জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের সময় শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ হলে ভোটগ্রহণ প্রায় এক ঘণ্টা স্থগিত থাকার ঘটনা ঘটেছে।
এছাড়া, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল থেকে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতিকে আটক করা হয়েছে। অতিরিক্ত ব্যালট পেপার সরবরাহের অভিযোগ এবং ভোটার তালিকার ত্রুটি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ হলে ভোট স্থগিত ও শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ
বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ হলে ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, মাস্টার্সের ভোটার তালিকায় ভোটারদের ছবি থাকলেও অনার্সের ভোটার তালিকায় কোনো ছবি সংযুক্ত করা হয়নি। এই ত্রুটির কারণে ভোটারদের পরিচয় যাচাইয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়। এছাড়া, ভোট প্রদানের সময় বৃদ্ধাঙ্গুলিতে কালি দিয়ে দাগ না দেওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। ফলে, শিক্ষার্থী ও হল প্রশাসনের মধ্যে উত্তপ্ত বাকবিতণ্ডা হয়।
এক পোলিং অফিসার জানান, ভোটগ্রহণ শুরুর প্রথম ৩০ মিনিট ইনডেক্স কার্ডের ছবির সাথে ভোটারদের চেহারা মিলিয়ে ভোট গ্রহণ করা হচ্ছিল। কিন্তু ইনডেক্স কার্ডের ছবি পরিবর্তনযোগ্য হওয়ায় ভোটার শনাক্তকরণে সমস্যা দেখা দেয়।
তিনি আরও বলেন, “কালি ব্যবহার না করার বিষয়টি প্রথমদিকে উপেক্ষিত হলেও, শিক্ষার্থীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এটি সমাধানের চেষ্টা করা হয়েছে।” প্রায় এক ঘণ্টা স্থগিত থাকার পর ভোটগ্রহণ পুনরায় শুরু হয়, এবং বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক বলে জানা গেছে।
হল সূত্রে জানা যায়, এই হলে প্রায় একশত ভোট কাস্ট হলেও কালি ব্যবহার না করায় ভোটের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
অতিরিক্ত ব্যালট পেপার নিয়ে গুরুতর অভিযোগ
নির্বাচনে অংশ নেওয়া শিবির সমর্থিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী মো. আরিফ উল্লাহ গুরুতর অভিযোগ তুলে বলেন, শহীদ সালাম বরকত হলে ভোটার সংখ্যা ২৯৯ জন হলেও সেখানে ৪০০টি ব্যালট পেপার সরবরাহ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, “এই ১০১টি অতিরিক্ত ব্যালট পেপার কেন সরবরাহ করা হয়েছে, তার কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যা হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিতে পারেননি। আমরা জানতে পেরেছি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ১০% অতিরিক্ত ব্যালট পেপার ছাপিয়েছে, যা নাকি নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনার কথা বিবেচনা করে করা হয়েছে। কিন্তু এত বেশি সংখ্যক অতিরিক্ত ব্যালট পেপার নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে সন্দেহ তৈরি করছে।”
আরিফ উল্লাহ আরও অভিযোগ করেন, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী সকাল ৬টার পর ক্যাম্পাসে কোনো সাবেক শিক্ষার্থীর উপস্থিতি নিষিদ্ধ থাকলেও, বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রের আশপাশে সাবেক শিক্ষার্থীদের অবস্থান লক্ষ্য করা গেছে। তিনি বলেন, “এই বিষয়টি নির্বাচনের নিরপেক্ষতার উপর প্রভাব ফেলতে পারে এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করছে।” মীর মশাররফ হোসেন হলের রিটার্নিং অফিসার জানান, এই হলে প্রথম এক ঘণ্টায় ৩৫টি ভোট পড়েছে, তবে অতিরিক্ত ব্যালট পেপার নিয়ে অভিযোগের বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
ছাত্রদল নেতা আটক ও প্রশাসনের ব্যবস্থা
একই দিন সকাল ১১টার দিকে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের একটি কক্ষ থেকে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি হাফিজুর রহমান সোহানকে আটক করা হয়। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৬তম ব্যাচের (২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষ) ইংরেজি বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। আটকের সময় তিনি জানান, শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি হলে অবস্থান করছিলেন এবং আবাসিক হলে থাকার জন্য কোনো অনুমতি নেননি।
হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বলেন, “নির্বাচন চলাকালে আবাসিক হলে সাবেক শিক্ষার্থীর অবস্থান সম্পূর্ণভাবে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন। এ কারণে তাকে প্রক্টরিয়াল টিমের হাতে হস্তান্তর করা হয়েছে।” বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম জানান, “আমরা তাকে আনার জন্য সিকিউরিটি গার্ড পাঠিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
সূত্র জানায়, আটকের পর হাফিজুর রহমান সোহানকে প্রক্টরিয়াল বডির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে, এবং তার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে।
নির্বাচনী পরিস্থিতি ও প্রশাসনের ভূমিকা
নির্বাচনের সময় ভোটার তালিকার ত্রুটি, কালি ব্যবহারে অবহেলা, অতিরিক্ত ব্যালট পেপার, এবং সাবেক শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ ও উদ্বেগ বিরাজ করছে। বিশেষ করে, অতিরিক্ত ব্যালট পেপার সরবরাহের বিষয়টি নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বা নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে, শিক্ষার্থীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ভোটকেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
নির্বাচনী পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন কী পদক্ষেপ নেয়, তা নিয়ে শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি নিবদ্ধ রয়েছে। পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহের উপর নির্ভর করে এই নির্বাচনের ফলাফল এবং এর গ্রহণযোগ্যতা নির্ধারিত হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের সময় শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ হলে ভোটগ্রহণ প্রায় এক ঘণ্টা স্থগিত থাকার ঘটনা ঘটেছে।
এছাড়া, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল থেকে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতিকে আটক করা হয়েছে। অতিরিক্ত ব্যালট পেপার সরবরাহের অভিযোগ এবং ভোটার তালিকার ত্রুটি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ হলে ভোট স্থগিত ও শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ
বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ হলে ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, মাস্টার্সের ভোটার তালিকায় ভোটারদের ছবি থাকলেও অনার্সের ভোটার তালিকায় কোনো ছবি সংযুক্ত করা হয়নি। এই ত্রুটির কারণে ভোটারদের পরিচয় যাচাইয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়। এছাড়া, ভোট প্রদানের সময় বৃদ্ধাঙ্গুলিতে কালি দিয়ে দাগ না দেওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। ফলে, শিক্ষার্থী ও হল প্রশাসনের মধ্যে উত্তপ্ত বাকবিতণ্ডা হয়।
এক পোলিং অফিসার জানান, ভোটগ্রহণ শুরুর প্রথম ৩০ মিনিট ইনডেক্স কার্ডের ছবির সাথে ভোটারদের চেহারা মিলিয়ে ভোট গ্রহণ করা হচ্ছিল। কিন্তু ইনডেক্স কার্ডের ছবি পরিবর্তনযোগ্য হওয়ায় ভোটার শনাক্তকরণে সমস্যা দেখা দেয়।
তিনি আরও বলেন, “কালি ব্যবহার না করার বিষয়টি প্রথমদিকে উপেক্ষিত হলেও, শিক্ষার্থীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এটি সমাধানের চেষ্টা করা হয়েছে।” প্রায় এক ঘণ্টা স্থগিত থাকার পর ভোটগ্রহণ পুনরায় শুরু হয়, এবং বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক বলে জানা গেছে।
হল সূত্রে জানা যায়, এই হলে প্রায় একশত ভোট কাস্ট হলেও কালি ব্যবহার না করায় ভোটের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
অতিরিক্ত ব্যালট পেপার নিয়ে গুরুতর অভিযোগ
নির্বাচনে অংশ নেওয়া শিবির সমর্থিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী মো. আরিফ উল্লাহ গুরুতর অভিযোগ তুলে বলেন, শহীদ সালাম বরকত হলে ভোটার সংখ্যা ২৯৯ জন হলেও সেখানে ৪০০টি ব্যালট পেপার সরবরাহ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, “এই ১০১টি অতিরিক্ত ব্যালট পেপার কেন সরবরাহ করা হয়েছে, তার কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যা হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিতে পারেননি। আমরা জানতে পেরেছি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ১০% অতিরিক্ত ব্যালট পেপার ছাপিয়েছে, যা নাকি নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনার কথা বিবেচনা করে করা হয়েছে। কিন্তু এত বেশি সংখ্যক অতিরিক্ত ব্যালট পেপার নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে সন্দেহ তৈরি করছে।”
আরিফ উল্লাহ আরও অভিযোগ করেন, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী সকাল ৬টার পর ক্যাম্পাসে কোনো সাবেক শিক্ষার্থীর উপস্থিতি নিষিদ্ধ থাকলেও, বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রের আশপাশে সাবেক শিক্ষার্থীদের অবস্থান লক্ষ্য করা গেছে। তিনি বলেন, “এই বিষয়টি নির্বাচনের নিরপেক্ষতার উপর প্রভাব ফেলতে পারে এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করছে।” মীর মশাররফ হোসেন হলের রিটার্নিং অফিসার জানান, এই হলে প্রথম এক ঘণ্টায় ৩৫টি ভোট পড়েছে, তবে অতিরিক্ত ব্যালট পেপার নিয়ে অভিযোগের বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
ছাত্রদল নেতা আটক ও প্রশাসনের ব্যবস্থা
একই দিন সকাল ১১টার দিকে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের একটি কক্ষ থেকে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি হাফিজুর রহমান সোহানকে আটক করা হয়। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৬তম ব্যাচের (২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষ) ইংরেজি বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। আটকের সময় তিনি জানান, শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি হলে অবস্থান করছিলেন এবং আবাসিক হলে থাকার জন্য কোনো অনুমতি নেননি।
হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বলেন, “নির্বাচন চলাকালে আবাসিক হলে সাবেক শিক্ষার্থীর অবস্থান সম্পূর্ণভাবে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন। এ কারণে তাকে প্রক্টরিয়াল টিমের হাতে হস্তান্তর করা হয়েছে।” বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম জানান, “আমরা তাকে আনার জন্য সিকিউরিটি গার্ড পাঠিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
সূত্র জানায়, আটকের পর হাফিজুর রহমান সোহানকে প্রক্টরিয়াল বডির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে, এবং তার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে।
নির্বাচনী পরিস্থিতি ও প্রশাসনের ভূমিকা
নির্বাচনের সময় ভোটার তালিকার ত্রুটি, কালি ব্যবহারে অবহেলা, অতিরিক্ত ব্যালট পেপার, এবং সাবেক শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ ও উদ্বেগ বিরাজ করছে। বিশেষ করে, অতিরিক্ত ব্যালট পেপার সরবরাহের বিষয়টি নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বা নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে, শিক্ষার্থীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ভোটকেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
নির্বাচনী পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন কী পদক্ষেপ নেয়, তা নিয়ে শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি নিবদ্ধ রয়েছে। পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহের উপর নির্ভর করে এই নির্বাচনের ফলাফল এবং এর গ্রহণযোগ্যতা নির্ধারিত হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।