alt

সমবায় সমিতির অর্থ আত্মসাৎ চলছেই, প্রয়োজন সচেতনতা

রিয়াজ উদ্দিন : শুক্রবার, ১৩ মে ২০২২

প্রতিটি মানুষই তার সম্পদ নিরাপদ রাখতে চায়। সেজন্য মানুষ নানান পদ্ধতি অবলম্বন করে। প্রয়োজনে ফিরে পাবার আশায় মানুষ নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি, সমিতি, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকে টাকাপয়সা ও মূল্যবান সামগ্রী জমা রাখে। আধুনিক সভ্যতা ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ব্যাংকই হলো সাধারণ মানুষের অর্থের সবচেয়ে নিরাপদ আমানতদার। সম্প্রতি সংঘটিত দুটি সমিতির আর্থিক কেলেঙ্কারির খবরে আরও একবার ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক কর্মকান্ডের নাজুকতা প্রকাশিত হয়েছে।

সর্বশেষ ঘটনাটি রাজধানীর খিলগাঁওয়ের একটি সমবায় সমিতির। প্রায় ২০ বছর তালতলা মার্কেটের দোতলায় গ্রীন বার্ড নামে একটি সমিতি নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে কার্যক্রম পরিচালনা করে। রিকশা চালক, দিনমজুর, মুদি দোকানি, কাজের বুয়া, গার্মেন্টস শ্রমিকসহ নানান শ্রেণীপেশার মানুষের থেকে আমানত সংগ্রহ করে। প্রতি মাসে লাখে ১৫০০ টাকা হিসাবে জমাকারীকে লাভ প্রদান করে যেখানে ব্যাংকে টাকা রাখলে সাকুল্যে ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা পাওয়া যায়। ব্যাংকে মুনাফা কম থাকায় সাধারণ মানুষ অধিক লাভের আশায় ওই সমিতিতে টাকা জমা রাখেন।

ঈদুল ফিতরের ছুটি শেষে সমিতির মালিক আলাউদ্দিন হোসেন জমাকারীদের জানান তার কর্মচারিরা টাকা আত্মসাৎ করে ঈদের আগে পালিয়ে গেছে। বাড়িঘর বিক্রি করে গ্রাহকদের পাওনা পরিশোধের ওয়াদা দেন। এ খবরে সমিতির সকল গ্রাহক সমিতির অফিস ঘিরে আন্দোলন শুরু করে। খবর পেয়ে রামপুরা থানা পুলিশ আলাউদ্দিনকে তাদের হেফাজতে নেন। গ্রাহকরা থানার সামনে জড়ো হয়ে আন্দোলন করতে থাকেন। গ্রাহকদের আশ্বস্ত করতে থানা প্রত্যেক জমাকারীর জমার তথ্য লিপিবদ্ধ করে রাখেন। থানা প্রাথমিকভাবে দায়িত্ব নিলেও বাস্তবে গ্রাহকদের টাকা পরিশোধ অনেকটাই অনিশ্চিত।

দ্বিতীয় ঘটনাটি খুলনার। রিয়েল সঞ্চয় ও ঋণদান কো-অপারেটিভ সোসাইটি নামে একটি সমিতি গ্রাহকের ৩০ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা। নিম্ন আয়ের মানুষকে দ্রুত বড়লোক হওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তারা বিভিন্ন মোডে টাকা জমা নিত। সম্প্রতি তারা গ্রাহকদের সকল পাওনা পরিশোধের একটি তারিখ ঘোষণা করে। নির্দিষ্ট তারিখে যোগাযোগ করলে তাদের অফিস তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। পুলিশের হাতে আটক সমিতির ম্যানেজার জানান সমিতির মালিক টাকা নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। দিনমজুরসহ নিম্ন আয়ের মানুষের কষ্টার্জিত টাকা ফেরত পাওয়া এখন অনিশ্চিত।

সংবাদ মাধ্যমের খবরে যানা যায়, গ্রাহকদের অর্থ আত্মসাতের মামলায় ডেসটিনির এমডি রফিকুল আমিনকে ১২ বছরের কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে এবং পরিচালক লে. জেনারেল অব. এম হারুন অর রশিদকে ৪ বছরের কারাদন্ড প্রদান করা হয়। ২০১২ সালে তাদের বিরুদ্ধে ৪১১৯ কোটি ২৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের মামলা হয়। ডেসটিনির মতো যুবক, ইউনিপে টু ইউ, এহসানসহ অসংখ্য এনজিও সাধারণ মানুষের অর্থ আত্মসাৎ করে লাপাত্তা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারদের যথাযথ শাস্তির আওতায় আনতে না পারায় এনজিও এবং সমবায় সমিতির নাম করে অর্থ আত্মসাতের ঘটনা পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। আর্থিক দুর্নীতির এসব মামলা দ্রুত বিচারের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি প্রদান সম্ভব হলে এ ধরনের কর্মকান্ড কমে আসবে বলে মনে করেন অনেকেই।

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিম্ন আয়ের মানুষ কঠোর পরিশ্রমে অর্জিত টাকা এসব সমবায় সমিতিতে জমা রেখে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছে। চারপাশে ঘটে যাওয়া এসব ঘটনা সাধারণ মানুষের জন্য সতর্ক সংকেত। এসব ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেদের টাকার নিরাপত্তা বিবেচনা করে তাদের উচিত ব্যাংকে টাকা জমা রাখা। এতে লাভ কম হলেও অন্তত মূল টাকা সুরক্ষিত থাকবে।

সাধারণত অর্থ সঞ্চয় করা হয় ভবিষ্যতে ভালো কোন কাজ করার জন্য। অনেকেই আবার জমানো অর্থ থেকে লাভ নিয়ে পরিবারের ব্যয় নির্বাহ করে থাকেন। বেশিরভাগ মানুষই উদ্বৃত্ত অর্থ ব্যাংকে জমা করেন। পৃথিবীর অনেক দেশেই ব্যাংকে টাকা জমা রাখলে সার্ভিস চার্জ দিতে হয়। অনেক দেশে এক শতাংশের কম হারে মুনাফা দেয়া হয়। অনেক দেশেই আমাদের দেশের চেয়ে কম মুনাফা দেয়া হয়। সেসব দেশের মানুষও টাকার নিরাপত্তাসহ নানাবিধ কারণে ব্যাংকে টাকা রাখছেন। সেখানে ব্যাংক ঋণের মুনাফাও কম। কেবল লাভের আশায় ব্যাংকে টাকা জমা রাখার চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে আমাদের প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়।

বাংলাদেশে ব্যাংক খাত কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ বিভিন্ন রেগুলেটরি অথরিটির মাধ্যমে যতটা নিয়ন্ত্রিত ততটা নিয়ন্ত্রিত অন্য কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা এনজিও নয়। ব্যাংকে কোন সমস্য হলে যত তাড়াতাড়ি সমাধান পাওয়া যায় ততটা সমবায় সমিতি বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পাওয়া সম্ভব নয়। তাই সাধারণ মানুষকে ব্যাংকমুখী করার দায়িত্ব আমাদের সবার।

সাধারণ মানুষকে দুষ্টচক্রের হাত থেকে রক্ষা করতে সরকারি বেসরকারি উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। অর্থ সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে ব্যাংকে কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে তা তাদের কাছে অজানা। নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে ব্যাংক ভীতি কাজ করে। অনেকেই ব্যাংকে ঢুকতে সাহস করেন না। ব্যাংকগুলোর জন্য সুযোগ রয়েছে এসব মানুষের দোরগোড়ায় গিয়ে ভীতি দূর করে ব্যাংকমুখী করা এবং ক্ষতির হাত থেকে তাদের নিরাপদ করা। আর্থিক নিরাপত্তার জন্য জনসচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণা চালাতে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলকে আরও তৎপর হতে হবে।

লেখক: ব্যাংকার

ইমেইল: riyazenglish@gmail.com

ছবি

মৌসুমের দ্বিতীয় দিনেও সেন্ট মার্টিনে পর্যটকের উপস্থিতি নেই, হতাশ ব্যবসায়ীরা

ছবি

চালু হলো এমএফএস ও ব্যাংক আন্তলেনদেন

ছবি

ডিএসইতে অধিকাংশ শেয়ারে দরপতন, লেনদেন ১৩ কার্যদিবসের মধ্যে সর্বোচ্চ

ছবি

চট্টগ্রাম বন্দরে বার্থ-শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটর নিয়োগ ৩ মাস স্থগিত

ছবি

‘বিডাকে দ্রুত পরিবর্তিত বিনিয়োগ পরিবেশের সঙ্গে তাল মেলাতে হবে’

ছবি

জুলাই-সেপ্টেম্বরে ঋণছাড়ে এগিয়ে বিশ্বব্যাংক ও রাশিয়া

ছবি

বিশ্বের প্রথম ৫ লাখ কোটি ডলারের কোম্পানি এনভিডিয়া

ছবি

নিষেধাজ্ঞা উঠলেও নভেম্বরে সেন্টমার্টিনে যাচ্ছে না জাহাজ

ছবি

শেয়ারবাজারে বাজার মূলধন হারালো প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা

ছবি

এসএমই খাতকে অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তিতে রূপান্তরের উদ্যোগ

ছবি

৩০ নভেম্বরের মধ্যে করদাতাদের ই-রিটার্ন জমা দিতে হবে: এনবিআর

ছবি

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন: ২০২৬ সালে বিশ্ববাজারে জিনিসপত্রের দাম আরও ৭ শতাংশ কমতে পারে

ছবি

সরকারি মালিকানার ব্যাংকের পরিচালকদের কাজের বছরভিত্তিক মূল্যায়ন করা হবে

ছবি

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আমরা সৌজন্য সাক্ষাৎ করি না: লুৎফে সিদ্দিকী

ছবি

চলতি কর বছরে ই-রিটার্ন ১০ লাখ ছাড়িয়েছে

ছবি

খেলাপির প্রকৃত চিত্র প্রকাশ করায় সন্তোষ প্রকাশ আইএমএফের

ছবি

বাংলাবান্ধা দিয়ে নেপাল গেল ১ হাজার ৪০৭ টন আলু

ছবি

বিদেশি ঋণ পাওয়ার চেয়ে পরিশোধই বেশি

ছবি

বাংলাদেশের অর্থনীতি ও ঋণ কর্মসূচি পর্যালোচনা করছে আইএমএফ

ছবি

প্রাইম ব্যাংকের নিট মুনাফা বেড়েছে ২৭ শতাংশ

ছবি

সঞ্চয়পত্র জালিয়াতি তদন্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কমিটি গঠন

ছবি

সুগন্ধি চাল রপ্তানির সময় বাড়লো ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত

ছবি

নৌপথে পণ্য পরিবহন করেও ভাড়ার টাকা পাচ্ছে না মালিকরা

ছবি

আবার বাড়লো স্বর্ণের দাম, রুপার মূল্য অপরিবর্তিত

ছবি

শীর্ষ ব্রোকারদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএসইসি

ছবি

ইসলামী ব্যাংকের মুনাফা কমেছে ৬৩ শতাংশ

ছবি

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ও উপপ্রেস সচিবের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানালো বিজিএমইএ

ছবি

শীতের আগমনে কমেছে সবজির দাম, বেড়েছে মাছ, মুরগি, ডিম ও আটার

ছবি

দেশের বাজারে স্যামসাং নেক্সট-জেন গ্যালাক্সি এ১৭ ৫জি

ছবি

বাংলাদেশ ব্যাংকের পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে সঞ্চয়পত্রের টাকা আত্মসাৎ

সেমিনারে বক্তারা, সুদের হার না কমালে বিনিয়োগ বাড়বে না

ছবি

বেনাপোল এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশন: ২ কোটি ২৩ লাখ টাকার সুফল নেই

ছবি

প্রযুক্তিগত পরিবর্তন কর্মীদের মানসিক চাপ বাড়াচ্ছে

ছবি

ডিসিসিআইর সঙ্গে ডিএসইর চুক্তি সই

ছবি

বিকাশ ৯ মাসে ৫০৫ কোটি টাকা মুনাফা করেছে

ছবি

বিদ্যুৎ আমদানির অর্থ পরিশোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন লাগবে না

tab

সমবায় সমিতির অর্থ আত্মসাৎ চলছেই, প্রয়োজন সচেতনতা

রিয়াজ উদ্দিন

শুক্রবার, ১৩ মে ২০২২

প্রতিটি মানুষই তার সম্পদ নিরাপদ রাখতে চায়। সেজন্য মানুষ নানান পদ্ধতি অবলম্বন করে। প্রয়োজনে ফিরে পাবার আশায় মানুষ নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি, সমিতি, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকে টাকাপয়সা ও মূল্যবান সামগ্রী জমা রাখে। আধুনিক সভ্যতা ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ব্যাংকই হলো সাধারণ মানুষের অর্থের সবচেয়ে নিরাপদ আমানতদার। সম্প্রতি সংঘটিত দুটি সমিতির আর্থিক কেলেঙ্কারির খবরে আরও একবার ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক কর্মকান্ডের নাজুকতা প্রকাশিত হয়েছে।

সর্বশেষ ঘটনাটি রাজধানীর খিলগাঁওয়ের একটি সমবায় সমিতির। প্রায় ২০ বছর তালতলা মার্কেটের দোতলায় গ্রীন বার্ড নামে একটি সমিতি নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে কার্যক্রম পরিচালনা করে। রিকশা চালক, দিনমজুর, মুদি দোকানি, কাজের বুয়া, গার্মেন্টস শ্রমিকসহ নানান শ্রেণীপেশার মানুষের থেকে আমানত সংগ্রহ করে। প্রতি মাসে লাখে ১৫০০ টাকা হিসাবে জমাকারীকে লাভ প্রদান করে যেখানে ব্যাংকে টাকা রাখলে সাকুল্যে ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা পাওয়া যায়। ব্যাংকে মুনাফা কম থাকায় সাধারণ মানুষ অধিক লাভের আশায় ওই সমিতিতে টাকা জমা রাখেন।

ঈদুল ফিতরের ছুটি শেষে সমিতির মালিক আলাউদ্দিন হোসেন জমাকারীদের জানান তার কর্মচারিরা টাকা আত্মসাৎ করে ঈদের আগে পালিয়ে গেছে। বাড়িঘর বিক্রি করে গ্রাহকদের পাওনা পরিশোধের ওয়াদা দেন। এ খবরে সমিতির সকল গ্রাহক সমিতির অফিস ঘিরে আন্দোলন শুরু করে। খবর পেয়ে রামপুরা থানা পুলিশ আলাউদ্দিনকে তাদের হেফাজতে নেন। গ্রাহকরা থানার সামনে জড়ো হয়ে আন্দোলন করতে থাকেন। গ্রাহকদের আশ্বস্ত করতে থানা প্রত্যেক জমাকারীর জমার তথ্য লিপিবদ্ধ করে রাখেন। থানা প্রাথমিকভাবে দায়িত্ব নিলেও বাস্তবে গ্রাহকদের টাকা পরিশোধ অনেকটাই অনিশ্চিত।

দ্বিতীয় ঘটনাটি খুলনার। রিয়েল সঞ্চয় ও ঋণদান কো-অপারেটিভ সোসাইটি নামে একটি সমিতি গ্রাহকের ৩০ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা। নিম্ন আয়ের মানুষকে দ্রুত বড়লোক হওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তারা বিভিন্ন মোডে টাকা জমা নিত। সম্প্রতি তারা গ্রাহকদের সকল পাওনা পরিশোধের একটি তারিখ ঘোষণা করে। নির্দিষ্ট তারিখে যোগাযোগ করলে তাদের অফিস তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। পুলিশের হাতে আটক সমিতির ম্যানেজার জানান সমিতির মালিক টাকা নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। দিনমজুরসহ নিম্ন আয়ের মানুষের কষ্টার্জিত টাকা ফেরত পাওয়া এখন অনিশ্চিত।

সংবাদ মাধ্যমের খবরে যানা যায়, গ্রাহকদের অর্থ আত্মসাতের মামলায় ডেসটিনির এমডি রফিকুল আমিনকে ১২ বছরের কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে এবং পরিচালক লে. জেনারেল অব. এম হারুন অর রশিদকে ৪ বছরের কারাদন্ড প্রদান করা হয়। ২০১২ সালে তাদের বিরুদ্ধে ৪১১৯ কোটি ২৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের মামলা হয়। ডেসটিনির মতো যুবক, ইউনিপে টু ইউ, এহসানসহ অসংখ্য এনজিও সাধারণ মানুষের অর্থ আত্মসাৎ করে লাপাত্তা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারদের যথাযথ শাস্তির আওতায় আনতে না পারায় এনজিও এবং সমবায় সমিতির নাম করে অর্থ আত্মসাতের ঘটনা পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। আর্থিক দুর্নীতির এসব মামলা দ্রুত বিচারের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি প্রদান সম্ভব হলে এ ধরনের কর্মকান্ড কমে আসবে বলে মনে করেন অনেকেই।

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিম্ন আয়ের মানুষ কঠোর পরিশ্রমে অর্জিত টাকা এসব সমবায় সমিতিতে জমা রেখে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছে। চারপাশে ঘটে যাওয়া এসব ঘটনা সাধারণ মানুষের জন্য সতর্ক সংকেত। এসব ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেদের টাকার নিরাপত্তা বিবেচনা করে তাদের উচিত ব্যাংকে টাকা জমা রাখা। এতে লাভ কম হলেও অন্তত মূল টাকা সুরক্ষিত থাকবে।

সাধারণত অর্থ সঞ্চয় করা হয় ভবিষ্যতে ভালো কোন কাজ করার জন্য। অনেকেই আবার জমানো অর্থ থেকে লাভ নিয়ে পরিবারের ব্যয় নির্বাহ করে থাকেন। বেশিরভাগ মানুষই উদ্বৃত্ত অর্থ ব্যাংকে জমা করেন। পৃথিবীর অনেক দেশেই ব্যাংকে টাকা জমা রাখলে সার্ভিস চার্জ দিতে হয়। অনেক দেশে এক শতাংশের কম হারে মুনাফা দেয়া হয়। অনেক দেশেই আমাদের দেশের চেয়ে কম মুনাফা দেয়া হয়। সেসব দেশের মানুষও টাকার নিরাপত্তাসহ নানাবিধ কারণে ব্যাংকে টাকা রাখছেন। সেখানে ব্যাংক ঋণের মুনাফাও কম। কেবল লাভের আশায় ব্যাংকে টাকা জমা রাখার চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে আমাদের প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়।

বাংলাদেশে ব্যাংক খাত কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ বিভিন্ন রেগুলেটরি অথরিটির মাধ্যমে যতটা নিয়ন্ত্রিত ততটা নিয়ন্ত্রিত অন্য কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা এনজিও নয়। ব্যাংকে কোন সমস্য হলে যত তাড়াতাড়ি সমাধান পাওয়া যায় ততটা সমবায় সমিতি বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পাওয়া সম্ভব নয়। তাই সাধারণ মানুষকে ব্যাংকমুখী করার দায়িত্ব আমাদের সবার।

সাধারণ মানুষকে দুষ্টচক্রের হাত থেকে রক্ষা করতে সরকারি বেসরকারি উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। অর্থ সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে ব্যাংকে কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে তা তাদের কাছে অজানা। নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে ব্যাংক ভীতি কাজ করে। অনেকেই ব্যাংকে ঢুকতে সাহস করেন না। ব্যাংকগুলোর জন্য সুযোগ রয়েছে এসব মানুষের দোরগোড়ায় গিয়ে ভীতি দূর করে ব্যাংকমুখী করা এবং ক্ষতির হাত থেকে তাদের নিরাপদ করা। আর্থিক নিরাপত্তার জন্য জনসচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণা চালাতে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলকে আরও তৎপর হতে হবে।

লেখক: ব্যাংকার

ইমেইল: riyazenglish@gmail.com

back to top