‘বাজারে আসলে ‘মাথা গরম’ হয়ে যায়’
কোরবানির ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে, মসলার বাজার ততই ‘উত্তপ্ত’ হয়ে উঠছে। কোরবানি সংক্রান্ত পণ্যমূল্য বেড়েই চলেছে। ভালো মানের জিরার কেজি হাজারের ঘর ছুঁই ছুঁই। দুই দিনের ব্যবধানে কাঁচা মরিচের দাম বেড়ে দ্বিগুণ। গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে বেশ কিছু সবজির দামও বেড়েছে। অন্যান্য নিত্যপণ্য বাড়তি দামে স্থির। সবকিছু মিলিয়ে বাজারে একটা অস্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে কোন মনিটরিং নেই, কোন পর্যবেক্ষণ নেই, নেই কোন নিয়ন্ত্রণ সেল। বাজার করতে আসা নিম্নআয়ের মানুষরা বলছেন, বাজার আসলে ‘মাথা গরম’ হয়ে যায়। শুক্রবার (২৩ জুন) রাজধানীর বেশকিছু বাজার ও মুদি দোকান ঘুরে এবং বাজারে আসা ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব চিত্রই পাওয়া যায়।
মসলার বাজারে আকাশছোঁয়া দামে বিক্রি হচ্ছে জিরা মসলা। মানভেদে জিরা ৮৫০ থেকে ৯৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য মসলা আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে।
দুই দিনের ব্যবধানে কাঁচা মরিচের দাম কেজিতে ১০০ বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৪০ টাকায়। দুই দিন আগেও বাজার ও মানভেদে কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে দেশি পেঁয়াজ ৮০ টাকা কেজি দরে, আর ভারত থেকে সদ্য আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরে। পাশাপাশি মানভেদে আদাও বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৮০ টাকা কেজি দরে।
হঠাৎ করে কাঁচা মরিচের দাম দ্বিগুণ হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘দাম বাড়ার কারণ একটাই আমদানি কম। বৃষ্টির কারণে অনেক জায়গায় কৃষকের ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। এক সপ্তাহ আগেও আশি টাকা, একশো টাকা, একশো বিশ টাকা ছিল।’
পণ্যের দর-দামের বিষয়ে জানতে চাইলে বাজার করতে আসা শ্যামলী পিসিকালচারের বাসিন্দা শারমিন বেগম সংবাদকে বলেন, ‘অনেক অনেক দাম। আমি প্রতিদিন বাজারে আসি, প্রতিদিনই মাথা গরম হয়ে যায়। এটা অনেকদিন ধরেই। আমাদের মতো মানুষের খারাপ অবস্থা।’
তিনি আরও বলেন, ‘পাবদা মাছ আমি সহজেই কিনি না, অনেকদিন কিনি না। ভাল লাগছে তাই একটু দাম জিজ্ঞেস করলাম? বলল ৪০০ টাকা কেজি। বললাম আড়াইশো গ্রাম দেন তো । আড়াইশো গ্রাম হলো না মাপে একটু বেশি হলো, বললাম গনেন তো কয়টা, বলল ৮ টা, এইটুক এইটুক মাছ, ১৩০ টাকা বলে। তাহলে পাবদা মাছের ১টা পিস কতো করে পড়লো? নেই নি।’
মাছের বাজারে গিয়ে দেখা গেল, বাজার ও আকারভেদে চাষের পাবদা মাছ ৪০০ থেকে ৪২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া পাঙ্গাস ২০০ থেকে ২৪০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ থেকে ২৫০ টাকা, কৈ ২২০ থেকে ২৫০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি কাঁচকি ৪০০ টাকা, ট্যাংরা ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা, রুই মাছ ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা,
মাংসের বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া খাসির মাংস ১১০০ থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি ব্রয়লার ১৯০ থেকে ২১০ টাকা, সোনালি মুরগি ২৮০ থেকে ৩২০ টাকা এবং দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা কেজি দরে।
সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বরবটি-করলা ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বেগুন-ঝিঙা- ধন্দুল ৭০ থেকে ৮০ টাকা, কাঁচা পেঁপে-ঢেঁড়স ৬০ থেকে টাকা টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। পিস আকারে লাউ ৭০ থেকে ৮০ টাকা, জালি কুমড়া ৬০ থেকে ৭০ টাকয় বিক্রি হচ্ছে। জাতভেদে আলু ৪০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
পাশাপাশি সালাদের শসা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, গাজর ১০০ থেকে ১২০ টাকা এবং টমেটো ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে প্রায় নিত্যপণ্য বাড়তি দামে স্থির। বাজারে মানভেদে মসুরের ডাল ১১০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মুগ ডাল ১২৫ টাকা, খেসারি ডাল ৮০ টাকা, বুটের ডাল ৯৫ টাকা, ছোলা ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ী মামুনুর রশিদ বলেন, ‘সারাদিন ইনকাম কইরা ৩০০ টাকা নিয়া বাজারে যায়- চাল আর ডাল কিন্ না মাইয়া (মেয়ে) একটা চিপস নিতে কইছে দেখে তার পকেটে আর একটা টাকা থাকে না। তখন এসিতে বইয়া বইয়া যারা কথা কয় সেই সুশীল গো খোঁজে। এটাও কইয়েন, যে আরামে বইয়া যে রিপোর্ট করে আপনাগে মাঝে মাঝে আমজনতা খোঁজে।’
আমনের ভরা মৌসুমেও খোলা বাজারে স্বর্ণা জাতের মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকা কেজি দরে। বিআর আটাশ জাতের নতুন চাল ৫৫ টাকা আর পুরনো আটাশের চাল ৫৮ টাকা, মিনিকেট মানভেদে ৬৫ থেকে ৭২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া খালা আতব চাল বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে। পাশাপাশি বাজারে এখনও খোলা আটা ৫৬ টাকা আর খোলা ময়দা ৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর কয়েকটি খোলাবাজার ও কয়েকটি এলাকার অলিগলির বেশকিছু মুদি দোকানে গিয়ে দেখা গেছে, বোতলজাত সয়াবিন তেলের নতুন দাম নির্ধারণের পর কোথাও কোথাও লিটার ১৮৯ টাকায় পাওয়া গেলেও অধিকাংশ দোকানে আগের দামেই ১৯৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানী সেগুন বাগিচার মদিনা স্টোরের বিক্রয়কর্মী শামীম আহমেদ সংবাদকে বলেন, ‘নতুন দামের বোতলজাত সয়াবিন তেল আমরা এখনো পাইনি। ঈদের আগে হয়তো নতুন মাল ছাড়বে না। আমাদের আগের কেনা তেল আছে, আগের দামে লিটার ১৯৯ টাকায় বিক্রি করছি। দোকানে সাদা চিনি নাই, তবে লাল চিনি আছে, কেজি ১৬০ টাকায় বিক্রি করছি।’
সয়াবিন তেলের দাম বাড়ার ঘোষণা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তো আপনারা নতুন পণ্য পান এবং দাম বাড়াইয়া দেন, আর দাম কমানোর ঘোষণা দিলে এক সপ্তাহেও নতুন পণ্য না আগের দামে বিক্রি করেন কারণ কি? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘বোতলের গায়ে টাকার সিল তো আমরা বসাই না, কোম্পানিরা বসায়, কোম্পানিরা ভালো বলতে পারবে।’
চিনি ব্যবসায়ীরা সরকারি বিটিটিসি সংস্থার কাছে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে কেজিপ্রতি প্যাকেটজাত চিনির দাম ১৫০ টাকা ও খোলা চিনি ১৪০ টাকা করার প্রস্তাব করেন। বাজারে বর্তমানে সরকারিভাবে খুচরায় প্রতি কেজি প্যাকেটজাত চিনি ১২৫ টাকা ও খোলা চিনির দাম ১২০ টাকা বেঁধে দেয়া আছে। সরকার নির্ধারিত এই দাম ব্যবসায়ীরা মানছেন না। নতুন করে প্যাকেটজাত চিনিতে কেজিপ্রতি ২৫ টাকা ও খোলা চিনিতে ২০ টাকা দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন চিনিকল মালিকেরা। বাজারে এখন খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায়।
গত ২২ জুন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ আয়ুর্বেদিক মেডিসিন ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন ওমেডিসিনাল প্ল্যান্টস অ্যান্ড হারবাল প্রোডাক্টস বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিলের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক সেমিনারে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, চিনির ওপর যে শুল্কহার নির্ধারণ করা আছে তা কমানো অথবা ছাড় দেয়ার বিষয়ে আমরা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) অনুরোধ করবো। এটি করা হলে চিনির দাম কিছুটা কমানো সম্ভব হবে। সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্য সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে রাখার জন্য প্রাণান্ত চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু যেসব পণ্য আমদানি করতে হয়, সেই সব পণ্যের মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে বাজারে বিক্রি করতে হয়। তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম কমার সঙ্গে সঙ্গে দেশের বাজারে কমানো হয়েছে। সেই হ্রাসকৃত মূল্যে এখন সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
‘বাজারে আসলে ‘মাথা গরম’ হয়ে যায়’
শুক্রবার, ২৩ জুন ২০২৩
কোরবানির ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে, মসলার বাজার ততই ‘উত্তপ্ত’ হয়ে উঠছে। কোরবানি সংক্রান্ত পণ্যমূল্য বেড়েই চলেছে। ভালো মানের জিরার কেজি হাজারের ঘর ছুঁই ছুঁই। দুই দিনের ব্যবধানে কাঁচা মরিচের দাম বেড়ে দ্বিগুণ। গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে বেশ কিছু সবজির দামও বেড়েছে। অন্যান্য নিত্যপণ্য বাড়তি দামে স্থির। সবকিছু মিলিয়ে বাজারে একটা অস্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে কোন মনিটরিং নেই, কোন পর্যবেক্ষণ নেই, নেই কোন নিয়ন্ত্রণ সেল। বাজার করতে আসা নিম্নআয়ের মানুষরা বলছেন, বাজার আসলে ‘মাথা গরম’ হয়ে যায়। শুক্রবার (২৩ জুন) রাজধানীর বেশকিছু বাজার ও মুদি দোকান ঘুরে এবং বাজারে আসা ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব চিত্রই পাওয়া যায়।
মসলার বাজারে আকাশছোঁয়া দামে বিক্রি হচ্ছে জিরা মসলা। মানভেদে জিরা ৮৫০ থেকে ৯৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য মসলা আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে।
দুই দিনের ব্যবধানে কাঁচা মরিচের দাম কেজিতে ১০০ বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৪০ টাকায়। দুই দিন আগেও বাজার ও মানভেদে কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে দেশি পেঁয়াজ ৮০ টাকা কেজি দরে, আর ভারত থেকে সদ্য আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরে। পাশাপাশি মানভেদে আদাও বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৮০ টাকা কেজি দরে।
হঠাৎ করে কাঁচা মরিচের দাম দ্বিগুণ হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘দাম বাড়ার কারণ একটাই আমদানি কম। বৃষ্টির কারণে অনেক জায়গায় কৃষকের ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। এক সপ্তাহ আগেও আশি টাকা, একশো টাকা, একশো বিশ টাকা ছিল।’
পণ্যের দর-দামের বিষয়ে জানতে চাইলে বাজার করতে আসা শ্যামলী পিসিকালচারের বাসিন্দা শারমিন বেগম সংবাদকে বলেন, ‘অনেক অনেক দাম। আমি প্রতিদিন বাজারে আসি, প্রতিদিনই মাথা গরম হয়ে যায়। এটা অনেকদিন ধরেই। আমাদের মতো মানুষের খারাপ অবস্থা।’
তিনি আরও বলেন, ‘পাবদা মাছ আমি সহজেই কিনি না, অনেকদিন কিনি না। ভাল লাগছে তাই একটু দাম জিজ্ঞেস করলাম? বলল ৪০০ টাকা কেজি। বললাম আড়াইশো গ্রাম দেন তো । আড়াইশো গ্রাম হলো না মাপে একটু বেশি হলো, বললাম গনেন তো কয়টা, বলল ৮ টা, এইটুক এইটুক মাছ, ১৩০ টাকা বলে। তাহলে পাবদা মাছের ১টা পিস কতো করে পড়লো? নেই নি।’
মাছের বাজারে গিয়ে দেখা গেল, বাজার ও আকারভেদে চাষের পাবদা মাছ ৪০০ থেকে ৪২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া পাঙ্গাস ২০০ থেকে ২৪০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ থেকে ২৫০ টাকা, কৈ ২২০ থেকে ২৫০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি কাঁচকি ৪০০ টাকা, ট্যাংরা ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা, রুই মাছ ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা,
মাংসের বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া খাসির মাংস ১১০০ থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি ব্রয়লার ১৯০ থেকে ২১০ টাকা, সোনালি মুরগি ২৮০ থেকে ৩২০ টাকা এবং দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা কেজি দরে।
সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বরবটি-করলা ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বেগুন-ঝিঙা- ধন্দুল ৭০ থেকে ৮০ টাকা, কাঁচা পেঁপে-ঢেঁড়স ৬০ থেকে টাকা টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। পিস আকারে লাউ ৭০ থেকে ৮০ টাকা, জালি কুমড়া ৬০ থেকে ৭০ টাকয় বিক্রি হচ্ছে। জাতভেদে আলু ৪০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
পাশাপাশি সালাদের শসা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, গাজর ১০০ থেকে ১২০ টাকা এবং টমেটো ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে প্রায় নিত্যপণ্য বাড়তি দামে স্থির। বাজারে মানভেদে মসুরের ডাল ১১০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মুগ ডাল ১২৫ টাকা, খেসারি ডাল ৮০ টাকা, বুটের ডাল ৯৫ টাকা, ছোলা ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ী মামুনুর রশিদ বলেন, ‘সারাদিন ইনকাম কইরা ৩০০ টাকা নিয়া বাজারে যায়- চাল আর ডাল কিন্ না মাইয়া (মেয়ে) একটা চিপস নিতে কইছে দেখে তার পকেটে আর একটা টাকা থাকে না। তখন এসিতে বইয়া বইয়া যারা কথা কয় সেই সুশীল গো খোঁজে। এটাও কইয়েন, যে আরামে বইয়া যে রিপোর্ট করে আপনাগে মাঝে মাঝে আমজনতা খোঁজে।’
আমনের ভরা মৌসুমেও খোলা বাজারে স্বর্ণা জাতের মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকা কেজি দরে। বিআর আটাশ জাতের নতুন চাল ৫৫ টাকা আর পুরনো আটাশের চাল ৫৮ টাকা, মিনিকেট মানভেদে ৬৫ থেকে ৭২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া খালা আতব চাল বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে। পাশাপাশি বাজারে এখনও খোলা আটা ৫৬ টাকা আর খোলা ময়দা ৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর কয়েকটি খোলাবাজার ও কয়েকটি এলাকার অলিগলির বেশকিছু মুদি দোকানে গিয়ে দেখা গেছে, বোতলজাত সয়াবিন তেলের নতুন দাম নির্ধারণের পর কোথাও কোথাও লিটার ১৮৯ টাকায় পাওয়া গেলেও অধিকাংশ দোকানে আগের দামেই ১৯৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানী সেগুন বাগিচার মদিনা স্টোরের বিক্রয়কর্মী শামীম আহমেদ সংবাদকে বলেন, ‘নতুন দামের বোতলজাত সয়াবিন তেল আমরা এখনো পাইনি। ঈদের আগে হয়তো নতুন মাল ছাড়বে না। আমাদের আগের কেনা তেল আছে, আগের দামে লিটার ১৯৯ টাকায় বিক্রি করছি। দোকানে সাদা চিনি নাই, তবে লাল চিনি আছে, কেজি ১৬০ টাকায় বিক্রি করছি।’
সয়াবিন তেলের দাম বাড়ার ঘোষণা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তো আপনারা নতুন পণ্য পান এবং দাম বাড়াইয়া দেন, আর দাম কমানোর ঘোষণা দিলে এক সপ্তাহেও নতুন পণ্য না আগের দামে বিক্রি করেন কারণ কি? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘বোতলের গায়ে টাকার সিল তো আমরা বসাই না, কোম্পানিরা বসায়, কোম্পানিরা ভালো বলতে পারবে।’
চিনি ব্যবসায়ীরা সরকারি বিটিটিসি সংস্থার কাছে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে কেজিপ্রতি প্যাকেটজাত চিনির দাম ১৫০ টাকা ও খোলা চিনি ১৪০ টাকা করার প্রস্তাব করেন। বাজারে বর্তমানে সরকারিভাবে খুচরায় প্রতি কেজি প্যাকেটজাত চিনি ১২৫ টাকা ও খোলা চিনির দাম ১২০ টাকা বেঁধে দেয়া আছে। সরকার নির্ধারিত এই দাম ব্যবসায়ীরা মানছেন না। নতুন করে প্যাকেটজাত চিনিতে কেজিপ্রতি ২৫ টাকা ও খোলা চিনিতে ২০ টাকা দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন চিনিকল মালিকেরা। বাজারে এখন খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায়।
গত ২২ জুন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ আয়ুর্বেদিক মেডিসিন ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন ওমেডিসিনাল প্ল্যান্টস অ্যান্ড হারবাল প্রোডাক্টস বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিলের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক সেমিনারে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, চিনির ওপর যে শুল্কহার নির্ধারণ করা আছে তা কমানো অথবা ছাড় দেয়ার বিষয়ে আমরা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) অনুরোধ করবো। এটি করা হলে চিনির দাম কিছুটা কমানো সম্ভব হবে। সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্য সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে রাখার জন্য প্রাণান্ত চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু যেসব পণ্য আমদানি করতে হয়, সেই সব পণ্যের মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে বাজারে বিক্রি করতে হয়। তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম কমার সঙ্গে সঙ্গে দেশের বাজারে কমানো হয়েছে। সেই হ্রাসকৃত মূল্যে এখন সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে।