image

এডুকোর তথ্য: শিল্প খাতের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত ৬৬ দশমিক ৬ শতাংশ শিশু

শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫
অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

দেশে শিশুশ্রমের চিত্র দিন দিন উদ্বেগজনক হারে রূপ নিচ্ছে।কর্মরত শিশু শ্রমিকদের মধ্যে শিল্প-কারখানায় ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত রয়েছে ৬৬ দশমিক ৬ শতাংশ। এ ছাড়া ৪৪ দশমিক ৪ শতাংশ শিশু সেবা খাতে এবং ৩৮ দশমিক ৮ শতাংশ কৃষি খাতে কাজ করছে। সব খাতেই শিশুরা ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকি ও শোষণের মুখে রয়েছে।

আন্তর্জাতিক সংস্থা এডুকো বাংলাদেশ ও চাইল্ড লেবার ইলিমিনেশন প্ল্যাটফর্ম (ক্ল্যাপ)-এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক নীতি শেয়ারিং অনুষ্ঠানে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও উঠে এসেছে, বিপজ্জনক শিশুশ্রমের হার সবচেয়ে বেশি শিল্প খাতে, যেখানে ৫৪ দশমিক ৭ শতাংশ শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত। সেবা খাতে এই হার ২৯ দশমিক ৯ শতাংশ এবং কৃষি খাতে তুলনামূলক কম ৩ দশমিক ৩ শতাংশ।

সম্প্রতি রাজধানীর একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশে শিশু শ্রমিকদের পরিবারকে সহায়তার লক্ষ্যে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি শক্তিশালীকরণে প্রস্তাবিত নীতি’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এই নীতি প্রস্তাব উপস্থাপন করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এডুকো বাংলাদেশের ব্যবস্থাপক আফজাল কবির খান।

অনুষ্ঠানে আলোচকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. কামাল উদ্দিন বিশ্বাস, শ্রম মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মো. আওরঙ্গজেব আকন্দ, চাইল্ড লেবার মনিটরিং কাউন্সিলের কো-চেয়ার অ্যাডভোকেট সালমা আলী ও এডুকো বাংলাদেশের পরিচালক (প্রোগ্রাম) আব্দুর রহিম।

ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রস্তাবনায় বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার, জাতীয় আইন ও সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও এখনও লাখো শিশু অনানুষ্ঠানিক খাতে শ্রমে নিয়োজিত।দেশে প্রায় ৩৫ লাখ শিশু বিভিন্ন ধরনের কাজে যুক্ত, তবে তাদের মধ্যে মাত্র ১৭ লাখ শিশুর তথ্য সরকারি হিসাবে রয়েছে। এর মধ্যে অন্তত এক লাখ শিশু সরাসরি ঝুঁকিপূর্ণ ও বিপজ্জনক কাজে নিয়োজিত।’

তিনি আরও জানান, কাজের সুযোগ বেশি থাকায় শহরাঞ্চলে শিশুশ্রমের হার তুলনামূলক বেশি হলেও গ্রামাঞ্চলে শিশুশ্রম কম নয়। বিশেষ করে কৃষি খাত ও মৌসুমি কাজে শিশুরা ব্যাপকভাবে যুক্ত রয়েছে। শিশুশ্রম নিরসনে সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ ও কর্মসূচির আওতা বাড়ানোর জোরালো সুপারিশ করেন খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

কামাল উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, ‘জাতিসংঘ ঘোষিত এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী শিশুশ্রম, শোষণ, পাচার ও সব ধরনের সহিংসতা নির্মূলের বিষয়ে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই লক্ষ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মাধ্যমে একাধিক প্রকল্প ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।’ স্কুলের বাইরে থাকা শিশুদের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় আনা এবং এ খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর বিষয়ে সরকার উদ্যোগ নেবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।

আওরঙ্গজেব আকন্দ বলেন, ‘শিশুশ্রম বন্ধে সর্বজনীন শিশু সুবিধা ও শক্তিশালী সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা জরুরি।’ পাশাপাশি মানসম্মত শিক্ষায় ব্যয় বৃদ্ধি, স্কুলের বাইরে থাকা সব শিশুকে শিক্ষার আওতায় আনা এবং শিশু সুরক্ষা ব্যবস্থায় বিনিয়োগ বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।

সভাপতির বক্তব্যে আফজাল কবির খান বলেন, ‘শিশুশ্রম নির্মূলে সামাজিক সুরক্ষার আওতার যে ফাঁক রয়েছে, তা কমিয়ে আনতে হবে।’ একই সঙ্গে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিধি বাড়িয়ে শিশু শ্রমিকদের পরিবারকে সরাসরি সহায়তা জোরদার করা জরুরি।

এ সময় অন্যান্য বক্তারা বলেন, ‘সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করা ছাড়া বাংলাদেশে শিশুশ্রমের স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়। এ জন্য সমন্বিত নীতি বাস্তবায়ন, বাজেট বৃদ্ধি এবং মাঠপর্যায়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের ওপর জোর দেওয়া হয়।’

‘অর্থ-বাণিজ্য’ : আরও খবর

» শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে এলডিপির প্রেসিডিয়াম সদস্য চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী সাময়িক বহিষ্কার

সম্প্রতি