alt

নিত্যপণ্যের দামে লাগাম টানবে কে?

আদা উঠেছে ৪০০ টাকায়, জিরা কেজিতে বেড়েছে ৩০০

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : শুক্রবার, ১৯ মে ২০২৩

ঊর্ধ্বমুখী নিত্যপণ্যের বাজারে আদা, রসুন ও পেঁয়াজের দামের লাগাম টানা যাচ্ছে না। দেখা দিয়েছে ‘সরবরাহ’ সংকটও। মাসের ব্যবধানে জরুরি কয়েকটি পণ্যের দাম দ্বিগুণ বেড়েছে। দাম বৃদ্ধির যৌক্তিক কোন কারণ জানেন না কেউই। কয়েক দফা দাম বাড়িয়েও চিনির বাজার শান্ত করা যায়নি। পণ্যটির দাম আরও অস্থির হয়ে উঠেছে। ফলে প্রয়োজনের তুলনায় কম বাজার কিনে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে সাধারণ ক্রেতাদের।

এদিকে, শুক্রবার (১৯ মে) রংপুরে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী বলেছেন, ‘শুধু পেঁয়াজ ও চিনি নিয়ে একটু ঝামেলা চলছে। এটাও দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আসবে। চিনির দাম বৈশ্বিকভাবে ওঠানামা করায় তার সুযোগ নিচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। তবে সরকার নির্ধারিত দাম বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে।’

বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মাত্র একদিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম আরও ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকায়। ৩০০ টাকা কেজির কমে মিলছে না আদা। চীন থেকে আমদানি করা ভালো মানের আদার দাম উঠেছে কেজিপ্রতি ৪০০ টাকায়। অথচ মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগেই এ পেঁয়াজ ও আদার দাম ছিল বর্তমান দামের অর্ধেক। রমজানের ঈদের আগে বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩৫ টাকায় এবং আদা ১৮০ টাকায়। অন্যদিকে এ সময়ের ব্যবধানে আমদানি করা রসুনের দাম কেজিপ্রতি ৪০ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়। কয়েকদিনের ব্যবধানে জিরার দাম কেজিপ্রতি ৩০০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায়। এছাড়া, এছাড়া বাজারে দেশি রসুন ১৬০ টাকা, চায়নার রসুন ১৮০ টাকা। তবে, চালের দাম কিছুটা কমেছে।

কারওয়ান বাজারের বিক্রেতা মোহাম্মদ ইমান আলী বলেন, ‘ঈদের আগে আমরা ২৫ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি করতাম এখন ৮০ টাকায় বিক্রি করছি। গত সপ্তাহে এর দাম ছিল ৭০ টাকা।’

সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, এসব পরিস্থিতি মোকাবিলায় ‘সুষ্ঠু’ বাজার ব্যবস্থাপনা জরুরি। দাম বৃদ্ধিতে সবচেয়ে এগিয়ে পেঁয়াজ। চাহিদার চেয়ে ‘উৎপাদন বেশি হওয়া’ সত্ত্বেও কোন কারণ ছাড়াই বাড়ছে পণ্যটির দাম। পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা ভারত ও মায়ানমার থেকে আমদানি বন্ধ, এই অজুহাতে প্রতিদিনই বাড়ছে সংসারের অতিপ্রয়োজনীয় পণ্যটির দাম।

কারওয়ান বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা শহিদুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘সবকিছুর দাম শুধু বাড়তাছে আর বাড়তাছে। ঈদের আগে যে পেঁয়াজ কিনেছিলাম কেজি ৪০ টাকায় আজ সেই পেঁয়াজ কিনলাম ৮০ টাকায়। কিছুদিন আগে যে চিনি কিনেছিলাম ৭০ টাকা কেজি আজ বাজারে গিয়া দেখেন ১৪০ টাকা। জিনিসপত্রের দাম খালি ডবল ডবল হইতাছে, আয় রোজগার তো ডবল হইতাছে না।’

দেশি পেঁয়াজের খুচরা বিক্রেতা শ্যামলী কাঁচাবাজারের শাহাদত হাসান শুভ সংবাদকে বলেন, ‘আজ দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করেছি কেজি ৮০ টাকায়। এই পেঁয়াজ গত সপ্তাহেও বিক্রি করেছি ৭০ টাকায়। পাইকারিতে কিনতে পড়েছে কেজি ৭২ টাকা। ’

পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ‘তা বলতে পারব না। আমরা পাইকারি থেকে কিনে এনে বিক্রি করি। পাইকারিতে দাম বাড়লে আমরা কি করব। তবে, মনে হয় কিছু ব্যবসায়ী মাল স্টক করতাছে, দাম বেশি হলে সেল দিবো। মনে হয় পেঁয়াজের দাম আরও বাড়বে।’

বিক্রেতারা এসব পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে আমদানি বন্ধ ও নানা ধরনের সংকটের কথা বললেও ক্রেতারা তা মেনে নিতে নারাজ। ক্রেতারা বলছেন, মাছ-মাংস, মসলা ও শাক-সবজিসহ প্রায় সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চড়া দামে দারুণ বিপাকে সাধারণ মানুষ। বিশেষত নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ বেশি বেকায়দায় পড়েছেন। সংসার চালাতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। আমদানি বন্ধের অজুহাতে বাজার ‘সিন্ডিকেট’ ইচ্ছামতো পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে।

সরকার চিনির দাম নির্ধারণ করে দিলেও বাজারে এর প্রভাব না পড়ায় ‘অসন্তোষ’ প্রকাশ করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী।

গত রোববার কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তার জানিয়েছেন, দেশে বর্তমানে ১৮ লাখ ৩০ হাজার টন পেঁয়াজের মজুদ আছে। উৎপাদন ও মজুদ বিবেচনায় দেশে এই মুহূর্তে পেঁয়াজের দাম বাড়ার কোন কারণ নেই। শুক্রবার বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী জানান, দু’একদিনের মধ্যে বাজারে দাম না কমলে ভারত থেকে আবারও পেঁয়াজ আমদানি করা হবে।

টিপু মুন্সী বলেন, ‘পেঁয়াজের দাম বেড়েছে; বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। দু’একদিনের মধ্যে দাম না কমলে আমদানির ব্যবস্থা করা হবে এবং দ্রুতই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

কাঁচাবাজারের সবকিছু বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণ করে না উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘বিভিন্ন মন্ত্রণালয় কাঁচাবাজার নিয়ন্ত্রণ করে।’ এছাড়া বাজারের সার্বিক পরিস্থিতি খারাপ নয় বলে মন্তব্য করেন তারা। মন্ত্রী বলেন, ‘দামে একটু ঝামেলা হয়েছে; তবে ওভারঅল পরিস্থিতি খারাপ না। সারাবিশ্বেই সবকিছুর দাম বেড়েছে; ডালের দামও বেড়েছে। মূলত ডলারের দামের কারণে বাজারে প্রভাব পড়েছে।’

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চিনির দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে উল্লেখ করে টিপু মুন্সী বলেন, ‘তারপরেও বাজারে এর প্রভাব পড়েনি। মন্ত্রণালয় থেকে নির্ধারণ করা দামে চিনি এখনও বাজারে বিক্রি হচ্ছে না। এটি নিয়ন্ত্রণে ভোক্তা অধিকার ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে।’

পেঁয়াজের উৎপাদন, চাহিদা ও আমদানির তথ্য তুলে ধরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছিল, গত দুই বছরে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বেড়েছে ১০ লাখ টনেরও বেশি। চলতি বছর দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ৩৪ লাখ টনের বেশি। বর্তমানে মজুত আছে ১৮ লাখ ৩০ হাজার টন।

দাম কমছে না

ঢাকার খুচরা বাজারে এ সপ্তাহেও ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকায়। বিক্রেতারা বলছে কোম্পানি এবং পাইকারদের ‘সিন্ডিকেটে’ বাড়ছে দাম। মোহাম্মদপুর টাউন হল কাঁচাবাজের বিক্রেতা আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘২২০ টাকা কেজি ব্রয়লার। শুক্রবারও এই দামে বিক্রি করছি। ১৯০ টাকা পাইকারি গেছে। আজ পরিবহনসহ ২০০ টাকা পড়েছে।’

আরেক বিক্রেতা কাজল আহম্মেদ বলেন, ‘কাপ্তান বাজারে মাল কম আসার কথা বলে বলে দাম বাড়াইয়া রাখে। অভিযান, নিয়ন্ত্রণ যা করার সেখানে করতে হবে। আমরা আর কয়টা আর বেচি? আমরা তো লসে আছি।’

ডিমের দাম আরও বেড়েছে। বাজারে এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকায়, গত সপ্তাহে যা ছিল ১৪০ টাকা। সুপার শপ ‘স্বপ্ন’ ডিম বিক্রি করছে সাড়ে ১৩ টাকা দরে ডজন ১৬২ টাকায়।

দাম কমেনি সবজির। মাছ, গরু ও খাসির মাংস, আটা বিক্রি হচ্ছে আগের দামেই। কাঁচা মরিচের দাম উঠেছে ২০০ থেকে ২২০ টাকায়।

নিত্যপণ্যের দাম যখন বাড়তি, তখন নতুন করে কোন পণ্যের বাড়তি দাম মানুষকে পীড়া দিচ্ছে। সীমিত আয়ের মানুষরা খাদ্যের পেছনে বাড়তি খরচ করতে অন্য খরচ কমাচ্ছে। অনেকের পক্ষে তো সেই সুযোগও আর থাকছে না।

ছবি

রমজান-নির্বাচন উপলক্ষে পণ্যের সরবরাহ বাড়ানোর তাগিদ

ছবি

বাকিতে আমদানি করা যাবে রোজার পণ্য

ছবি

সুমিটোমো থার্ড টার্মিনালের অপারেশনস-মেইটেনেন্স কাজ করতে আগ্রহী জাপান

ছবি

চলমান গ্যাস সংকট কমাতে দীর্ঘ পরিকল্পনা পেট্রোবাংলার

ছবি

প্রথম প্রান্তিকে ওয়ালটনের মুনাফায় ৪৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি

ছবি

সয়াবিন তেল ও চিনি কিনছে সরকার

ছবি

১৬৪ টাকায় সয়াবিন তেল, ৯৪ টাকায় চিনি কিনবে সরকার

ছবি

ভারতে মূল্যস্ফীতি শূন্যের কাছাকাছি

ছবি

সিএমএসএমইর তিন বছর মেয়াদি প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ল

ছবি

সরকারের জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ, অর্থবিভাগ-এর সাথে সর্বজনীন পেনশন স্কিমসমুহে রেজিস্ট্রেশন

ছবি

মিউচুয়াল ফান্ড বিধিমালা নিয়ে গেজেট, থাকছে না মেয়াদি ফান্ড

ছবি

মেট্রোরেল প্রকল্প বাতিল হয়নি, ব্যয় কমানোর চেষ্টা চলছে: ডিএমটিসিএল এমডি

ছবি

পাঁচ ব্যাংকের অব্যবস্থাপনার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চেয়ে চিঠি

ছবি

নতুন পে-স্কেলের ফ্রেমওয়ার্ক দিয়ে যাবে বর্তমান সরকার: অর্থ উপদেষ্টা

ছবি

চট্টগ্রামে লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল: ৩০ বছর চালাবে ডেনমার্কের কোম্পানি

ছবি

পাঁচ ব্যাংকের গ্রাহকদের আমানত নিয়ে উদ্বিগ্ন না হওয়ার অনুরোধ প্রশাসকদের

ছবি

বৃহস্পতিবার দোকান ও বিপণিবিতান খোলা রাখার ঘোষণা ব্যবসায়ীদের

ছবি

চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চান ব্যবসায়ীরা

ছবি

তিন শতাধিক শেয়ারের দরপতনে তলানিতে লেনদেন শেয়ারবাজারে

ছবি

পাঁচ ব্যাংকের শেয়ার ‘শূন্য’ ঘোষণা একতরফা সিদ্ধান্ত: বিএমবিএ

ছবি

সাবেক এমপিদের ৩১ বিলাসবহুল গাড়ি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে দিল এনবিআর

ছবি

তরূণদের অংশগ্রহনে নারায়ণগঞ্জে উদ্যোক্তা সম্মেলন হলো

ছবি

বাজারে নতুন স্মার্টফোন হেলিও ৪৫

ছবি

বাংলাদেশের বাজারে রিয়েলমি সি৮৫ প্রো উন্মোচন

ছবি

এলডিসি উত্তরণ ৩ বছর পিছিয়ে দেয়ার অনুরোধ ব্যবসায়ীদের

ছবি

শ্রম অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্ত করবে আরএসসি, সায় দিচ্ছে না বিজিএমইএ

ছবি

শেয়ারবাজারে ৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন লেনদেন

ছবি

বাংলাদেশের তৈরি ফ্যাশনেবল পোশাকের আমদানি বাড়াবে জাপান

ছবি

স্বর্ণের দাম আবার বাড়লো

একনেকে ৭১৫০ কোটি টাকার ১২ প্রকল্প পাস

আবারও ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর সুপারিশ

ছবি

আকুর বিল পরিশোধের পরও ৩১ বিলিয়নের ওপরে রিজার্ভ

ছবি

লাইসেন্স পেলো ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’, চেয়ারম্যান নাজমা

ছবি

মুঠোফোনের ওপর শুল্ক-কর কমাতে এনবিআরকে বিটিআরসির চিঠি

ছবি

এলডিসি পেছানোর আবেদন করলে অন্য দেশ বিরোধিতা করবে: সেলিম রায়হান

ছবি

শেয়ারবাজারে পরপর সাত দিন পতন, লেনদেন ৩০০ কোটি টাকার ঘরে

tab

নিত্যপণ্যের দামে লাগাম টানবে কে?

আদা উঠেছে ৪০০ টাকায়, জিরা কেজিতে বেড়েছে ৩০০

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

শুক্রবার, ১৯ মে ২০২৩

ঊর্ধ্বমুখী নিত্যপণ্যের বাজারে আদা, রসুন ও পেঁয়াজের দামের লাগাম টানা যাচ্ছে না। দেখা দিয়েছে ‘সরবরাহ’ সংকটও। মাসের ব্যবধানে জরুরি কয়েকটি পণ্যের দাম দ্বিগুণ বেড়েছে। দাম বৃদ্ধির যৌক্তিক কোন কারণ জানেন না কেউই। কয়েক দফা দাম বাড়িয়েও চিনির বাজার শান্ত করা যায়নি। পণ্যটির দাম আরও অস্থির হয়ে উঠেছে। ফলে প্রয়োজনের তুলনায় কম বাজার কিনে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে সাধারণ ক্রেতাদের।

এদিকে, শুক্রবার (১৯ মে) রংপুরে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী বলেছেন, ‘শুধু পেঁয়াজ ও চিনি নিয়ে একটু ঝামেলা চলছে। এটাও দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আসবে। চিনির দাম বৈশ্বিকভাবে ওঠানামা করায় তার সুযোগ নিচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। তবে সরকার নির্ধারিত দাম বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে।’

বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মাত্র একদিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম আরও ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকায়। ৩০০ টাকা কেজির কমে মিলছে না আদা। চীন থেকে আমদানি করা ভালো মানের আদার দাম উঠেছে কেজিপ্রতি ৪০০ টাকায়। অথচ মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগেই এ পেঁয়াজ ও আদার দাম ছিল বর্তমান দামের অর্ধেক। রমজানের ঈদের আগে বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩৫ টাকায় এবং আদা ১৮০ টাকায়। অন্যদিকে এ সময়ের ব্যবধানে আমদানি করা রসুনের দাম কেজিপ্রতি ৪০ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়। কয়েকদিনের ব্যবধানে জিরার দাম কেজিপ্রতি ৩০০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায়। এছাড়া, এছাড়া বাজারে দেশি রসুন ১৬০ টাকা, চায়নার রসুন ১৮০ টাকা। তবে, চালের দাম কিছুটা কমেছে।

কারওয়ান বাজারের বিক্রেতা মোহাম্মদ ইমান আলী বলেন, ‘ঈদের আগে আমরা ২৫ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি করতাম এখন ৮০ টাকায় বিক্রি করছি। গত সপ্তাহে এর দাম ছিল ৭০ টাকা।’

সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, এসব পরিস্থিতি মোকাবিলায় ‘সুষ্ঠু’ বাজার ব্যবস্থাপনা জরুরি। দাম বৃদ্ধিতে সবচেয়ে এগিয়ে পেঁয়াজ। চাহিদার চেয়ে ‘উৎপাদন বেশি হওয়া’ সত্ত্বেও কোন কারণ ছাড়াই বাড়ছে পণ্যটির দাম। পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা ভারত ও মায়ানমার থেকে আমদানি বন্ধ, এই অজুহাতে প্রতিদিনই বাড়ছে সংসারের অতিপ্রয়োজনীয় পণ্যটির দাম।

কারওয়ান বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা শহিদুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘সবকিছুর দাম শুধু বাড়তাছে আর বাড়তাছে। ঈদের আগে যে পেঁয়াজ কিনেছিলাম কেজি ৪০ টাকায় আজ সেই পেঁয়াজ কিনলাম ৮০ টাকায়। কিছুদিন আগে যে চিনি কিনেছিলাম ৭০ টাকা কেজি আজ বাজারে গিয়া দেখেন ১৪০ টাকা। জিনিসপত্রের দাম খালি ডবল ডবল হইতাছে, আয় রোজগার তো ডবল হইতাছে না।’

দেশি পেঁয়াজের খুচরা বিক্রেতা শ্যামলী কাঁচাবাজারের শাহাদত হাসান শুভ সংবাদকে বলেন, ‘আজ দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করেছি কেজি ৮০ টাকায়। এই পেঁয়াজ গত সপ্তাহেও বিক্রি করেছি ৭০ টাকায়। পাইকারিতে কিনতে পড়েছে কেজি ৭২ টাকা। ’

পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ‘তা বলতে পারব না। আমরা পাইকারি থেকে কিনে এনে বিক্রি করি। পাইকারিতে দাম বাড়লে আমরা কি করব। তবে, মনে হয় কিছু ব্যবসায়ী মাল স্টক করতাছে, দাম বেশি হলে সেল দিবো। মনে হয় পেঁয়াজের দাম আরও বাড়বে।’

বিক্রেতারা এসব পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে আমদানি বন্ধ ও নানা ধরনের সংকটের কথা বললেও ক্রেতারা তা মেনে নিতে নারাজ। ক্রেতারা বলছেন, মাছ-মাংস, মসলা ও শাক-সবজিসহ প্রায় সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চড়া দামে দারুণ বিপাকে সাধারণ মানুষ। বিশেষত নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ বেশি বেকায়দায় পড়েছেন। সংসার চালাতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। আমদানি বন্ধের অজুহাতে বাজার ‘সিন্ডিকেট’ ইচ্ছামতো পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে।

সরকার চিনির দাম নির্ধারণ করে দিলেও বাজারে এর প্রভাব না পড়ায় ‘অসন্তোষ’ প্রকাশ করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী।

গত রোববার কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তার জানিয়েছেন, দেশে বর্তমানে ১৮ লাখ ৩০ হাজার টন পেঁয়াজের মজুদ আছে। উৎপাদন ও মজুদ বিবেচনায় দেশে এই মুহূর্তে পেঁয়াজের দাম বাড়ার কোন কারণ নেই। শুক্রবার বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী জানান, দু’একদিনের মধ্যে বাজারে দাম না কমলে ভারত থেকে আবারও পেঁয়াজ আমদানি করা হবে।

টিপু মুন্সী বলেন, ‘পেঁয়াজের দাম বেড়েছে; বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। দু’একদিনের মধ্যে দাম না কমলে আমদানির ব্যবস্থা করা হবে এবং দ্রুতই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

কাঁচাবাজারের সবকিছু বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণ করে না উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘বিভিন্ন মন্ত্রণালয় কাঁচাবাজার নিয়ন্ত্রণ করে।’ এছাড়া বাজারের সার্বিক পরিস্থিতি খারাপ নয় বলে মন্তব্য করেন তারা। মন্ত্রী বলেন, ‘দামে একটু ঝামেলা হয়েছে; তবে ওভারঅল পরিস্থিতি খারাপ না। সারাবিশ্বেই সবকিছুর দাম বেড়েছে; ডালের দামও বেড়েছে। মূলত ডলারের দামের কারণে বাজারে প্রভাব পড়েছে।’

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চিনির দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে উল্লেখ করে টিপু মুন্সী বলেন, ‘তারপরেও বাজারে এর প্রভাব পড়েনি। মন্ত্রণালয় থেকে নির্ধারণ করা দামে চিনি এখনও বাজারে বিক্রি হচ্ছে না। এটি নিয়ন্ত্রণে ভোক্তা অধিকার ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে।’

পেঁয়াজের উৎপাদন, চাহিদা ও আমদানির তথ্য তুলে ধরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছিল, গত দুই বছরে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বেড়েছে ১০ লাখ টনেরও বেশি। চলতি বছর দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ৩৪ লাখ টনের বেশি। বর্তমানে মজুত আছে ১৮ লাখ ৩০ হাজার টন।

দাম কমছে না

ঢাকার খুচরা বাজারে এ সপ্তাহেও ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকায়। বিক্রেতারা বলছে কোম্পানি এবং পাইকারদের ‘সিন্ডিকেটে’ বাড়ছে দাম। মোহাম্মদপুর টাউন হল কাঁচাবাজের বিক্রেতা আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘২২০ টাকা কেজি ব্রয়লার। শুক্রবারও এই দামে বিক্রি করছি। ১৯০ টাকা পাইকারি গেছে। আজ পরিবহনসহ ২০০ টাকা পড়েছে।’

আরেক বিক্রেতা কাজল আহম্মেদ বলেন, ‘কাপ্তান বাজারে মাল কম আসার কথা বলে বলে দাম বাড়াইয়া রাখে। অভিযান, নিয়ন্ত্রণ যা করার সেখানে করতে হবে। আমরা আর কয়টা আর বেচি? আমরা তো লসে আছি।’

ডিমের দাম আরও বেড়েছে। বাজারে এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকায়, গত সপ্তাহে যা ছিল ১৪০ টাকা। সুপার শপ ‘স্বপ্ন’ ডিম বিক্রি করছে সাড়ে ১৩ টাকা দরে ডজন ১৬২ টাকায়।

দাম কমেনি সবজির। মাছ, গরু ও খাসির মাংস, আটা বিক্রি হচ্ছে আগের দামেই। কাঁচা মরিচের দাম উঠেছে ২০০ থেকে ২২০ টাকায়।

নিত্যপণ্যের দাম যখন বাড়তি, তখন নতুন করে কোন পণ্যের বাড়তি দাম মানুষকে পীড়া দিচ্ছে। সীমিত আয়ের মানুষরা খাদ্যের পেছনে বাড়তি খরচ করতে অন্য খরচ কমাচ্ছে। অনেকের পক্ষে তো সেই সুযোগও আর থাকছে না।

back to top