alt

আলোচনায় আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক এডিবির ঋণের জন্যও আলোচনা

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : সোমবার, ০১ আগস্ট ২০২২

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ছাড়াও বিশ্ব ব্যাংক এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কাছেও ঋণ চেয়েছে সরকার।এই দুই সংস্থার কাছে ২০০ কোটি ডলার চাওয়া হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

এডিবি এবং বিশ্ব ব্যাংক, দুই সংস্থার কাছেই ১০০ কোটি ডলার করে চাওয়া হয়েছে। এডিবির কাছে পুরোটাই বাজেট সহায়তা । আর বিশ্ব ব্যাংকের কাছে ২৫ কোটি ডলার জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য গঠিত তহবিল থেকে পাওয়ার আশা করা হচ্ছে।

আইএমএফের কাছ থেকে ৪৫০ কোটি ডলার আশা করা হচ্ছে। তবে অর্থমন্ত্রী বলেছেন তিনি আইএমএফের কাছে লেখা চিঠিতে টাকার পরিমাণ উল্লেখ করেননি।

কোভিড-১৯ মহামারীর পর ইউক্রেইন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে অস্থির বিশ্ব অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে দেশের বিদেশী মুদ্রার রিজার্ভের চাপ সামাল দিতেই এ সব ঋণ চাওয়া হয়েছে।

দেশের অর্থনীতিবিদরা বলছেন বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের ‘সংকট’ আরও গভীর হওয়ার আগে যতটা সম্ভব ঘুরে দাঁড়ানো দরকার। সে কারণে বিদেশী ঋণের প্রয়োজন।

আইএমএফের ঋণ নিয়ে দেশে দেশে সমালোচনা আছে। ঋণদাতা হিসেবে বিশ্বে বেশ অজনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান আইএমএফ। আইএমএফের বিরুদ্ধ সবচেয়ে বড় অভিযোগ, বাস্তবতা যাই হোক না কেন সব দেশের জন্য তাদের শর্ত প্রায় একই। আর এসব শর্ত পূরণ করতেই ঝামেলায় পড়ে অনেক দেশ, আরও বিপদে পড়ে অর্থনীতি।

১৯৯৭ সালে পূর্ব এশিয়া সংকটের সময় আইএমএফের শর্ত মানতে গিয়ে আরও বিপদে পড়ে যায় ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড। তাদের মন্দা আরও তীব্র হয়েছিল, বেড়েছিল বেকারত্ব। ২০০১ সালে আর্জেন্টিনাও আইএমএফের বড় ব্যর্থতা। তবে ১৯৮২ সালে মেক্সিকো এবং সম্প্রতি গ্রিস ও সাইপ্রাস ১৯৮২ সালে মেক্সিকো এবং সাম্প্রতিক গ্রিস ও সাইপ্রাস সফলতা বলেই অনেকে বলেন।

আইএমএফের ঋণ পেতে অনেক শর্ত পূরণ করতে হবে। শর্তগুলো কী, কীভাবে তা পূরণ করা হবে, সেটিই এখন আলোচনার বিষয়।

তবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল বলছেন, ‘আমরা চাই ভালো শর্তে, ভালো সুদহারে ঋণ। আইএমএফ কী শর্তে ঋণ দিতে চাচ্ছে, তা দেখতে হবে। আইএমএফকে ইতিবাচক দেখা গেলে সংস্থাটি থেকে ঋণ নেওয়ার কথা বিবেচনা করা যায়।’

বিশ্ব ব্যাংক ও এডিবির ঋণ

আগামী তিন অর্থবছরে ২৫ কোটি ডলার করে মোট ৭৫ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তার প্রস্তাব বিশ্ব ব্যাংকের কাছে দেয়া হয়েছে বলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। আর বিশ্ব ব্যাংক জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকি মোকাবেলায় সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর যে তহবিল গঠন করেছে তাতে বাংলাদেশও প্রায় ২৫ কোটি ডলারের মতো সহয়তা পেতে পারে।

আগামী অক্টোবরে বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠকে নতুন বাজেট সহায়তার আকার ঠিক হতে পারে।

এডিবির কাছে গত এপ্রিল মাসে সামষ্টিক অর্থনীতে সম্ভাব্য অভিঘাত মোকাবেলায় ১০০ কোটি ডলার চাওয়া হয়েছে। তবে এডিবি এখনও ‘চূড়ান্ত কিছু জানায়নি’ বলে জানিয়েছেন এক কর্মকর্তা। প্রতি অর্থ বছরে ৫০ কোটি বা ২৫ কোটি ডলারের ঋণের অর্থ ছাড় পেতে আলোচনা করবে সরকার।

বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে ২০২০-২১ অর্থবছরে কোভিড-১৯ মহামারীর অভিঘাত মোকাবেলায় ৫০ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তা পেতে চুক্তি করেছিল সরকার। তার মধ্যে ২৫ কোটি ডলার ছাড় হয়েছে। আর বাকি ২৫ কোটি ডলার চলতি অর্থবছরে ছাড় হবে।

আর এডিবি আগে কোভিড-১৯ মহামারীর অভিঘাত মোকাবেলায় ৯৪ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা দিয়েছিল। সেখান থেকে ২৫ কোটি ডলার ছাড় হওয়া বাকি আছে। চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে ওই অর্থ ছাড় হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছেন এক কর্মকর্তা।

আইএমএফের ঋণ ও শর্তের আলোচনা

ইতোমধ্যেই আইএমএফের সঙ্গে ঋণ প্রাপ্তির বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। আইএমএফের একজন মুখপাত্র একটি আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাকে বলেছেন ‘তহবিলের বিদ্যমান নীতি ও প্রক্রিয়ার আলোকে কর্মসূচি প্রণয়নে আইএমএফ কর্মকর্তারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন। আলোচনায় যে কর্মসূচি ঠিক হবে, সে অনুযায়ী সহায়তার পরিমাণ নির্ধারিত হবে।’

ঋণের জন্য আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করার অনুরোধ জানিয়ে গত মাসের শেষের দিকে আইএমএফকে একটি চিঠি দেয় বাংলাদেশ সরকার। চিঠিতে বলা হয়, সময় একটু খারাপ (ক্রিটিক্যাল টাইম) বলে জরুরি ভিত্তিতে লেনদেনের ভারসাম্য বজায় রাখা ও বাজেট সহায়তা বাবদ বাংলাদেশের অর্থ প্রয়োজন।

আর আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা বলছে, এর মধ্যে রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ট্রাস্ট (আরটিএস) কর্মসূচির আওতায় ১ বিলিয়ন ডলার বা ১০০ কোটি ডলারও রয়েছে।

বাংলাদেশ আইএমএফের রেসিলিয়ান্স অ্যান্ড সাসটেইনেবলিটি ফ্যাসিলিটিস বা আরএসএফ ফান্ড থেকে অর্থ পাওয়ার বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলার বিভিন্ন পদক্ষেপ এগিয়ে নিতে অর্থ ব্যবহার করা হবে বলে তারা জানিয়েছে।

যে তহবিল থেকে বাংলাদেশ অর্থ চেয়েছে বলে আইএমএফের তরফে বলা হচ্ছে, তা থেকে নিম্ন আয়ের দেশ ও ঝুঁকিপূর্ণ মধ্যম আয়ের দেশগুলোকে ঋণ দেওয়া হয়। কোভিড মহামারী এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবেলার জন্য নীতি সহায়তার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদী ঋণ দেওয়া হয় এই প্রকল্পে। ২০ বছর মেয়াদে এই ঋণ দিয়ে থাকে আইএমএফ, তার প্রেস পিরিয়ড ১০ বছর। আর ঋণে সুদের হার আলোচনার মধ্য দিয়ে ঠিক হবে।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর সংবাদকে বলেন, ‘ডলার ও রিজার্ভ সংকট আরও গভীর হওয়ার আগে যতটা সম্ভব ঘুরে দাঁড়ানো দরকার। অবস্থা যদি বেশি খারাপ হয়ে যায়, তখন ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হবে না। আর এই কারণেই ঋণ দরকার। এখন ঋণ নিয়ে অর্থনীতির নেতিবাচক পরিস্থিতিগুলো মোকাবিলা করা দরকার। তাহলে বিপদে পড়ার আগেই অর্থনীতি স্বাভাবিক হবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. হেলাল উদ্দিনও জানান, এই মুহূর্তে বাংলাদেশের ঋণ খুবই দরকার। তিনি বলেন, ‘আইএমএফ-এর ঋণ না নিয়ে বাংলাদেশের আর কোনো উপায় নেই। এখন তো বিশ্বব্যাংক ও এডিবি থেকেও ঋণ নেয়ার চেষ্টা করছে। বাজেট বাস্তবায়নে যেমন বিদেশি ঋণ লাগবে। তেমনি এখনকার পরিস্থিতি সামাল দিতেও এই ঋণ লাগবে।’

গত কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে। এতে অনেক দিন পর এর পরিমান ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১০ বছর আগে ২০১৩ সালের জুন শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল মাত্র ১৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার। পাঁচ বছর আগে ছিল ৩৩ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার। সেখান থেকে বেড়ে গত বছরের আগস্টে প্রথমবারের মতো ৪৮ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন ডলার হয়। গত কয়েক মাসে ধরে রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমে সেটা ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমেছে।

আর রিজার্ভ কমায় এবং আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় চাপ বেড়েছে। এতে বাজারে মার্কিন ডলারের সংকট দেখা দিয়েছে।

সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশের বাণিজ্যঘাটতি এখন ৩ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। আমদানি ব্যয় বেরে যাওয়া ও প্রবাসী আয় কমে যাওয়ায় চলতি হিসাবের ঘাটতিও এখন ১ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের বেশী, এটাও বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। আর সামগ্রিক লেনদেনের ঘাটতি ৩৭০ কোটি ডলারের বেশী। অথচ আগের অর্থবছরেও প্রায় ৭৫০ কোটি ডলার উদ্বৃত্ত ছিল।

বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে উদ্বেগের কারণ আছে কিনা জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান সংবাদকে বলেন, ‘রিজার্ভ কোনো সময় কমবে, কোনো সময় বাড়বে, সেটা নিয়ে উদ্বেগের কারণ নেই। কিন্তু সম্প্রতি রিজার্ভ কিন্তু ধারাবাহিকভাবে কমছে। তাই এটা নিয়ে উদ্বেগের কারণ আছে। এজন্য সংকট মোকাবিলায় ঋণের দরকার আছে বাংলাদেশের।’

তবে এই ঋণ নিতে গিয়ে শর্তের বেড়াজালে পড়তে হতে পারে বাংলাদেশকে। এসব শর্ত যদি পুরন করতে পারে তাহলেই ঋণ পাবে বাংলাদেশ।

এর আগে ২০১২ সালে শেষবার আইএমএফের কাছ সম্প্রসারিত ঋণ কর্মসূচির (ইসিএফ) আওতায় তিন বছরের জন্য ৯৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার ঋণ নিয়েছিল বাংলাদেশ সরকার। সেই সময় বেশ কিছু শর্ত দিয়েছিল সংস্থাটি। শর্তের মধ্যে ছিল রাজস্ব প্রশাসনে সংস্কার। এর আওতায় বাংলাদেশকে ভ্যাট আইন পাস করতে হয়েছিল। তখন একটি নতুন প্রত্যক্ষ কর আইন তৈরির শর্তও দেওয়া হয়েছিল। ওই সময় কর মওকুফের সুবিধা বাতিলের শর্তও দিয়েছিল বৈশ্বিক সংস্থাটি।

অন্যান্য শর্তের মধ্যে ছিল সরকারের ভর্তুকি কমানো, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের হার বৃদ্ধি, বিনিময় হার আরও নমনীয় করা, খেলাপি ঋণ আদায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরদারি ক্ষমতা বাড়ানো, বাণিজ্যের বাধা দূর করা, বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নতি ইত্যাদি।

বাংলাদেশের রিজার্ভ সংরক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন তুলে আসছে আইএমএফ। এখন যে নিয়মে রিজার্ভ সংরক্ষণ করা হয় সেটি আইএমএফ এর নীতিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তাই এবারের ঋণে এই শর্তটি বড় হয়ে দেখা দিতে পারে।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘এর আগে যেগুলো শর্ত দিয়েছিল আইএমএফ সেগুলো থাকবে। সঙ্গে নতুন কোনো শর্ত যোগ হতে পারে।’

ছবি

পাঁচ বেসরকারি শরীয়াহভিত্তিক ব্যাংক একীভূত করার প্রথম ধাপে প্রশাসক বসাবে বাংলাদেশ ব্যাংক

ছবি

কয়েকটি দেশ বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণ পেছানোর বিরোধিতা করছে

ছবি

শেয়ারবাজারে লেনদেন নামলো ৬শ’ কোটি টাকার ঘরে

ছবি

ব্যবসা মাঝে মন্থর ছিল, এখন একটু ভালো: অর্থ উপদেষ্টা.

ছবি

অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি স্বাক্ষরে আশাবাদী জাপানি রাষ্ট্রদূত

ছবি

বাংলাদেশ ব্যাংকে সভা: একীভূত হচ্ছে পাঁচ ব্যাংক, বসছে প্রশাসক

ছবি

বিজিএমইএ–মার্কিন প্রতিনিধিদল বৈঠক: শুল্ক কমাতে আহ্বান

ছবি

জুলাই-আগস্টে এডিপি বাস্তবায়ন ২ দশমিক ৩৯ শতাংশ

ছবি

বিবিএসের নাম পরিবর্তন ও তদারক পরিষদ রাখার সুপারিশ

ছবি

শ্রম আইন সংশোধন দ্রুত শেষ করার তাগিদ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের

ছবি

নগদ অর্থের ব্যবহার কমাতে আসছে একীভূত পেমেন্ট সিস্টেম: গভর্নর

ছবি

আড়াই মাসে ১৩৯ কোটি ডলার কিনলো বাংলাদেশ ব্যাংক

ছবি

ডিজিটাল ব্যাংক খুলতে আবেদনের সময় বাড়লো ২ নভেম্বর পর্যন্ত

ছবি

পুঁজিবাজারে সূচকের নামমাত্র উত্থান, লেনদেন আরও তলানিতে

ছবি

চট্টগ্রাম বন্দরে গড়ে খরচ বাড়লো ৪১ শতাংশ

ছবি

বাংলাদেশের বাজারে লেনোভো ভি সিরিজের নতুন ল্যাপটপ

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক আরও কমতে পারে: বাণিজ্য উপদেষ্টা

ছবি

বাজারে গিগাবাইট এআই টপ ১০০ জেড৮৯০ পিসি

ছবি

কর্মসংস্থানের জরুরি পরিস্থিতি’ তৈরি হয়েছে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা

ছবি

শেয়ারবাজারে বড় পতন, এক মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন লেনদেন

ছবি

অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমার সফটওয়্যার চালু করলো এনবিআর

ছবি

ট্রাস্ট ব্যাংকের এটিএম ও ডেবিট কার্ডসেবা সাময়িক বন্ধ থাকবে

ছবি

বেপজার ইপিজেডগুলোতে শ্রমিকদের দুর্ঘটনাজনিত ক্ষতিপূরণ প্রদান শুরু

ছবি

বিডার ওয়ান স্টপ সার্ভিসে আরও ৫ সেবা যুক্ত

ছবি

এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন পেছাতে ব্যবসায়ীদের সক্রিয় হওয়ার আহ্বান

ছবি

আড়াইগুণ প্রতিষ্ঠানের দরপতনে বাজার মূলধন কমলো ৩ হাজার কোটি টাকা

ছবি

পাল্টা শুল্ক নিয়ে আলোচনা করতে পাল্টা শুল্ক নিয়ে আলোচনা করতে রোববার ঢাকায় আসছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল

ছবি

বাংলাদেশে ব্লুটুথ হেডফোন ও ডেটা কেবল তৈরির কারখানা করবে চীন

ছবি

অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমার প্রশিক্ষণে অংশ নেয়ার নিয়ম

ছবি

বাংলাদেশের বাজারে অপো এ৫ এর নতুন ভ্যারিয়েন্ট

ছবি

নিত্যপণ্যের বাজারে সবজির সঙ্গে বেড়েছে চাল ও মুরগির দামও

ছবি

ডিসেম্বরের মধ্যে এনবিআরের কার্যক্রম দুই ভাগ হয়ে যাবে

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ৭ মাসে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ২২ শতাংশ

ছবি

শরিয়াহ ব্যাংকগুলোর আমানত এক মাসে বেড়েছে ৮ হাজার ৩৮৫ কোটি টাকা

ছবি

বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ ৩০০ শতাংশ বেড়েছে: বাণিজ্য উপদেষ্টা

ছবি

সমুদ্রগামী জাহাজ আমদানিতে মূসক অব্যাহতি

tab

আলোচনায় আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক এডিবির ঋণের জন্যও আলোচনা

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

সোমবার, ০১ আগস্ট ২০২২

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ছাড়াও বিশ্ব ব্যাংক এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কাছেও ঋণ চেয়েছে সরকার।এই দুই সংস্থার কাছে ২০০ কোটি ডলার চাওয়া হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

এডিবি এবং বিশ্ব ব্যাংক, দুই সংস্থার কাছেই ১০০ কোটি ডলার করে চাওয়া হয়েছে। এডিবির কাছে পুরোটাই বাজেট সহায়তা । আর বিশ্ব ব্যাংকের কাছে ২৫ কোটি ডলার জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য গঠিত তহবিল থেকে পাওয়ার আশা করা হচ্ছে।

আইএমএফের কাছ থেকে ৪৫০ কোটি ডলার আশা করা হচ্ছে। তবে অর্থমন্ত্রী বলেছেন তিনি আইএমএফের কাছে লেখা চিঠিতে টাকার পরিমাণ উল্লেখ করেননি।

কোভিড-১৯ মহামারীর পর ইউক্রেইন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে অস্থির বিশ্ব অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে দেশের বিদেশী মুদ্রার রিজার্ভের চাপ সামাল দিতেই এ সব ঋণ চাওয়া হয়েছে।

দেশের অর্থনীতিবিদরা বলছেন বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের ‘সংকট’ আরও গভীর হওয়ার আগে যতটা সম্ভব ঘুরে দাঁড়ানো দরকার। সে কারণে বিদেশী ঋণের প্রয়োজন।

আইএমএফের ঋণ নিয়ে দেশে দেশে সমালোচনা আছে। ঋণদাতা হিসেবে বিশ্বে বেশ অজনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান আইএমএফ। আইএমএফের বিরুদ্ধ সবচেয়ে বড় অভিযোগ, বাস্তবতা যাই হোক না কেন সব দেশের জন্য তাদের শর্ত প্রায় একই। আর এসব শর্ত পূরণ করতেই ঝামেলায় পড়ে অনেক দেশ, আরও বিপদে পড়ে অর্থনীতি।

১৯৯৭ সালে পূর্ব এশিয়া সংকটের সময় আইএমএফের শর্ত মানতে গিয়ে আরও বিপদে পড়ে যায় ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড। তাদের মন্দা আরও তীব্র হয়েছিল, বেড়েছিল বেকারত্ব। ২০০১ সালে আর্জেন্টিনাও আইএমএফের বড় ব্যর্থতা। তবে ১৯৮২ সালে মেক্সিকো এবং সম্প্রতি গ্রিস ও সাইপ্রাস ১৯৮২ সালে মেক্সিকো এবং সাম্প্রতিক গ্রিস ও সাইপ্রাস সফলতা বলেই অনেকে বলেন।

আইএমএফের ঋণ পেতে অনেক শর্ত পূরণ করতে হবে। শর্তগুলো কী, কীভাবে তা পূরণ করা হবে, সেটিই এখন আলোচনার বিষয়।

তবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল বলছেন, ‘আমরা চাই ভালো শর্তে, ভালো সুদহারে ঋণ। আইএমএফ কী শর্তে ঋণ দিতে চাচ্ছে, তা দেখতে হবে। আইএমএফকে ইতিবাচক দেখা গেলে সংস্থাটি থেকে ঋণ নেওয়ার কথা বিবেচনা করা যায়।’

বিশ্ব ব্যাংক ও এডিবির ঋণ

আগামী তিন অর্থবছরে ২৫ কোটি ডলার করে মোট ৭৫ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তার প্রস্তাব বিশ্ব ব্যাংকের কাছে দেয়া হয়েছে বলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। আর বিশ্ব ব্যাংক জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকি মোকাবেলায় সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর যে তহবিল গঠন করেছে তাতে বাংলাদেশও প্রায় ২৫ কোটি ডলারের মতো সহয়তা পেতে পারে।

আগামী অক্টোবরে বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠকে নতুন বাজেট সহায়তার আকার ঠিক হতে পারে।

এডিবির কাছে গত এপ্রিল মাসে সামষ্টিক অর্থনীতে সম্ভাব্য অভিঘাত মোকাবেলায় ১০০ কোটি ডলার চাওয়া হয়েছে। তবে এডিবি এখনও ‘চূড়ান্ত কিছু জানায়নি’ বলে জানিয়েছেন এক কর্মকর্তা। প্রতি অর্থ বছরে ৫০ কোটি বা ২৫ কোটি ডলারের ঋণের অর্থ ছাড় পেতে আলোচনা করবে সরকার।

বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে ২০২০-২১ অর্থবছরে কোভিড-১৯ মহামারীর অভিঘাত মোকাবেলায় ৫০ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তা পেতে চুক্তি করেছিল সরকার। তার মধ্যে ২৫ কোটি ডলার ছাড় হয়েছে। আর বাকি ২৫ কোটি ডলার চলতি অর্থবছরে ছাড় হবে।

আর এডিবি আগে কোভিড-১৯ মহামারীর অভিঘাত মোকাবেলায় ৯৪ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা দিয়েছিল। সেখান থেকে ২৫ কোটি ডলার ছাড় হওয়া বাকি আছে। চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে ওই অর্থ ছাড় হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছেন এক কর্মকর্তা।

আইএমএফের ঋণ ও শর্তের আলোচনা

ইতোমধ্যেই আইএমএফের সঙ্গে ঋণ প্রাপ্তির বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। আইএমএফের একজন মুখপাত্র একটি আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাকে বলেছেন ‘তহবিলের বিদ্যমান নীতি ও প্রক্রিয়ার আলোকে কর্মসূচি প্রণয়নে আইএমএফ কর্মকর্তারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন। আলোচনায় যে কর্মসূচি ঠিক হবে, সে অনুযায়ী সহায়তার পরিমাণ নির্ধারিত হবে।’

ঋণের জন্য আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করার অনুরোধ জানিয়ে গত মাসের শেষের দিকে আইএমএফকে একটি চিঠি দেয় বাংলাদেশ সরকার। চিঠিতে বলা হয়, সময় একটু খারাপ (ক্রিটিক্যাল টাইম) বলে জরুরি ভিত্তিতে লেনদেনের ভারসাম্য বজায় রাখা ও বাজেট সহায়তা বাবদ বাংলাদেশের অর্থ প্রয়োজন।

আর আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা বলছে, এর মধ্যে রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ট্রাস্ট (আরটিএস) কর্মসূচির আওতায় ১ বিলিয়ন ডলার বা ১০০ কোটি ডলারও রয়েছে।

বাংলাদেশ আইএমএফের রেসিলিয়ান্স অ্যান্ড সাসটেইনেবলিটি ফ্যাসিলিটিস বা আরএসএফ ফান্ড থেকে অর্থ পাওয়ার বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলার বিভিন্ন পদক্ষেপ এগিয়ে নিতে অর্থ ব্যবহার করা হবে বলে তারা জানিয়েছে।

যে তহবিল থেকে বাংলাদেশ অর্থ চেয়েছে বলে আইএমএফের তরফে বলা হচ্ছে, তা থেকে নিম্ন আয়ের দেশ ও ঝুঁকিপূর্ণ মধ্যম আয়ের দেশগুলোকে ঋণ দেওয়া হয়। কোভিড মহামারী এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবেলার জন্য নীতি সহায়তার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদী ঋণ দেওয়া হয় এই প্রকল্পে। ২০ বছর মেয়াদে এই ঋণ দিয়ে থাকে আইএমএফ, তার প্রেস পিরিয়ড ১০ বছর। আর ঋণে সুদের হার আলোচনার মধ্য দিয়ে ঠিক হবে।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর সংবাদকে বলেন, ‘ডলার ও রিজার্ভ সংকট আরও গভীর হওয়ার আগে যতটা সম্ভব ঘুরে দাঁড়ানো দরকার। অবস্থা যদি বেশি খারাপ হয়ে যায়, তখন ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হবে না। আর এই কারণেই ঋণ দরকার। এখন ঋণ নিয়ে অর্থনীতির নেতিবাচক পরিস্থিতিগুলো মোকাবিলা করা দরকার। তাহলে বিপদে পড়ার আগেই অর্থনীতি স্বাভাবিক হবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. হেলাল উদ্দিনও জানান, এই মুহূর্তে বাংলাদেশের ঋণ খুবই দরকার। তিনি বলেন, ‘আইএমএফ-এর ঋণ না নিয়ে বাংলাদেশের আর কোনো উপায় নেই। এখন তো বিশ্বব্যাংক ও এডিবি থেকেও ঋণ নেয়ার চেষ্টা করছে। বাজেট বাস্তবায়নে যেমন বিদেশি ঋণ লাগবে। তেমনি এখনকার পরিস্থিতি সামাল দিতেও এই ঋণ লাগবে।’

গত কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে। এতে অনেক দিন পর এর পরিমান ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১০ বছর আগে ২০১৩ সালের জুন শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল মাত্র ১৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার। পাঁচ বছর আগে ছিল ৩৩ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার। সেখান থেকে বেড়ে গত বছরের আগস্টে প্রথমবারের মতো ৪৮ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন ডলার হয়। গত কয়েক মাসে ধরে রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমে সেটা ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমেছে।

আর রিজার্ভ কমায় এবং আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় চাপ বেড়েছে। এতে বাজারে মার্কিন ডলারের সংকট দেখা দিয়েছে।

সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশের বাণিজ্যঘাটতি এখন ৩ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। আমদানি ব্যয় বেরে যাওয়া ও প্রবাসী আয় কমে যাওয়ায় চলতি হিসাবের ঘাটতিও এখন ১ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের বেশী, এটাও বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। আর সামগ্রিক লেনদেনের ঘাটতি ৩৭০ কোটি ডলারের বেশী। অথচ আগের অর্থবছরেও প্রায় ৭৫০ কোটি ডলার উদ্বৃত্ত ছিল।

বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে উদ্বেগের কারণ আছে কিনা জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান সংবাদকে বলেন, ‘রিজার্ভ কোনো সময় কমবে, কোনো সময় বাড়বে, সেটা নিয়ে উদ্বেগের কারণ নেই। কিন্তু সম্প্রতি রিজার্ভ কিন্তু ধারাবাহিকভাবে কমছে। তাই এটা নিয়ে উদ্বেগের কারণ আছে। এজন্য সংকট মোকাবিলায় ঋণের দরকার আছে বাংলাদেশের।’

তবে এই ঋণ নিতে গিয়ে শর্তের বেড়াজালে পড়তে হতে পারে বাংলাদেশকে। এসব শর্ত যদি পুরন করতে পারে তাহলেই ঋণ পাবে বাংলাদেশ।

এর আগে ২০১২ সালে শেষবার আইএমএফের কাছ সম্প্রসারিত ঋণ কর্মসূচির (ইসিএফ) আওতায় তিন বছরের জন্য ৯৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার ঋণ নিয়েছিল বাংলাদেশ সরকার। সেই সময় বেশ কিছু শর্ত দিয়েছিল সংস্থাটি। শর্তের মধ্যে ছিল রাজস্ব প্রশাসনে সংস্কার। এর আওতায় বাংলাদেশকে ভ্যাট আইন পাস করতে হয়েছিল। তখন একটি নতুন প্রত্যক্ষ কর আইন তৈরির শর্তও দেওয়া হয়েছিল। ওই সময় কর মওকুফের সুবিধা বাতিলের শর্তও দিয়েছিল বৈশ্বিক সংস্থাটি।

অন্যান্য শর্তের মধ্যে ছিল সরকারের ভর্তুকি কমানো, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের হার বৃদ্ধি, বিনিময় হার আরও নমনীয় করা, খেলাপি ঋণ আদায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরদারি ক্ষমতা বাড়ানো, বাণিজ্যের বাধা দূর করা, বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নতি ইত্যাদি।

বাংলাদেশের রিজার্ভ সংরক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন তুলে আসছে আইএমএফ। এখন যে নিয়মে রিজার্ভ সংরক্ষণ করা হয় সেটি আইএমএফ এর নীতিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তাই এবারের ঋণে এই শর্তটি বড় হয়ে দেখা দিতে পারে।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘এর আগে যেগুলো শর্ত দিয়েছিল আইএমএফ সেগুলো থাকবে। সঙ্গে নতুন কোনো শর্ত যোগ হতে পারে।’

back to top