চলতি বছর মদের বেচাবিক্রি ও মুনাফায় রেকর্ড করেছে কেরু অ্যান্ড কোম্পানি। দেশে বিদেশি মদের আমদানি কমে যাওয়ায় এই প্রথমবারের মতো বিভিন্ন ইউনিট থেকে মোট বেচাবিক্রি ৪০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে দেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় মদ উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ প্রতিষ্ঠানটির, যা প্রতিষ্ঠানটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
এ বছর শুধু ডিস্টিলারি ইউনিট বা মদ বিক্রি থেকে কেরুর আয় হয়েছে ৩৬৭ কোটি টাকা। লাভ হয়েছে ১০০ কোটি টাকারও বেশি। গত বছরের তুলনায় ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রায় ১০ লাখ প্রুফ লিটার বেশি মদ বিক্রি করেছে কেরু। বিপরীতে প্রতি বছরের মতো এবারও চিনি ইউনিটে বড় ধরণের লোকসান হয়েছে কেরুতে যা প্রায় ৫০ কোটি টাকা। তবে প্রতিষ্ঠানটি মদের মতো চিনিতেও লাভজনক হয়ে উঠতে চায়। চলতি মৌসুমে চিনি খাতে লোকসান কমাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এটি।
নতুন অর্থবছরের আখ মাড়াই মৌসুম শুরু করেছে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানি। এবার প্রায় ৪ হাজার টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৮৩ বছরেরও বেশি পুরনো এ প্রতিষ্ঠানটি। শুক্রবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকেল ৫টায় আনুষ্ঠানিকভাবে এ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ খাদ্য ও চিনিশিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান অপু। চলতি মৌসুমে ৫৩ মাড়াই কার্যদিবসে ৬২ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ৩ হাজার ৮৪০ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কেরু কর্তৃপক্ষ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন, চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাফফুজুর রহমান মনজু, দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলী মুনছুর বাবু, দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা বেগম প্রমুখ।
দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ সালে অন্য বছরের তুলনায় ৫০ শতাংশেরও বেশি বাড়ে কেরুর উৎপাদিত মদের বেচাবিক্রি। গত বছরের তুলনায় ২০২১-২২ অর্থ বছরে ৩০ শতাংশ বেড়েছে কেরুর মদের চাহিদা। অর্থাৎ, প্রায় ১০ লাখ প্রুফ লিটার বেশি মদ বিক্রি করেছে কেরু। প্রতি মাসে গড়ে ১২ থেকে ১৩ হাজার কেস কেরুর উৎপাদিত মদ বিক্রি হয়ে থাকে। উৎপাদনও সে অনুযায়ী করা হয়।
কেরু অ্যান্ড কোং ১৭৫ মিলিলিটার, ৩৭৫ মিলিলিটার ও ৭৫০ মিলিলিটারের বোতলে মদ বাজারজাত করে থাকে। একটি কেসে ৭৫০ মিলিলিটারের ১২টি, ৩৭৫ মিলিলিটারের ২৪টি ও ১৭৫ মিলিলিটারের ৪৮টি মদের বোতল থাকে। কেরুতে রয়েছে মদের ৯টি ব্র্যান্ড। ব্র্যান্ডগুলো হচ্ছে ইয়েলো লেবেল মল্টেড হুইস্কি, গোল্ড রিবন জিন, ফাইন ব্র্যান্ডি, চেরি ব্র্যান্ডি, ইম্পেরিয়াল হুইস্কি, অরেঞ্জ কুরাকাও, জারিনা ভদকা, রোসা রাম ও ওল্ড রাম।
কেরু সূত্র আরও জানায়, দেশে বিদেশি মদের আমদানি নিয়ন্ত্রণ করায় কেরুর মদের চাহিদা বেড়েছে কয়েক গুণ। গত বছর শুল্ক ফাঁকি রোধে মদ আমদানিতে নজরদারি বাড়ায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এতে বৈধপথে হ্রাস পায় মদ আমদানি। তাই বিদেশি মদের সংকট দেখা দেয় দেশের অনুমোদিত বারগুলোতে। তারপর থেকে ক্রমেই বৃদ্ধি পায় দেশে উৎপাদিত মদের চাহিদা। সেই চাহিদা পূরণে উৎপাদন বাড়ায় কেরু। এতে করে কেরুর উৎপাদিত মদ বিক্রি বাড়ার সাথে বেড়েছে মুনাফার পরিমাণ।
৯টি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের আওতায় আন্তর্জাতিক বাজারের জন্য প্রস্তুতকৃত ১০ লাখ ৮০ হাজার প্রুফ লিটার মদ, ২৬ লাখ লিটার দেশি স্পিরিট ও ৮ লাখ লিটার ডিনেচার্ড স্পিরিট উৎপাদন করা হয় কেরুতে। মদের পাশাপাশি ভিনেগার, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সার, চিনি ও গুড়ের মতো অন্যান্য পণ্যও উৎপাদন করে থাকে কেরু।
কেরুর ডিস্টিলারি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক ফিদাহ হাসান বাদশা জানান, বর্তমানে কেরুতে চিনি, ডিস্টিলারি, ফার্মাসিউটিক্যালস, বাণিজ্যিক খামার, আকন্দবাড়িয়া খামার (পরীক্ষামূলক) এবং জৈব সার এই ছয়টি ইউনিট রয়েছে। এরমধ্যে শুধু ডিস্টিলারি ও জৈব সার ইউনিটই লাভজনক। আখের রসের গুড় থেকে অ্যালকোহল ও বিভিন্ন ধরনের স্পিরিট তৈরি করে থাকে কোম্পানিটি, যা চিনি উৎপাদনের উপজাত।
চিনি উৎপাদনের জন্য আখের রস আহরণের পর তিনটি উপজাত পাওয়া যায়। এরমধ্যে রয়েছে গুড়, ব্যাগাস ও প্রেস মাড। মদ বা অ্যালকোহল উৎপাদনের প্রধান উপাদান হলো গুড়। গুড়ের সঙ্গে ইস্ট প্রক্রিয়াকরণের পরে তৈরি করা হয় অ্যালকোহল।
কেরু অ্যান্ড কোম্পানির ঢাকা, চট্টগ্রাম ও চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনায় তিনটি বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে। এছাড়া পাবনার রূপপুর, কক্সবাজার ও পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় একটি করে বিক্রয় কেন্দ্র এবং রাজশাহী ও রামুতে একটি করে ওয়্যারহাউস নির্মাণের মাধ্যমে বাজার সম্প্রসারণের পরিকল্পনাও করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
বর্তমানে সারাদেশে কেরুর ১৩টি ওয়্যারহাউস ও তিনটি বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে। এরমধ্যে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কেরুর দুটি নতুন বিক্রয়কেন্দ্রের অনুমোদন দিয়েছে। বিক্রয়কেন্দ্রগুলো পরিচালনা করার জন্য পর্যটন করপোরেশনের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করার কথা রয়েছে।
শনিবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২২
চলতি বছর মদের বেচাবিক্রি ও মুনাফায় রেকর্ড করেছে কেরু অ্যান্ড কোম্পানি। দেশে বিদেশি মদের আমদানি কমে যাওয়ায় এই প্রথমবারের মতো বিভিন্ন ইউনিট থেকে মোট বেচাবিক্রি ৪০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে দেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় মদ উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ প্রতিষ্ঠানটির, যা প্রতিষ্ঠানটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
এ বছর শুধু ডিস্টিলারি ইউনিট বা মদ বিক্রি থেকে কেরুর আয় হয়েছে ৩৬৭ কোটি টাকা। লাভ হয়েছে ১০০ কোটি টাকারও বেশি। গত বছরের তুলনায় ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রায় ১০ লাখ প্রুফ লিটার বেশি মদ বিক্রি করেছে কেরু। বিপরীতে প্রতি বছরের মতো এবারও চিনি ইউনিটে বড় ধরণের লোকসান হয়েছে কেরুতে যা প্রায় ৫০ কোটি টাকা। তবে প্রতিষ্ঠানটি মদের মতো চিনিতেও লাভজনক হয়ে উঠতে চায়। চলতি মৌসুমে চিনি খাতে লোকসান কমাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এটি।
নতুন অর্থবছরের আখ মাড়াই মৌসুম শুরু করেছে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানি। এবার প্রায় ৪ হাজার টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৮৩ বছরেরও বেশি পুরনো এ প্রতিষ্ঠানটি। শুক্রবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকেল ৫টায় আনুষ্ঠানিকভাবে এ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ খাদ্য ও চিনিশিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান অপু। চলতি মৌসুমে ৫৩ মাড়াই কার্যদিবসে ৬২ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ৩ হাজার ৮৪০ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কেরু কর্তৃপক্ষ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন, চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাফফুজুর রহমান মনজু, দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলী মুনছুর বাবু, দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা বেগম প্রমুখ।
দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ সালে অন্য বছরের তুলনায় ৫০ শতাংশেরও বেশি বাড়ে কেরুর উৎপাদিত মদের বেচাবিক্রি। গত বছরের তুলনায় ২০২১-২২ অর্থ বছরে ৩০ শতাংশ বেড়েছে কেরুর মদের চাহিদা। অর্থাৎ, প্রায় ১০ লাখ প্রুফ লিটার বেশি মদ বিক্রি করেছে কেরু। প্রতি মাসে গড়ে ১২ থেকে ১৩ হাজার কেস কেরুর উৎপাদিত মদ বিক্রি হয়ে থাকে। উৎপাদনও সে অনুযায়ী করা হয়।
কেরু অ্যান্ড কোং ১৭৫ মিলিলিটার, ৩৭৫ মিলিলিটার ও ৭৫০ মিলিলিটারের বোতলে মদ বাজারজাত করে থাকে। একটি কেসে ৭৫০ মিলিলিটারের ১২টি, ৩৭৫ মিলিলিটারের ২৪টি ও ১৭৫ মিলিলিটারের ৪৮টি মদের বোতল থাকে। কেরুতে রয়েছে মদের ৯টি ব্র্যান্ড। ব্র্যান্ডগুলো হচ্ছে ইয়েলো লেবেল মল্টেড হুইস্কি, গোল্ড রিবন জিন, ফাইন ব্র্যান্ডি, চেরি ব্র্যান্ডি, ইম্পেরিয়াল হুইস্কি, অরেঞ্জ কুরাকাও, জারিনা ভদকা, রোসা রাম ও ওল্ড রাম।
কেরু সূত্র আরও জানায়, দেশে বিদেশি মদের আমদানি নিয়ন্ত্রণ করায় কেরুর মদের চাহিদা বেড়েছে কয়েক গুণ। গত বছর শুল্ক ফাঁকি রোধে মদ আমদানিতে নজরদারি বাড়ায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এতে বৈধপথে হ্রাস পায় মদ আমদানি। তাই বিদেশি মদের সংকট দেখা দেয় দেশের অনুমোদিত বারগুলোতে। তারপর থেকে ক্রমেই বৃদ্ধি পায় দেশে উৎপাদিত মদের চাহিদা। সেই চাহিদা পূরণে উৎপাদন বাড়ায় কেরু। এতে করে কেরুর উৎপাদিত মদ বিক্রি বাড়ার সাথে বেড়েছে মুনাফার পরিমাণ।
৯টি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের আওতায় আন্তর্জাতিক বাজারের জন্য প্রস্তুতকৃত ১০ লাখ ৮০ হাজার প্রুফ লিটার মদ, ২৬ লাখ লিটার দেশি স্পিরিট ও ৮ লাখ লিটার ডিনেচার্ড স্পিরিট উৎপাদন করা হয় কেরুতে। মদের পাশাপাশি ভিনেগার, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সার, চিনি ও গুড়ের মতো অন্যান্য পণ্যও উৎপাদন করে থাকে কেরু।
কেরুর ডিস্টিলারি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক ফিদাহ হাসান বাদশা জানান, বর্তমানে কেরুতে চিনি, ডিস্টিলারি, ফার্মাসিউটিক্যালস, বাণিজ্যিক খামার, আকন্দবাড়িয়া খামার (পরীক্ষামূলক) এবং জৈব সার এই ছয়টি ইউনিট রয়েছে। এরমধ্যে শুধু ডিস্টিলারি ও জৈব সার ইউনিটই লাভজনক। আখের রসের গুড় থেকে অ্যালকোহল ও বিভিন্ন ধরনের স্পিরিট তৈরি করে থাকে কোম্পানিটি, যা চিনি উৎপাদনের উপজাত।
চিনি উৎপাদনের জন্য আখের রস আহরণের পর তিনটি উপজাত পাওয়া যায়। এরমধ্যে রয়েছে গুড়, ব্যাগাস ও প্রেস মাড। মদ বা অ্যালকোহল উৎপাদনের প্রধান উপাদান হলো গুড়। গুড়ের সঙ্গে ইস্ট প্রক্রিয়াকরণের পরে তৈরি করা হয় অ্যালকোহল।
কেরু অ্যান্ড কোম্পানির ঢাকা, চট্টগ্রাম ও চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনায় তিনটি বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে। এছাড়া পাবনার রূপপুর, কক্সবাজার ও পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় একটি করে বিক্রয় কেন্দ্র এবং রাজশাহী ও রামুতে একটি করে ওয়্যারহাউস নির্মাণের মাধ্যমে বাজার সম্প্রসারণের পরিকল্পনাও করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
বর্তমানে সারাদেশে কেরুর ১৩টি ওয়্যারহাউস ও তিনটি বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে। এরমধ্যে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কেরুর দুটি নতুন বিক্রয়কেন্দ্রের অনুমোদন দিয়েছে। বিক্রয়কেন্দ্রগুলো পরিচালনা করার জন্য পর্যটন করপোরেশনের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করার কথা রয়েছে।