আন্দোলনরত মোবাইল ফোন ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে পুরনো ফোন আমদানির অনুমোদন দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে কোন মডেলের পুরনো ফোন বিদেশে থেকে আনা যাবে তা নির্ধারণ করে দেবে সরকার।
দেশে ব্যবহার করা মোবাইল ফোনের তথ্যভাণ্ডার এনইআইআর (ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার) ব্যবস্থা চালু নিয়ে আন্দোলনরত ‘আনঅফিসিয়াল ফোন’ বা ‘গ্রে মার্কেটের’ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ধারাবাহিক সভা শেষে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়। বুধবার সন্ধ্যায় সচিবালয়ে বহুপক্ষীয় ওই সভায় একই সঙ্গে অবৈধ বা আনঅফিসিয়াল ফোনগুলো ১৫ মার্চ পর্যন্ত নিবন্ধন করার সুযোগ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। আর সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, ১৬ ডিসেম্বর থেকেই চালু হবে এনইআইআর। তবে কতদিন পর্যন্ত পুরনো ফোন আমদানি করা যাবে তা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়নি।
বেশ কয়েকদিন থেকে এনইআইআর বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করছে মোবাইল ফোন ব্যবসায়ীরা। বুধবারও তারা রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন স্থানে সড়ক আটকে দাবি আদায়ে আন্দোলন করেছেন। এরমধ্যেই আন্দোলনরত ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসে বিটিআরসি, এনবিআর, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ মোবাইল ফোন খাতের ব্যবসায়ীরা। বৈঠক শেষে মোবাইল বিজনেস কমিউনিটি বাংলাদেশের (এমবিসিবি) সভাপতি মোহাম্মদ আসলাম বলন, “বৈঠকে আমাদের শর্ত দিয়ে পুরনো ফোন আমদানির অনুমোদন দেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন তারা।”
পুরনো ফোনের সেক্ষেত্রে কর দিতে হবে কী না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “ট্যাক্সতো সরকার নেবেই। আমরা বলেছি ট্যাক্সটা যেন ন্যূনতম হয়।”
নতুন ফোন আমদানি প্রক্রিয়া সহজীকরণ করার বিষয়ে কী হল- জানতে চাইলে মোহাম্মদ আসলাম বলেন, “মার্কেটটা যেন সহনীয় থাকে সেভাবে ট্যাক্স করার কথা বলেছি আমরা। ৫৭ শতাংশ ট্যাক্স দিয়ে ফোন আইনা তো আর স্থানীয়ভাবে যারা ফোন বানাবে তাদের সাথে প্রতিযোগিতা করা যাবে না। আমাদের দাবি ট্যাক্সটা যেন সহনীয় হয়, ফোনের দাম যেন না বাড়ে। মানুষ যেন ফোন কিনতে পারে।”
এর আগে মঙ্গলবার রাজধানীর বিটিআরসি ভবনে গ্রে মার্কেটের ব্যবসায়ীদের সংগঠন এমবিসিবির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন কর্মকর্তারা। ওই বৈঠক থেকে বেরিয়ে এমবিসিবির নেতারা বলেছিলেন, বিটিআরসি তাদের পুরনো ফোন আমদানি করতে দিতে চায় না। সেদিন সংগঠনটির সভাপতি আসলাম বলেছিলেন, “আমাদের একমাত্র এজেন্ডা ছিল ইউজ ফোন। আমরা বলেছি, এদেশে ৭০-৭৫ শতাংশ মানুষ ইউজড ফোন কেনে, ব্যবহার করে আবার বিক্রি করে বা এক্সচেঞ্জ করে। আমরা বারবার বলেছি এই ফোন গুলোকে ক্লোন, কপি ও রিফারবিশড বলে কালিমা লেপন করছেন আপনারা। আমরা ক্লোন-কপি বেচি না, আমরা যে মালটা বিক্রি করি সেটা ধনী দেশের মানুষেরা ছেড়ে দেয়, আমরা সেটা দেশে নিয়ে এসে বিক্রি করি। আমরা বলেছি, আপনি বাণিজ্য নীতি যতই সহজ করেন না কেন আমাদের ইউজড ফোনের বাণিজ্য করতে দিতেই হবে।”
একই দাবি নিয়ে বুধবার সন্ধ্যায় তারা সচিবালয়ে বহুপক্ষীয় সভায় অংশ নেন। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের আয়োজনে ওই সভায় বিটিআরসি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং দেশীয় মোবাইল ফোন উৎপাদনকারীদের সংগঠন মোবাইলফোন ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এমআইওবি) নেতারাও অংশ নেয়।
সভার সিদ্ধান্ত অনুকূলে না আসায় এমবিসিবির নেতারা সভাস্থল ত্যাগ করে তাদের সদস্যদের নিয়ে সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় রাজধানীর সোনারগাঁও ক্রসিং অবরোধ করেন। এরপর সরকারের পক্ষ থেকে পুরনো ফোনের আমদানির বিষয়ে ঘোষণা আসে।
সভার সিদ্ধান্তের বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “মোবাইল ফোন আমদানিতে কোনও বাধা নেই। কত পুরানো ফোন আমদানি করা যাবে, কোন কোন মডেল- তা ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ উপযুক্ত কর্তৃপক্ষকে জানাবে। সরকারের উপযুক্ত কর্তৃপক্ষকে আমদানির বিষয়ে অবহিত করতে হবে। সকল পক্ষকে আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগকে লিখিতভাবে এই বিষয়ে জানাতে বলা হয়েছে। এছাড়া মোবাইল ফোন আমদানিতে শুল্ক পুনঃনির্ধারণে এনবিআর ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনা চলমান রয়েছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এ বিষয়ে মধ্যস্থতা করবে। আমদানিকারক ও উৎপাদনকারীরা একসাথে বসে সরকারকে লিখিত ভাবে জানাবে বলে জানিয়েছে।”
এই সিদ্ধান্তের পর দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নষ্ট করার অপচেষ্টা থেকে বিরত থাকার জন্য আহ্বান জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
এতে বলা হয়, “মোবাইল ফোন চোরাচালান, ক্লোনড, রিফার্বিশড ফোন ও বিদেশের পুরানো ফোনের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ, মোবাইল ফোন ছিনতাই, অনলাইন জুয়া, মোবাইল ব্যাংকিং, এমএফএস ইত্যাদি সংশ্লিষ্ট ডিজিটাল অপরাধ থেকে জনসাধারণের সুরক্ষা এবং একইসাথে নিয়ম বহির্ভূতভাবে দেশের বাজারে অনুপ্রবেশকৃত মোবাইল ফোনের শুল্ক ফাঁকি প্রতিরোধে আগামী ১৬ ডিসেম্বর থেকে এনইআইআর ব্যবস্থা চালু করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে সকল অনিবন্ধিত মোবাইল ফোন নিবন্ধন করার জন্য প্রাথমিকভাবে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছিল।
তবে মোবাইল বিজনেস কমিউনিটির সাথে এ বিষয়ে গত তিনদিন ধারাবাহিক আলোচনা শেষে ব্যবসায়ীদের দাবির প্রেক্ষিতে বর্তমানে দেশে থাকা সকল অনিবন্ধিত মোবাইল ফোন ১৬ ডিসেম্বরের পরিবর্তে আগামী ১৫ মার্চ এর মধ্যে নিবন্ধন করার সুযোগ দেয়া হয়েছে।”
ওইদিন এনইআইআর উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এবং মোবাইল বিজনেস কমিউনিটির নেতারা দৃঢ় সমর্থন জানিয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।
অর্থ-বাণিজ্য: ডিজিটাল পেমেন্ট সেবা চালুর অনুমোদন পেল বাংলালিংক
অর্থ-বাণিজ্য: ডিসেম্বরের ৯ দিনেই এসেছে ১১৬ কোটি ডলার রেমিট্যান্স
অর্থ-বাণিজ্য: যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাগ রপ্তানি শুরু করল আরএফএল