image

চট্টগ্রামের ২২ পোশাক কারখানা বন্ধ

শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫
অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

চট্টগ্রামসহ দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলের পোশাক কারখানায় কাজ কমেছে। এর ফলে অনেক কারখানা উৎপাদন ধীরে চলছে। গত এক বছরে দেনা-পাওনা ও অন্যান্য কারণে চট্টগ্রামে প্রায় ২২টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে কয়েক হাজার শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন। ৫ আগস্টের পর থেকে শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলনের প্রবণতাও বেড়েছে।

চট্টগ্রাম শিল্প পুলিশ ও খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, আর্থিক সংকট, এলসি জটিলতা, ক্রয়াদেশ কমে যাওয়া ইত্যাদি কারণে এসব কারখানা বন্ধ হয়েছে। অনেক কারখানা সময়মত শ্রমিকদের বেতন দিতে পারছে না। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে আগামী কয়েক মাসও একই সংকট দেখা দিতে পারে। তবে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হলে পরিস্থিতি কিছুটা ভালো হতে পারে বলে আশা করছেন তারা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নয়ন, পণ্যের মান বাড়ানো, নতুন বাজার অন্বেষণ, সহজ শর্তে ঋণ ও নীতিমূলক সহায়তা থাকলে রপ্তানি খাত পুনরায় শক্তিশালী হতে পারে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, দেশের রপ্তানি চার মাস ধরে কমছে। গত নভেম্বর মাসে রপ্তানি হয়েছে ৩৮৯ কোটি ডলার, যা গত বছরের একই সময়ে ৪১২ কোটি ডলারের তুলনায় ৫.৫৪ শতাংশ কম। টানা চার মাস কমলেও ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে সামগ্রিক রপ্তানি ইতিবাচক ধারায় রয়েছে।

শীর্ষ পাঁচ রপ্তানি খাতের মধ্যে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য ছাড়া বাকি সব খাতের রপ্তানি নভেম্বর মাসে কমেছে। এতে রয়েছে তৈরি পোশাক, পাট ও পাটজাত পণ্য, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য এবং হোম টেক্সটাইল।

এছাড়া চামড়াবিহীন জুতা, হিমায়িত খাদ্য ও প্লাস্টিক পণ্যের রপ্তানিও কমেছে। বিশেষ করে তৃতীয় শীর্ষ রপ্তানি খাত কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্য রপ্তানিতে ২৫ শতাংশের বেশি ধস নেমেছে।

পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি নভেম্বর মাসে ১০.৫ শতাংশ কমে ৬ কোটি ৮৯ লাখ ডলার হয়েছে। তবে চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত এই খাতে সামান্য ১.৩৬ শতাংশ বৃদ্ধিও হয়েছে। এ পরিস্থিতির পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্ক অন্যতম কারণ। গত এপ্রিল থেকে ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক নিয়ে অস্থিরতা তৈরি হয়। ৩১ জুলাই বিভিন্ন দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা থাকায় জুলাইয়ে অনেক পণ্য জাহাজীকরণ হয়। জুলাই মাসে রপ্তানি বেড়ে যাওয়ার কারণও এটাই।

যুক্তরাষ্ট্রে ২০ শতাংশ বাড়তি শুল্ক আরোপিত হওয়ার পর দেশটির বাজারে তৈরি পোশাকের দাম বেড়ে যায়। ভোক্তা চাহিদা কমে যাওয়ায় বড় ক্রেতারা ক্রয়াদেশ কমিয়ে দেন। ইউরোপের বাজারেও মন্দাভাব দেখা দেয়। এ কারণে কাঁচামালের আমদানি কমে যাচ্ছে, যা ভবিষ্যতে রপ্তানিতে আরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত আমদানিও আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫.৩ শতাংশ কমেছে। বিশেষ করে কাঁচা তুলা আমদানি ১৬.৫ শতাংশ কমে গেছে। এ কারণে স্পিনিং মিল ও টেক্সটাইল ভ্যালু চেইনের কার্যক্রমও হ্রাস পাচ্ছে। চট্টগ্রাম শিল্প পুলিশের তালিকা অনুযায়ী, ক্ষমতার পরিবর্তনের পর চট্টগ্রাম ইপিজেডসহ বিভিন্ন স্থানে ২২টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। এ বছরের শুরু থেকে চলতি মাস পর্যন্ত বন্ধ হয়েছে ১১টি কারখানা। এসব কারখানায় পাঁচ হাজারের বেশি শ্রমিক কাজ করতেন। তবে ছোট ছোট কারখানাগুলোও কাজ না পেয়ে বন্ধ হওয়ার কারণে প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি।

বিজিএমইএ বলছে, চট্টগ্রামে তাদের সদস্যভুক্ত ৬৯৯টি কারখানার মধ্যে ৬১০টি সচল, তবে বর্তমানে শুধু ৩৪৮টি কারখানা কার্যক্রম চালাচ্ছে। ২২টি বন্ধ কারখানার মধ্যে চট্টগ্রাম ইপিজেডে চারটি রয়েছে। এতে নাসা গ্রুপের টয় উড (বিডি) কোম্পানি, এমএনসি অ্যাপারেলস লিমিটেড, থিয়নিস অ্যাপারেলস লিমিটেড এবং জেএমএস গার্মেন্টস লিমিটেড অন্তর্ভুক্ত। এ চার কারখানায় মোট ৪ হাজার ৮১৮ শ্রমিক কাজ করতেন। বাকিদের মধ্যে আরও চার হাজার শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন।

‘অর্থ-বাণিজ্য’ : আরও খবর

সম্প্রতি