alt

টিআরএনবি’র আয়োজনে ‘প্রতিযোগিতা ও অংশীদারিত্বে প্রেক্ষাপট: প্রসঙ্গ এমএফএস’ শীর্ষক ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত

সংবাদ অনলাইন ডেস্ক : রোববার, ০৯ মে ২০২১

মার্কেটে প্রতিযোগিতা বজায় রাখতে গিয়ে মনোপলি যাতে না করতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখার জন্য প্রতিযোগিতা কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। তিনি বলেন, আমরা মুক্তবাজার অর্থনীতি গ্রহণ করেছি। এর প্রধান শর্ত প্রতিযোগিতা। এটা বজায় রাখতে গিয়ে মনোপলি যাতে না হয় এজন্য প্রতিযোগিতা কমিশনের মতো কমিশন গঠন করা হয়েছে। যাতে এককভাবে কেউ বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে। কারণ প্রতিযোগিতা না থাকলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে মানুষ। প্রতিযোগিতা অবশ্যই বাঁচিয়ে রাখবো মনোপলি হতে দিবো না। ৮ মে টেলিকম রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ (টিআরএনবি) আয়োজিত ‘প্রতিযোগিতা ও অংশীদারিত্বে প্রেক্ষাপট: প্রসঙ্গ এমএফএস ’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এসব কথা বলেন। আলোচনায় দেশের অর্থনৈতিক খাতের নীতি-নির্ধারক ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অংশগ্রহণ করেন।

মোস্তাফা জব্বার বলেন, চীনের মতো দেশে আলিবাবা-এর মতো জায়ান্টের মনোপলি নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়োজন পড়েছে। এ সময় প্রতিযোগিতা কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, অভিযোগ পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করবেন না। কারণ মানুষ অভিযোগ করার প্রক্রিয়াকে ভয় পায়, ভয় পায় হেনস্তা হওয়ারও। তাই কেউ যেন এমএফএস বাজারে মনোপলি করতে না পারে, সে বিষয়টি আপনারা লক্ষ্য রাখবেন। এমএফএস-এর চার্জ নির্ধারণের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, চার্জ নির্ধারণের বিষয়টি খবরদারি করার মতো বিষয়। কেউ ২০ টাকা, কেউ ১৪ টাকা নিচ্ছে। এটা সে তার প্রতিষ্ঠানের হিসাব করে নির্ধারণ করছে। আমি এমএফএস-এর সর্বোচ্চ চার্জ নির্ধারণ করার পক্ষে, সর্বনিম্ন চার্জ নির্ধারণের পক্ষে না। কারণ সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করা থাকলে কেউ বেশি নিতে পারবে না। তাতে জনগণ উপকৃত হবে। এ সময় তিনি এমএফএস-এ ইন্টারঅপারেবিলিটি না হওয়াকে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা বলেও উল্লেখ করেন। ইন্টারঅপারেবিলিটি কেন দেওয়া যাচ্ছে না, তা নিয়ে তিনি বিষ্ময় প্রকাশ করেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের চেয়ারম্যান শ্যামসুন্দর সিকদার বলেন, দেশে এমএফএস বাজারে একটি মনোপলি ছিল। মনোপলিটা ভাঙতে পেরেছে ‘নগদ’। প্রতিযোগিতা অবশ্যই থাকতে হবে। অনেকটা কমে গেলেও এখনো মনোপলি আছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক সর্বোচ্চ সীমা করে দিয়েছিল হাজারে সাড়ে ১৮ টাকা নেওয়ার কথা। অথচ সেখানে এখন ২০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। দেড় টাকা নিয়ে কেউ প্রতিবাদ করছে না, কিন্তু দেড় টাকায় তো হাজার হাজার কোটি টাকা হয়ে যায়। এটা সরাসরি চুরি করা হচ্ছে। এ সময় তিনি এমএফএস-এর চার্জ কমানোর ওপর গুরুত্বরোপ করেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর আবুল কাশেম তাঁর বক্তব্যে বলেন, বিকাশ লস করছে, কিন্তু ব্র্যাক ব্যাংক তো লস করছে না। আমি মনে করি না যে, বিকাশ লস করছে। হয়তো তারা ব্যালেন্স শিটে লস দেখাচ্ছে। তিনি বলেন, বিকাশের দোকানে কি ১৮ টাকা ৫০ পয়সা ব্যানার লাগানো যায় না? কেন হাজারে ২০ টাকা নেওয়া হয়? বিকাশ একটি লাইসেন্সড প্রতিষ্ঠান। তাদের মাধ্যমে এমন কোটি কোটি টাকা কেন প্রতারণা করছে? এ বিষয়টি সুরাহা করা দরকার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পিএসডি বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক বদিউজ্জামান দিদার বলেন, আমরা ২০১১-১২ সালে একটা সেইলিং দিয়েছিলাম যে, যেন এর ওপরে না যায়। এর সাথে অনেকগুলো পক্ষ জড়িত। সবাইকে নিয়েই প্রাইসিং। সার্ভিস প্রোভাইডারদের সাথে কথা বলে আমরা প্রাইস সেট করি। প্রাইস হয়তো আমরা কমাতে পারব। ইউএসএসডি-এর পরিবর্তে অ্যাপে যখন পুরো মার্কেট চলে আসবে, তখন আমরা এটা করতে পারব। আমরাও চাই যে প্রাইস কমে আসুক। এতে মানুষের উপকার বেশি হবে। প্রাইস যদি আসলেই কমানো যায়, আমরা করব। গ্রাহকদের ও সার্ভিস প্রোভাইডারদের উপকারে এলে আমরা প্রাইস কমাব।

প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান মো. মফিজুল ইসলাম বলেন, বাজারের প্লেয়ার যারা আছে, তারা ফাউল প্লে করছে কিনা, তা দেখার দায়িত্ব সরকারের। পলিসি সাপোর্টের জায়গা থেকে কোনো সমস্যা নেই। মার্কেট যেন কমপিটেটিভ হয়, তাহলে ভোক্তা গ্রাহক লাভবান হয়, অন্যদিকে সাপ্লাই চেইন বা ইনভেস্টররা লাভবান হয়। আমরা এখনো পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাইনি। বাংলাদেশ ব্যাংক যে সার্ভিস চার্জটি নির্ধারণ করে দিয়েছে, ১৮ টাকার ওপরে না নেওয়ার। এটা যদি না মানা হয়, তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

নগদ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক সেন্ড মানি ফ্রি করার নির্দেশনা দিয়েছে, আমরা প্রথম থেকে ফ্রি রেখেছি। সেন্ড মানিতে আসলে কোনো খরচ নেই। তিনি বলেন, আমরা কিন্তু ইনোভেশন নিয়ে এসেছি। ডিজিটাল কেওয়াইসি ও *১৬৭# এর মাধ্যমে মানুষ অ্যাকাউন্ট খুলতে পারছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলো এমএফএস সেবা ‘নগদ’ ব্যবহার করে টাকা সাশ্রয় করছে। সরকার ৫০০ কোটি টাকা সাশ্রয় করেছে। এই বাজারে প্রতিযোগিতা থাকলে গ্রাহকরা উপকৃত হবে। লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি করতে পারলে এমএফএস-এ প্রতিযোগিতা আরও বাড়বে।

ডাচ-বাংলা ব্যাংক ও রকেটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরিন বলেন, বলা হয় এমএফএস বাজারে ১৫টি প্রতিষ্ঠান আছে। আমার মতে ২-৩টা ছাড়া বাকি কেউ আছে বলে আমি মনে করি না। মনোপলি হওয়ার পরে ৮০ শতাংশ শেয়ার ছিল। এখন নতুন একটি অপারেটরের কারণে ৭০ শতাংশে এসেছে। আগে প্রোপার কেওয়াইসি মেনে গ্রাহক তৈরি করা হয়নি। এসব কারণে মনোপলি দাড়িয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, আপনারা এভাবে যদি প্রাইস রাখেন, তাহলে সব গ্রাহক চলে যাবে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে। সে কারণে প্রাইস কমাতে হবে। এখন সময় এসেছে প্রাইসিং নিয়ে কথা বলার ও প্রাইস কমানো।

রবি আজিয়াটা লিমিটেডের এমডি ও সিইও এবং এমটবের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, শুরু থেকে আমরা এমএফএসগুলো চালু রাখতে সহযোগিতা করেছি। ভবিষ্যতে বাংলাদেশের এমএফএস এমন থাকবে না। যখন ডিজিটাল কারেন্সি চলে আসবে, তখন কোনো ডিস্ট্রিবিউটর থাকবে না। আরও কিছু খরচ কমানোর সুযোগ আছে। খরচ কমালে গ্রাহকদের জন্য ভালো হবে।

বিকাশ-এর চিফ কমার্শিয়াল অফিসার মিজানুর রশীদ বলেন, সহজলভ্যতা দিতে গিয়ে আমরা এই চার্জ নিচ্ছি। বাংলাদেশ ব্যাংকের নেতৃত্বে নতুন কোনো রেট যদি আমরা দেশের জনগণের কল্যাণে নির্ধারণ করি, তাহলে সেটা যেন ব্যবসাবান্ধব হয়। অর্থাৎ সেই রেট যেন অপারেটরগুলোর জন্যও ভালো হয়।

টিআরএনবি-এর সভাপতি রাশেদ মেহেদীর সভাপতিত্বে আলোচনায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক সমীর কুমার দে। এ ছাড়া বিআইবিএম-এর সহযোগী অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান আলম, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার ইফতেখার জোনায়েদ প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন।

ছবি

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে আমানতের শীর্ষে ইসলামী ব্যাংক

ছবি

লালদিয়া-পানগাঁওয়ে ‘১০ বছর করমুক্ত সুবিধা পাবে’ ২ বিদেশি কোম্পানি

ছবি

১৯ দিনে এলো ২৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা রেমিট্যান্স

ছবি

জুলাই-অক্টোবর মাসে রাজস্ব আহরণে ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি

ছবি

চার মাসে এডিপি বাস্তবায়ন ৮ শতাংশ

ছবি

প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে দক্ষতা উন্নয়ন অপরিহার্য : বিজিএমইএ সভাপতি

ছবি

এলসি জটিলতায় মেঘনা সিমেন্ট, বেড়েছে লোকসান

ছবি

দেশের জাহাজনির্মাণ শিল্পের বড় রপ্তানি, আমিরাত যাচ্ছে তিন ল্যান্ডিং ক্রাফ্ট

ছবি

ই-সার্ভিসেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সফটওয়্যারের উদ্বোধন

ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের উন্নয়নে এসএমই ফাউন্ডেশনের সঙ্গে কাজ করবে বিএফটিআই

ছবি

কম সুদে ছোট অঙ্কের ঋণ দেবে ইউসিবি

ছবি

নিউমুরিং টার্মিনাল বিদেশি কোম্পানিকে দেওয়ার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিচ্ছে সরকার

ছবি

স্বর্ণের দাম বেড়ে ভরি ২ লাখ ৯ হাজার ৫২০ টাকা

ছবি

আন্তর্জাতিক কার্ডে কেনা যাবে বিমানের টিকিট

ছবি

শ্রম আইনে সংশোধনীর বিষয়ে আইএলওকে অবহিত করেছেন শ্রম উপদেষ্টা

ছবি

মৎস্য প্রক্রিয়াকরণে মানদণ্ড অনুসরণের তাগিদ

ছবি

তিন রাজস্ব আইনের অথেনটিক ইংরেজি টেক্সটের গেজেট প্রকাশ

ছবি

বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অর্থ ফেরত পাঠানো: জাতীয় কমিটির সংস্কার চূড়ান্ত

ছবি

এখনই নতুন বিনিয়োগ না করলে আগামীতে বিদ্যুৎ সংকট দেখা দিবে: সেমিনারে বক্তারা

ছবি

এনইআইআর বাতিল নয়, পুনর্গঠন চান মোবাইল ব্যবসায়ীরা

ছবি

দুই বছর কমলো, ৩ বছর পরপর বাড়বে শ্রমিকের মজুরি

ছবি

বিএসটিআইয়ের সব সেবা পাওয়া যাবে অনলাইনে

ছবি

নীতি সুদহার অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত, মূল্যস্ফীতি বাড়ার আশঙ্কা

ছবি

বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সাপ্লাই চেইন শক্তিশালী করতে নতুন প্ল্যাটফর্ম চালু

ছবি

রুলস হওয়ার আগেই পুঁজিবাজারের সমস্যার সমাধান খুঁজতে হবে: ডিএসই চেয়ারম্যান

ছবি

শ্রম আইন নিয়ে অধ্যাদেশ প্রত্যাখ্যান করেছে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ এবং বিটিএমএ

ছবি

শ্রম আইন সংশোধন: ন্যূনতম ২০ জনের সম্মতি থাকলেই ট্রেড ইউনিয়ন, অধ্যাদেশ জারি

ছবি

পাঁচ ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের ক্ষতিপূরণ নিয়ে ধোঁয়াশা

ছবি

ডিএসইতে উত্থান, লেনদেন নয় দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ

ছবি

সরকার পাট পণ্যের বৈচিত্রকরণে কাজ করছে: বস্ত্র ও পাট উপদেষ্টা

ছবি

রোহিঙ্গাদের জন্য স্থায়ী অবকাঠামো তৈরির প্রস্তাব অনুমোদন

ছবি

২২ বছরের জন্য পানগাঁও টার্মিনালের দায়িত্বে সুইস প্রতিষ্ঠান মেডলগ

ছবি

বাজারে গিগাবাইট বি৮৫০আই মিনি-আইটিএক্স মাদারবোর্ড

ছবি

লালদিয়ায় কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণে আনুষ্ঠানিক চুক্তি সই

ছবি

বন্ড ব্যবস্থার অটোমেশন সিদ্ধান্ত, ম্যানুয়াল আর থাকবে না

ছবি

শেয়ারবাজারে বড় উত্থান

tab

টিআরএনবি’র আয়োজনে ‘প্রতিযোগিতা ও অংশীদারিত্বে প্রেক্ষাপট: প্রসঙ্গ এমএফএস’ শীর্ষক ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত

সংবাদ অনলাইন ডেস্ক

রোববার, ০৯ মে ২০২১

মার্কেটে প্রতিযোগিতা বজায় রাখতে গিয়ে মনোপলি যাতে না করতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখার জন্য প্রতিযোগিতা কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। তিনি বলেন, আমরা মুক্তবাজার অর্থনীতি গ্রহণ করেছি। এর প্রধান শর্ত প্রতিযোগিতা। এটা বজায় রাখতে গিয়ে মনোপলি যাতে না হয় এজন্য প্রতিযোগিতা কমিশনের মতো কমিশন গঠন করা হয়েছে। যাতে এককভাবে কেউ বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে। কারণ প্রতিযোগিতা না থাকলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে মানুষ। প্রতিযোগিতা অবশ্যই বাঁচিয়ে রাখবো মনোপলি হতে দিবো না। ৮ মে টেলিকম রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ (টিআরএনবি) আয়োজিত ‘প্রতিযোগিতা ও অংশীদারিত্বে প্রেক্ষাপট: প্রসঙ্গ এমএফএস ’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এসব কথা বলেন। আলোচনায় দেশের অর্থনৈতিক খাতের নীতি-নির্ধারক ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অংশগ্রহণ করেন।

মোস্তাফা জব্বার বলেন, চীনের মতো দেশে আলিবাবা-এর মতো জায়ান্টের মনোপলি নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়োজন পড়েছে। এ সময় প্রতিযোগিতা কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, অভিযোগ পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করবেন না। কারণ মানুষ অভিযোগ করার প্রক্রিয়াকে ভয় পায়, ভয় পায় হেনস্তা হওয়ারও। তাই কেউ যেন এমএফএস বাজারে মনোপলি করতে না পারে, সে বিষয়টি আপনারা লক্ষ্য রাখবেন। এমএফএস-এর চার্জ নির্ধারণের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, চার্জ নির্ধারণের বিষয়টি খবরদারি করার মতো বিষয়। কেউ ২০ টাকা, কেউ ১৪ টাকা নিচ্ছে। এটা সে তার প্রতিষ্ঠানের হিসাব করে নির্ধারণ করছে। আমি এমএফএস-এর সর্বোচ্চ চার্জ নির্ধারণ করার পক্ষে, সর্বনিম্ন চার্জ নির্ধারণের পক্ষে না। কারণ সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করা থাকলে কেউ বেশি নিতে পারবে না। তাতে জনগণ উপকৃত হবে। এ সময় তিনি এমএফএস-এ ইন্টারঅপারেবিলিটি না হওয়াকে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা বলেও উল্লেখ করেন। ইন্টারঅপারেবিলিটি কেন দেওয়া যাচ্ছে না, তা নিয়ে তিনি বিষ্ময় প্রকাশ করেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের চেয়ারম্যান শ্যামসুন্দর সিকদার বলেন, দেশে এমএফএস বাজারে একটি মনোপলি ছিল। মনোপলিটা ভাঙতে পেরেছে ‘নগদ’। প্রতিযোগিতা অবশ্যই থাকতে হবে। অনেকটা কমে গেলেও এখনো মনোপলি আছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক সর্বোচ্চ সীমা করে দিয়েছিল হাজারে সাড়ে ১৮ টাকা নেওয়ার কথা। অথচ সেখানে এখন ২০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। দেড় টাকা নিয়ে কেউ প্রতিবাদ করছে না, কিন্তু দেড় টাকায় তো হাজার হাজার কোটি টাকা হয়ে যায়। এটা সরাসরি চুরি করা হচ্ছে। এ সময় তিনি এমএফএস-এর চার্জ কমানোর ওপর গুরুত্বরোপ করেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর আবুল কাশেম তাঁর বক্তব্যে বলেন, বিকাশ লস করছে, কিন্তু ব্র্যাক ব্যাংক তো লস করছে না। আমি মনে করি না যে, বিকাশ লস করছে। হয়তো তারা ব্যালেন্স শিটে লস দেখাচ্ছে। তিনি বলেন, বিকাশের দোকানে কি ১৮ টাকা ৫০ পয়সা ব্যানার লাগানো যায় না? কেন হাজারে ২০ টাকা নেওয়া হয়? বিকাশ একটি লাইসেন্সড প্রতিষ্ঠান। তাদের মাধ্যমে এমন কোটি কোটি টাকা কেন প্রতারণা করছে? এ বিষয়টি সুরাহা করা দরকার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পিএসডি বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক বদিউজ্জামান দিদার বলেন, আমরা ২০১১-১২ সালে একটা সেইলিং দিয়েছিলাম যে, যেন এর ওপরে না যায়। এর সাথে অনেকগুলো পক্ষ জড়িত। সবাইকে নিয়েই প্রাইসিং। সার্ভিস প্রোভাইডারদের সাথে কথা বলে আমরা প্রাইস সেট করি। প্রাইস হয়তো আমরা কমাতে পারব। ইউএসএসডি-এর পরিবর্তে অ্যাপে যখন পুরো মার্কেট চলে আসবে, তখন আমরা এটা করতে পারব। আমরাও চাই যে প্রাইস কমে আসুক। এতে মানুষের উপকার বেশি হবে। প্রাইস যদি আসলেই কমানো যায়, আমরা করব। গ্রাহকদের ও সার্ভিস প্রোভাইডারদের উপকারে এলে আমরা প্রাইস কমাব।

প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান মো. মফিজুল ইসলাম বলেন, বাজারের প্লেয়ার যারা আছে, তারা ফাউল প্লে করছে কিনা, তা দেখার দায়িত্ব সরকারের। পলিসি সাপোর্টের জায়গা থেকে কোনো সমস্যা নেই। মার্কেট যেন কমপিটেটিভ হয়, তাহলে ভোক্তা গ্রাহক লাভবান হয়, অন্যদিকে সাপ্লাই চেইন বা ইনভেস্টররা লাভবান হয়। আমরা এখনো পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাইনি। বাংলাদেশ ব্যাংক যে সার্ভিস চার্জটি নির্ধারণ করে দিয়েছে, ১৮ টাকার ওপরে না নেওয়ার। এটা যদি না মানা হয়, তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

নগদ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক সেন্ড মানি ফ্রি করার নির্দেশনা দিয়েছে, আমরা প্রথম থেকে ফ্রি রেখেছি। সেন্ড মানিতে আসলে কোনো খরচ নেই। তিনি বলেন, আমরা কিন্তু ইনোভেশন নিয়ে এসেছি। ডিজিটাল কেওয়াইসি ও *১৬৭# এর মাধ্যমে মানুষ অ্যাকাউন্ট খুলতে পারছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলো এমএফএস সেবা ‘নগদ’ ব্যবহার করে টাকা সাশ্রয় করছে। সরকার ৫০০ কোটি টাকা সাশ্রয় করেছে। এই বাজারে প্রতিযোগিতা থাকলে গ্রাহকরা উপকৃত হবে। লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি করতে পারলে এমএফএস-এ প্রতিযোগিতা আরও বাড়বে।

ডাচ-বাংলা ব্যাংক ও রকেটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরিন বলেন, বলা হয় এমএফএস বাজারে ১৫টি প্রতিষ্ঠান আছে। আমার মতে ২-৩টা ছাড়া বাকি কেউ আছে বলে আমি মনে করি না। মনোপলি হওয়ার পরে ৮০ শতাংশ শেয়ার ছিল। এখন নতুন একটি অপারেটরের কারণে ৭০ শতাংশে এসেছে। আগে প্রোপার কেওয়াইসি মেনে গ্রাহক তৈরি করা হয়নি। এসব কারণে মনোপলি দাড়িয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, আপনারা এভাবে যদি প্রাইস রাখেন, তাহলে সব গ্রাহক চলে যাবে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে। সে কারণে প্রাইস কমাতে হবে। এখন সময় এসেছে প্রাইসিং নিয়ে কথা বলার ও প্রাইস কমানো।

রবি আজিয়াটা লিমিটেডের এমডি ও সিইও এবং এমটবের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, শুরু থেকে আমরা এমএফএসগুলো চালু রাখতে সহযোগিতা করেছি। ভবিষ্যতে বাংলাদেশের এমএফএস এমন থাকবে না। যখন ডিজিটাল কারেন্সি চলে আসবে, তখন কোনো ডিস্ট্রিবিউটর থাকবে না। আরও কিছু খরচ কমানোর সুযোগ আছে। খরচ কমালে গ্রাহকদের জন্য ভালো হবে।

বিকাশ-এর চিফ কমার্শিয়াল অফিসার মিজানুর রশীদ বলেন, সহজলভ্যতা দিতে গিয়ে আমরা এই চার্জ নিচ্ছি। বাংলাদেশ ব্যাংকের নেতৃত্বে নতুন কোনো রেট যদি আমরা দেশের জনগণের কল্যাণে নির্ধারণ করি, তাহলে সেটা যেন ব্যবসাবান্ধব হয়। অর্থাৎ সেই রেট যেন অপারেটরগুলোর জন্যও ভালো হয়।

টিআরএনবি-এর সভাপতি রাশেদ মেহেদীর সভাপতিত্বে আলোচনায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক সমীর কুমার দে। এ ছাড়া বিআইবিএম-এর সহযোগী অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান আলম, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার ইফতেখার জোনায়েদ প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন।

back to top