alt

আবারও উত্তাল বুয়েট, ছাত্ররাজনীতি প্রতিরোধে ৬ দফা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি : শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে আবারো উত্তাল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়(বুয়েট) ক্যাম্পাস। শুক্রবার সারাদিন বিক্ষোভ মিছিলে মুখর ছিল বুয়েট শহীদ মিনার চত্বর। ছাত্ররাজনীতি প্রতিরোধে ৬ দফা দাবি জানিয়ে বুয়েট প্রশাসনকে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বুয়েট শহীদ মিনারের পাদদেশে এক সংবাদ সম্মেলনে এ আল্টিমেটাম দেয় তারা।

গত ২৮ মার্চ মধ্যরাতে ছাত্রলীগের কয়েকজন শীর্ষনেতা বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। পরে আরও অনেক নেতাকর্মী প্রবেশ করে। এ ঘটনায় ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের প্রবেশ ও ছাত্ররাজনীতি প্রতিরোধে সকাল থেকে জড়ো হতে থাকে শিক্ষার্থীরা।

এসময় শিক্ষার্থীদের ‘পলিটিক্স করে যারা, হল থেকে করব ছাড়া, ‘রক্ষক কেন ভক্ষক’, ‘রক্তের দাগ শুকায় নাই’, ‘কাপুরুষ আসে অন্ধকারে, হাজিরা চায় কে কার কাছে’, ‘নো পলিটিক্স ইন বুয়েট’ ইত্যাদি শীর্ষক স্লোগান লেখা প্লাকার্ড হাতে দেখা যায়।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় দেশের সবচেয়ে সমাদৃত এবং শীর্ষস্থানীয় একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবরে আবরার ফাহাদ এর নৃশংস মৃত্যুর মাধ্যমে বুয়েট বাংলাদেশের সবচেয়ে নিরাপদ ক্যাম্পাসে রূপ নেয়। বুয়েটে সর্বশেষ ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার পর থেকে যে নিরাপদ এবং সুন্দর একটি ক্যাম্পাস আমরা উপহার হিসেবে পেয়েছি, তা দেশব্যাপী সকলের কাছে প্রশংসিত এবং অনুকরণীয়। দেশের সকল মানুষ, নানা প্রান্তের নানা প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষার্থী দেখেছে একটি রাজনীতিবিহীন ক্যাম্পাসের রোল মডেল, তার সুফল, তার সৌন্দর্য, তার উৎকর্ষের যত সমূহ সম্ভাবনা। তবে যে কলুষিত হাতগুলোর কারণেই ঝরে গিয়েছিল আমাদেরই নিষ্পাপ মেধাবী প্রাণ, সে কলুষিত হাতগুলো পরবর্তীতে বারবার ভিন্ন ভিন্নভাবে পুনরায় সে অপরাজনীতির অনুপ্রবেশের অপচেষ্টা চালিয়েছে, ক্যাম্পাসের এই সুন্দরতম ভিত্তিকে পুনরায় ধ্বংস করে দিতে চেয়েছে। এটা আমরা হতে দিতে চাই না।’

শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা বলেন, ‘ একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা আমাদেরই এই প্রাণের বুয়েট ক্যাম্পাসে ঘটে গত ২৮ মার্চ মধ্যরাতে। রাত ১ টার দিকে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানতে পারি, বুয়েটে একটি বিশেষ রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের বেশ কজন শীর্ষস্থানীয় নেতা এসেছেন এবং তারা ক্যাম্পাসের মেইন গেইট দিয়েই প্রবেশ করে ভেতরে ঢুকেছেন। রাত সাড়ে ১০ টার পরে যেখানে নিরাপত্তাজনিত কারণে আমাদের সাধারণ শিক্ষার্থীদেরই ক্যাম্পাসে ঢোকার অনুমতি নেই সেখানে রাজনৈতিকভাবে সংশ্লিষ্ট বহিরাগত ব্যক্তিদের মধ্যরাতেই আমাদের প্রাণের ক্যাম্পাসে অনুপ্রবেশ ঘটে। ঘটনার তীব্রতা বাড়তে থাকে রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে একের পর এক বহিরাগত রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার ক্যাম্পাসের মেইন গেইটের সামনে আসতে থাকে। বিপুল সংখ্যক বহিরাগত ক্যাম্পাসে অনায়াসে প্রবেশ করতে থাকে, এবং এক পর্যায়ে সেখানে উপস্থিত সাধারণ শিক্ষার্থীরা দেখতে পায়, মিছিল এর মতো করে বিশাল একটি জনবহর হাতে ফুলের তোড়া নিয়ে আমাদের ক্যাম্পাসে রাত ২টার পর প্রবেশ করতে থাকে। দুঃখজনকভাবে, এই বিশাল জনবহর এর সকলেই বহিরাগত ছিলো এবং তাদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ছিলো। সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভেতরে প্রবেশ করা মধ্যরাতের সেই সময়টায় বিশেষ ওই ছাত্র সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের চিনতে পারে; যা সুস্পষ্ট জানান দেয় যে, এত বিপুল জনসমাগম রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিলো।

"বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী সাংগঠনিক রাজনীতি নিষিদ্ধ এমন একটি ক্যাম্পাসে রাতের আঁধারে ঘটে যাওয়া এত বড় একটি রাজনৈতিক সমাগম এবং বহিরাগতদের আগমন ক্যাম্পাসের মর্যাদার প্রতি তীব্র অপমানজনক। একই সঙ্গে এটি একটি নিরাপদ ক্যাম্পাস এবং শিক্ষার্থীদের সুষ্ঠ স্বাভাবিক শিক্ষা পরিবেশের নিরাপত্তার ব্যাপারকে গুরুতরভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন এবং ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তর কোনোরুপেই উক্ত ন্যাক্কারজনক ঘটনা ক্যাম্পাসে ঘটে যাওয়ার দায় এড়িয়ে যেতে পারে না।"

বক্তারা আরও বলেন, ‘মধ্যরাতে বহিরাগত রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টদের এমন দাপটসহ প্রবেশ কর্তৃপক্ষ এবং ডিএসডাব্লিউ এর দৃষ্টির অগোচরে হওয়া অসম্ভব। ঘটনা ঘটে যাওয়ার দেড় দিন পার হয়ে গেলেও ডি.এসডাব্লিউ থেকে উক্ত ঘটনায় সম্পর্কিত কোনো প্রকার সদুত্তর এবং জবাবদিহিতা এখন পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে আসেনি। ক্যাম্পাসে মধ্যরাতে তারা প্রবেশের অনুমতি কীভাবে কর্তৃপক্ষ থেকে পেয়েছিল এই সম্পূর্ণ ব্যাপারটি এখনো ধোঁয়াশাপূর্ণ এবং সন্দেহের সঞ্চার করে যে কীভাবে এবং কোন মদদে তারা প্রবেশ করতে পারলো। এর সমস্তই সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করে।’

৬ দফাসমূহ হলো– ১. বিশ্ববিদ্যালয়ের সুস্পষ্ট বিধিমালা লঙ্ঘনের দায়ে ২৮ মার্চের মধ্যরাতে রাজনৈতিক সমাগমের মূল সংগঠক ইমতিয়াজ রাব্বিকে বুয়েট থেকে স্থায়ী বহিষ্কার এবং হল বাতিল, ২. উক্ত ঘটনায় ইমতিয়াজ রাব্বির সঙ্গে বুয়েটের বাকি যেসকল শিক্ষার্থীরা জড়িত ছিলো তাদের বিভিন্ন মেয়াদে হল এবং টার্ম বহিষ্কার, ৩. বহিরাগত রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ যারা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করল তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, তারা কেন কিভাবে প্রবেশ করার অনুমতি পেল এই ব্যাপারে সুস্পষ্ট সদুত্তর এবং জবাবদিহিতা, ৪. উপরোক্ত ১ নং এবং ২ নং দাবি আজ শনিবার সকাল ৯টার মধ্যে বাস্তবায়ন করা না হলে ডিএসডাব্লিউ এর পদত্যাগ, ৫. ক্যাম্পাসে মধ্যরাতে বহিরাগতদের প্রবেশের কারণে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত, প্রতিবাদ হিসেবে আগামী ৩০ ও ৩১ মার্চের টার্ম ফাইনালসহ সকল একাডেমিক কার্যক্রম বর্জন, ৬. আন্দোলনরত বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কোনোরকম হয়রানিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না- এই মর্মে লিখিত প্রতিশ্রুতি।

আন্দোলনকারীরা জানান, তাদের দাবিসমূহ বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চলমান থাকবে।

ছবি

অনিয়মের অভিযোগ তুলেও ভোট বর্জন নয়: চবি ছাত্রদলের অবস্থান

ছবি

চাকসু নির্বাচনে ভোট গ্রহণে অনিয়মের অভিযোগ, বিচার ও তদন্তের দাবি

চাকসু নির্বাচনে ভোট গ্রহণে অনিয়মের অভিযোগ, বিচার ও তদন্তের দাবি

ছবি

রাকসু ভোটে জালিয়াতির কোনো সুযোগ নেই, ১৭ ঘন্টায় ফল: নির্বাচন কমিশন

ছবি

রাকসু: ভোটে আইন শৃঙ্খলা অবনতির আশঙ্কা ‘করছেন না’ আরএমপি কমিশনার

ছবি

রাকসু: ভোট পর্যবেক্ষণে ১০ সদস্যের কমিটি

চাকসু: নানা অভিযোগ, ভোট বর্জন ‘ইনসানিয়াত বিপ্লব’ শিক্ষার্থী সংগঠনের

চাকসু নির্বাচন: ক্যাম্পাসে ‘বহিরাগত প্রবেশের’ অভিযোগ শিবির ও ছাত্রদলের

চাকসু নির্বাচন: ভোটের কালি ‘মুছে যাওয়ার’ অভিযোগ ছাত্রদলের তৌফিকের

ছবি

৩৫ বছর পর চাকসু নির্বাচন, ‘মুক্ত ক্যাম্পাসের’ স্বপ্ন নিয়ে ভোট দিচ্ছে শিক্ষার্থীরা

ছবি

রাকসু: বিদ্রোহী প্রার্থীকে বহিষ্কার করলো ছাত্রদল, নিজেও নিলেন অব্যাহতি

ছবি

প্রতিবাদে সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে ব্লকেড শিক্ষার্থীদের

ছবি

সাড়ে তিন দশক পর চাকসু নির্বাচন বুধবার

ছবি

রাকসু: শেষ দিনের প্রচারে ব্যস্ত, আশা ও শঙ্কার দোলাচলে প্রার্থীরা

ছবি

রাকসু: ছাত্রদল প্যানেলকে সমর্থন, ভোট থেকে সরে দাড়ালেন এক স্বতন্ত্র প্রার্থী

ছবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন: নিরাপদ ও নারীবান্ধব ক্যাম্পাসের প্রত্যাশা ছাত্রীদের

ছবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে র‍্যাগিং: ১৬ শিক্ষার্থী সাময়িকভাবে বহিষ্কার

ছবি

রাকসু: নবীনবরণে জমে উঠেছে নির্বাচনের প্রচারণা

ছবি

রাকসু নির্বাচন: ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা জোরদার, দুই হলে তল্লাশি

ছবি

রাকসু কেন্দ্রীয় ও হল সংসদ, সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের প্রার্থী ও পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত

ছবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস উদযাপিত

ছবি

রাকসু: ছাত্রদলের ইশতেহার, লাইব্রেরিতে এসি ও স্টারলিংকের প্রতিশ্রুতি

ছবি

রাকসু: ভিপি প্রার্থীদের ইশতেহারে নানা প্রতিশ্রুতি

ছবি

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে কুকুরের উৎপাত বন্ধে শুরু হচ্ছে টিকাদান কর্মসূচি

ছবি

চাকসু নির্বাচন: ৩৩ দফা সংস্কার বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি শিবির সমর্থিত প্যানেলের

ছবি

রাকসু: বিধি লঙ্ঘনের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ ছাত্রদল-শিবিরের

ছবি

ছুটি শেষে রাকসুর প্রচারণা শুরু

ছবি

চাকসু: শিবিরের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ ছাত্রদলের

ছবি

রাকসু: ভোটে প্রচারণার সময়সীমা বাড়লো

ছবি

হৃদরোগে প্রাণ গেলো জবি ছাত্রদল নেতা হাসিবুর রহমানের

ছবি

টাঙ্গাইল মাভাবিপ্রবি ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ নতুন কমিটির সভাপতি সাগর সম্পাদক দিপু

ছবি

শাবি ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ ৫৪ শিক্ষার্থী বহিস্কার

ছবি

রাবি: নাট্যকলা বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ, আইনি নোটিশ

ছবি

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর জগন্নাথ ক্যাম্পাসে প্রথম নির্বাচনী আমেজ

ছবি

ডাকসু: দায়িত্বে থেকেও সাদার দলের অভিযোগকে ‘দ্বিচারিতা’ বলছে ইউটিএল

ছবি

ডাকসু ব্যালট নিয়ে নতুন বিতর্ক, কোথায় মিললো ৮ হাজারের গরমিল

tab

আবারও উত্তাল বুয়েট, ছাত্ররাজনীতি প্রতিরোধে ৬ দফা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি

শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে আবারো উত্তাল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়(বুয়েট) ক্যাম্পাস। শুক্রবার সারাদিন বিক্ষোভ মিছিলে মুখর ছিল বুয়েট শহীদ মিনার চত্বর। ছাত্ররাজনীতি প্রতিরোধে ৬ দফা দাবি জানিয়ে বুয়েট প্রশাসনকে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বুয়েট শহীদ মিনারের পাদদেশে এক সংবাদ সম্মেলনে এ আল্টিমেটাম দেয় তারা।

গত ২৮ মার্চ মধ্যরাতে ছাত্রলীগের কয়েকজন শীর্ষনেতা বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। পরে আরও অনেক নেতাকর্মী প্রবেশ করে। এ ঘটনায় ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের প্রবেশ ও ছাত্ররাজনীতি প্রতিরোধে সকাল থেকে জড়ো হতে থাকে শিক্ষার্থীরা।

এসময় শিক্ষার্থীদের ‘পলিটিক্স করে যারা, হল থেকে করব ছাড়া, ‘রক্ষক কেন ভক্ষক’, ‘রক্তের দাগ শুকায় নাই’, ‘কাপুরুষ আসে অন্ধকারে, হাজিরা চায় কে কার কাছে’, ‘নো পলিটিক্স ইন বুয়েট’ ইত্যাদি শীর্ষক স্লোগান লেখা প্লাকার্ড হাতে দেখা যায়।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় দেশের সবচেয়ে সমাদৃত এবং শীর্ষস্থানীয় একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবরে আবরার ফাহাদ এর নৃশংস মৃত্যুর মাধ্যমে বুয়েট বাংলাদেশের সবচেয়ে নিরাপদ ক্যাম্পাসে রূপ নেয়। বুয়েটে সর্বশেষ ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার পর থেকে যে নিরাপদ এবং সুন্দর একটি ক্যাম্পাস আমরা উপহার হিসেবে পেয়েছি, তা দেশব্যাপী সকলের কাছে প্রশংসিত এবং অনুকরণীয়। দেশের সকল মানুষ, নানা প্রান্তের নানা প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষার্থী দেখেছে একটি রাজনীতিবিহীন ক্যাম্পাসের রোল মডেল, তার সুফল, তার সৌন্দর্য, তার উৎকর্ষের যত সমূহ সম্ভাবনা। তবে যে কলুষিত হাতগুলোর কারণেই ঝরে গিয়েছিল আমাদেরই নিষ্পাপ মেধাবী প্রাণ, সে কলুষিত হাতগুলো পরবর্তীতে বারবার ভিন্ন ভিন্নভাবে পুনরায় সে অপরাজনীতির অনুপ্রবেশের অপচেষ্টা চালিয়েছে, ক্যাম্পাসের এই সুন্দরতম ভিত্তিকে পুনরায় ধ্বংস করে দিতে চেয়েছে। এটা আমরা হতে দিতে চাই না।’

শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা বলেন, ‘ একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা আমাদেরই এই প্রাণের বুয়েট ক্যাম্পাসে ঘটে গত ২৮ মার্চ মধ্যরাতে। রাত ১ টার দিকে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানতে পারি, বুয়েটে একটি বিশেষ রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের বেশ কজন শীর্ষস্থানীয় নেতা এসেছেন এবং তারা ক্যাম্পাসের মেইন গেইট দিয়েই প্রবেশ করে ভেতরে ঢুকেছেন। রাত সাড়ে ১০ টার পরে যেখানে নিরাপত্তাজনিত কারণে আমাদের সাধারণ শিক্ষার্থীদেরই ক্যাম্পাসে ঢোকার অনুমতি নেই সেখানে রাজনৈতিকভাবে সংশ্লিষ্ট বহিরাগত ব্যক্তিদের মধ্যরাতেই আমাদের প্রাণের ক্যাম্পাসে অনুপ্রবেশ ঘটে। ঘটনার তীব্রতা বাড়তে থাকে রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে একের পর এক বহিরাগত রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার ক্যাম্পাসের মেইন গেইটের সামনে আসতে থাকে। বিপুল সংখ্যক বহিরাগত ক্যাম্পাসে অনায়াসে প্রবেশ করতে থাকে, এবং এক পর্যায়ে সেখানে উপস্থিত সাধারণ শিক্ষার্থীরা দেখতে পায়, মিছিল এর মতো করে বিশাল একটি জনবহর হাতে ফুলের তোড়া নিয়ে আমাদের ক্যাম্পাসে রাত ২টার পর প্রবেশ করতে থাকে। দুঃখজনকভাবে, এই বিশাল জনবহর এর সকলেই বহিরাগত ছিলো এবং তাদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ছিলো। সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভেতরে প্রবেশ করা মধ্যরাতের সেই সময়টায় বিশেষ ওই ছাত্র সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের চিনতে পারে; যা সুস্পষ্ট জানান দেয় যে, এত বিপুল জনসমাগম রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিলো।

"বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী সাংগঠনিক রাজনীতি নিষিদ্ধ এমন একটি ক্যাম্পাসে রাতের আঁধারে ঘটে যাওয়া এত বড় একটি রাজনৈতিক সমাগম এবং বহিরাগতদের আগমন ক্যাম্পাসের মর্যাদার প্রতি তীব্র অপমানজনক। একই সঙ্গে এটি একটি নিরাপদ ক্যাম্পাস এবং শিক্ষার্থীদের সুষ্ঠ স্বাভাবিক শিক্ষা পরিবেশের নিরাপত্তার ব্যাপারকে গুরুতরভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন এবং ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তর কোনোরুপেই উক্ত ন্যাক্কারজনক ঘটনা ক্যাম্পাসে ঘটে যাওয়ার দায় এড়িয়ে যেতে পারে না।"

বক্তারা আরও বলেন, ‘মধ্যরাতে বহিরাগত রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টদের এমন দাপটসহ প্রবেশ কর্তৃপক্ষ এবং ডিএসডাব্লিউ এর দৃষ্টির অগোচরে হওয়া অসম্ভব। ঘটনা ঘটে যাওয়ার দেড় দিন পার হয়ে গেলেও ডি.এসডাব্লিউ থেকে উক্ত ঘটনায় সম্পর্কিত কোনো প্রকার সদুত্তর এবং জবাবদিহিতা এখন পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে আসেনি। ক্যাম্পাসে মধ্যরাতে তারা প্রবেশের অনুমতি কীভাবে কর্তৃপক্ষ থেকে পেয়েছিল এই সম্পূর্ণ ব্যাপারটি এখনো ধোঁয়াশাপূর্ণ এবং সন্দেহের সঞ্চার করে যে কীভাবে এবং কোন মদদে তারা প্রবেশ করতে পারলো। এর সমস্তই সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করে।’

৬ দফাসমূহ হলো– ১. বিশ্ববিদ্যালয়ের সুস্পষ্ট বিধিমালা লঙ্ঘনের দায়ে ২৮ মার্চের মধ্যরাতে রাজনৈতিক সমাগমের মূল সংগঠক ইমতিয়াজ রাব্বিকে বুয়েট থেকে স্থায়ী বহিষ্কার এবং হল বাতিল, ২. উক্ত ঘটনায় ইমতিয়াজ রাব্বির সঙ্গে বুয়েটের বাকি যেসকল শিক্ষার্থীরা জড়িত ছিলো তাদের বিভিন্ন মেয়াদে হল এবং টার্ম বহিষ্কার, ৩. বহিরাগত রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ যারা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করল তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, তারা কেন কিভাবে প্রবেশ করার অনুমতি পেল এই ব্যাপারে সুস্পষ্ট সদুত্তর এবং জবাবদিহিতা, ৪. উপরোক্ত ১ নং এবং ২ নং দাবি আজ শনিবার সকাল ৯টার মধ্যে বাস্তবায়ন করা না হলে ডিএসডাব্লিউ এর পদত্যাগ, ৫. ক্যাম্পাসে মধ্যরাতে বহিরাগতদের প্রবেশের কারণে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত, প্রতিবাদ হিসেবে আগামী ৩০ ও ৩১ মার্চের টার্ম ফাইনালসহ সকল একাডেমিক কার্যক্রম বর্জন, ৬. আন্দোলনরত বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কোনোরকম হয়রানিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না- এই মর্মে লিখিত প্রতিশ্রুতি।

আন্দোলনকারীরা জানান, তাদের দাবিসমূহ বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চলমান থাকবে।

back to top