image

বেনাপোল স্থলবন্দরে মাশুল বৃদ্ধি, ব্যবসায়ীদের ক্ষোভ

রোববার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫
জামাল হোসেন, বেনাপোল

দেশের সর্ববৃহৎ বেনাপোল স্থলবন্দরের বিভিন্ন সেবার মাশুল ৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রতিটি সেবার বিপরীতে কর, টোল ও মাশুলের পরিমাণ আগের চেয়ে এই হারে বেড়েছে।

আগামী ১ জানুয়ারি ২০২৬ থেকে নতুন এই মাশুল কার্যকর হবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

দেশের অন্যান্য স্থলবন্দরের তুলনায় বেনাপোল স্থলবন্দরের মাশুল কিছুটা বেশি হওয়ায় এজন্য আলাদা প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান স্বাক্ষরিত ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বেনাপোল স্থলবন্দরে মোট ২৭ ধরনের সেবার বিপরীতে মাশুল আদায় করা হয়।

বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট ব্যবহারকারী যাত্রীদের বেনাপোল স্থলবন্দরের প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল ব্যবহারের জন্য প্রবেশ ফি, ওয়েটিং সার্ভিস ও টার্মিনাল চার্জ বাবদ ২০২৫ সালে মাশুল ছিল ৪৯ টাকা ৭৯ পয়সা। ২০২৬ সালের জন্য তা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ৫২ টাকা ২৭ পয়সা।

বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি করা বাস, ট্রাক ও লরি প্রবেশ করলে এখন দিতে হবে ১৮৪ টাকা ৭০ পয়সা, যা আগে ছিল ১৭৫ টাকা ৯০ পয়সা। মোটরকার, জিপ, পিকআপ ও থ্রি-হুইলারের জন্য মাশুল নির্ধারণ করা হয়েছে ১১০ টাকা ৮২ পয়সা, যা আগে ছিল ১০৫ টাকা ৫৪ পয়সা। মোটরসাইকেল ও বাইসাইকেলের জন্য নতুন মাশুল ৩৬ টাকা ৯৫ পয়সা, আগে ছিল ৩৫ টাকা ১৯ পয়সা।

বেনাপোল স্থলবন্দরের ওজন মাপার যন্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে ট্রাক ও লরির জন্য আগে দিতে হতো ৮৪ টাকা ৪৩ পয়সা, এখন দিতে হবে ৮৮ টাকা ৬৫ পয়সা।

এছাড়া কাগজপত্র প্রক্রিয়াকরণ মাশুল বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৯৫ টাকা ০৭ পয়সা, যা আগে ছিল ১৮৫ টাকা ৭৮ পয়সা। কোনো যানবাহন ইয়ার্ডে সারারাত অবস্থান করলে আগে নেয়া হতো ১০৬ টাকা ১৮ পয়সা, এখন দিতে হবে ১১১ টাকা ৪৯ পয়সা।

গুদামে পণ্য সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও সময়ভেদে মাশুল বাড়ানো হয়েছে। পণ্য হ্যান্ডলিং চার্জও বৃদ্ধি পেয়েছে। আগে প্রতি টন পণ্য লোড-আনলোডে মাশুল ছিল ৫৩ টাকা ১০ পয়সা, এখন তা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৫ টাকা ৭৬ পয়সা। একইভাবে যন্ত্রাংশ (ইক্যুইপমেন্ট) ব্যবহারের ক্ষেত্রে আগে নেয়া হতো ১২৭ টাকা ৩৯ পয়সা, আগামী ১ জানুয়ারি থেকে নেয়া হবে ১৩৩ টাকা ৭৬ পয়সা। এভাবে সব ধরনের মাশুলের পরিমাণই বৃদ্ধি পেয়েছে।

বেনাপোল ছাড়াও দেশের অন্যান্য স্থলবন্দরগুলোতে ৫ শতাংশ হারে মাশুল বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে তা বেনাপোলের তুলনায় কম। যেসব পাসপোর্টধারী যাত্রী বেনাপোল ছাড়া অন্যান্য স্থলবন্দর ব্যবহার করবেন, তাদের জন্য ২০২৫ সালে মাশুল ছিল ৪৯ টাকা ৭৯ পয়সা, নতুন বছরে তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৫২ টাকা ২৭ পয়সা।

বেনাপোল ছাড়া অন্য স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি করা বাস, ট্রাক ও লরির জন্য এখন দিতে হবে ১৫৯ টাকা ২২ পয়সা, যা আগে ছিল ১৫১ টাকা ৬৪ পয়সা। মোটরকার ও জিপের জন্য মাশুল নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৫ টাকা ৫২ পয়সা। মোটরসাইকেল, স্কুটার, বেবি ট্যাক্সি ও থ্রি-হুইলারের জন্য নতুন মাশুল ৪৭ টাকা ৮৩ পয়সা। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানির ক্ষেত্রেও পণ্যভেদে মাশুল বৃদ্ধি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বেনাপোল আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সহ-সভাপতি আমিনুল হক বলেন, আমাদের সঙ্গে বন্দরের আলোচনায় বলা হয়েছিল বন্দরের উন্নয়ন, পর্যাপ্ত ক্রেন, ফর্কলিফট ও গুদাম বৃদ্ধি করার পর মাশুল বাড়ানো হবে। কিন্তু কোনো দৃশ্যমান উন্নয়ন না করেই প্রতি বছর বন্দরের অভ্যন্তরে আমদানিকৃত পণ্য সংরক্ষণের ভাড়াসহ অন্যান্য বিলের ওপর চক্রবৃদ্ধি হারে ৫ শতাংশ করে মাশুল বাড়ানো হচ্ছে। বর্তমানে ভাড়া প্রায় দুই শত গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বিষয়ে ব্যবসায়ী বা কোনো সংগঠন কার্যকরভাবে কিছু বলছে না। এভাবে ভাড়া বাড়তে থাকলে একদিন ভাড়া দিতে না পেরে পণ্য বন্দরে রেখেই চলে যেতে হবে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রতি বছর যেভাবে চার্জ বাড়াচ্ছে, তা ব্যবসায়ীদের জন্য ক্ষতিকর। এভাবে চক্রবৃদ্ধি হারে মাশুল বাড়তে থাকলে বন্দরটি ধ্বংসের মুখে পড়বে। এই অতিরিক্ত খরচ আমদানিকৃত পণ্যের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বাজারে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ হবে। এ বিষয়ে সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারও মাশুল বৃদ্ধি করা হয়েছে। মাশুলই স্থলবন্দরের প্রধান আয়ের উৎস। আগামী ১ জানুয়ারি থেকে নতুন মাশুল কার্যকর হবে। এটি প্রধান কার্যালয়ের সিদ্ধান্ত, আমরা শুধু বাস্তবায়ন করছি।

‘অর্থ-বাণিজ্য’ : আরও খবর

» রিটার্ন দাখিলের সময় বাড়লো আরও একমাস

সম্প্রতি