ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
জাকসু নির্বাচন ঘিরে ক্রমেই বাড়ছে উচ্ছ্বাস। নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই ক্যাম্পাসে তৈরি হচ্ছে উৎসবমুখর পরিবেশ, যেখানে প্রচারণার উত্তাপ, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, হুমকির অভিযোগ এবং বাজেট সংকট মিলিয়ে এক অভূতপূর্ব গণতান্ত্রিক উন্মাদনা ছড়িয়েছে। বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের প্যানেল ঘোষণা থেকে শুরু করে প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতি এবং হল নির্বাচনের জমজমাট প্রতিযোগিতা- সবকিছু মিলিয়ে এ নির্বাচন কেবল শিক্ষার্থীদের অধিকার চর্চার মঞ্চ নয় বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ গড়ার এক মাইলফলক হয়ে উঠেছে।
প্যানেল ঘোষণা ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব: বাগছাসের ঐক্য ফোরামে ফাটল
বাজেট সংকট: ১ কোটি ৩২ লাখের খসড়া প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে
হল নির্বাচনের উত্তাপ: নজরুল হলে রেকর্ড
৫৫ প্রার্থী
তবে প্রচারণার মাঝে হুমকির অভিযোগ এবং বাজেট অনুমোদনের অনিশ্চয়তা নির্বাচনের সুষ্ঠুতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
প্যানেল ঘোষণা ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব: বাগছাসের ঐক্য ফোরামে ফাটল
নির্বাচনের প্রস্তুতিতে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ (বাগছাস) জাহাঙ্গীরনগর শাখা গত ২২ আগস্ট ‘শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম’ নামে ২৫ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করে। এ প্যানেল থেকে ভিপি পদে লড়বেন সংগঠনের আহ্বায়ক আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল এবং সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে সদস্যসচিব আবু তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক কমিটি থেকে গঠিত এ সংগঠনে গত বছরের ৩ অক্টোবর ১৪ জন সমন্বয়ক এবং চারজন সহ-সমন্বয়কের পদত্যাগের প্রভাব পড়েছে প্যানেলে।
পদত্যাগকারীদের মধ্যে আব্দুর রশিদ জিতু, রুদ্র মুহাম্মদ সফিউল্লাহ, হাসিব জামান, জাহিদুল ইসলাম ইমন, ফাহমিদা ফাইজা প্রমুখ ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন’ এবং ‘স্বতন্ত্র অঙ্গীকার পরিষদ’ নামে পৃথক প্যানেল গঠন করেছেন। ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন’ থেকে ভিপি পদে জিতু এবং ইমন জিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়া মাহফুজ ইসলাম মেঘ ও সৈয়দা মেহের আফরোজ শাওলী ‘স্বতন্ত্র অঙ্গীকার পরিষদ’ থেকে যথাক্রমে ভিপি এবং শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক পদে লড়ছেন।
অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব আরও তীব্র হয়েছে যখন বাগছাসের যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুল ইসলাম লিমন এবং কাওসার আলম আরমান কাক্সিক্ষত পদে মনোনয়ন না পেয়ে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্রভাবে সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। লিমন অভিযোগ করেছেন, ‘বাগছাসের কার্যক্রম শীর্ষ নেতাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর নির্ভরশীল। কমিটি গঠনে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি।’
বাগছাসের সদস্যসচিব সিয়াম বলেছেন, ‘গণঅভ্যুত্থান অনেকের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলি তৈরি করেছে, তাই সবাইকে একসঙ্গে রাখা সম্ভব হয়নি।’
প্যানেলে হত্যা মামলার আসামি আহসান লাবিবকে সমাজসেবা ও মানবসম্পদ উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক পদে মনোনীত করায় বিতর্ক তৈরি হয়েছে। তিনি গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর শামীম মোল্লা হত্যাকাণ্ডের মামলায় আসামি ছিলেন। একইভাবে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী জিয়া উদ্দিন আয়ানের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের সঙ্গে পূর্বের যুক্ততার অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগের জবাবে আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল বলেছেন, ‘আমরা গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিট ধারণকারী যোগ্য প্রার্থীদেরই মনোনীত করেছি।’ তবে এ বিতর্কগুলো শিক্ষার্থীদের মাঝে বিভিন্ন প্রশ্ন তুলেছে এবং বাগছাসের প্যানেলের গ্রহণযোগ্যতার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
বাজেট সংকট: ১ কোটি ৩২ লাখের খসড়া প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে
নির্বাচনের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট ১ কোটি ৩২ লাখ ২০ হাজার ৯২৫ টাকা, যা উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসানের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি দল প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে জমা দিয়েছে। দলে রয়েছেন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সোহেল আহমেদ এবং কোষাধ্যক্ষ আব্দুর রব। বাজেটের বড় অংশ ব্যয় হবে নির্বাচন কেন্দ্র প্রস্তুতিতে (২৪ লাখ ১৫ হাজার টাকা), নির্বাচন কমিশন ও মনিটরিং সম্মানীতে (২২ লাখ ৬৫ হাজার ৫০০ টাকা) এবং ব্যালট, প্রিন্টিং ও আপ্যায়নে (৩৩ লাখ ২৫ হাজার ৫০০ টাকা)। কোষাধ্যক্ষ আব্দুর রব জানিয়েছেন, চলতি অর্থবছরে জাকসুর জন্য কোনো বরাদ্দ ছিল না। সম্প্রতি নতুন ফান্ড গঠন করা হলেও ইউজিসি থেকে অনুমোদন না পেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করতে হবে, যা অন্য খাতে সংকট তৈরি করতে পারে। নির্বাচন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক লুৎফর এলাহি বলেছেন, ‘জাকসু ভবন সংস্কার এবং বেশি সংখ্যক প্রার্থীর কারণে ব্যালট ও ব্যালট বক্স তৈরিতে খরচ বাড়ছে।’ ঢাকা, রাজশাহী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট বাজেট ২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা, যার মধ্যে জাবির অংশ সবচেয়ে বেশি। বাজেট তহবিল কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘৩৩ বছর পর নির্বাচন হওয়ায় সবকিছু নতুনভাবে তৈরি করতে হচ্ছে।’
এ বাজেট অনুমোদনের অনিশ্চয়তা নির্বাচনের সুষ্ঠু আয়োজনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
# প্রচারণা, হুমকি ও ক্লাস স্থগিত: এখন ক্যাম্পাসের দৈনন্দিন চিত্র
ক্যাম্পাস প্রচারণার উত্তাপে সরগরম। ছাত্রদল নতুন কলা ভবন ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদে, বাগছাস সমর্থিত শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম মুরাদ চত্বর ও শহীদ মিনার এলাকায়, শিবির সমর্থিত শিক্ষার্থী সমন্বিত জোট বিভিন্ন হল ও অ্যাকাডেমিক ভবনে এবং ‘সম্প্রীতির ঐক্য’ প্যানেল শহীদ সালাম বরকত ও আল-বেরুনি হলে প্রচারণা চালাচ্ছে। এছাড়াও প্রার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস, অনুষদ, বটতলা, চায়ের দোকান সর্বত্র প্রচারণা করতে দেখা যায়। স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছাচ্ছেন।
ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী মো. শেখ সাদী হাসান বলেছেন, ‘শিক্ষার্থীদের থেকে ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছি।’ শিবিরের জিএস প্রার্থী মাজহারুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক কার্যক্রম অটোমেশনের আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তবে তিনি অভিযোগ করেছেন যে একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠী তাদের সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে।
এদিকে, ছাত্রদলের জিএস প্রার্থী তানজিলা হোসাইন বৈশাখী নির্বাচন থেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য বিভিন্ন মহল থেকে হুমকির অভিযোগ করেছেন।
নির্বাচন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আগামী ৯ সেপ্টেম্বর সব পরীক্ষা এবং ১০-১১ সেপ্টেম্বর সব ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত করে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, উইকেন্ড ও ইভিনিং প্রোগ্রাম ১২-১৩ সেপ্টেম্বর বন্ধ থাকবে।
# হল নির্বাচনের উত্তাপ: নজরুল হলে রেকর্ড ৫৫ প্রার্থী
জাকসুর পাশাপাশি হল সংসদ নির্বাচনও জমজমাট। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলে রেকর্ড ৫৫ জন প্রার্থী বিভিন্ন পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক ড. মীর ফেরদৌস হোসেন স্বাক্ষরিত চূড়ান্ত তালিকা অনুযায়ী, সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে ৫ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ৬ জন, সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে ৪ জন, এবং অন্যান্য পদে তীব্র প্রতিযোগিতা রয়েছে।
প্রার্থীরা হলের খেলাধুলার সুবিধা, অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র স্থাপন, ক্যান্টিনের মানোন্নয়ন, সাইকেল-বাইক স্ট্যান্ড এবং সাংস্কৃতিক কার্যক্রম বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।
এ হল নির্বাচনের উত্তেজনা ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক চর্চার এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। জাকসু নির্বাচন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক চর্চাকে পুনরুজ্জীবিত করার এক অনন্য সুযোগ হিসেবে দেখছেন শিক্ষার্থীরা।
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
বুধবার, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
জাকসু নির্বাচন ঘিরে ক্রমেই বাড়ছে উচ্ছ্বাস। নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই ক্যাম্পাসে তৈরি হচ্ছে উৎসবমুখর পরিবেশ, যেখানে প্রচারণার উত্তাপ, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, হুমকির অভিযোগ এবং বাজেট সংকট মিলিয়ে এক অভূতপূর্ব গণতান্ত্রিক উন্মাদনা ছড়িয়েছে। বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের প্যানেল ঘোষণা থেকে শুরু করে প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতি এবং হল নির্বাচনের জমজমাট প্রতিযোগিতা- সবকিছু মিলিয়ে এ নির্বাচন কেবল শিক্ষার্থীদের অধিকার চর্চার মঞ্চ নয় বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ গড়ার এক মাইলফলক হয়ে উঠেছে।
প্যানেল ঘোষণা ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব: বাগছাসের ঐক্য ফোরামে ফাটল
বাজেট সংকট: ১ কোটি ৩২ লাখের খসড়া প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে
হল নির্বাচনের উত্তাপ: নজরুল হলে রেকর্ড
৫৫ প্রার্থী
তবে প্রচারণার মাঝে হুমকির অভিযোগ এবং বাজেট অনুমোদনের অনিশ্চয়তা নির্বাচনের সুষ্ঠুতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
প্যানেল ঘোষণা ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব: বাগছাসের ঐক্য ফোরামে ফাটল
নির্বাচনের প্রস্তুতিতে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ (বাগছাস) জাহাঙ্গীরনগর শাখা গত ২২ আগস্ট ‘শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম’ নামে ২৫ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করে। এ প্যানেল থেকে ভিপি পদে লড়বেন সংগঠনের আহ্বায়ক আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল এবং সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে সদস্যসচিব আবু তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক কমিটি থেকে গঠিত এ সংগঠনে গত বছরের ৩ অক্টোবর ১৪ জন সমন্বয়ক এবং চারজন সহ-সমন্বয়কের পদত্যাগের প্রভাব পড়েছে প্যানেলে।
পদত্যাগকারীদের মধ্যে আব্দুর রশিদ জিতু, রুদ্র মুহাম্মদ সফিউল্লাহ, হাসিব জামান, জাহিদুল ইসলাম ইমন, ফাহমিদা ফাইজা প্রমুখ ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন’ এবং ‘স্বতন্ত্র অঙ্গীকার পরিষদ’ নামে পৃথক প্যানেল গঠন করেছেন। ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন’ থেকে ভিপি পদে জিতু এবং ইমন জিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়া মাহফুজ ইসলাম মেঘ ও সৈয়দা মেহের আফরোজ শাওলী ‘স্বতন্ত্র অঙ্গীকার পরিষদ’ থেকে যথাক্রমে ভিপি এবং শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক পদে লড়ছেন।
অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব আরও তীব্র হয়েছে যখন বাগছাসের যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুল ইসলাম লিমন এবং কাওসার আলম আরমান কাক্সিক্ষত পদে মনোনয়ন না পেয়ে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্রভাবে সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। লিমন অভিযোগ করেছেন, ‘বাগছাসের কার্যক্রম শীর্ষ নেতাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর নির্ভরশীল। কমিটি গঠনে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি।’
বাগছাসের সদস্যসচিব সিয়াম বলেছেন, ‘গণঅভ্যুত্থান অনেকের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলি তৈরি করেছে, তাই সবাইকে একসঙ্গে রাখা সম্ভব হয়নি।’
প্যানেলে হত্যা মামলার আসামি আহসান লাবিবকে সমাজসেবা ও মানবসম্পদ উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক পদে মনোনীত করায় বিতর্ক তৈরি হয়েছে। তিনি গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর শামীম মোল্লা হত্যাকাণ্ডের মামলায় আসামি ছিলেন। একইভাবে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী জিয়া উদ্দিন আয়ানের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের সঙ্গে পূর্বের যুক্ততার অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগের জবাবে আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল বলেছেন, ‘আমরা গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিট ধারণকারী যোগ্য প্রার্থীদেরই মনোনীত করেছি।’ তবে এ বিতর্কগুলো শিক্ষার্থীদের মাঝে বিভিন্ন প্রশ্ন তুলেছে এবং বাগছাসের প্যানেলের গ্রহণযোগ্যতার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
বাজেট সংকট: ১ কোটি ৩২ লাখের খসড়া প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে
নির্বাচনের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট ১ কোটি ৩২ লাখ ২০ হাজার ৯২৫ টাকা, যা উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসানের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি দল প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে জমা দিয়েছে। দলে রয়েছেন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সোহেল আহমেদ এবং কোষাধ্যক্ষ আব্দুর রব। বাজেটের বড় অংশ ব্যয় হবে নির্বাচন কেন্দ্র প্রস্তুতিতে (২৪ লাখ ১৫ হাজার টাকা), নির্বাচন কমিশন ও মনিটরিং সম্মানীতে (২২ লাখ ৬৫ হাজার ৫০০ টাকা) এবং ব্যালট, প্রিন্টিং ও আপ্যায়নে (৩৩ লাখ ২৫ হাজার ৫০০ টাকা)। কোষাধ্যক্ষ আব্দুর রব জানিয়েছেন, চলতি অর্থবছরে জাকসুর জন্য কোনো বরাদ্দ ছিল না। সম্প্রতি নতুন ফান্ড গঠন করা হলেও ইউজিসি থেকে অনুমোদন না পেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করতে হবে, যা অন্য খাতে সংকট তৈরি করতে পারে। নির্বাচন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক লুৎফর এলাহি বলেছেন, ‘জাকসু ভবন সংস্কার এবং বেশি সংখ্যক প্রার্থীর কারণে ব্যালট ও ব্যালট বক্স তৈরিতে খরচ বাড়ছে।’ ঢাকা, রাজশাহী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট বাজেট ২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা, যার মধ্যে জাবির অংশ সবচেয়ে বেশি। বাজেট তহবিল কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘৩৩ বছর পর নির্বাচন হওয়ায় সবকিছু নতুনভাবে তৈরি করতে হচ্ছে।’
এ বাজেট অনুমোদনের অনিশ্চয়তা নির্বাচনের সুষ্ঠু আয়োজনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
# প্রচারণা, হুমকি ও ক্লাস স্থগিত: এখন ক্যাম্পাসের দৈনন্দিন চিত্র
ক্যাম্পাস প্রচারণার উত্তাপে সরগরম। ছাত্রদল নতুন কলা ভবন ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদে, বাগছাস সমর্থিত শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম মুরাদ চত্বর ও শহীদ মিনার এলাকায়, শিবির সমর্থিত শিক্ষার্থী সমন্বিত জোট বিভিন্ন হল ও অ্যাকাডেমিক ভবনে এবং ‘সম্প্রীতির ঐক্য’ প্যানেল শহীদ সালাম বরকত ও আল-বেরুনি হলে প্রচারণা চালাচ্ছে। এছাড়াও প্রার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস, অনুষদ, বটতলা, চায়ের দোকান সর্বত্র প্রচারণা করতে দেখা যায়। স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছাচ্ছেন।
ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী মো. শেখ সাদী হাসান বলেছেন, ‘শিক্ষার্থীদের থেকে ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছি।’ শিবিরের জিএস প্রার্থী মাজহারুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক কার্যক্রম অটোমেশনের আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তবে তিনি অভিযোগ করেছেন যে একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠী তাদের সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে।
এদিকে, ছাত্রদলের জিএস প্রার্থী তানজিলা হোসাইন বৈশাখী নির্বাচন থেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য বিভিন্ন মহল থেকে হুমকির অভিযোগ করেছেন।
নির্বাচন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আগামী ৯ সেপ্টেম্বর সব পরীক্ষা এবং ১০-১১ সেপ্টেম্বর সব ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত করে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, উইকেন্ড ও ইভিনিং প্রোগ্রাম ১২-১৩ সেপ্টেম্বর বন্ধ থাকবে।
# হল নির্বাচনের উত্তাপ: নজরুল হলে রেকর্ড ৫৫ প্রার্থী
জাকসুর পাশাপাশি হল সংসদ নির্বাচনও জমজমাট। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলে রেকর্ড ৫৫ জন প্রার্থী বিভিন্ন পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক ড. মীর ফেরদৌস হোসেন স্বাক্ষরিত চূড়ান্ত তালিকা অনুযায়ী, সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে ৫ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ৬ জন, সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে ৪ জন, এবং অন্যান্য পদে তীব্র প্রতিযোগিতা রয়েছে।
প্রার্থীরা হলের খেলাধুলার সুবিধা, অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র স্থাপন, ক্যান্টিনের মানোন্নয়ন, সাইকেল-বাইক স্ট্যান্ড এবং সাংস্কৃতিক কার্যক্রম বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।
এ হল নির্বাচনের উত্তেজনা ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক চর্চার এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। জাকসু নির্বাচন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক চর্চাকে পুনরুজ্জীবিত করার এক অনন্য সুযোগ হিসেবে দেখছেন শিক্ষার্থীরা।