দেশের অন্যতম প্রধান স্থলবন্দর বেনাপোলে প্রায় দুই মাস ধরে আটকে রয়েছে ১০০ কোটি টাকার দেড় শতাধিক রপ্তানিমুখী সুপারির ট্রাক। দীর্ঘ এ অচলাবস্থার কারণে রপ্তানিকারকরা প্রতিদিন ট্রাক প্রতি দুই হাজার টাকা হিসাবে প্রায় ৩ লাখ টাকা অর্থদ- বা ভাড়া গুনতে বাধ্য হচ্ছেন।

ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করছেন, ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে পণ্যের মান নির্ণয় ও কৃত্রিম জটিলতা সৃষ্টির কারণে এই রপ্তানিবাণিজ্য ব্যাহত হচ্ছে। দ্রুত পদক্ষেপ না নেয়া হলে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা করছে ব্যবসায়ীরা।

বিশ্বে সুপারির উৎপাদনে বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে এবং গুণগতমানের কারণে ভারতে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বছরে প্রায় ৭০০ কোটি টাকার সুপারির রপ্তানি হয় ভারতে। তথ্য বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারতে সুপারির আমদানিতে বাংলাদেশের অংশীদারিত্ব বেড়ে হয়েছে ৩৭ শতাংশ, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় চারগুণ। এমন জমজমাট বাণিজ্যের মাঝেই দেড় শতাধিক সুপারির ট্রাক প্রায় দুই মাস ধরে বেনাপোল বন্দরে আটকে রয়েছে। দীর্ঘদিন বন্দরে আটকে থাকার ফলে পণ্যজট সৃষ্টি হয়েছে এবং ট্রাক চালকরাও নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।

আটকে থাকা সুপারি বহনকারী ট্রাক চালক মমিন বলেন, ‘একমাস ২৭ দিন ধরে এখানে আটকে থেকে নানা সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছি। ওপারের ব্যবসায়ীরা সুপারির বাজার নিয়ন্ত্রণে সিন্ডিকেট করে এই ট্রাকগুলোকে দেরিতে নামাচ্ছে বলে আমাদের সন্দেহ হয়েছে।’

রপ্তানিকারক পণ্য ছাড়কারী সিএন্ডএফ এজেন্ট মেসার্স আউলিয়া এন্টারপ্রাইজের প্রতিনিধি আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘ওপারে পেট্রাপোল বন্দরে পরীক্ষা ও নানা কারণ দেখিয়ে পণ্য নিতে দেরি করছে। আমরা দ্রুত পণ্য খালাসের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের সরকার পতনের পর ভারত সরকার রপ্তানি বাণিজ্যে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা ও নানা শর্ত আরোপের ফলে বর্তমান রপ্তানির পরিমাণ ৩০ শতাংশে নেমে এসেছে। এ বিষয়ে বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক (ট্রাফিক) মো. শামীম হোসেন বলেন, ‘অচলাবস্থার কারণে বেনাপোলে প্রায় ১০০ কোটি টাকার দেড় শতাধিক সুপারির ট্রাক আটকে আছে।’

বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের বন্দরের বিষয়ক সম্পাদক মো. মেহের উল্লাহ বলেন, ‘বাণিজ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলে তা দুই দেশের জন্যই ক্ষতিকর। এ অবস্থা কাটাতে দ্রুত দুই দেশের সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।’