বাড়তে বাড়তে পেঁয়াজের দর কেজিপ্রতি ১৫০ টাকা ছাড়ানোর পর মেলে আমদানির অনুমতি। এর পরদিনই দেশে ঢুকতে শুরু করেছে ভারতের পেঁয়াজ; যে খবরে একদিনেই প্রতি কেজিতে ২০ টাকা কমেছে রাজধানী ঢাকার আড়তে। হঠাৎ বাড়তে থাকা দর সামাল দিতে সাপ্তাহিক ছুটির দিন শনিবার সরকার স্বল্প পরিসরে পেঁয়াজ আমদানির সুযোগ দেয়। ওই সময় থেকে রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত দেড় হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির আইপি (ইমপোর্ট পারমিট বা আমদানি অনুমতিপত্র) দিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
রোববারই বিকালের পর থেকে রাত নাগাদ বেশ কয়েকটি চালান দেশে ঢোকার খবর আসতে শুরু করেছে। হিলি ও সোনামসজিদ বন্দর দিয়ে পেঁয়াজের ট্রাক ঢুকতে শুরু করেছে। এসব পেঁয়াজের আমদানি দর কেজিপ্রতি ২৫ থেকে ৪৫ টাকা পর্যন্ত বলে তথ্য দেন আমদানি সংশ্লিষ্টরা। এর আগে আমদানির অনুমোদনের খবরের পর গতকাল রোববার দুপুরেই রাজধানীর আড়তে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দর ২০ টাকা কমে যায়। রোববার বিকালে দেশি পুরনো পেঁয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হয় ১২০-১৩০ টাকায়, আগের দিন যা ছিল ১৫০ টাকা কেজি। কোথাও কোথাও ১৬০ ও ১৭০ টাকাতেও যা উঠেছিল। আমদানির খবরে মুড়িকাটা পেঁয়াজের দামও ২০-৩০ টাকা কমে বিক্রি হতে শুরু করেছে ৭০-৮০ টাকা কেজি দরে।
ঢাকার বাজারে গত বৃহস্পতিবারও পেঁয়াজ বিক্রি হয় ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। পরের দিন শুক্রবার তা পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি হয় ১৩০-১৩২টাকা। খুচরা পর্যায়ে তা ১৫০ টাকা কিনতে হয় ভোক্তাকে। দাম বাড়ছে দেখে বাড়তি লাভের আশায় বেশি পরিমাণে পেয়াঁজ কিনেছিলেন কারওয়ান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন। রোববার দুপুরের মধ্যে বড় অংশ বিক্রি করতে পারলেও ৫ মণের মত রয়ে গেয়েছিল সেগুলো এখন ১২০ টাকা কেজি দরেই বিক্রি করছেন, আরও কমে যাওয়ার শঙ্কা থেকে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংঘ নিরোধ বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক বনি আমিন খান বলেন, ‘প্রথম দিন ৫০টি আমদানির অনুমতির আবেদনের বিপরীতে দেড় হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এসব পেঁয়াজের পুরোটাই ভারত থেকে আমদানি করা হবে।’
সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী, একটি আইপিতে (আমদানির অনুমতির আবেদন) সর্বোচ্চ ৩০ টন পেঁয়াজ আমদানি করা যাবে। কোনো আমদানিকারক একবারই পেঁয়াজ আমদানি করতে পারবে। প্রতি দিন সর্বোচ্চ ৫০টি একক অনুমোদন দেবে সরকার।
কৃষি মন্ত্রণালয় বলেছে, আগে যারা আমদানির জন্য আবেদন করেছিল তাদের মধ্যে থেকেই প্রথম দিকে অনুমতি দেওয়া হবে। পেঁয়াজের দর সহনীয় পর্যায়ে নেমে না আসা পর্যন্ত তা দেওয়া হবে।
বাংলাদেশে সাধারণত ভারত ও মায়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানি হয় বেশি। এর আগে ভারত ২০২৩ সালে পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করায় এবং রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় তুরস্ক ও পাকিস্তান থেকে পেয়াঁজ আমদানি করেছিল সরকার। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সময়ে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করলে দেশে সংকট কাটাতে পাকিস্তান থেকে বেশি আনা হয়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে প্রবেশের জন্য ৩০ জন আমদানিকারক অনুমতি পেয়েছেন। গতকাল রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত দুই আমদানিকারকের ৬০ টন পেঁয়াজ ওই স্থলবন্দরে দিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। স্থলবন্দরের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রতি টন পেঁয়াজ ২৪৫ থেকে ২৫০ ডলার দামে আমদানি করছেন ব্যবসায়ীরা।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি ডলারের বিনিময় হার সর্বোচ্চ ১২২ টাকা ৩০ পয়সা। এ হিসাবে ধরলেও প্রতি টন পেঁয়াজ আমদানিতে খরচ পড়েছে ২৯ হাজার ৯৬৩ টাকা থেকে ৩০ হাজার ৫০০ টাকা। এতে প্রতি কেজি পেঁয়াজ আমদানিতে খরচ হয় ২৯ টাকা ৯৬ পয়সা থেকে ৩০ টাকা পয়সা।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের তথ্য বলছে, এবার ভারতের কৃষক পেঁয়াজ রপ্তানি না করতে পারায় দর কমে প্রতি কেজি ১০ থেকে ১৫ রুপিতে নেমে এসেছে। আবাদ খরচ না ওঠায় মহাসড়কে পেয়াঁজ ফেলে দিয়ে ট্রাক্টর দিয়ে পিষে ফেলেছে প্রতিবাদ হিসেবেও।
ভারতের কৃষি পণ্যের দর প্রকাশকারী ওয়েবসাইট ‘কিষানডিলস’ এর তথ্য অনুযায়ী, রোববার সর্বোচ্চ গুণগত মানের পেঁয়াজের প্রতি কেজির বাজার দর ছিল পাইকারিতে ১৮ রুপি ৩০ পয়সা। রাতে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির খবর আসে। আমদানির অনুমতির প্রথম দিন রোববার রাতে রকি ট্রের্ডাস নামের একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের ৩০ টন পেঁয়াজ হিলি বন্দরে প্রবেশ করে।
ক্যাম্পাস: ঢাবিতে আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবক দিবস উদযাপিত
সারাদেশ: রৌমারীতে ধান-চাল সংগ্রহ শুরু