image

চলতি অর্থবছরেই রিজার্ভ ৩৫ বিলিয়ন ডলারে নেয়ার লক্ষ্য: গভর্নর

শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫
অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

চলতি অর্থবছরের মধ্যেই দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৪ থেকে ৩৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জন্য আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থার কাছ থেকে নতুন করে ঋণ নেওয়ার প্রয়োজন নেই বলেও জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীতে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘ব্যাংকিং খাত সংস্কার: চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

গভর্নর বলেন, “রিজার্ভ বাড়াতে আমরা কোনও চাপ সৃষ্টি করে ডলার কিনছি না। বাজারভিত্তিক নিলামের মাধ্যমেই ডলার কেনা হচ্ছে। অর্থবছর শেষে রিজার্ভ ৩৪-৩৫ বিলিয়ন ডলারে নেওয়ার লক্ষ্য রয়েছে।”

তিনি দাবি করেন, বর্তমানে ব্যালান্স অব পেমেন্ট বা ডলার পরিস্থিতি নিয়ে বড় কোনও উদ্বেগ নেই। “আমরা একটি খারাপ অবস্থা থেকে ধীরে ধীরে উন্নতির পথে যাচ্ছি। ব্যাংকিং খাতে আস্থা ফিরেছে এবং সামগ্রিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা এসেছে,” বলেন গভর্নর।

তবে ব্যাংকিং খাতে গভীর সংকটের বিষয়টিও অকপটে স্বীকার করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। তিনি বলেন, ‘‘অনেক ব্যাংকে গুরুতর মূলধন ঘাটতি রয়েছে এবং খেলাপি ঋণের হার উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে।’’

“আমার ধারণা ছিল খেলাপি ঋণ ২৫ থেকে ২৭ শতাংশ হবে, কিন্তু বাস্তবে তা প্রায় ৩৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। আমরা কোনও তথ্য লুকাবো না— যা সত্য, সেটাই প্রকাশ করা হবে,” বলেন তিনি।

ব্যাংক সংস্কারের অংশ হিসেবে পাঁচটি ব্যাংক একীভূত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও জানান গভর্নর। এ বিষয়ে আমানতকারীদের আশ্বস্ত করে তিনি বলেন, “একীভূত ব্যাংকগুলোর আমানত সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকবে। আমানত বিমার আওতায় দুই লাখ টাকা পর্যন্ত সুরক্ষা দেওয়া হবে।”

তিনি আরও বলেন, ‘‘নতুন ব্যাংকে ২০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হলে— সেখানে লোকসানের কোনও আশঙ্কা নেই।’’

সেমিনারে গভর্নর নিয়োগ প্রসঙ্গে ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘‘প্রচলিত পদ্ধতিতে গভর্নর নিয়োগ দিলে ‘ইয়েস ম্যান’ পাওয়া যায়, যা ব্যাংক খাতের সুশাসনের জন্য কার্যকর নয়।’’

“বিশ্বের উন্নত দেশের মতো গভর্নরকে মন্ত্রী পদমর্যাদা দিতে হবে, যাতে তিনি স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে যেন একটি ফোনে সরিয়ে দেওয়া না যায়—এমন আইনি সুরক্ষা প্রয়োজন,” বলেন তিনি।

আলোচনায় মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘‘বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তাদের মূল কাজের বাইরে গিয়ে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে জড়িয়েছে। কারণ দেশে কার্যকর ক্যাপিটাল মার্কেট গড়ে ওঠেনি।’’

তিনি বলেন, “ইসলামী ব্যাংক দখলের পর থেকেই ব্যাংকিং খাতে মাফিয়াতন্ত্রের সূচনা হয়, আর সেখান থেকেই সংকট ঘনীভূত হয়েছে।”

তবে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর রিজার্ভ বাড়া, ডলার বাজারের স্থিতিশীলতা এবং বাজারভিত্তিক ডলার রেট চালুর বিষয়গুলোকে ইতিবাচক অগ্রগতি হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি। একইসঙ্গে গভর্নর বলেন, ‘‘রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া শুধু ব্যাংকিং সংস্কার করলেই সমস্যার সমাধান হবে না।’’

একই অনুষ্ঠানে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘‘একসময় ব্যাংকিং খাত উদ্যোক্তা তৈরিতে বড় ভূমিকা রাখলেও নীতিগত দুর্বলতা, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং যাচাই-বাছাই ছাড়া ঋণ দেওয়ার কারণে খাতটি ধ্বংসের মুখে পড়েছে।’’

তিনি বলেন, “বর্তমানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় জাতীয় বাজেটের সমান। আগে প্রকৃত চিত্র আড়াল করা হতো বলে খেলাপি ঋণের হার কম দেখানো হতো। এখন নিয়ম অনুযায়ী হিসাব করায় হার বেড়েছে।”

ব্যাংক রেজুলেশন অ্যাক্টসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক সংস্কার উদ্যোগকে ইতিবাচক উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। একইসঙ্গে ব্যাংকিং খাত ঘুরে দাঁড়াতে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘‘আসন্ন ফেব্রুয়ারির নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে ব্যাংকিং খাত সংস্কার নিয়ে সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার থাকা জরুরি।’’

‘অর্থ-বাণিজ্য’ : আরও খবর

সম্প্রতি