বিশ্ব ব্যাংক অর্থায়িত প্রকল্পে রিভিউ বোর্ডের স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন, তদন্ত দাবি ‘বিক্ষুব্ধ শিক্ষক সমাজ’-এর
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তত্ত্বাবধানে ও বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত হাইয়ার এডুকেশন একসিলারেশন অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন (হিট) প্রকল্পে অনিয়ম ও পক্ষপাতের অভিযোগ তুলেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) একাধিক শিক্ষক।
তাদের অভিযোগ—প্রকল্পের গবেষণা প্রস্তাব বাছাইয়ে অপ্রশিক্ষিত ও স্বার্থসম্পর্কিত ব্যক্তি দিয়ে রিভিউ, প্রেজেন্টেশনে অনভিজ্ঞদের অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন, উচ্চ মানের গবেষণা বাদ দিয়ে প্রভাবিতভাবে নিম্ন প্রোফাইলের গবেষককে তহবিল বরাদ্দ, এমনকি ‘ব্লাইন্ড রিভিউ’ না করে স্বজনপ্রীতির সুযোগ রাখা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কেন্দ্রের সেমিনার কক্ষে ‘বিক্ষুব্ধ শিক্ষক সমাজ’ ব্যানারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ তোলা হয়।
পুর ও পরিবেশ প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম বলেন, “রিভিউ বোর্ড গঠন ছিল গোপনীয় ও অস্বচ্ছ। কারা রিভিউয়ার ছিলেন, কীভাবে মনোনীত হলেন—এ বিষয়গুলো স্পষ্ট করা হয়নি। এমনকি অনেক আবেদন তাদের নিজ বিভাগের সহকর্মীদের দিয়েই রিভিউ করানো হয়েছে, যা স্বার্থের সংঘাত সৃষ্টি করে।”
তিনি আরও বলেন, “যেখানে ইউজিসি দাবি করছে ব্লাইন্ড পিয়ার রিভিউ হয়েছে, সেখানে প্রকৃতপক্ষে আবেদনকারীর নাম, বায়োডেটা, গবেষণা তালিকাসহ সবকিছু রিভিউয়ারদের সামনে ছিল। ফলে এটিকে ব্লাইন্ড রিভিউ বলা যায় না।”
অধ্যাপক সাইফুল জানান, হিট প্রকল্পের মূল্যায়ন নির্দেশিকায় শুধুমাত্র ইউন্ডো-৩-এর ক্ষেত্রে প্রেজেন্টেশন গ্রহণযোগ্য বলা থাকলেও অন্য উইন্ডোগুলোতেও তা নেওয়া হয়েছে। “প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে বিভ্রান্ত ও বিব্রত করা হয়েছে গবেষকদের। বোর্ডে উপস্থিত অনেক ‘বিশেষজ্ঞ’ ছিলেন সংশ্লিষ্ট বিষয়ের অনভিজ্ঞ, যা অনভিপ্রেত।”
রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল হাসনাত বলেন, “একই বিভাগের একাধিক মানসম্পন্ন প্রস্তাব অনুমোদনের তালিকায় ছিল, কিন্তু পরে শুধু একটি রাখা হয়, বাকিগুলো কোনো কারণ ছাড়াই বাদ দেওয়া হয়।”
তিনি অভিযোগ করেন, “অনেক লো-প্রোফাইল আবেদনকারী, যাদের পিএইচডি নেই বা আন্তর্জাতিক মানের প্রকাশনা নেই, তারাই বরং অনুদান পেয়েছেন। অথচ যারা বাদ পড়েছেন, তাদের প্রোফাইল ছিল অনেক সমৃদ্ধ।”
জৈব প্রযুক্তি ও জিন প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “কেউ কেউ তাদের পুরনো গবেষণার সামান্য বদল করে নতুন নামে জমা দিয়েছেন, যা গবেষণার নৈতিকতা লঙ্ঘনের শামিল।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, “ঘোষণা ছাড়াই আবেদনের সময় একদিন বাড়ানো হয়, যার ফলে যারা নিয়ম মেনে সময়মতো জমা দিয়েছেন, তারা বৈষম্যের শিকার হয়েছেন।”
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষকদের তিনটি দাবি উত্থাপন করা হয়—
১. অনিয়মের অভিযোগে বিদ্যমান সব প্রজেক্ট বাতিল করতে হবে।
২. ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান, প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক আসাদুজ্জামান এবং পরামর্শক অধ্যাপক মোজাহার আলীর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
৩. নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে নতুন করে রিভিউ করে প্রকল্প নির্বাচন করতে হবে।
শিক্ষকরা জানান, এসব দাবি মানা না হলে তারা আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম, পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ড. জামাল উদ্দিন ও পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সাহাবুল হক।
এ বিষয়ে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খানের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
---
শুক্রবার, ০৮ আগস্ট ২০২৫
বিশ্ব ব্যাংক অর্থায়িত প্রকল্পে রিভিউ বোর্ডের স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন, তদন্ত দাবি ‘বিক্ষুব্ধ শিক্ষক সমাজ’-এর
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তত্ত্বাবধানে ও বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত হাইয়ার এডুকেশন একসিলারেশন অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন (হিট) প্রকল্পে অনিয়ম ও পক্ষপাতের অভিযোগ তুলেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) একাধিক শিক্ষক।
তাদের অভিযোগ—প্রকল্পের গবেষণা প্রস্তাব বাছাইয়ে অপ্রশিক্ষিত ও স্বার্থসম্পর্কিত ব্যক্তি দিয়ে রিভিউ, প্রেজেন্টেশনে অনভিজ্ঞদের অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন, উচ্চ মানের গবেষণা বাদ দিয়ে প্রভাবিতভাবে নিম্ন প্রোফাইলের গবেষককে তহবিল বরাদ্দ, এমনকি ‘ব্লাইন্ড রিভিউ’ না করে স্বজনপ্রীতির সুযোগ রাখা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কেন্দ্রের সেমিনার কক্ষে ‘বিক্ষুব্ধ শিক্ষক সমাজ’ ব্যানারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ তোলা হয়।
পুর ও পরিবেশ প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম বলেন, “রিভিউ বোর্ড গঠন ছিল গোপনীয় ও অস্বচ্ছ। কারা রিভিউয়ার ছিলেন, কীভাবে মনোনীত হলেন—এ বিষয়গুলো স্পষ্ট করা হয়নি। এমনকি অনেক আবেদন তাদের নিজ বিভাগের সহকর্মীদের দিয়েই রিভিউ করানো হয়েছে, যা স্বার্থের সংঘাত সৃষ্টি করে।”
তিনি আরও বলেন, “যেখানে ইউজিসি দাবি করছে ব্লাইন্ড পিয়ার রিভিউ হয়েছে, সেখানে প্রকৃতপক্ষে আবেদনকারীর নাম, বায়োডেটা, গবেষণা তালিকাসহ সবকিছু রিভিউয়ারদের সামনে ছিল। ফলে এটিকে ব্লাইন্ড রিভিউ বলা যায় না।”
অধ্যাপক সাইফুল জানান, হিট প্রকল্পের মূল্যায়ন নির্দেশিকায় শুধুমাত্র ইউন্ডো-৩-এর ক্ষেত্রে প্রেজেন্টেশন গ্রহণযোগ্য বলা থাকলেও অন্য উইন্ডোগুলোতেও তা নেওয়া হয়েছে। “প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে বিভ্রান্ত ও বিব্রত করা হয়েছে গবেষকদের। বোর্ডে উপস্থিত অনেক ‘বিশেষজ্ঞ’ ছিলেন সংশ্লিষ্ট বিষয়ের অনভিজ্ঞ, যা অনভিপ্রেত।”
রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল হাসনাত বলেন, “একই বিভাগের একাধিক মানসম্পন্ন প্রস্তাব অনুমোদনের তালিকায় ছিল, কিন্তু পরে শুধু একটি রাখা হয়, বাকিগুলো কোনো কারণ ছাড়াই বাদ দেওয়া হয়।”
তিনি অভিযোগ করেন, “অনেক লো-প্রোফাইল আবেদনকারী, যাদের পিএইচডি নেই বা আন্তর্জাতিক মানের প্রকাশনা নেই, তারাই বরং অনুদান পেয়েছেন। অথচ যারা বাদ পড়েছেন, তাদের প্রোফাইল ছিল অনেক সমৃদ্ধ।”
জৈব প্রযুক্তি ও জিন প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “কেউ কেউ তাদের পুরনো গবেষণার সামান্য বদল করে নতুন নামে জমা দিয়েছেন, যা গবেষণার নৈতিকতা লঙ্ঘনের শামিল।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, “ঘোষণা ছাড়াই আবেদনের সময় একদিন বাড়ানো হয়, যার ফলে যারা নিয়ম মেনে সময়মতো জমা দিয়েছেন, তারা বৈষম্যের শিকার হয়েছেন।”
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষকদের তিনটি দাবি উত্থাপন করা হয়—
১. অনিয়মের অভিযোগে বিদ্যমান সব প্রজেক্ট বাতিল করতে হবে।
২. ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান, প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক আসাদুজ্জামান এবং পরামর্শক অধ্যাপক মোজাহার আলীর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
৩. নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে নতুন করে রিভিউ করে প্রকল্প নির্বাচন করতে হবে।
শিক্ষকরা জানান, এসব দাবি মানা না হলে তারা আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম, পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ড. জামাল উদ্দিন ও পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সাহাবুল হক।
এ বিষয়ে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খানের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
---