ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন স্থগিতের আদেশের বিরুদ্ধে রীতিমতো ফেটে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গন। সোমবার,(০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫) বিকেল পৌনে চারটার দিকে হাইকোর্ট থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ডাকসু নির্বাচন স্থগিতের আদেশ দেয়া হলে সঙ্গে সঙ্গেই বিভিন্ন হল থেকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে বের হন। প্রথমে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ আন্দোলনের পক্ষ থেকে রাজু ভাস্কর্যে বিক্ষোভের ডাক দেয়া হলেও শিক্ষার্থীরা সরাসরি উপাচার্য ভবনের সামনে গিয়ে অবস্থান নেন। বিক্ষোভে ছাত্রদল, বামপন্থি জোট, ছাত্র অধিকার পরিষদ, ছাত্রশিবির, বাগছাস, এবং উমামা ফাতেমা-আল সাদী নেতৃত্বাধীন স্বতন্ত্র প্যানেলের প্রার্থীরা একযোগে অংশ নেন। অপরাজেয় বাংলা, রাজু ভাস্কর্য, মধুর ক্যান্টিন ও উপাচার্যের বাসভবনের সামনের এলাকা মুহূর্তেই উত্তাল হয়ে ওঠে বিভিন্ন প্যানেলের মিছিল ও স্লোগানে। বিকেল সাড়ে ৫টায় ছাত্রদল সমাবেশ করে, অধিকার পরিষদ ও স্বতন্ত্র প্যানেল অবস্থান কর্মসূচি পালন করে, বাম জোট ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে বিক্ষোভে অংশ নেয়। এমনকি হাইকোর্টে রিট করা সেই প্রার্থীর প্যানেলের সদস্যরাও স্থগিতাদেশের বিরোধিতা করে টিএসসি এলাকায় মিছিল করে। যদিও রিটকারী ফাহমিদা আলম উপস্থিত ছিলেন না।
বিক্ষোভ থেকে মুহূর্তেই আনন্দ মিছিলে
বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে চেম্বার আদালত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করলে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা আনন্দে ফেটে পড়েন। উপাচার্য ভবনের সামনে থেকে তাৎক্ষণিকভাবে আনন্দ মিছিল বের হয়ে পড়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘ডাকসু নির্বাচনে আর কোনো আইনি বাধা নেই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করতে বদ্ধপরিকর।’
প্রার্থীদের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া
হাইকোর্টের আদেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান ডাকসুর প্রার্থীরা। বাগছাস প্যানেলের জিএস প্রার্থী আবু বাকের মজুমদার ফেইসবুকে লেখেন, ‘শেখ হাসিনাও হাইকোর্ট দিয়ে খেলতে গিয়েছিল, পরিণতি ভালো হয়নি!’। স্বতন্ত্র ভিপি প্রার্থী উমামা ফাতেমা বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচন ৯ তারিখেই হতে হবে।’ একি প্যানেলে জিএস প্রার্থী আল সাদী লেখেন, ‘প্রয়োজনে হাইকোর্টই স্থগিত করে দিবো।’ ঢাবি শিবিরের এজিএস প্রার্থী মহিউদ্দিন খান বলেন, ‘এটা শুধু ডাকসু নির্বাচন নয়, এটি গণতান্ত্রিক সহাবস্থানের রক্ষাকবচ। এটা বন্ধ করার জন্য যে শক্তিই কাজ করুক তা সফল হবে না। আমরা ডাকসু বাস্তবায়ন করেই ছাড়বো, ইনশাআল্লাহ’। ডাকসু নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্যানেল থেকে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে প্রার্থী হয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) বহিষ্কৃত নেতা মাহিন সরকার।
বিক্ষোভ করেছে রিট করা সেই প্রার্থীর প্যানেলও
এস এম ফরহাদের বিরুদ্ধে রিট করা সেই ফাহমিদা আলমের প্যানেল ‘অপরাজেয় ৭১, অদম্য ২৪’-এর প্রার্থীদেরও হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করতে দেখা গিয়েছে। বিকেল পাঁচটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় পাঠাগার সামনে দিয়ে টিএসসি এলাকায় বিক্ষোভ করেছেন তারা। তবে এ সময় রিট করা প্যানেলে মুক্তিযুদ্ধ ও গণআন্দোলনবিষয়ক সম্পাদক পদে লড়বেন ফাহমিদা আলম অনুপস্থিত ছিলেন। অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান বলেন, এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাটি থেকেই আমরা হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলনের সূচনা করেছিলাম। আজ এখান থেকে আমি স্পষ্ট ঘোষণা দিতে চাই, ডাকসু নির্বাচন ঠিক সময়ই হবে। সেটাকে বাধাগ্রস্ত করার ক্ষমতা কারও নাই।
মধুর ক্যান্টিনের সামনে পৃথক সংবাদ সম্মেলনে ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের ভিপি প্রার্থী সাদিক কায়েম বলেন, ডাকসুসহ সারাদেশের ছাত্রসংসদ নির্বাচন বন্ধ করতে নানা ধরনের চক্রান্ত চলছে। সমন্বিত শিক্ষার্থী সংসদের ভিপি প্রার্থী জামালুদ্দিন মোহাম্মদ খালিদ বলেন, ডাকসু পেছানো ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেয়া হয়েছে। আগামীতে কেউ এমন ষড়যন্ত্র করলে শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে তা প্রতিহত করা হবে। স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্যের জিএস প্রার্থী আল সাদী ভূইয়া বলেন, ডাকসু হবেই, প্রয়োজনে হাইকোর্টের রায়ই স্থগিত করে দিব। গণতন্ত্রের লড়াই চলবেই। যে কোনো ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করা হবে।
প্রশাসন যা বলছে
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে দেয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের প্রক্রিয়া ও চূড়ান্ত ভোটার তালিকা-সংক্রান্ত হাইকোর্টের দেয়া আদেশ স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মনিরের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন চেম্বার আদালত। এর ফলে আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ডাকসু নির্বাচন হতে আর কোনো বাধা নেই।
শিবিরের ইশতেহারে ছয় বিষয়ে ‘হ্যাঁ’ ছয় বিষয়ে ‘না’
১২ মাসে ৩৬টি সংস্কারের টার্গেট নিয়ে ইশতেহার ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের প্যানেল ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট। সোমবার বিকেলে ডাকসু ভবনের সামনে প্যানেলের ইশতেহার পাঠ করেন এজিএস পদপ্রার্থী মহিউদ্দিন খান।
এদিকে ৩৬ জুলাইকে স্মরণে রেখে ১২ মাসে ৩৬টি সংস্কার করবে বলে জানায় সংগঠনটি। এই ৩৬টি সংস্কারই তাদের মূল ইশতেহার। ইশতেহারে ৬টি বিষয়কে ‘হ্যাঁ’ বলে জোর দিয়েছে প্যানেলটি। এগুলোকে শিক্ষার্থীদের মূল অধিকার বলা হচ্ছে। তাছাড়া, ৬টি বিষয়কে না বলেছে সংগঠনটি। এগুলোকে বিতাড়িত করতে চায় তারা। এছাড়াও আরও ৩৬টি ইশতেহার দেয় তারা।
ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের ১২ দফা ইশতেহার
এদিকে সোমবার ইশতেহার ঘোষণা করেছে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ সমর্থিত সচেতন শিক্ষার্থী সংসদ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী সংগঠনের ঢাবি শাখার সাবেক সভাপতি ইয়াসিন আরাফাত। তাদের ইশতেহারগুলো হলো- ১৯৪৭, ১৯৭১ ও ২০২৪ সালের আন্দোলনের চেতনায় গণতান্ত্রিক পরিবেশ গড়ে তোলা; সঠিক ইতিহাস চর্চা, আর্কাইভ তৈরি ও অ্যালামনাই সম্পৃক্তকরণ; সুপার কম্পিউটার স্থাপন ও প্রশাসনিক ডিজিটালাইজেশন; ল্যাবরেটরি আধুনিকীকরণ ও গবেষণায় সহায়তা; অনলাইন রিসোর্স, নোটিশ বোর্ড, হলভিত্তিক সাইবার ক্যাফে; ফ্রিল্যান্সিং কোর্স, সাইবার বুলিং প্রতিরোধে হেল্পডেস্ক; সব শিক্ষার্থীর জন্য একক বেড ও উন্নত আবাসন; অনাবাসিকদের জন্য কমনরুম, উন্নত ক্যাফেটেরিয়া; ২৪ ঘণ্টা লাইব্রেরি খোলা, আসন ও বইসংখ্যা বৃদ্ধি; ইউরোপীয় ‘ইরাসমাস’ মতো ছাত্র বিনিময় প্রোগ্রাম; ফুলব্রাইট, কমনওয়েলথ, শেভেনিং স্কলারশিপে সহায়তাসহ পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যকর ক্যাম্পাস নিশ্চিতকরণ। ২৪/৭ অ্যাম্বুলেন্স, অনলাইন স্বাস্থ্যসেবা প্ল্যাটফর্ম; হলগুলোতে ফার্স্ট এইড বক্স, স্বাস্থ্যবীমা সহজকরণ; বহিরাগত নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিতকরণ; আইন সচেতনতা কর্মশালা, হেল্পলাইন ও ফ্রি লিগ্যাল সাপোর্ট; র্যাগিং ও গেস্টরুম নির্যাতন বন্ধে ব্যবস্থা; প্রশাসনিক স্বচ্ছতা, দুর্নীতি দমন ও ডিজিটাল কার্যক্রম; উন্নত আবাসন, পরিবহন ও স্বাস্থ্যসেবা।
উমামা ফাতেমাকে বয়কট মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকদের
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্যের ভিপি প্রার্থী উমামা ফাতেমার সংবাদ সম্মেলন বয়কট করেছেন মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকরা। মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকদের অভিযোগ তাদের সঙ্গে ক্রমাগত খারাপ আচরণ করার পরও ক্ষমা চাননি তিনি। সোমবার ডাকসু ভবনের সামনে উমামা ফাতেমার ডাকা সংবাদ সম্মেলন থেকে বেরিয়ে যান তারা।
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
সোমবার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন স্থগিতের আদেশের বিরুদ্ধে রীতিমতো ফেটে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গন। সোমবার,(০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫) বিকেল পৌনে চারটার দিকে হাইকোর্ট থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ডাকসু নির্বাচন স্থগিতের আদেশ দেয়া হলে সঙ্গে সঙ্গেই বিভিন্ন হল থেকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে বের হন। প্রথমে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ আন্দোলনের পক্ষ থেকে রাজু ভাস্কর্যে বিক্ষোভের ডাক দেয়া হলেও শিক্ষার্থীরা সরাসরি উপাচার্য ভবনের সামনে গিয়ে অবস্থান নেন। বিক্ষোভে ছাত্রদল, বামপন্থি জোট, ছাত্র অধিকার পরিষদ, ছাত্রশিবির, বাগছাস, এবং উমামা ফাতেমা-আল সাদী নেতৃত্বাধীন স্বতন্ত্র প্যানেলের প্রার্থীরা একযোগে অংশ নেন। অপরাজেয় বাংলা, রাজু ভাস্কর্য, মধুর ক্যান্টিন ও উপাচার্যের বাসভবনের সামনের এলাকা মুহূর্তেই উত্তাল হয়ে ওঠে বিভিন্ন প্যানেলের মিছিল ও স্লোগানে। বিকেল সাড়ে ৫টায় ছাত্রদল সমাবেশ করে, অধিকার পরিষদ ও স্বতন্ত্র প্যানেল অবস্থান কর্মসূচি পালন করে, বাম জোট ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে বিক্ষোভে অংশ নেয়। এমনকি হাইকোর্টে রিট করা সেই প্রার্থীর প্যানেলের সদস্যরাও স্থগিতাদেশের বিরোধিতা করে টিএসসি এলাকায় মিছিল করে। যদিও রিটকারী ফাহমিদা আলম উপস্থিত ছিলেন না।
বিক্ষোভ থেকে মুহূর্তেই আনন্দ মিছিলে
বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে চেম্বার আদালত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করলে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা আনন্দে ফেটে পড়েন। উপাচার্য ভবনের সামনে থেকে তাৎক্ষণিকভাবে আনন্দ মিছিল বের হয়ে পড়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘ডাকসু নির্বাচনে আর কোনো আইনি বাধা নেই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করতে বদ্ধপরিকর।’
প্রার্থীদের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া
হাইকোর্টের আদেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান ডাকসুর প্রার্থীরা। বাগছাস প্যানেলের জিএস প্রার্থী আবু বাকের মজুমদার ফেইসবুকে লেখেন, ‘শেখ হাসিনাও হাইকোর্ট দিয়ে খেলতে গিয়েছিল, পরিণতি ভালো হয়নি!’। স্বতন্ত্র ভিপি প্রার্থী উমামা ফাতেমা বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচন ৯ তারিখেই হতে হবে।’ একি প্যানেলে জিএস প্রার্থী আল সাদী লেখেন, ‘প্রয়োজনে হাইকোর্টই স্থগিত করে দিবো।’ ঢাবি শিবিরের এজিএস প্রার্থী মহিউদ্দিন খান বলেন, ‘এটা শুধু ডাকসু নির্বাচন নয়, এটি গণতান্ত্রিক সহাবস্থানের রক্ষাকবচ। এটা বন্ধ করার জন্য যে শক্তিই কাজ করুক তা সফল হবে না। আমরা ডাকসু বাস্তবায়ন করেই ছাড়বো, ইনশাআল্লাহ’। ডাকসু নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্যানেল থেকে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে প্রার্থী হয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) বহিষ্কৃত নেতা মাহিন সরকার।
বিক্ষোভ করেছে রিট করা সেই প্রার্থীর প্যানেলও
এস এম ফরহাদের বিরুদ্ধে রিট করা সেই ফাহমিদা আলমের প্যানেল ‘অপরাজেয় ৭১, অদম্য ২৪’-এর প্রার্থীদেরও হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করতে দেখা গিয়েছে। বিকেল পাঁচটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় পাঠাগার সামনে দিয়ে টিএসসি এলাকায় বিক্ষোভ করেছেন তারা। তবে এ সময় রিট করা প্যানেলে মুক্তিযুদ্ধ ও গণআন্দোলনবিষয়ক সম্পাদক পদে লড়বেন ফাহমিদা আলম অনুপস্থিত ছিলেন। অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান বলেন, এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাটি থেকেই আমরা হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলনের সূচনা করেছিলাম। আজ এখান থেকে আমি স্পষ্ট ঘোষণা দিতে চাই, ডাকসু নির্বাচন ঠিক সময়ই হবে। সেটাকে বাধাগ্রস্ত করার ক্ষমতা কারও নাই।
মধুর ক্যান্টিনের সামনে পৃথক সংবাদ সম্মেলনে ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের ভিপি প্রার্থী সাদিক কায়েম বলেন, ডাকসুসহ সারাদেশের ছাত্রসংসদ নির্বাচন বন্ধ করতে নানা ধরনের চক্রান্ত চলছে। সমন্বিত শিক্ষার্থী সংসদের ভিপি প্রার্থী জামালুদ্দিন মোহাম্মদ খালিদ বলেন, ডাকসু পেছানো ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেয়া হয়েছে। আগামীতে কেউ এমন ষড়যন্ত্র করলে শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে তা প্রতিহত করা হবে। স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্যের জিএস প্রার্থী আল সাদী ভূইয়া বলেন, ডাকসু হবেই, প্রয়োজনে হাইকোর্টের রায়ই স্থগিত করে দিব। গণতন্ত্রের লড়াই চলবেই। যে কোনো ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করা হবে।
প্রশাসন যা বলছে
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে দেয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের প্রক্রিয়া ও চূড়ান্ত ভোটার তালিকা-সংক্রান্ত হাইকোর্টের দেয়া আদেশ স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মনিরের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন চেম্বার আদালত। এর ফলে আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ডাকসু নির্বাচন হতে আর কোনো বাধা নেই।
শিবিরের ইশতেহারে ছয় বিষয়ে ‘হ্যাঁ’ ছয় বিষয়ে ‘না’
১২ মাসে ৩৬টি সংস্কারের টার্গেট নিয়ে ইশতেহার ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের প্যানেল ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট। সোমবার বিকেলে ডাকসু ভবনের সামনে প্যানেলের ইশতেহার পাঠ করেন এজিএস পদপ্রার্থী মহিউদ্দিন খান।
এদিকে ৩৬ জুলাইকে স্মরণে রেখে ১২ মাসে ৩৬টি সংস্কার করবে বলে জানায় সংগঠনটি। এই ৩৬টি সংস্কারই তাদের মূল ইশতেহার। ইশতেহারে ৬টি বিষয়কে ‘হ্যাঁ’ বলে জোর দিয়েছে প্যানেলটি। এগুলোকে শিক্ষার্থীদের মূল অধিকার বলা হচ্ছে। তাছাড়া, ৬টি বিষয়কে না বলেছে সংগঠনটি। এগুলোকে বিতাড়িত করতে চায় তারা। এছাড়াও আরও ৩৬টি ইশতেহার দেয় তারা।
ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের ১২ দফা ইশতেহার
এদিকে সোমবার ইশতেহার ঘোষণা করেছে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ সমর্থিত সচেতন শিক্ষার্থী সংসদ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী সংগঠনের ঢাবি শাখার সাবেক সভাপতি ইয়াসিন আরাফাত। তাদের ইশতেহারগুলো হলো- ১৯৪৭, ১৯৭১ ও ২০২৪ সালের আন্দোলনের চেতনায় গণতান্ত্রিক পরিবেশ গড়ে তোলা; সঠিক ইতিহাস চর্চা, আর্কাইভ তৈরি ও অ্যালামনাই সম্পৃক্তকরণ; সুপার কম্পিউটার স্থাপন ও প্রশাসনিক ডিজিটালাইজেশন; ল্যাবরেটরি আধুনিকীকরণ ও গবেষণায় সহায়তা; অনলাইন রিসোর্স, নোটিশ বোর্ড, হলভিত্তিক সাইবার ক্যাফে; ফ্রিল্যান্সিং কোর্স, সাইবার বুলিং প্রতিরোধে হেল্পডেস্ক; সব শিক্ষার্থীর জন্য একক বেড ও উন্নত আবাসন; অনাবাসিকদের জন্য কমনরুম, উন্নত ক্যাফেটেরিয়া; ২৪ ঘণ্টা লাইব্রেরি খোলা, আসন ও বইসংখ্যা বৃদ্ধি; ইউরোপীয় ‘ইরাসমাস’ মতো ছাত্র বিনিময় প্রোগ্রাম; ফুলব্রাইট, কমনওয়েলথ, শেভেনিং স্কলারশিপে সহায়তাসহ পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যকর ক্যাম্পাস নিশ্চিতকরণ। ২৪/৭ অ্যাম্বুলেন্স, অনলাইন স্বাস্থ্যসেবা প্ল্যাটফর্ম; হলগুলোতে ফার্স্ট এইড বক্স, স্বাস্থ্যবীমা সহজকরণ; বহিরাগত নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিতকরণ; আইন সচেতনতা কর্মশালা, হেল্পলাইন ও ফ্রি লিগ্যাল সাপোর্ট; র্যাগিং ও গেস্টরুম নির্যাতন বন্ধে ব্যবস্থা; প্রশাসনিক স্বচ্ছতা, দুর্নীতি দমন ও ডিজিটাল কার্যক্রম; উন্নত আবাসন, পরিবহন ও স্বাস্থ্যসেবা।
উমামা ফাতেমাকে বয়কট মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকদের
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্যের ভিপি প্রার্থী উমামা ফাতেমার সংবাদ সম্মেলন বয়কট করেছেন মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকরা। মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকদের অভিযোগ তাদের সঙ্গে ক্রমাগত খারাপ আচরণ করার পরও ক্ষমা চাননি তিনি। সোমবার ডাকসু ভবনের সামনে উমামা ফাতেমার ডাকা সংবাদ সম্মেলন থেকে বেরিয়ে যান তারা।