image
হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ঢুকছে পেঁয়াজবোঝাই ট্রাক -সংবাদ

আমদানির ঘোষণায় কমতে শুরু করেছে পেঁয়াজের দাম

সোমবার, ০৫ জুন ২০২৩
সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

সরকার ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানির ঘোষণা দেয়ার একদিনের মধ্যে কমতে শুরু করেছে পণ্যটির দাম। রাজধানীর সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার শ্যামবাজারে মাত্র একদিনের ব্যবধানে নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যটির দাম কেজিপ্রতি কমেছে ২৫ টাকা পর্যন্ত।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সোমবার (৫ জুন) বাজারটিতে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়, যা একদিন আগে গত রোববারও ছিল ৮৫ থেকে ৯০ টাকা। তবে খুচরা বাজারে এখনও পেঁয়াজের দাম কমার প্রভাব পড়েনি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দ্রুতই খুচরায়ও দাম কমে আসবে।

শ্যামবাজারের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, পেঁয়াজ আমদানির নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের খবরে বাজারে দাম কমে এসেছে। সোমবার বিভিন্ন স্থলবন্দরে পেঁয়াজের আইপিও দেয়া হয়েছে। কাল-পরশুর মধ্যে এসব পেঁয়াজ পাইকারি বাজারে এসে পৌঁছাবে।

মূলত রমজানের ঈদের আগে থেকে বাড়তে শুরু করে পেঁয়াজের দাম। ঈদের পর এ দাম ছুটতে থাকে লাগামহীন গতিতে। ফলে মূল্যস্ফীতির চাপে মুখে ভোক্তাদের মাথায় ওঠে বোঝার ওপর শাকের আঁটি। এরই মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনে আমদানির দ্বার খুলে দেয়া হবে।

শ্যামবাজারের বিক্রমপুর হাউসের খোকন ইসলাম বলেন, এখন যাদের কাছে পেঁয়াজ মজুত আছে, আমদানির খবরে তারা পেঁয়াজ বাজারে ছেড়েছেন। একদিনে পেঁয়াজের দাম ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় নেমেছে। ভারতের পেঁয়াজ এলে দাম আরও কমবে।

এদিকে শ্যামবাজারের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, শুধু পাইকারি বাজার নয়, আমদানির খবরে দেশের গ্রামাঞ্চলের মোকামগুলোতেও পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। মোকামে মণপ্রতি দাম কমেছে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা। সোমবার রোববার পাবনা ও ফরিদপুরে পেঁয়াজের মোকামে প্রতি মণ পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে দুই হাজার ৭০০ থেকে দুই হাজার ৮০০ টাকায়। সোমবার তা দুই হাজার ২০০ থেকে দুই হাজার ৩০০ টাকায় নেমে এসেছে।

পেঁয়াজ উৎপাদন করে দেশের কৃষক যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সেজন্য কৃষকের স্বার্থরক্ষায় গত ১৫ মার্চ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি বন্ধ রাখে সরকার।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে ৩৫ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। এ বছর উৎপাদন হয়েছে ৩৪ লাখ টন। পেঁয়াজের সংগ্রহ থেকে শুরু করে ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছাতে বিভিন্ন ধাপে অপচয় ২৫-৩০ শতাংশ বাদে গত বছর নিট উৎপাদন হয়েছে ২৪ দশমিক ৫৩ লাখ টন।

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে প্রতিবছর পেঁয়াজের চাহিদা প্রায় ২৮-৩০ লাখ টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি হয় ৬ লাখ টন।

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান, সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ৮ ট্রাক পেঁয়াজ বাংলাদেশে ঢুকেছে। সোমবার বিকেলে এ পেঁয়াজের ট্রাক ঢোকে। আজ আরও ১০ ট্রাকের মতো পেঁয়াজ ঢুকতে পারে বলে জানিয়েছে ভোমরা শুল্ক স্টেশনের কর্মকর্তারা।

ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ খাঁন জানান, প্রতি টন পেঁয়াজ ২শ’ ২০ মার্কিন ডলার থেকে ২শ’ ৫০ মার্কিন ডলারে আমদানি করা হচ্ছে।

ভোমরা শুল্ক স্টেশনের তথ্য কর্মকর্তা শান্ত হাওলাদার জানান, সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা নাগাদ ৮ ট্রাক পেঁয়াজ ভারত থেকে বাংলাদেশে ঢুকেছে। আরও ৮/১০টি ঢুকতে পারে।

দেশীয় পেঁয়াজের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে গত ১৫ মার্চ থেকে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি নিষিদ্ধ করে সরকার। এ সুযোগে বাজারে অসাধু ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দেয়। ফলে প্রতিকেজি পেঁয়াজের দাম ৪০ টাকা থেকে ১শ’ টাকায় উঠে।

বেনাপোল স্থলবন্দরে ৭৫ মেট্রিক টন পেঁয়াজ ঢুকছে

বেনাপোল প্রতিনিধি জানায় বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ৭৫ মেট্রিক টনের একটি চালানে ৩ ট্রাক পেঁয়াজ আমদানির হয়েছে। সোমবার বিকেলে পেঁয়াজ আমদানির জন্য চেকপোস্ট কার্গো শাখায় ভারত থেকে রপ্তানির অনুমোদনের জন্য কার্পাস দাখিল করেছেন।

কার্গো শাখা সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার আমদানিকারক জারিফ ইন্টারন্যাশনাল এই প্রথম বেনাপোল বন্দর দিয়ে ৭৫ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করছে। পেঁয়াজ বেনাপোল বন্দর থেকে ছাড়পত্রের জন্য মেসার্স রয়েল এন্টারপ্রাইজ নামক সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট কাস্টমসে কাগজপত্র দাখিল করেছেন।

রয়েল এন্টারপ্রাইজ সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের স্বত্বাধিকারী রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের আমদানিকারকরা ৭৫ মেট্রিক টন (৩ ট্রাক) পেঁয়াজ ভারত থেকে বেনাপোল বন্দরে আমদানি করেছেন। পেঁয়াজের জন্য উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রে ছাড়পত্র নিতে আবেদন করা হয়েছে। ভারত থেকে সন্ধার পর পেঁয়াজ প্রবেশ করবে বেনাপোল বন্দরে। কাস্টমস ও বন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে ঢাকায় পাঠানো হবে।

বেনাপোল বন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপ-পরিচালক সুব্রত চক্রবর্তী বলেন, পেঁয়াজ আমদানির নির্দেশনা এসেছেন। আইপি দেখালে আমরা এখান থেকে উদ্ভিদ সংগনিরোধ সার্টিফিকেট ইস্যু করবো। রয়েল এন্টারপ্রাইজ নামক একটি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট আমদানিকারকের পক্ষে ৭৫ মেট্রিক টন পেঁয়াজের ছাড়পত্রের আবেদন করেছেন।

বেনাপোল বন্দরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক (ট্রাফিক) আবদুল জলিল বলেন, ৩ মাসেরও বেশি সময় ধরে বেনাপোল দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয় সোমবার থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিয়েছে। ব্যবসায়ীরা যাতে বন্দর থেকে দ্রুত পেঁয়াজ খালাস নিতে পারেন সেজন্য বলা হয়েছে।

‘অর্থ-বাণিজ্য’ : আরও খবর

সম্প্রতি