দেশের শেয়ারবাজারে পতনের ধারা অব্যাহত রয়েছে। সেই সঙ্গে দেখা দিয়েছে লেনদেন খরা। সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার,(০৭ ডিসেম্বর ২০২৫) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার পাশাপাশি কমেছে সবকটি মূল্য সূচক। সেই সঙ্গে লেনদেন কমে ২০০ কোটি টাকার ঘরে চলে এসেছে। এতে ৬ মাসের মধ্যে বাজারটিতে সব থেকে কম লেনদেন হয়েছে।
অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। ফলে এ বাজারটিতে কমেছে সবকটি মূল্য সূচক। তবে লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে।
এর আগে, গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে চার কার্যদিবস শেয়ারবাজারে দরপতন হয়। এতে সপ্তাহজুড়ে ৪৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার বিপরীতে ৩২৫টির দাম কমে। ফলে ডিএসইর মূলধন কমে ৭ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা। আর প্রধান মূল্য সূচক কমে ১৪১ দশমিক ৫৭ পয়েন্ট।
এমন পতনের পর চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরুতে সূচকের ঊর্ধ্বমুখীতার দেখা মিলে। কিন্তু লেনদেনের সময় আধা ঘণ্টা পার হওয়ার আগেই বাজারের চিত্র বদলে যায়। দাম বাড়ার তালিকা থেকে একের পর এক প্রতিষ্ঠান দাম কমার তালিকায় চলে আসে। লেনদেনের শেষ পর্যন্ত এই ধারা অব্যাহত থাকে। ফলে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমার পাশাপাশি সবকটি মূল্য সূচক কমেই দিনের লেনদেন শেষ হয়।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে সব খাত মিলে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ১১০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ২০৯টির। আর ৬৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ভালো কোম্পানি বা ১০ শতাংশ অথবা তার বেশি লভ্যাংশ দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৫২টির শেয়ার দাম বেড়েছে। বিপরীতে ১২৩টির দাম কমেছে এবং ৩৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। মাঝারি মানের বা ১০ শতাংশের কম লভ্যাংশ দেওয়া ২৪টি কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়ার বিপরীতে ৪৪টির দাম কমেছে এবং ৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ না দেওয়ার কারণে ‘জেড’ গ্রুপে স্থান হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৩৪টির শেয়ার দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৪২টির এবং ২১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। আর তালিকাভুক্ত ৩৫টি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৯টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে ১১টির দাম কমেছে এবং ১৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এতে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১৩ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৮৭২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৩ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ২০ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৫ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৮৮৬ পয়েন্টে নেমে গেছে।
সবকটি মূল্য সূচক কমার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ২৬৭ কোটি ৬৪ টাকা। এই লেনদেন গত ছয় মাসের মধ্যে সর্বনিম্ম। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৩৬৪ কোটি ৩৭ টাকা। এ হিসেবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন কমেছে ৯৬ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে গত ১৫ জুনের পর ডিএসইতে সব থেকে কম লেনদেন হলো।
এই লেনদেনে সব থেকে বড় ভূমিকা রেখেছে ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ার। কোম্পানিটির ১৭ কোটি ১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১১ কোটি ৫৩ লাখ টাকার। ৮ কোটি ৮৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ডমিনেজ স্টিল বিল্ডিং।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে, মিডল্যান্ড ব্যাংক, বিডি থাই ফুড, আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, লাভেলো আইসক্রিম, মেঘনা পেট্রোলিয়াম এবং ফাইন ফুডস।
অন্য শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্য সূচক সিএএসপিআই কমেছে ৬২ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৫৪ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৭টির দাম বেড়েছে।
বিপরীতে দাম কমেছে ৯৯টির এবং ১৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ১৩ কোটি ৮১ লাখ টাকা।