েছে। সে হিসাবে ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ৩৬ লাখ ৪০ হাজার টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছে ৩৪ লাখ ৫৬ হাজার টন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বেড়ে উৎপাদন হয় ৩৯ লাখ ১১ হাজার টন। আর ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে উৎপাদন হয় ৪৪ লাখ ৪৮ হাজার টন।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫
ফের বাড়তে শুরু করেছে পেঁয়াজের দাম। কোনও কারণ ছাড়াই পর্যপ্ত মজুদ থাকা স্বত্বেও দেশের খুচরা বাজারে দুই দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত। স্থান ভেদে অবশ্য গত কিছুদিন ধরে পেঁয়াজের দামে হেরফের লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে ব্যবসায়ীরা বলছেন, উৎপাদন অঞ্চল থেকে সরবরাহ কমে যাওয়ায় পাইকারি বাজারেই দাম বাড়ছে, যা দ্রুত প্রভাব ফেলেছে খুচরা বাজারে। অন্যদিকে, বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মজুতদাররা সিন্ডিকেট করে পেঁয়াজ আটকে রেখে দাম বাড়াচ্ছে। একইসঙ্গে দাম বাড়ার অজুহাত তুলে ভারত থেকে আমদানির জন্য সরকারকে চাপ দিচ্ছে।
শনিবার,(০৬ ডিসেম্বর ২০২৫) রাজধানী ঢাকার কারওয়ান বাজার, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, ইব্রাহিমপুর, কচুক্ষেত, ভাসানটেকসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, দেশি পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। দুই দিন আগেও এই দাম ছিল ১১০ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘ফরিদপুর, রাজবাড়ী ও পাবনার হাটে দুই দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজ পাইকারি কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেড়েছে।’
খুচরা বিক্রেতারা জানান, ক্রেতারা দাম শুনে হতবাক হচ্ছেন, কেউ কেউ তর্কেও জড়াচ্ছেন। তাদের দাবি, নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসা এবং আমদানি শুরু হলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই দাম কমতে পারে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সরেজমিন উইংয়ের অতিরিক্ত পরিচালক (মনিটরিং ও বাস্তবায়ন) ড. জামাল উদ্দীন বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে বাজারে সরবরাহের কোনও ঘাটতি নেই। আমদানির অনুমতি দিতে সরকারকে বাধ্য করতেই সিন্ডিকেটচক্র কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়াচ্ছে। অথচ, এখনও এক লাখ টনেরও বেশি পুরোনো পেঁয়াজ আছে।’
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত মৌসুমে কৃষকরা ন্যায্য দাম না পেয়ে সব পেঁয়াজ বিক্রি করে ফেলেছেন। ফলে, এখন তাদের কাছে পেঁয়াজ নেই। এই সুযোগে অসাধু মজুতদাররা সিন্ডিকেট করে পেঁয়াজ আটকে রেখে দাম বাড়াচ্ছেন। একইসঙ্গে দাম বাড়ার অজুহাত তুলে ভারত থেকে আমদানির জন্য সরকারকে চাপ দিচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সরেজমিন উইংয়ের অতিরিক্ত পরিচালক (মনিটরিং ও বাস্তবায়ন) ড. জামাল উদ্দীন বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে বাজারে সরবরাহের কোনো ঘাটতি নেই। আমদানির অনুমতি দিতে সরকারকে বাধ্য করতেই সিন্ডিকেটচক্র কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়াচ্ছে। অথচ এখনো এক লাখ টনেরও বেশি পুরোনো পেঁয়াজ আছে।’
এদিকে কারসাজির মাধ্যমে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি)। এরপরও সীমিত পরিমাণে পেঁয়াজ আমদানির সুপারিশ করেছে বিটিটিসি। খুচরা বাজারে প্রতিকেজি পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ায় কমিশন এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন সরকারের বিবেচনার জন্য বাণিজ্য সচিব ও কৃষি সচিবকে পাঠানো হয়েছে।
কমিশন জানায়, কিছু মধ্যস্বত্বভোগী কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বাজার অস্থির করার পাঁয়তারা করছে। এ সময় প্রতিকেজি পেঁয়াজের দাম ৯০ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। অথচ বাজারে তা ১১৫ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে। বিপরীতে পার্শ্ববর্তী দেশে একই পেঁয়াজের দাম বর্তমানে ৩০ টাকার মধ্যে।
গত অর্থবছরে দেশে ৪৪ লাখ ৪৮ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। সংরক্ষণ সমস্যাসহ নানা কারণে পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গত অর্থবছরে ৩৩ লাখ টনের মতো পেঁয়াজ বাজারে এসেছে।
বাংলাদেশের পেঁয়াজ আমদানির প্রধান উৎস দেশ ভারত। মোট আমদানির ৯৯ শতাংশই করা হয় ভারত থেকে। এছাড়া তুরস্ক, পাকিস্তান, মায়ানমার, চীন ও মিসর থেকেও পেঁয়াজ আমদানি হয়। গত অর্থবছরে মোট ৪ লাখ ৮৩ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। বর্তমানে পেঁয়াজের ওপর মোট ১০ শতাংশ শুল্ককর প্রযোজ্য আছে।
গত চার বছরে পেঁয়াজের উৎপাদন বেড়েছে। সে হিসাবে ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ৩৬ লাখ ৪০ হাজার টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছে ৩৪ লাখ ৫৬ হাজার টন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বেড়ে উৎপাদন হয় ৩৯ লাখ ১১ হাজার টন। আর ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে উৎপাদন হয় ৪৪ লাখ ৪৮ হাজার টন।