সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

রোববার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫

জীবাশ্ম জ্বালানিতে এডিবির ঋণ ‘অর্থনৈতিক ঝুঁকি বাড়াচ্ছে’

ঢাকায় জ্বালানি সম্মেলনে প্রতিবেদন প্রকাশ

image

জীবাশ্ম জ্বালানিতে এডিবির ঋণ ‘অর্থনৈতিক ঝুঁকি বাড়াচ্ছে’

ঢাকায় জ্বালানি সম্মেলনে প্রতিবেদন প্রকাশ

রোববার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫
সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) বিপুল জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভর বিনিয়োগ বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা, অর্থনীতি ও পরিবেশগত ঝুঁকি ‘আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে’ বলে নতুন এক প্রতিবেদনে সতর্কবার্তা দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ‘ব্যাপক সম্ভাবনা সত্ত্বেও’ নবায়নযোগ্য খাতে এডিবির বিনিয়োগ উদাসীনতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পরিবেশবাদী ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।

রোববার,(০৭ ডিসেম্বর ২০২৫) ঢাকায় সামরিক জাদুঘরে তিনদিন ব্যাপী বাংলাদেশ জ্বালানি সম্মেলন-২০২৫ এর দ্বিতীয় দিনে ‘বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে বহুজাতিক ব্যাংক’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন এনজিও ফোরাম অন এডিবির কো-অর্ডিনেটর শারমিন আক্তার বৃষ্টি। সেশনটি পরিচালনা করেন সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক রায়ান হাসান। তিনি বলেন, এডিবির ‘একপেশে জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভর বিনিয়োগ মডেল’ বাংলাদেশকে জ্বালানি ঘাটতি, বাড়তি ঋণঝুঁকি ও জলবায়ু বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

দেশের জ্বালানি খাতের উন্নয়ন, নীতি-সংস্কার ও সবুজ রূপান্তরকে এগিয়ে নিতে তিনদিন ব্যাপী ‘বাংলাদেশ জ্বালানি সম্মেলন ২০২৫’ গতকাল শনিবার শুরু হয়, যা আজ শেষ হবে। সম্মেলনের প্রধান আয়োজক বাংলাদেশের প্রতিবেশ ও উন্নয়ন বিষয়ক কর্মজোট (বিডব্লিউজিইডি)। সহ-আয়োজক হিসেবে আছে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি), বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) সহ ১৬টি প্রতিষ্ঠান। সম্মেলনে দেশের জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের বর্তমান সংকট, সম্ভাবনা এবং ভবিষ্যৎ রূপান্তরের দিকনির্দেশনা নিয়ে নীতিনির্ধারক, বিশেষজ্ঞ, গবেষক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা একত্রিত হচ্ছেন।

সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্ভাবনা ও সমস্যা শীর্ষক আরেকটি সেশন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে দেশে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎখাতে ব্যাপক সম্ভাবনা সত্ত্বেও নীতিগত নানা বাধায় এ খাতের সম্প্রসারণ আশানুরূপ হচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন বক্তারা।

আর্থের নির্বাহী পরিচালক আনোয়ার হোসেন বলেন, শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর সোলার স্থাপনাগুলো বাড়ির ছাদে থাকা সোলার সিস্টেমের তুলনায় অনেক বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। কিন্তু প্রায় ৯০ শতাংশ বাসাবাড়ির ছাদের সোলার সিস্টেম কার্যকর নয়। এগুলো মূলত নীতি পূরণের জন্য স্থাপন করা হয়েছে, বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য নয়। যদি এই সিস্টেমগুলো সঠিকভাবে কাজ করতো, তবে জাতীয় গ্রিডে গুরুত্বপূর্ণ পরিমাণ বিদ্যুৎ যোগ করা যেত।

বাংলাদেশ সোলার অ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি এ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট মোস্তাফা আল মাহমুদ বলেন, নবায়নযোগ্য শক্তিতে অর্থনৈতিক রূপান্তর সার্থক করতে শক্তিশালী আর্থিক প্রণোদনার প্রয়োজন। কারণ সৌরবিদ্যুতের প্রাথমিক ব্যয় অনেক বেশি। এছাড়া সিস্টেমের ভেতরেও অদৃশ্য বাধা রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, কয়েক মাস আগে সৌর প্যানেল ও যন্ত্রপাতির শুল্ক কমানোর জন্য একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, কিন্তু কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এটি নির্দেশ করে যে, অগ্রগতির পথে সক্রিয়ভাবে বাধা দিচ্ছে কিছু শক্তি।

এনজিও ফোরামের প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ায় মোট ৫৭০টি জ্বালানি প্রকল্পে ৯২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার প্রতিশ্রুতির মধ্যে বাংলাদেশ পেয়েছে ১৭ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ৩৬টি গ্যাসকেন্দ্রিক প্রকল্পে রয়েছে ৫ দশমিক ৯৯৫ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ, যা দিয়ে ৩ হাজার ৬৫৯ মেগাওয়াট উৎপাদন সক্ষমতা তৈরি হয়েছে।

বাংলাদেশে এডিবির গ্যাস খাতে অর্থায়নের ৬০ শতাংশ এসেছে টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স স্পেশাল ফান্ড থেকে ৩৬ শতাংশ উচ্চ সুদের ওসিআর ঋণ থেকে এবং মাত্র ৪ শতাংশ এডিএফ তহবিল থেকে।

১৯৭৭ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত এডিবি গ্যাস পরিকল্পনা, সিস্টেম উন্নয়ন ও পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যান নিয়ে কাজ করলেও ২০০০ সালের পর সরাসরি গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে জোর দেয়। সিরাজগঞ্জ ও মেঘনাঘাট ৪৫০ মেগাওয়াট প্লান্টের টেন্ডারও পরিচালনা করে সংস্থাটি।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, এডিবি বাংলাদেশে যে বিনিয়োগ করছে তার বড় অংশই যাচ্ছে গ্যাস সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে। ১ দশমিক ২৩২ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হয়েছে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে। এছাড়া গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণে ১ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলার, গ্যাস খাত উন্নয়নে ৭০৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার, পরিকল্পনা খাতে ৬৬০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়েছে। পাশাপাশি পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যানে ৬০০ মিলিয়ন ডলার এবং অন্যান্য গ্যাস সম্পর্কিত প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ১ দশমিক ৩৯৩ বিলিয়ন ডলার।

সরকারি খাতের চারটি প্রকল্প পেয়েছে ৮১৭ মিলিয়ন ডলার, আর বেসরকারি খাতের ৪১৫ মিলিয়ন ডলার গেছে জিইই, পেন্ডেকার, সামিট, জেরা-রিলায়েন্স ও নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেডের (এনডব্লিউপিজিসিএল) প্রকল্পে।

*নিষ্ক্রিয় প্রকল্প, বাড়তি ঝুঁকি*

সম্মেলনে জানানো হয়, গ্যাস সংকট ও পাইপলাইন অবকাঠামোর ঘাটতির কারণে এডিবি অর্থায়িত রূপসা ৮০০ মেগাওয়াট ও রিলায়েন্স মেঘনাঘাট ৭১৫ মেগাওয়াট কেন্দ্র নির্মাণ শেষ হয়েও চালু হয়নি। বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেও এসব প্রকল্পের জন্য বাংলাদেশকে ওসিআর ঋণের আওতায় উচ্চমাত্রার ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হচ্ছে, যা অর্থনৈতিক সংকট আরও বাড়াচ্ছে।

রায়ান হাসান বলেন, এই কেন্দ্রগুলোই জ্বালানি নিরাপত্তাহীনতার সবচেয়ে ব্যয়বহুল উদাহরণ। এক্ষেত্রে বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রস্তুত, কিন্তু জ্বালানি নেই।

পিপিএ এবং ইআইএ অনুযায়ী, এডিবি সমর্থিত পাঁচটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মোট কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ ১৭৪ দশমিক ৭১ মিলিয়ন টন। এছাড়া বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে মেঘনাঘাট ও ভৈরব নদীর তীরে ১৬০ একরের বেশি জমি দখল করেছে, যেখানে স্থানীয় জনগোষ্ঠী জীবিকা হারানো, বাস্তুচ্যুতি ও দীর্ঘমেয়াদি সামাজিক ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে। এডিবির ঋণ গ্যাস খাতে ৯১ দশমিক ৩৪ শতাংশ গেলেও নবায়নযোগ্য খাত পেয়েছে মাত্র ৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, সৌরবিদ্যুতে এডিবি বিনিয়োগ করেছে ১১৮ মিলিয়ন ডলার। যার মোট স্থাপিত সক্ষমতা মাত্র ২২৫ দশমিক ৮ মেগাওয়াট। এছাড়া বায়ু বিদ্যুতে বিনিয়োগ একেবারেই শূন্য।

সম্মেলনের সহ-আয়োজক হিসেবে রয়েছে ১৬টি প্রতিষ্ঠান। সেগুলো হলো- অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি), বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি), ব্রাইট গ্রিন এনার্জি ফাউন্ডেশন (বিজিইএফ), সেন্টার ফর রিনিউয়্যাবল এনার্জি সার্ভিসেস (ক্রেসল), উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরিবেশ কর্মজোট (ক্লিন), দ্য আর্থ, এথিক্যাল ট্রেডিং ইনিশিয়েটিভ (ইটিআই), লাইয়ার্স ফর এনার্জি, লিড, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজিএফ), রিগ্লোবাল, সেফটি অ্যান্ড রাইটস সোসাইটি (এসআরএস), শক্তি ফাউন্ডেশন, এবং ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ।

‘অর্থ-বাণিজ্য’ : আরও খবর

» নভেম্বরে মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়ালো ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ

» ঋণ খেলাপিদের শেয়ার নিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করেছিলাম, কাজে দেয়নি: ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ

» সূচকের পতনে ৬ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন লেনদেন

» এসএমই পণ্যের রপ্তানি বাড়াতে নতুন বাজার খুঁজতে হবে: শিল্প উপদেষ্টা

» বিভিন্ন দাবিতে বিজেএমসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গেইট মিটিং

» ইউরোপে এক্সকে ১৪ কোটি ডলার জরিমানা

» রপ্তানিমুখী ১৫০টির বেশি সুপারির ট্রাক আটক বেনাপোল স্থলবন্দরে

» শেয়ারবাজারে মূলধন কমলো সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা

» চীনের ইউনান প্রদেশের বাণিজ্য বিভাগের সঙ্গে ইপিবির সমঝোতা

» মেঘনা ব্যাংকের এমডি হলেন সৈয়দ মিজানুর রহমান

» যুক্তরাষ্ট্র থেকে এলো আরও ৬১ হাজার টন গম

» পর্যাপ্ত মজুদ সত্ত্বেও লাফিয়ে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম

» নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে খাতভিত্তিক নীতি কাঠামো প্রয়োজন, আলোচনায় বক্তারা

» ভরা মৌসুমেও সবজির দাম বাড়তি, হঠাৎ বেড়েছে পেঁয়াজ ও তেলের দাম

» পরপর চার মাস রপ্তানি কমেছে

» আইএলও’র কনভেনশন বাস্তবায়নের আহ্বান বিশেষজ্ঞদের

» সিগারেট কোম্পানির ৯ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি

» ঋণ খেলাপি কমাতে আংশিক অবলোপনে আরও ছাড় দিল বাংলাদেশ ব্যাংক

» ইতিহাসের সবচেয়ে তলানিতে ডলারের বিপরিতে ভারতের রুপির দাম

» নারী সঞ্চয় অ্যাকাউন্ট চালু করল সীমান্ত ব্যাংক