image
ছবি: সংগৃহীত

ট্রেনের ইঞ্জিন সংকট: চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্যবাহী কনটেইনার জট

বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫
বাকী বিল্লাহ

ট্রেনের ইঞ্জিন সংকট চরমে পৌঁছেছে। ইঞ্জিন সংকটের কারণে আমদানিকৃত পণ্যবাহী কনটেইনার বহনসহ নানামুখী সমস্যা হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে কনটেইনার বহন করার জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে ৪টি ট্রেন চলাচল করা দরকার।

ধারণ ক্ষমতা ৯শ’

থেকে ১ হাজার, আছে ১১শ’ থেকে ১২শ’

দিনে দরকার ৪টি কনটেইনার বহনকারী ট্রেন, চলাচল করছে ১টি

ইঞ্জিন আছে ৭৫টি, আরও দরকার কমপক্ষে ৮০টি

মেয়াদোত্তীর্ণ ৭০ বছর আগের পুরনো নড়বড়ে ইঞ্জিন দিয়ে ট্রেন চলাচল করছে

৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ইঞ্জিন ও যন্ত্রাংশ আমদানির উদ্যোগ: রেলভবন

তার মধ্যে এখন চলছে মাত্র ১টি।

এর ফলে চট্টগ্রাম বন্দরে জমে যাচ্ছে শত শত কনটেইনার। অনেক সময় ধারণ ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। এতে আমদানি কারকরা যেমন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ বার বার রেলপথ মন্ত্রণালয়ে লিখিত জানালেও তা কার্যকর হচ্ছে না। সমস্যা থেকেই যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিব মো. ওমর ফারুক মুঠোফোনে জানান, চট্টগ্রাম বন্দরে রেল পরিবাহিত কনটেইনারের ধারণ ক্ষমতা আছে ৯শ’ থেকে ১ হাজার। বর্তমানে আছে ১১শ’ থেকে ১২শ’। মাঝে মধ্যে ২ হাজার হয়ে যায়।

তিনি বলেন, আমরা চাই দ্রুত কনটেইনার পরিবহন করা হোক। বন্দরে যাতে কনটেইনারের জট না থাকে। এজন্য দিনে কমপক্ষে ২-৩টি কনটেইনার বহনের ট্রেন চলাচল করলে জট কমবে। বিষয়টি রেলপথ মন্ত্রণালয়ে বারবার জানিয়েছি, কিন্তু কাজ হচ্ছে না।

বন্দরের কর্মকর্তারা জানায়, একটি ইঞ্জিনে দিনে সর্বনিম্ন ৩০ থেকে সর্বোচ্চ ৬০টি কনটেইনার বহন করা যায়। দিনে ৫০/৬০টির বেশি না নিতে পারায় বন্দরে কনটেইনার জট হয়ে যায়। আর বেশি দিন থাকলে আমদানিকারকদের চার্জও বেড়ে যায়। এসব পণ্য দ্রুত স্থানান্তর করা দরকার।

আসছে রমজান মাসে পণ্য আমাদানি ও রপ্তানি আরও বেড়ে যাবে। তখন কনটেইনার বহনকারী ট্রেনের সংখ্যা আরও বাড়ানো না হলে সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

দিনে কমপক্ষে ১০০-১২০টি কনটেইনার বহন করলেও জট কিছুটা কমতো। আর বাজারে পণ্যের সংকট হতো না। এ নিয়ে বহুবার লিখিত জানানোর পর কাজ হচ্ছে না। রেলপথ মন্ত্রণালয় নানা ধরনের কথা বলছে। এতে সমস্যা দিন দিন বাড়ছে বলে ওই কর্মকর্তা মন্তব্য করেন।

এ সম্পর্কে রেল ভবনের কয়েকজন কর্মকর্তা বুধবার, (২৪ ডিসেম্বর ২০২৫) এই প্রতিবেদককে বলেন, ট্রেনের ইঞ্জিন সংকট আছে। বর্তমানে ট্রেনের প্রায় ৭৫টি ইঞ্জিন কার্যকর। আরও অন্তত ৬০-৮০টি ইঞ্জিন হলে মোটামুটি ভালো হতো।

এক একটি ইঞ্জিন কিনতে প্রায় ৫০ কোটি টাকা লাগতে পারে। উন্নত দেশগুলো থেকে ইঞ্জিনসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ আমদানি করা হয়। এজন্য কমপক্ষে ৩ হাজার কোটি টাকা দরকার। একনেক ও অর্থমন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্রের পর উদ্যোগ নেয়া হয়। এছাড়া ১০ ভাগ খুচরা যন্ত্রাংশ দরকার, বিদেশে প্রশিক্ষণ দরকার, ইঞ্জিন সংকটের কারণে সমস্যা হচ্ছে।

বন্দরে কনটেইনার পরিবহনের জন্য কমপক্ষে ৩টি ইঞ্জিন দরকার। এখন দিনে গড়ে একটা ট্রেনে ৬০টি কনটেইনার পরিবহন করা যায়। বন্দরে প্রায় ১৫শ’ কনটেইনার জমা থাকে।

আবার কমলাপুর থেকে বিমানবন্দর রেল স্টেশনে ট্রেন বাড়ালেও সমস্যা হয়। শুধু তাই না, ইঞ্জিনের পাশাপাশি ব্যবস্থাপনার জন্য জনবলও দরকার। কিন্তু জনবল সংকটও রয়েছে। শতকরা হিসাবে প্রায় ৭৪ ভাগ জনবল সংকট নিয়ে রেল ভবন কর্তৃপক্ষ কাজ করছেন। আছে মাত্র ২৬ ভাগ জনবল।

মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিন: অবিশ্বাস্য হলেও সত্য পাকিস্তান আমলসহ ১৯৫৩, ১৯৫৬ ও ১৯৬৩ সালের পুরনো নড়বড়ে ইঞ্জিন দিয়ে ট্রেন চলাচল করছে। ৭০ বছর আগেরও পুরনো ইঞ্জিন জোড়াতালি দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে বহু ট্রেন চলাচল করছে। এ ধরনের ইঞ্জিন আছে ৭৬টি।

রেল ভবনের কর্মকর্তাদের মতে, বিশ বছর চালানোর পর ট্রেনের ইঞ্জিনের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। এখন মেয়াদোত্তীর্ণ পুরনো ইঞ্জিন দিয়ে কোনো মতে কাজ চালানো হচ্ছে বলে কর্মকর্তারা মন্তব্য করেন।

ওয়ার্কশপ: রেলওয়ের ওয়ার্কশপে নানামুখী সমস্যার কারণে পুরনো ইঞ্জিন মেরামত করা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। পুরনো নড়বড়ে ইঞ্জিনসহ অন্যান্য সমস্যার কারণে অনেক কাজ ঝুলে আছে।

চলন্ত ট্রেনে ঝাঁকুনি: দেশের অধিকাংশ রেলপথে চলন্ত ট্রেনে ঝাঁকুনিতে যাত্রীদের ভোগান্তি সইতে হচ্ছে। রেলপথে পাথর ঘাটতির কারণে এ সমস্যা হচ্ছে। আবার অনেক সময় কনটেইনার বহনকারী ইঞ্জিনের ক্যাপাসিটির চেয়ে ওজন বেশি হলে রেলপথে সমস্যার সৃষ্টি হয়।

রেলওয়ের একজন সিনিয়র অফিসার নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ট্রেনের ইঞ্জিন আমদানির কার্যক্রম চলমান আছে। বিশ্বের উন্নত দেশ থেকে ইঞ্জিন ও যন্ত্রপাতি আনার চেষ্টা চলছে। এ লক্ষ্যে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।

‘অর্থ-বাণিজ্য’ : আরও খবর

সম্প্রতি