জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন-২০২৫ বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়েছে। দীর্ঘ ৩৩ বছর পর অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে মোট ১১,৭৪৩ জন ভোটার অংশগ্রহণ করছেন, যার মধ্যে ছাত্রী ভোটার ৫,৭২৮ জন এবং ছাত্র ভোটার ৬,০১৫ জন। কেন্দ্রীয় সংসদের ২৫টি পদের জন্য ১৭৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে ভোটগ্রহণ চলাকালে আচরণবিধি লঙ্ঘন, ভোট জালিয়াতির আশঙ্কা এবং ব্যালট পেপারে বিভ্রান্তিকর নির্দেশনার অভিযোগ উঠেছে, যা নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ
ছাত্রদল ও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি (বাগছাস) সমর্থিত প্রার্থীরা ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন। অভিযোগে বলা হয়, শিবির সমর্থকরা ভোটগ্রহণ চলাকালে বিভিন্ন হলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে লিফলেট, পোস্টার এবং হ্যান্ডবিল বিতরণ করেছেন, যা নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলে ছাত্রশিবির সভাপতি মুহিবুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে, তিনি ভোর ৬টার কিছু পরে গেস্টরুমে যাওয়ার কথা বলে হলে প্রবেশ করেন এবং প্রায় এক ঘণ্টা একটি কক্ষে অবস্থান করেন। এই ঘটনা ছাত্রদল নেতারা সন্দেহজনক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
এছাড়া, ২১ নং হলে সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক প্রার্থী মতিউর রহমান অভিযোগ করেন, “কেন্দ্রের দরজায় শিবির সমর্থকদের লিফলেটসহ হাতেনাতে পাওয়া গেছে। বাগবিতণ্ডার সময় তাদের একজন লিফলেট নিয়ে পালিয়ে যায়। ঘটনাটি ভিডিওতে ধরা পড়েছে। প্রভোস্ট বোরহান স্যারের সামনে প্রতিবাদ জানালে তারা মব সৃষ্টির চেষ্টা করে এবং পরে অনলাইনে প্রোপাগাণ্ডা ছড়ায়।”
বাগছাস সমর্থিত জিএস প্রার্থী তৌহিদ সিয়াম আরও জানান, “শিবির সমর্থিত রবীন্দ্রনাথ হলের তথ্য ও গ্রন্থাগার সম্পাদক প্রার্থী রাশেদুল ইসলাম লিখন এবং জাকসুর শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক প্রার্থী আবু উবায়দা ওসামাকে প্রচারণাপত্র বিতরণের সময় হাতেনাতে ধরা হয়েছে। আমরা বিভিন্ন হলে পোস্টার ও হ্যান্ডবিলসহ তাদের ধরেছি এবং এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে লিখিত অভিযোগ দায়ের করবো।”
ছাত্রশিবির সমর্থিত ভিপি প্রার্থী আরিফ উল্লাহ এসব অভিযোগের জবাবে বলেন, “আমরা শুধুমাত্র ২১ নং হলে প্রভোস্টের অনুমতি নিয়ে লিফলেট বিতরণ করেছি। অভিযোগ উঠার পর আমরা তা অবিলম্বে বন্ধ করে দিয়েছি।” নির্বাচন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার জানান, “আচরণবিধি লঙ্ঘনকারী যে কোনো দল বা ব্যক্তির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ভোট গণনা মেশিন নিয়ে বিতর্ক
ছাত্রদল সমর্থিত জিএস প্রার্থী তানজিলা হোসাইন বৈশাখী ভোট গণনার মেশিন নিয়ে গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন। তিনি দাবি করেন, “একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি থেকে ভোট গণনার মেশিন কেনা হয়েছে, যা নিয়ে ভোট কারচুপির সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছি।” তিনি আরও বলেন, “নির্বাচন কমিশন পরে জানিয়েছে যে মেশিনে ভোট গণনা না করে এনালগ (হাতে-কলমে) পদ্ধতিতে গণনা করা হবে।”
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনিরুজ্জামান বৃহস্পতিবার সকালে এক বিজ্ঞপ্তিতে নিশ্চিত করেছেন, “জাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোট গণনা ম্যানুয়ালি সম্পন্ন করা হবে। এ বিষয়ে সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।” তিনি আরও জানান, ভোটারদের মধ্যে আস্থা বজায় রাখতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তানজিলা আরও অভিযোগ করেন, ভোটারদের আইডি কার্ডের মেয়াদ বাড়ানো এবং রিনিউ করার জটিলতার কারণে নারী শিক্ষার্থীদের হলে নির্বাচনী আমেজ কম ছিল।
ব্যালট পেপারে বিভ্রান্তি
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হল সংসদ নির্বাচনে ব্যালট পেপারে বিভ্রান্তিকর নির্দেশনার অভিযোগ উঠেছে। নির্বাচনী নিয়ম অনুযায়ী, কার্যকরী সদস্য পদে একজন ভোটার তিনজন প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন। কিন্তু ব্যালট পেপারে নির্দেশনায় উল্লেখ ছিল, একজন প্রার্থীর পাশে টিক চিহ্ন দিতে হবে। এই ভুল নির্দেশনার কারণে ভোটারদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয় এবং অনেকে সঠিকভাবে ভোট দিতে না পারার আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
হলের পোলিং কর্মকর্তা উজ্জ্বল কুমার মণ্ডল বলেন, “বিষয়টি আমাদের নজরে আসার পরপরই নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করা হয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের স্পষ্টভাবে জানিয়েছি যে তারা নিয়ম অনুযায়ী তিনজন প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন।” তিনি আরও জানান, ভোটারদের সুবিধার্থে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে মৌখিকভাবে এই নির্দেশনা বারবার দেওয়া হচ্ছে।
ফজিলতুন্নেছা হলে ভোটগ্রহণ স্বাভাবিক
ফজিলতুন্নেছা হলে ভোট কারচুপির অভিযোগে কিছুক্ষণের জন্য ভোটগ্রহণ বন্ধ ছিল। নির্বাচন কমিশনার এবং ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক মো. মনিরুজ্জামান দুপুরে জানান, “কিছু ভুল বোঝাবুঝির কারণে ফজিলতুন্নেছা হলে ভোটগ্রহণ সাময়িকভাবে বন্ধ ছিল। তবে এখন ভোটগ্রহণ স্বাভাবিক রয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “শঙ্কা সব জায়গায় থাকে, তবে আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে কাজ করছি।”
এর আগে, ছাত্রদলের এক ভিপি প্রার্থী ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করায় নারী শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এই ঘটনায় শিবির সমর্থিত জিএস প্রার্থীসহ অন্যান্য প্রার্থীরাও সঙ্কা প্রকাশ করেন। নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে তদন্ত করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেছে।
বঙ্গমাতা ও জাহানারা ইমাম হলের অভিযোগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (জাবিসাস) সভাপতি মেহেদী মামুন বঙ্গমাতা হলে পার্মানেন্ট মার্কার ব্যবহার নিয়ে অভিযোগের বিষয়ে বলেন, “এটি ভোট জালিয়াতি নয়, বরং সব হলেই এমন সমস্যা দেখা গেছে। হলের শিক্ষার্থীরা এটি নিশ্চিত করেছে।” তবে জাহানারা ইমাম হলে ছাত্রশিবিরের একজন প্রার্থীকে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হলেও ছাত্রদলের একজন প্রার্থীকে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগ অস্বীকার করে গার্ড ফজলুল হক বলেন, “কাউকে বাধা দেওয়া হয়নি। সিসিটিভি ফুটেজ দেখানোর জন্য প্রস্তুত আছি।” মেহেদী মামুন আরও জানান, ২১ নং হলে একজন এনসিপি নেতার দীর্ঘক্ষণ অবস্থানের অভিযোগ উঠেছে, তবে অভিযোগগুলোর মধ্যে গঠনমূলকের চেয়ে দ্বান্দ্বিক ও অস্পষ্ট অভিযোগ বেশি।
নির্বাচন কমিশনের প্রতিক্রিয়া
নির্বাচন কমিশন সকল অভিযোগের বিষয়ে তৎপর রয়েছে। অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার বলেন, “আমরা নিরপেক্ষভাবে কাজ করছি। যে কেউ আচরণবিধি লঙ্ঘন করুক, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” নির্বাচন কমিশন ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া সুষ্ঠু রাখতে বিভিন্ন হলে নজরদারি বাড়িয়েছে এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে। ভোটগ্রহণ বিকাল ৫টা পর্যন্ত চলবে, এবং ফলাফল ঘোষণার জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
এই নির্বাচন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হলেও, অভিযোগ এবং বিতর্ক নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন-২০২৫ বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়েছে। দীর্ঘ ৩৩ বছর পর অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে মোট ১১,৭৪৩ জন ভোটার অংশগ্রহণ করছেন, যার মধ্যে ছাত্রী ভোটার ৫,৭২৮ জন এবং ছাত্র ভোটার ৬,০১৫ জন। কেন্দ্রীয় সংসদের ২৫টি পদের জন্য ১৭৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে ভোটগ্রহণ চলাকালে আচরণবিধি লঙ্ঘন, ভোট জালিয়াতির আশঙ্কা এবং ব্যালট পেপারে বিভ্রান্তিকর নির্দেশনার অভিযোগ উঠেছে, যা নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ
ছাত্রদল ও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি (বাগছাস) সমর্থিত প্রার্থীরা ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন। অভিযোগে বলা হয়, শিবির সমর্থকরা ভোটগ্রহণ চলাকালে বিভিন্ন হলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে লিফলেট, পোস্টার এবং হ্যান্ডবিল বিতরণ করেছেন, যা নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলে ছাত্রশিবির সভাপতি মুহিবুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে, তিনি ভোর ৬টার কিছু পরে গেস্টরুমে যাওয়ার কথা বলে হলে প্রবেশ করেন এবং প্রায় এক ঘণ্টা একটি কক্ষে অবস্থান করেন। এই ঘটনা ছাত্রদল নেতারা সন্দেহজনক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
এছাড়া, ২১ নং হলে সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক প্রার্থী মতিউর রহমান অভিযোগ করেন, “কেন্দ্রের দরজায় শিবির সমর্থকদের লিফলেটসহ হাতেনাতে পাওয়া গেছে। বাগবিতণ্ডার সময় তাদের একজন লিফলেট নিয়ে পালিয়ে যায়। ঘটনাটি ভিডিওতে ধরা পড়েছে। প্রভোস্ট বোরহান স্যারের সামনে প্রতিবাদ জানালে তারা মব সৃষ্টির চেষ্টা করে এবং পরে অনলাইনে প্রোপাগাণ্ডা ছড়ায়।”
বাগছাস সমর্থিত জিএস প্রার্থী তৌহিদ সিয়াম আরও জানান, “শিবির সমর্থিত রবীন্দ্রনাথ হলের তথ্য ও গ্রন্থাগার সম্পাদক প্রার্থী রাশেদুল ইসলাম লিখন এবং জাকসুর শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক প্রার্থী আবু উবায়দা ওসামাকে প্রচারণাপত্র বিতরণের সময় হাতেনাতে ধরা হয়েছে। আমরা বিভিন্ন হলে পোস্টার ও হ্যান্ডবিলসহ তাদের ধরেছি এবং এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে লিখিত অভিযোগ দায়ের করবো।”
ছাত্রশিবির সমর্থিত ভিপি প্রার্থী আরিফ উল্লাহ এসব অভিযোগের জবাবে বলেন, “আমরা শুধুমাত্র ২১ নং হলে প্রভোস্টের অনুমতি নিয়ে লিফলেট বিতরণ করেছি। অভিযোগ উঠার পর আমরা তা অবিলম্বে বন্ধ করে দিয়েছি।” নির্বাচন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার জানান, “আচরণবিধি লঙ্ঘনকারী যে কোনো দল বা ব্যক্তির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ভোট গণনা মেশিন নিয়ে বিতর্ক
ছাত্রদল সমর্থিত জিএস প্রার্থী তানজিলা হোসাইন বৈশাখী ভোট গণনার মেশিন নিয়ে গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন। তিনি দাবি করেন, “একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি থেকে ভোট গণনার মেশিন কেনা হয়েছে, যা নিয়ে ভোট কারচুপির সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছি।” তিনি আরও বলেন, “নির্বাচন কমিশন পরে জানিয়েছে যে মেশিনে ভোট গণনা না করে এনালগ (হাতে-কলমে) পদ্ধতিতে গণনা করা হবে।”
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনিরুজ্জামান বৃহস্পতিবার সকালে এক বিজ্ঞপ্তিতে নিশ্চিত করেছেন, “জাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোট গণনা ম্যানুয়ালি সম্পন্ন করা হবে। এ বিষয়ে সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।” তিনি আরও জানান, ভোটারদের মধ্যে আস্থা বজায় রাখতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তানজিলা আরও অভিযোগ করেন, ভোটারদের আইডি কার্ডের মেয়াদ বাড়ানো এবং রিনিউ করার জটিলতার কারণে নারী শিক্ষার্থীদের হলে নির্বাচনী আমেজ কম ছিল।
ব্যালট পেপারে বিভ্রান্তি
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হল সংসদ নির্বাচনে ব্যালট পেপারে বিভ্রান্তিকর নির্দেশনার অভিযোগ উঠেছে। নির্বাচনী নিয়ম অনুযায়ী, কার্যকরী সদস্য পদে একজন ভোটার তিনজন প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন। কিন্তু ব্যালট পেপারে নির্দেশনায় উল্লেখ ছিল, একজন প্রার্থীর পাশে টিক চিহ্ন দিতে হবে। এই ভুল নির্দেশনার কারণে ভোটারদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয় এবং অনেকে সঠিকভাবে ভোট দিতে না পারার আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
হলের পোলিং কর্মকর্তা উজ্জ্বল কুমার মণ্ডল বলেন, “বিষয়টি আমাদের নজরে আসার পরপরই নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করা হয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের স্পষ্টভাবে জানিয়েছি যে তারা নিয়ম অনুযায়ী তিনজন প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন।” তিনি আরও জানান, ভোটারদের সুবিধার্থে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে মৌখিকভাবে এই নির্দেশনা বারবার দেওয়া হচ্ছে।
ফজিলতুন্নেছা হলে ভোটগ্রহণ স্বাভাবিক
ফজিলতুন্নেছা হলে ভোট কারচুপির অভিযোগে কিছুক্ষণের জন্য ভোটগ্রহণ বন্ধ ছিল। নির্বাচন কমিশনার এবং ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক মো. মনিরুজ্জামান দুপুরে জানান, “কিছু ভুল বোঝাবুঝির কারণে ফজিলতুন্নেছা হলে ভোটগ্রহণ সাময়িকভাবে বন্ধ ছিল। তবে এখন ভোটগ্রহণ স্বাভাবিক রয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “শঙ্কা সব জায়গায় থাকে, তবে আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে কাজ করছি।”
এর আগে, ছাত্রদলের এক ভিপি প্রার্থী ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করায় নারী শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এই ঘটনায় শিবির সমর্থিত জিএস প্রার্থীসহ অন্যান্য প্রার্থীরাও সঙ্কা প্রকাশ করেন। নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে তদন্ত করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেছে।
বঙ্গমাতা ও জাহানারা ইমাম হলের অভিযোগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (জাবিসাস) সভাপতি মেহেদী মামুন বঙ্গমাতা হলে পার্মানেন্ট মার্কার ব্যবহার নিয়ে অভিযোগের বিষয়ে বলেন, “এটি ভোট জালিয়াতি নয়, বরং সব হলেই এমন সমস্যা দেখা গেছে। হলের শিক্ষার্থীরা এটি নিশ্চিত করেছে।” তবে জাহানারা ইমাম হলে ছাত্রশিবিরের একজন প্রার্থীকে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হলেও ছাত্রদলের একজন প্রার্থীকে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগ অস্বীকার করে গার্ড ফজলুল হক বলেন, “কাউকে বাধা দেওয়া হয়নি। সিসিটিভি ফুটেজ দেখানোর জন্য প্রস্তুত আছি।” মেহেদী মামুন আরও জানান, ২১ নং হলে একজন এনসিপি নেতার দীর্ঘক্ষণ অবস্থানের অভিযোগ উঠেছে, তবে অভিযোগগুলোর মধ্যে গঠনমূলকের চেয়ে দ্বান্দ্বিক ও অস্পষ্ট অভিযোগ বেশি।
নির্বাচন কমিশনের প্রতিক্রিয়া
নির্বাচন কমিশন সকল অভিযোগের বিষয়ে তৎপর রয়েছে। অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার বলেন, “আমরা নিরপেক্ষভাবে কাজ করছি। যে কেউ আচরণবিধি লঙ্ঘন করুক, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” নির্বাচন কমিশন ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া সুষ্ঠু রাখতে বিভিন্ন হলে নজরদারি বাড়িয়েছে এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে। ভোটগ্রহণ বিকাল ৫টা পর্যন্ত চলবে, এবং ফলাফল ঘোষণার জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
এই নির্বাচন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হলেও, অভিযোগ এবং বিতর্ক নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।