alt

সাত মাসেই ৮৫০ কোটি ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক : বুধবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৩

আমদানি ব্যয় যে হারে বেড়েছে, সেই হারে বাড়েনি রপ্তানি। আশানুরূপ রেমিট্যান্সও আসেনি। ফলে দেশের বাজারে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। চাহিদা অনুযায়ী ডলারের জোগান না থাকায় প্রয়োজনীয় এলসি (ঋণ পত্র) খুলতে পারছে না ব্যাংকগুলো। আবার আমদানির অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হচ্ছে অনেক ব্যাংক। এমন পরিস্থিতিতে বাজার ‘স্থিতিশীল’ রাখতে রেকর্ড পরিমাণ ডলার বিক্রি করে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তারপরও ডলারের বাজার নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না। বাড়ছে ডলারের দাম আর বিপরীতে কমছে টাকার মান।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সমস্যা সমাধানে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের সাত মাস শেষ না হতেই আমদানি দায় পরিশোধের জন্য বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ৮৫০ কোটি ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে পুরো অর্থবছরেও রিজার্ভ থেকে এই পরিমাণ ডলার বিক্রি করেনি নিয়ন্ত্রণ সংস্থা কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ২০২১-২২ অর্থবছরে মুদ্রাবাজার স্বাভাবিক রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে রিজার্ভ থেকে ৭৬২ কোটি ডলার বিক্রি করেছিল।

এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে বাজারে ডলারের সরবরাহ বাড়ায় দর ধরে রাখতে রেকর্ড প্রায় ৮ বিলিয়ন (৮০০ কোটি) ডলার কিনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এছাড়াও ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৫ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার কিনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত অর্থবছরের আগে সেটিই ছিল সর্বোচ্চ ডলার কেনার রেকর্ড।

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ডলারের মূল্য বাড়লে মুদ্রা বিনিময় হারের মাধ্যমে দেশে মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পায়। এজন্য ডলারের চাহিদা বাড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন তফসিলি ব্যাংকের কাছে রিজার্ভ থেকে প্রচুর পরিমাণ ডলার বিক্রি অব্যাহত রেখেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সবশেষ ২৩ জানুয়ারি রাষ্ট্রায়ত্ত কয়েকটি ব্যাংকের কাছে ৫ কোটি ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে রপ্তানি আয় ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বাড়ার পরও রিজার্ভ সাড়ে ৩২ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে। দিনশেষে রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩২ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার।

আন্তর্জাতিক মানদন্ডে যদি রিজার্ভ হিসাব করা হয় তাহলে এটি আরও আট বিলিয়নের মতো কমে যাবে। সেই হিসাবে এখন প্রকৃত রিজার্ভ আছে সাড়ে ২৪ বিলিয়ন ডলার যা গত ৮ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২৫ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর থেকে রিজার্ভ কমে এ পর্যায়ে নেমেছে। এর আগে ধারাবাহিকভাবে যা বাড়ছিল। ১০ বছর আগে ২০১৩ সালের জুন শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল মাত্র ১৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার। ২০১৮ সালে তা বেড়ে হয়েছিল ৩৩ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার। সেখান থেকে আরও বেড়ে ২০২০ সালের ৮ অক্টোবর ৪০ বিলিয়ন ডলারের নতুন মাইলফলক অতিক্রম করে দেশের রিজার্ভ। এরপর তা বেড়ে ২০২১ সালের আগস্টে প্রথমবারের মতো ৪৮ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন ডলার হয়। রিজার্ভের এ অঙ্ক ছিল ইতিহাসের সর্বোচ্চ। এরপর আর রিজার্ভ ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক।

২০২১-২২ অর্থবছরের পুরো সময় ধরে চলে এই ডলার বিক্রি। রিজার্ভ থেকে ডলার বাজারে না ছাড়লে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম আরও বেড়ে যাবে- এ বিবেচনায় ডলার বিক্রি অব্যাহত রাখে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। শেষ পর্যন্ত ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার বিক্রির মধ্য দিয়ে অর্থবছর শেষ হয়।

গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরেও রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি অব্যাহত রাখে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগে সব ব্যাংকের কাছে প্রয়োজনীয় ডলার বিক্রি করলেও গত তিন মাস ধরে শুধু সরকারি কেনাকাটা ও জ্বালানি তেল, স্যারসহ অন্যান্য অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির জন্য এলসি বা ঋণপত্র খুলতে রাষ্ট্রায়ত্ত কয়েকটি ব্যাংকের কাছে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করা হচ্ছে। বেসরকারি ব্যাংকগুলো আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজার থেকে ডলার কিনে আমদানি খরচ মেটাচ্ছে।

এদিকে ডলার সংকট প্রকট হলে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম নির্ধারণের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ায়। এই দায়িত্ব দেয়া হয় ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি ও বাফেদার ওপর। এরপর দুই সংগঠনের নেতারা বিভিন্ন লেনদেনে ডলারের সর্বোচ্চ দাম নির্ধারণ ক?রে আস?ছে। শুরুতে রপ্তানি আয়ে ডলারের সর্বোচ্চ দাম ছিল ৯৯ টাকা ও প্রবাসী আয়ে ১০৮ টাকা। আর ডলারের পাঁচ দিনের গড় খরচের চেয়ে ১ টাকা বেশি দামে আমদানি দায় শোধ করতে বলা হয়। পরে বিভিন্ন সময় দফায় দফায় বৈঠক করে নতুন দর নির্ধারণ করা হচ্ছে।

সবশেষ ১ জানুয়া?রি রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে ডলারের দাম আরও ১ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে ব্যাংকগুলো। এবিবি ও বাফেদা সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন রপ্তানি আয়ে ডলারের দাম ১০২ টাকা। প্রবাসী আয়ে ডলারের দাম ১০৭ টাকা।

এবিবি ও বাফেদা নয় সংকটে ডলারের দাম বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও। এখন প্রতি ডলার ১০০ টাকা করে বিক্রি করছে। অর্থাৎ বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক জরুরি পণ্য আমদানিতে যে ডলার বিক্রি করছে, তার প্রতি ডলারের মূল্য ১০০ টাকা।

গত সোমবার এই দরেই রাষ্ট্রায়ত্ত কয়েকটি ব্যাংকের কাছে ৫ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়েছে বলে জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক কর্মকর্তা। এক বছর আগেও এই ডলারের দাম ছিল ৮৫ টাকা ৮০ পয়সা। তবে খোলা বাজার বা কার্ব মার্কেটে ডলার বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১১১ টাকা। গেল বছর কার্ব মার্কেটে ডলার ১২০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। সব ব্যাংকের চাহিদা অনুযায়ী ডলার বিক্রি করলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সঞ্চিত রিজার্ভ আরও কমে যাবে। সেজন্য সরকারের প্রয়োজনেই এখন শুধু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করা হচ্ছে।

ছবি

মোংলা বন্দরের মাধ্যমে শতভাগ রিকন্ডিশন গাড়ি আমদানির পরিকল্পনা

ছবি

ডিমের দাম বাড়লো ডজনে ১০ টাকা, বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে অধিকাংশ সবজি

ছবি

দেশের ব্যবসার পরিবেশে তেমন উন্নতি হয়নি: বিবিএক্স জরিপ

ছবি

প্রথম প্রান্তিকে রাজস্ব আদায়ে রেকর্ড, ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি

ছবি

অক্টোবরের ১৫ দিনে রেমিট্যান্স সাড়ে ১৭ হাজার কোটি টাকা

ছবি

যেসব কারণে বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়েছে আইএমএফ

ছবি

কাঁচা পাট রপ্তানিতে সরকারি অনুমতির বাধ্যবাধকতা শিথিল চায় নেপাল

ছবি

পুঁজিবাজারে বস্ত্র খাতের কোম্পানি বাড়াতে সেমিনার করবে বিজিএমইএ

ছবি

দেশে আন্তর্জাতিক মানের সবুজ কারখানা ২৬৮টি

ছবি

বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নিলেন মেজর জেনারেল মোয়াজ্জেম

ছবি

ওসিরিস গ্রুপের সঙ্গে বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু এশিয়া গ্রুপের

ছবি

কর জাল সম্প্রসারণে ১২ নতুন কাস্টম অফিস, ৩৫৯৭ লোকবল নেবে এনবিআর

ছবি

চট্টগ্রাম বন্দরের বর্ধিত ট্যারিফ, শিপিং ব্যয় বাড়ার প্রভাব পড়বে ভোক্তাদের ওপর

ছবি

ভারত থেকে ঢুকছে জাল টাকা, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সতর্ক বার্তা

ছবি

গ্রাহক আস্থায় ব্যাংকের তুলনায় অনেক পিছিয়ে বিমা খাত

ছবি

১ ও ২ টাকার মুদ্রা না নেয়ার চেষ্টা আইনের লঙ্ঘন: বাংলাদেশ ব্যাংক

ছবি

আইসিসিবিতে বসেছে ৩ দিনব্যাপী ইন্টেরিয়র-ফার্নিচার-সাইনেজ এক্সপো

ছবি

স্বর্ণের দাম বাড়ছেই

ভবিষ্যৎ নীতিতে খাদ্য অধিকারকে অগ্রাধিকার দেয়ার আহ্বান

ছবি

কঠিন শর্তে আইএমএফ-এর অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

ছবি

চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৪.৯ শতাংশ: আইএমএফ

ছবি

ব্যাংক থেকে আরও ৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার কিনলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক

ছবি

চট্টগ্রাম বন্দরে ৫৬ সেবায় বাড়তি ট্যারিফ কার্যকর

ছবি

সঞ্চয়পত্রের সুদহার আরও কমাতে যাচ্ছে সরকার

ছবি

এনবিআরের কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগে নতুন ১২ দপ্তর

ছবি

ডিজিটাল লেনদেন ব্যবসায় আসছে রবি ও বাংলালিংক

ছবি

চট্টগ্রাম বন্দরে মধ্যরাত থেকে বর্ধিত ট্যারিফ চালু, গড়ে ৪১ শতাংশ বৃদ্ধি

ছবি

সরকার ভোজ্যতেলের দাম বাড়ায়নি: বাণিজ্য উপদেষ্টা

ছবি

মোবাইল ব্যাংক থেকে ব্যাংকে টাকা পাঠাতে হাজারে খরচ হবে সাড়ে ৮ টাকা

ছবি

ভেজাল ও নকলকারীদের বিরুদ্ধে বিএসটিআইকে আরও কঠোর হতে হবে, বিশ্ব মান দিবসে বক্তারা

ছবি

ঢাকায় ৫ দিনব্যাপী ফার্নিচার মেলা শুরু

ছবি

কৃষি ও এসএমই ঋণ বাড়াতে নিরাপত্তা সঞ্চিতিতে ছাড় পেল ব্যাংকগুলো

ছবি

শিল্প আমদানিকারকদের নতুন সুবিধা দিলো বাংলাদেশ ব্যাংক

ছবি

বাংলাদেশে সংস্কার অগ্রগতি যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ আগ্রহ বাড়াবে: অর্থ উপদেষ্টা

শেরপুরে দুধের বাজারে ঘণ্টায় লাখ লাখ টাকার দুধ বিক্রি

ছবি

‘প্রযুক্তির মাধ্যমেই টেকসই প্রবৃদ্ধি’র ব্যাখ্যা দিয়ে অর্থনীতিতে নোবেল জয় তিন গবেষকের

tab

সাত মাসেই ৮৫০ কোটি ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

বুধবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৩

আমদানি ব্যয় যে হারে বেড়েছে, সেই হারে বাড়েনি রপ্তানি। আশানুরূপ রেমিট্যান্সও আসেনি। ফলে দেশের বাজারে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। চাহিদা অনুযায়ী ডলারের জোগান না থাকায় প্রয়োজনীয় এলসি (ঋণ পত্র) খুলতে পারছে না ব্যাংকগুলো। আবার আমদানির অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হচ্ছে অনেক ব্যাংক। এমন পরিস্থিতিতে বাজার ‘স্থিতিশীল’ রাখতে রেকর্ড পরিমাণ ডলার বিক্রি করে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তারপরও ডলারের বাজার নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না। বাড়ছে ডলারের দাম আর বিপরীতে কমছে টাকার মান।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সমস্যা সমাধানে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের সাত মাস শেষ না হতেই আমদানি দায় পরিশোধের জন্য বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ৮৫০ কোটি ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে পুরো অর্থবছরেও রিজার্ভ থেকে এই পরিমাণ ডলার বিক্রি করেনি নিয়ন্ত্রণ সংস্থা কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ২০২১-২২ অর্থবছরে মুদ্রাবাজার স্বাভাবিক রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে রিজার্ভ থেকে ৭৬২ কোটি ডলার বিক্রি করেছিল।

এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে বাজারে ডলারের সরবরাহ বাড়ায় দর ধরে রাখতে রেকর্ড প্রায় ৮ বিলিয়ন (৮০০ কোটি) ডলার কিনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এছাড়াও ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৫ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার কিনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত অর্থবছরের আগে সেটিই ছিল সর্বোচ্চ ডলার কেনার রেকর্ড।

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ডলারের মূল্য বাড়লে মুদ্রা বিনিময় হারের মাধ্যমে দেশে মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পায়। এজন্য ডলারের চাহিদা বাড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন তফসিলি ব্যাংকের কাছে রিজার্ভ থেকে প্রচুর পরিমাণ ডলার বিক্রি অব্যাহত রেখেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সবশেষ ২৩ জানুয়ারি রাষ্ট্রায়ত্ত কয়েকটি ব্যাংকের কাছে ৫ কোটি ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে রপ্তানি আয় ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বাড়ার পরও রিজার্ভ সাড়ে ৩২ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে। দিনশেষে রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩২ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার।

আন্তর্জাতিক মানদন্ডে যদি রিজার্ভ হিসাব করা হয় তাহলে এটি আরও আট বিলিয়নের মতো কমে যাবে। সেই হিসাবে এখন প্রকৃত রিজার্ভ আছে সাড়ে ২৪ বিলিয়ন ডলার যা গত ৮ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২৫ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর থেকে রিজার্ভ কমে এ পর্যায়ে নেমেছে। এর আগে ধারাবাহিকভাবে যা বাড়ছিল। ১০ বছর আগে ২০১৩ সালের জুন শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল মাত্র ১৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার। ২০১৮ সালে তা বেড়ে হয়েছিল ৩৩ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার। সেখান থেকে আরও বেড়ে ২০২০ সালের ৮ অক্টোবর ৪০ বিলিয়ন ডলারের নতুন মাইলফলক অতিক্রম করে দেশের রিজার্ভ। এরপর তা বেড়ে ২০২১ সালের আগস্টে প্রথমবারের মতো ৪৮ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন ডলার হয়। রিজার্ভের এ অঙ্ক ছিল ইতিহাসের সর্বোচ্চ। এরপর আর রিজার্ভ ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক।

২০২১-২২ অর্থবছরের পুরো সময় ধরে চলে এই ডলার বিক্রি। রিজার্ভ থেকে ডলার বাজারে না ছাড়লে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম আরও বেড়ে যাবে- এ বিবেচনায় ডলার বিক্রি অব্যাহত রাখে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। শেষ পর্যন্ত ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার বিক্রির মধ্য দিয়ে অর্থবছর শেষ হয়।

গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরেও রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি অব্যাহত রাখে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগে সব ব্যাংকের কাছে প্রয়োজনীয় ডলার বিক্রি করলেও গত তিন মাস ধরে শুধু সরকারি কেনাকাটা ও জ্বালানি তেল, স্যারসহ অন্যান্য অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির জন্য এলসি বা ঋণপত্র খুলতে রাষ্ট্রায়ত্ত কয়েকটি ব্যাংকের কাছে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করা হচ্ছে। বেসরকারি ব্যাংকগুলো আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজার থেকে ডলার কিনে আমদানি খরচ মেটাচ্ছে।

এদিকে ডলার সংকট প্রকট হলে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম নির্ধারণের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ায়। এই দায়িত্ব দেয়া হয় ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি ও বাফেদার ওপর। এরপর দুই সংগঠনের নেতারা বিভিন্ন লেনদেনে ডলারের সর্বোচ্চ দাম নির্ধারণ ক?রে আস?ছে। শুরুতে রপ্তানি আয়ে ডলারের সর্বোচ্চ দাম ছিল ৯৯ টাকা ও প্রবাসী আয়ে ১০৮ টাকা। আর ডলারের পাঁচ দিনের গড় খরচের চেয়ে ১ টাকা বেশি দামে আমদানি দায় শোধ করতে বলা হয়। পরে বিভিন্ন সময় দফায় দফায় বৈঠক করে নতুন দর নির্ধারণ করা হচ্ছে।

সবশেষ ১ জানুয়া?রি রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে ডলারের দাম আরও ১ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে ব্যাংকগুলো। এবিবি ও বাফেদা সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন রপ্তানি আয়ে ডলারের দাম ১০২ টাকা। প্রবাসী আয়ে ডলারের দাম ১০৭ টাকা।

এবিবি ও বাফেদা নয় সংকটে ডলারের দাম বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও। এখন প্রতি ডলার ১০০ টাকা করে বিক্রি করছে। অর্থাৎ বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক জরুরি পণ্য আমদানিতে যে ডলার বিক্রি করছে, তার প্রতি ডলারের মূল্য ১০০ টাকা।

গত সোমবার এই দরেই রাষ্ট্রায়ত্ত কয়েকটি ব্যাংকের কাছে ৫ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়েছে বলে জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক কর্মকর্তা। এক বছর আগেও এই ডলারের দাম ছিল ৮৫ টাকা ৮০ পয়সা। তবে খোলা বাজার বা কার্ব মার্কেটে ডলার বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১১১ টাকা। গেল বছর কার্ব মার্কেটে ডলার ১২০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। সব ব্যাংকের চাহিদা অনুযায়ী ডলার বিক্রি করলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সঞ্চিত রিজার্ভ আরও কমে যাবে। সেজন্য সরকারের প্রয়োজনেই এখন শুধু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করা হচ্ছে।

back to top