নীলফামারীর উত্তরা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (উত্তরা ইপিজেড) সেনা ও পুলিশের গুলিতে হাবিব ইসলাম (২০) নিহত ও আট শ্রমিক আহত হওয়ার ঘটনায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়ে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ হয়ে আবার শহীদ মিনারের সামনে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। মিছিলটি আয়োজন করে নীলফামারী জেলা ছাত্রকল্যাণ পরিষদ।
সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭ ব্যাচের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী রায়হান ইসলাম বলেন, শ্রমিকদের ট্যাক্সের টাকায় সরকার অস্ত্র কিনে আবার সেই শ্রমিকদের উপরই গুলি করে হত্যা করা হয়। আমরা ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে এইরকম নজির দেখতে চায়নি। আমরা ইন্টেরিম সরকারকে বলে দিতে চাই, আপনারা এই ঘটনার দ্রুত বিচার করুন নয়তো শেখ হাসিনার সরকার যেভাবে পালিয়েছে আপনাদেরও সেভাবে পালাতে হবে।
সমাবেশে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. মেহেদী হাসান বলেন, ইপিজেডে বাইরের দেশের কোম্পানি আমাদের দেশীয় শ্রমিকদের খাঁটিয়ে পণ্য উৎপাদন করে সেই পণ্য তারা তাদের দেশে নিয়ে যাচ্ছে। অথচ আমাদের দেশের গরিব শ্রমিকদের বেতন তারা ঠিক মতো দিচ্ছে না। শ্রমিকরা যখন তাদের ন্যায্য দাবি জানাতে বেপজা কর্তৃপক্ষকে জানায় তখনই তাদের ছাঁটাই করা হয়। শ্রমিকরা তাদের অধিকারের জন্য রাস্তায় নেমেছে, আর আমার দেশের যৌথবাহিনী কোম্পানির পক্ষ নিয়ে আমার দেশের শ্রমিকদের উপর গুলি চালিয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ এবং বিচারের দাবি জানাই।
এসময় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি আব্দুল আলীম আরিফ বলেন, ইপিজেডে একটা নির্দিষ্ট সময় পর শ্রমিকদের বেতনের ইনক্রিমেন্ট হয়। কিন্তু আমরা জেনেছি উত্তরা ইপিজেডে নির্দিষ্ট সময়ে ইনক্রিমেন্ট হওয়ার সময় শ্রমিকদের ছাঁটাই করে পরবর্তীতে আবার নিয়োগ দেওয়া হয়। এটাতে শ্রমিকদের বেতন বাড়ে না, আমাদের শ্রমিকদের উপর জুলুম করা হচ্ছে। আমরা এই সরকারের যৌথ বাহিনীকে বলতে চাই আপনারা শ্রমিকদের উপর গুলি চালিয়ে অন্যায় করছেন। নীলফামারীর অবহেলিত মানুষদের গুলি করে হত্যা করেছেন। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ এবং বিচারের দাবি জানাই।
সমাবেশে নীলফামারী জেলা ছাত্র কল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন স্বপনের সঞ্চালনায় অন্যান্য শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্ত চত্বরে একদল শিক্ষার্থী বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। সেসময় শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, সেনাবাহিনী জনগণের বিরুদ্ধে এবং পুঁজিপতিদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। পাহাড়ে আদিবাসীদের উচ্ছেদ ও শ্রমিক আন্দোলন দমন এরই প্রমাণ। গত এক বছরে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়ার পর থেকে তারা সাধারণ মানুষের ওপর দমন-নিপীড়ন চালাচ্ছে। যে রাষ্ট্রব্যবস্থা শেখ হাসিনাকে স্বৈরশাসক হতে সাহায্য করেছিল, সেই একই ব্যবস্থার কারণে এখনো শ্রমিক হত্যা, পাহাড়ে সেনাশাসন ও জনগণের ওপর দমননীতি চালু রয়েছে।
দুপুরের এই বিক্ষোভে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রটের সাধারণ সম্পাদক মারুফ বলেন, সেনাবাহিনী আজ শ্রমিকদের আন্দোলনে গুলি কররে শ্রমিক খুন করেছে। এই একই সেনাবাহিনীকে দেখি চবি শিক্ষার্থীদের বিপন্ন অবস্থায় নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হতে। একইভাবে রাষ্ট্রের পুলিশ প্রশাসন ব্যর্থ ছিল ধর্ষণ এবং মব ভায়োলেন্স এবং পাহাড়ে আদিবাসীদের উপর নানা সাম্প্রদায়িক হামলা প্রতিরোধে। কিন্তু আমরা দেখলাম অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে সকল শ্রমিক আন্দোলন দমনে সেনাবাহিনীর কঠোর অংশগ্রহণ এবং গুলি করে শ্রমিক হত্যা। "
আরেক শিক্ষার্থী কল্পনা চাকমা বলেন, ‘পাহাড়ে যা এক্সপেরিমেন্ট হয়, সমতলে তা ইমপ্লিমেন্ট হয়। এই সেনাবাহিনী এবং এই রাষ্ট্রব্যবস্থা, সেনাবাহিনী যার অংশ, জনগণের বিরুদ্ধে এবং পুঁজিপতি-মালিকশ্রেণির পক্ষে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। তাই শ্রমিকের অধিকারের বিরুদ্ধে তারা গুলি চালায়, পাহাড়ে আদিবাসীদের উচ্ছেদ করে পুঁজিপতিদের স্বার্থ রক্ষা করতে। গত এক বছরে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়ার পর থেকে সেনাবাহিনী এদেশের মানুষের উপর যেইরূপে নিপীড়ন করেছে সেটাই প্রমাণ করে যে সেনাবাহিনী আসলে ক্ষমতাসীন পুঁজিপতিদের স্বার্থ কায়েমে কাজ করে এবং ক্ষমতার স্বার্থ রক্ষায় তারা সাধারণ মানুষকে খুন করতেও পিছপা হয়না।’
উল্লেখ্য, নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে গত শনিবার থেকে এভারগ্রিন কোম্পানির শ্রমিকরা আন্দোলন করে আসছেন। মঙ্গলবার সকালে শ্রমিকদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন এবং অন্তত ১২ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নিহত শ্রমিকের নাম হাবিবুর রহমান। তিনি ইকু ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি নিটিং কারখানায় কাজ করতেন। আন্দোলনরত শ্রমিকদের প্রধান দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে জেনারেল ম্যানেজারের পদত্যাগ, পুরাতন শ্রমিকদের ছাঁটাই বন্ধ করে পূর্বের লে অফ সিস্টেমে ফেরত আনা, নামাজের সময় নিশ্চিত করা, স্যালারি কার্ড বাতিল করা। এছাড়া কোনো শ্রমিক স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করলে লে অফ পদ্ধতিতে বের করা, পুরাতন শ্রমিকদের পূর্বের আইডিতে পুনর্বহাল করাসহ ২৩টি দাবিতে আন্দোলন করছিলেন শ্রমিকরা।
মঙ্গলবার, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
নীলফামারীর উত্তরা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (উত্তরা ইপিজেড) সেনা ও পুলিশের গুলিতে হাবিব ইসলাম (২০) নিহত ও আট শ্রমিক আহত হওয়ার ঘটনায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়ে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ হয়ে আবার শহীদ মিনারের সামনে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। মিছিলটি আয়োজন করে নীলফামারী জেলা ছাত্রকল্যাণ পরিষদ।
সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭ ব্যাচের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী রায়হান ইসলাম বলেন, শ্রমিকদের ট্যাক্সের টাকায় সরকার অস্ত্র কিনে আবার সেই শ্রমিকদের উপরই গুলি করে হত্যা করা হয়। আমরা ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে এইরকম নজির দেখতে চায়নি। আমরা ইন্টেরিম সরকারকে বলে দিতে চাই, আপনারা এই ঘটনার দ্রুত বিচার করুন নয়তো শেখ হাসিনার সরকার যেভাবে পালিয়েছে আপনাদেরও সেভাবে পালাতে হবে।
সমাবেশে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. মেহেদী হাসান বলেন, ইপিজেডে বাইরের দেশের কোম্পানি আমাদের দেশীয় শ্রমিকদের খাঁটিয়ে পণ্য উৎপাদন করে সেই পণ্য তারা তাদের দেশে নিয়ে যাচ্ছে। অথচ আমাদের দেশের গরিব শ্রমিকদের বেতন তারা ঠিক মতো দিচ্ছে না। শ্রমিকরা যখন তাদের ন্যায্য দাবি জানাতে বেপজা কর্তৃপক্ষকে জানায় তখনই তাদের ছাঁটাই করা হয়। শ্রমিকরা তাদের অধিকারের জন্য রাস্তায় নেমেছে, আর আমার দেশের যৌথবাহিনী কোম্পানির পক্ষ নিয়ে আমার দেশের শ্রমিকদের উপর গুলি চালিয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ এবং বিচারের দাবি জানাই।
এসময় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি আব্দুল আলীম আরিফ বলেন, ইপিজেডে একটা নির্দিষ্ট সময় পর শ্রমিকদের বেতনের ইনক্রিমেন্ট হয়। কিন্তু আমরা জেনেছি উত্তরা ইপিজেডে নির্দিষ্ট সময়ে ইনক্রিমেন্ট হওয়ার সময় শ্রমিকদের ছাঁটাই করে পরবর্তীতে আবার নিয়োগ দেওয়া হয়। এটাতে শ্রমিকদের বেতন বাড়ে না, আমাদের শ্রমিকদের উপর জুলুম করা হচ্ছে। আমরা এই সরকারের যৌথ বাহিনীকে বলতে চাই আপনারা শ্রমিকদের উপর গুলি চালিয়ে অন্যায় করছেন। নীলফামারীর অবহেলিত মানুষদের গুলি করে হত্যা করেছেন। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ এবং বিচারের দাবি জানাই।
সমাবেশে নীলফামারী জেলা ছাত্র কল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন স্বপনের সঞ্চালনায় অন্যান্য শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্ত চত্বরে একদল শিক্ষার্থী বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। সেসময় শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, সেনাবাহিনী জনগণের বিরুদ্ধে এবং পুঁজিপতিদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। পাহাড়ে আদিবাসীদের উচ্ছেদ ও শ্রমিক আন্দোলন দমন এরই প্রমাণ। গত এক বছরে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়ার পর থেকে তারা সাধারণ মানুষের ওপর দমন-নিপীড়ন চালাচ্ছে। যে রাষ্ট্রব্যবস্থা শেখ হাসিনাকে স্বৈরশাসক হতে সাহায্য করেছিল, সেই একই ব্যবস্থার কারণে এখনো শ্রমিক হত্যা, পাহাড়ে সেনাশাসন ও জনগণের ওপর দমননীতি চালু রয়েছে।
দুপুরের এই বিক্ষোভে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রটের সাধারণ সম্পাদক মারুফ বলেন, সেনাবাহিনী আজ শ্রমিকদের আন্দোলনে গুলি কররে শ্রমিক খুন করেছে। এই একই সেনাবাহিনীকে দেখি চবি শিক্ষার্থীদের বিপন্ন অবস্থায় নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হতে। একইভাবে রাষ্ট্রের পুলিশ প্রশাসন ব্যর্থ ছিল ধর্ষণ এবং মব ভায়োলেন্স এবং পাহাড়ে আদিবাসীদের উপর নানা সাম্প্রদায়িক হামলা প্রতিরোধে। কিন্তু আমরা দেখলাম অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে সকল শ্রমিক আন্দোলন দমনে সেনাবাহিনীর কঠোর অংশগ্রহণ এবং গুলি করে শ্রমিক হত্যা। "
আরেক শিক্ষার্থী কল্পনা চাকমা বলেন, ‘পাহাড়ে যা এক্সপেরিমেন্ট হয়, সমতলে তা ইমপ্লিমেন্ট হয়। এই সেনাবাহিনী এবং এই রাষ্ট্রব্যবস্থা, সেনাবাহিনী যার অংশ, জনগণের বিরুদ্ধে এবং পুঁজিপতি-মালিকশ্রেণির পক্ষে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। তাই শ্রমিকের অধিকারের বিরুদ্ধে তারা গুলি চালায়, পাহাড়ে আদিবাসীদের উচ্ছেদ করে পুঁজিপতিদের স্বার্থ রক্ষা করতে। গত এক বছরে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়ার পর থেকে সেনাবাহিনী এদেশের মানুষের উপর যেইরূপে নিপীড়ন করেছে সেটাই প্রমাণ করে যে সেনাবাহিনী আসলে ক্ষমতাসীন পুঁজিপতিদের স্বার্থ কায়েমে কাজ করে এবং ক্ষমতার স্বার্থ রক্ষায় তারা সাধারণ মানুষকে খুন করতেও পিছপা হয়না।’
উল্লেখ্য, নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে গত শনিবার থেকে এভারগ্রিন কোম্পানির শ্রমিকরা আন্দোলন করে আসছেন। মঙ্গলবার সকালে শ্রমিকদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন এবং অন্তত ১২ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নিহত শ্রমিকের নাম হাবিবুর রহমান। তিনি ইকু ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি নিটিং কারখানায় কাজ করতেন। আন্দোলনরত শ্রমিকদের প্রধান দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে জেনারেল ম্যানেজারের পদত্যাগ, পুরাতন শ্রমিকদের ছাঁটাই বন্ধ করে পূর্বের লে অফ সিস্টেমে ফেরত আনা, নামাজের সময় নিশ্চিত করা, স্যালারি কার্ড বাতিল করা। এছাড়া কোনো শ্রমিক স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করলে লে অফ পদ্ধতিতে বের করা, পুরাতন শ্রমিকদের পূর্বের আইডিতে পুনর্বহাল করাসহ ২৩টি দাবিতে আন্দোলন করছিলেন শ্রমিকরা।