alt

ডলার বিক্রিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন রেকর্ড

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক : মঙ্গলবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৩

বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রিতে নতুন রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অস্থির ডলারের বাজার সুস্থির করতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের সাত মাস (জুলাই-জানুয়ারি) না পেরোতেই ৮৫০ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়েছে। এর আগে পুরো অর্থবছরেও রিজার্ভ থেকে এত ডলার কখনোই বিক্রি হয়নি।

রাষ্ট্রায়ত্ত কয়েকটি ব্যাংকের কাছে গত সোমবার ৫ কোটি ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে রপ্তানি আয় ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বাড়ার পরও রিজার্ভ ৩২ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে। দিনশেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩২ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার। বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রিতে নতুন রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অস্থির ডলারের বাজার সুস্থির করতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের সাত মাস (জুলাই-জানুয়ারি) না পেরোতেই ৮৫০ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়েছে। এর আগে পুরো অর্থবছরেও রিজার্ভ থেকে এত ডলার কখনোই বিক্রি হয়নি। ২০২১-২২ অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে ৭৬২ কোটি ডলার বিক্রি করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তার আগের অর্থবছরে ডলারের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় বাজার থেকে উল্টো প্রায় ৮০০ কোটি ডলার ক্রয় করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ২০২১ সালের আগস্টে রিজার্ভ যে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছিল, তাতে বাজার থেকে ডলার কেনার অবদান ছিল বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর। আবার এখন যে রিজার্ভ কমছে, তাতে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি একটি বড় কারণ বলে মনে করছেন এই অর্থনীতিবিদ। করোনা মহামারী পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে দেশে আমদানি বাড়তে শুরু করে, লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে অর্থনীতির এই সূচক। তাতে বাজারে ডলারের চাহিদা বেড়ে যায়, বাড়তে থাকে দাম। সেই চাহিদা মেটাতে ডলার বিক্রি শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০২১-২২ অর্থবছরের পুরো সময় ধরে চলে এই বিক্রি। রিজার্ভ থেকে ডলার বাজারে না ছাড়লে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম আরও বেড়ে যাবে এ বিবেচনায় ডলার বিক্রি অব্যাহত রাখে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। শেষ পর্যন্ত ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার বিক্রির মধ্য দিয়ে অর্থবছর শেষ হয়। গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরেও রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি অব্যাহত রাখে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগে সব ব্যাংকের কাছে প্রয়োজনীয় ডলার বিক্রি করলেও গত তিন মাস ধরে শুধু সরকারি কেনাকাটা ও জ্বালানি তেল, স্যারসহ অন্য অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির জন্য এলসি বা ঋণপত্র খুলতে রাষ্ট্রায়ত্ত কয়েকটি ব্যাংকের কাছে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করা হচ্ছে। বেসরকারি ব্যাংকগুলো আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার থেকে ডলার কিনে আমদানি খরচ মেটাচ্ছে।

কিন্তু এরমধ্যে ডলারের দাম ৮৫ টাকা থেকে বাড়তে বাড়তে ১০৬/১০৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শতকরা হিসাবে বেড়েছে ২৫ শতাংশের বেশি। খোলাবাজার বা কার্ব মার্কেটে ডলারের দর ১২০ টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এখনও ১১১ থেকে ১১২ টাকা বিক্রি হচ্ছে। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির দর আরও ১ টাকা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন ১০০ টাকা দরে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করা হয়েছে। গত সোমবার এই দরেই রাষ্ট্রায়ত্ত কয়েকটি ব্যাংকের কাছে ৫ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়েছে বলে জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক কর্মকর্তা। তবে সব ব্যাংক এই দরে ডলার পাচ্ছে না। সরকারের প্রয়োজনীয় আমদানি ব্যয় মেটানোর জন্য শুধু রাষ্ট্রায়ত্ত কয়েকটি ব্যাংকের কাছে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অন্য ব্যাংকগুলোকে আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজার থেকে ডলার কিনে আমদানি কার্যক্রম পরিচালনা করতে হচ্ছে। এদিন আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের সর্বোচ্চ দর ছিল ১০৭ টাকা। এক বছর আগে রিজার্ভ থেকে ৮৬ টাকা দরে ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন অবশ্য, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর পাশাশি বেসরকারি ব্যাংকগুলোর কাছেও ডলার বিক্রি করা হতো। সব ব্যাংকের চাহিদা অনুযায়ী ডলার বিক্রি করলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সঞ্চিত রিজার্ভ আরও কমে যাবে। সেজন্য সরকারের প্রয়োজনেই এখন শুধু রিজার্ভ থেকে ডলার ছাড়া হচ্ছে।

আন্তঃব্যাংক ও গ্রাহক পর্যায়ে সব ব্যাংকেই বর্তমানে ভাসমান বিনিময় দর অনুসরণ করছে। তবে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির ক্ষেত্রে নিজেদের নির্ধারিত আলাদা ‘দর’ অনুসরণ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যাকে বলা হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘সেলিং রেট’। এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংক যে দামে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করত সেটিকে ‘ইন্টারব্যাংক এক্সচেঞ্জ রেট’ বা ‘আন্তঃব্যাংক লেনদেন দর’ নামে অভিহিত করা হতো। বাংলাদেশ ব্যাংক যদি বাজারকে ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার নির্ধারণ করতে না দেয় এবং ঋণের ওপর ৯ শতাংশ সুদের হারের সীমা তুলে না নেয়, তাহলে রিজার্ভ আরও কমে যেতে পারে বলে মনে করছেন আহসান মনসুর। তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে অবস্থান নিয়েছে, তা এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতিকে আরও প্রকট করবে। বাজারভিত্তিক এক্সচেঞ্জ রেট চালু না করলে বাজারে বিপুল পরিমাণ ডলার বিনিয়োগ ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না।’ দীর্ঘদিন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলে (আইএমএফ) গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করে আসা এই অর্থনীতিবিদ উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘গত ১০ মাসে উচ্চ মূল্যস্ফীতি সত্ত্বেও ঋণগ্রহীতা ও জনগণের একটি অংশের মধ্যে পণ্যভোগের চাহিদা এখনও বেশি। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে আমদানি কিছুটা কমে যাওয়ায় চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু বাজারভিত্তিক এক্সচেঞ্জের অনুমতি দেয়া হলে স্থানীয় মুদ্রার আরও অবমূল্যায়ন হবে, যা চাহিদা কমাতে সহায়ক হবে।’

ছবি

নারী সঞ্চয় অ্যাকাউন্ট চালু করল সীমান্ত ব্যাংক

ছবি

বাংলাদেশ ব্যাংকে অর্থনীতির নবায়িত দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করলেন ইউআইইউর অধ্যাপক

ছবি

নভেম্বরে এক ব্যক্তি ও তিন প্রতিষ্ঠানকে ১৬ কোটি টাকা জরিমানা

ছবি

তেলের দাম বাড়ানো ব্যবসায়ীদের ‘কারণ দর্শাও’ নোটিস দিয়ে বৈঠকে ডেকেছে সরকার

ছবি

বিডা আয়োজিত সংলাপে ব্যবসায়ীরা বললেন, আমরা কর-সন্ত্রাস থেকে মুক্তি চাই

ছবি

অর্থনৈতিক গতি ফিরে আসা আগামী নির্বাচনের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করছে

ছবি

‘খেলাপি ঋণ আদায়ে আইনে পরিবর্তন আনার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে’

ছবি

আইসিসিবিতে শুরু চামড়া শিল্প প্রদর্শনীর ১১তম আসর

ছবি

টিসিবির জন্য ২৫১ কোটি টাকায় কেনা হবে ১ কোটি ৫০ লাখ লিটার তেল

ছবি

রমজান উপলক্ষে গতবারের থেকে বেশি ঋণপত্র খোলা হয়েছে: বাণিজ্য উপদেষ্টা

ছবি

তেলের দাম বাড়ানো ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চান ক্যাব সভাপতি

ছবি

ট্যাক্স ছাড়া বিদেশ থেকে কয়টি মোবাইল আনা যাবে জানালো সরকার

ছবি

প্রথমে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত তোলার সুযোগ পাবেন ৫ ব্যাংকের আমানতকারীরা

ছবি

কৃষিতে কর্মসংস্থান বেড়েছে, কমেছে শিল্পে: বিআইডিএস

ছবি

নতুন নকশার ৫০০ টাকার নোট বাজারে আসছে

ছবি

ঢাকায় চামড়া শিল্প প্রদর্শনী শুরু বৃহস্পতিবার

ছবি

ডিএসইতে অধিকাংশ শেয়ারের দরপতন, কমেছে সূচকও

ছবি

বাজারে আসছে অপো’র নতুন স্মার্টফোন এ৬

ছবি

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর নির্ভর করছে বিনিয়োগ: জিইডির প্রতিবেদন

ছবি

সূচক ও শেয়ারদর বাড়লেও লেনদেন তলানিতে

ছবি

সেরা ভ্যাট দাতা সম্মাননা দেবে না এনবিআর

ছবি

সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের জন্য বাজেট থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড়

ছবি

মিজানুর রশীদ সিটি ব্যাংকের নতুন উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক

ছবি

৯ আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের

ছবি

নভেম্বরে দেশে এসেছে ২৮৯ কোটি ডলার প্রবাসী আয়

ছবি

বাজারে আসছে জাইস টেলিফটো ক্যামেরা সমৃদ্ধ ভিভো এক্স৩০০ প্রো

ছবি

শেয়ারবাজারে বড় দরপতন, লেনদেনেও ভাটা

ছবি

চার মাসে বিদেশি ঋণ ছাড় বেড়েছে ৩৯ শতাংশ

ছবি

সাগরে নতুন ৬৫ প্রজাতির মাছের সন্ধান

ছবি

১১ ব্যবসায়ীকে সম্মাননা দিল বিজিএপিএমইএ

ছবি

বিএসইসির সিদ্ধান্তহীনতায় লেনদেন বন্ধ এক ব্রোকারেজ হাউসের

ছবি

ঢাকায় প্রথমবারের মতো শুরু হলো গ্লোবাল সোর্সিং এক্সপো

ছবি

২০১৬ থেকে ২০২২ বাংলাদেশ ‘দুষ্টচক্রের ত্রিভুজে’ আটকে ছিল: হোসেন জিল্লুর

ছবি

চূড়ান্ত অনুমোদন পেল সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক

ছবি

লাফিয়ে বাড়ছে কৃষি খাতের খেলাপি ঋণ

ছবি

সূচকের পতনে সপ্তাহ শুরু, দর হারিয়েছে তিন শতাধিক শেয়ার

tab

ডলার বিক্রিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন রেকর্ড

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

মঙ্গলবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৩

বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রিতে নতুন রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অস্থির ডলারের বাজার সুস্থির করতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের সাত মাস (জুলাই-জানুয়ারি) না পেরোতেই ৮৫০ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়েছে। এর আগে পুরো অর্থবছরেও রিজার্ভ থেকে এত ডলার কখনোই বিক্রি হয়নি।

রাষ্ট্রায়ত্ত কয়েকটি ব্যাংকের কাছে গত সোমবার ৫ কোটি ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে রপ্তানি আয় ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বাড়ার পরও রিজার্ভ ৩২ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে। দিনশেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩২ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার। বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রিতে নতুন রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অস্থির ডলারের বাজার সুস্থির করতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের সাত মাস (জুলাই-জানুয়ারি) না পেরোতেই ৮৫০ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়েছে। এর আগে পুরো অর্থবছরেও রিজার্ভ থেকে এত ডলার কখনোই বিক্রি হয়নি। ২০২১-২২ অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে ৭৬২ কোটি ডলার বিক্রি করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তার আগের অর্থবছরে ডলারের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় বাজার থেকে উল্টো প্রায় ৮০০ কোটি ডলার ক্রয় করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ২০২১ সালের আগস্টে রিজার্ভ যে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছিল, তাতে বাজার থেকে ডলার কেনার অবদান ছিল বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর। আবার এখন যে রিজার্ভ কমছে, তাতে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি একটি বড় কারণ বলে মনে করছেন এই অর্থনীতিবিদ। করোনা মহামারী পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে দেশে আমদানি বাড়তে শুরু করে, লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে অর্থনীতির এই সূচক। তাতে বাজারে ডলারের চাহিদা বেড়ে যায়, বাড়তে থাকে দাম। সেই চাহিদা মেটাতে ডলার বিক্রি শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০২১-২২ অর্থবছরের পুরো সময় ধরে চলে এই বিক্রি। রিজার্ভ থেকে ডলার বাজারে না ছাড়লে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম আরও বেড়ে যাবে এ বিবেচনায় ডলার বিক্রি অব্যাহত রাখে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। শেষ পর্যন্ত ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার বিক্রির মধ্য দিয়ে অর্থবছর শেষ হয়। গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরেও রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি অব্যাহত রাখে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগে সব ব্যাংকের কাছে প্রয়োজনীয় ডলার বিক্রি করলেও গত তিন মাস ধরে শুধু সরকারি কেনাকাটা ও জ্বালানি তেল, স্যারসহ অন্য অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির জন্য এলসি বা ঋণপত্র খুলতে রাষ্ট্রায়ত্ত কয়েকটি ব্যাংকের কাছে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করা হচ্ছে। বেসরকারি ব্যাংকগুলো আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার থেকে ডলার কিনে আমদানি খরচ মেটাচ্ছে।

কিন্তু এরমধ্যে ডলারের দাম ৮৫ টাকা থেকে বাড়তে বাড়তে ১০৬/১০৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শতকরা হিসাবে বেড়েছে ২৫ শতাংশের বেশি। খোলাবাজার বা কার্ব মার্কেটে ডলারের দর ১২০ টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এখনও ১১১ থেকে ১১২ টাকা বিক্রি হচ্ছে। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির দর আরও ১ টাকা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন ১০০ টাকা দরে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করা হয়েছে। গত সোমবার এই দরেই রাষ্ট্রায়ত্ত কয়েকটি ব্যাংকের কাছে ৫ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়েছে বলে জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক কর্মকর্তা। তবে সব ব্যাংক এই দরে ডলার পাচ্ছে না। সরকারের প্রয়োজনীয় আমদানি ব্যয় মেটানোর জন্য শুধু রাষ্ট্রায়ত্ত কয়েকটি ব্যাংকের কাছে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অন্য ব্যাংকগুলোকে আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজার থেকে ডলার কিনে আমদানি কার্যক্রম পরিচালনা করতে হচ্ছে। এদিন আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের সর্বোচ্চ দর ছিল ১০৭ টাকা। এক বছর আগে রিজার্ভ থেকে ৮৬ টাকা দরে ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন অবশ্য, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর পাশাশি বেসরকারি ব্যাংকগুলোর কাছেও ডলার বিক্রি করা হতো। সব ব্যাংকের চাহিদা অনুযায়ী ডলার বিক্রি করলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সঞ্চিত রিজার্ভ আরও কমে যাবে। সেজন্য সরকারের প্রয়োজনেই এখন শুধু রিজার্ভ থেকে ডলার ছাড়া হচ্ছে।

আন্তঃব্যাংক ও গ্রাহক পর্যায়ে সব ব্যাংকেই বর্তমানে ভাসমান বিনিময় দর অনুসরণ করছে। তবে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির ক্ষেত্রে নিজেদের নির্ধারিত আলাদা ‘দর’ অনুসরণ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যাকে বলা হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘সেলিং রেট’। এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংক যে দামে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করত সেটিকে ‘ইন্টারব্যাংক এক্সচেঞ্জ রেট’ বা ‘আন্তঃব্যাংক লেনদেন দর’ নামে অভিহিত করা হতো। বাংলাদেশ ব্যাংক যদি বাজারকে ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার নির্ধারণ করতে না দেয় এবং ঋণের ওপর ৯ শতাংশ সুদের হারের সীমা তুলে না নেয়, তাহলে রিজার্ভ আরও কমে যেতে পারে বলে মনে করছেন আহসান মনসুর। তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে অবস্থান নিয়েছে, তা এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতিকে আরও প্রকট করবে। বাজারভিত্তিক এক্সচেঞ্জ রেট চালু না করলে বাজারে বিপুল পরিমাণ ডলার বিনিয়োগ ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না।’ দীর্ঘদিন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলে (আইএমএফ) গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করে আসা এই অর্থনীতিবিদ উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘গত ১০ মাসে উচ্চ মূল্যস্ফীতি সত্ত্বেও ঋণগ্রহীতা ও জনগণের একটি অংশের মধ্যে পণ্যভোগের চাহিদা এখনও বেশি। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে আমদানি কিছুটা কমে যাওয়ায় চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু বাজারভিত্তিক এক্সচেঞ্জের অনুমতি দেয়া হলে স্থানীয় মুদ্রার আরও অবমূল্যায়ন হবে, যা চাহিদা কমাতে সহায়ক হবে।’

back to top