জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে ১০,৮৬১ জন ভোটারের মধ্যে ৭,৩৭৭ জন ভোট দিয়েছেন। সামগ্রিক ভোটার উপস্থিতির হার দাঁড়িয়েছে ৬৭.৭৬ শতাংশ।
দীর্ঘ ৩৩ বছর পর আয়োজিত এই নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিয়ে উচ্চ প্রত্যাশা থাকলেও বাস্তবে সেই তুলনায় ভোটকেন্দ্রে ভিড় কম ছিল।জাকসু নির্বাচন উপলক্ষ্যে তিন দিন ছুটি, নির্বাচন কমিশনের ‘প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা’, ভোটের আগের দিন রাতের কার্যক্রমসহ নানাবিধ কারণে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়নি বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।
হলগুলোর মধ্যে ভোটার উপস্থিতির হারে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য দেখা গেছে। শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হলে মোট ৯১৪ জন ভোটারের মধ্যে ৭৫২ জন ভোট দিয়েছেন, যা ৮২.২৮ শতাংশ। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলে ৯৯১ জন ভোটারের মধ্যে ৮০৭ জন ভোট দিয়েছেন, যা ৮১.৪৩ শতাংশ। এই দুটি হল সর্বোচ্চ ভোটার উপস্থিতি দেখিয়েছে।
আর, নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলে মোট ২৮৭ জন ভোটারের মধ্যে মাত্র ১৩৮ জন ভোট দিয়েছেন, যা ৪৮.০৮ শতাংশ, এবং এটি সর্বনিম্ন উপস্থিতি।
বেগম সুফিয়া কামাল হলে ৪৬০ জন ভোটারের মধ্যে ২৪৬ জন ভোট দিয়েছেন, যা ৫৩.৪৮ শতাংশ। শহীদ সালাম-বরকত হলে ৭৩.৯৩ শতাংশ, মাওলানা ভাসানী হলে ৭৩.৭০ শতাংশ, এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে ৭২.৯১ শতাংশ ভোট পড়েছে।
রোকেয়া হলে ৯৫৭ জন ভোটারের মধ্যে ৬৮০ জন ভোট দিয়েছেন, যা ৭১.০৫ শতাংশ। আল বেরুনী হলে ৭২.৫১ শতাংশ, কামাল উদ্দিন হলে ৭১.৭৭ শতাংশ, শহীদ রফিক-জব্বার হলে ৭১.৬৫ শতাংশ, এবং ১০ নং হলে ৭০.৪৩ শতাংশ ভোটার উপস্থিতি রেকর্ড করা হয়েছে।
ছাত্রী হলগুলোর মধ্যে ১৫ নং হলে ৬০.৬৬ শতাংশ এবং ফজিলাতুন্নেছা হলে ৬০.৪৪ শতাংশ ভোট পড়েছে।
যদিও পরিসংখ্যান বলছে দুই-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী ভোট দিয়েছেন, অনেকেই মনে করছেন বাস্তবে এই অংশগ্রহণ প্রত্যাশার তুলনায় হতাশাজনক। নির্বাচনের আগে থেকেই অনিয়ম, প্রশাসনের পক্ষপাতিত্ব এবং সহিংসতার অভিযোগ শিক্ষার্থীদের আস্থা ক্ষুণ্ন করেছে।
অভিযোগ উঠেছে ভোটকেন্দ্র দখল, ভুয়া ভোট, অতিরিক্ত ব্যালট ছাপানো এবং এজেন্টদের ওপর হামলার মতো ঘটনায় অনেকেই ভোটকেন্দ্রে যাননি।
এক শিক্ষার্থী বলেন, “আমরা ভোট দিতে চাইনি কারণ জানতাম ফলাফল আগেই ঠিক করা আছে।”
একাধিক সংগঠনের ভোট বর্জনের ঘোষণাও শেষের দিকে ভোটারদের নিরুৎসাহিত করেছে। পাঁচটি প্যানেল — ছাত্রদল, স্বতন্ত্র অঙ্গীকার পরিষদ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের আংশিক প্যানেল, সম্প্রীতির ঐক্য ও সংশপ্তক পর্ষদ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোয় তাদের সমর্থকদের বড় অংশ ভোট দেননি।
ছাত্রদল-সমর্থিত জিএস প্রার্থী তানজিলা হোসেন বৈশাখী বলেন, “এটি প্রহসনের নির্বাচন। শিক্ষার্থীদের প্রকৃত মতামতের কোনো প্রতিফলন ঘটছে না।” সংশপ্তক পর্ষদও অভিযোগ করেছে, ছাত্রী হলগুলোতে জাল ভোট, ব্যালট কম পাঠানো এবং বহিরাগতদের উপস্থিতি নির্বাচনের স্বচ্ছতা নষ্ট করেছে।
ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার আরেকটি কারণ ছিল ক্যাম্পাসে নিরাপত্তাহীনতা ও আতঙ্ক। কয়েকটি হলে নির্বাচনে অব্যবস্থাপনা, দায়িত্বশীলদের পক্ষপাতমূলক আচরণ এবং গার্ডদের সঙ্গে বিতণ্ডার ঘটনা শিক্ষার্থীদের মধ্যে শংকা ছড়িয়ে দেয়। সমন্বিত ঐক্য জোটের প্রার্থী হুসনী মোবারক অভিযোগ করেন, “ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা অনুমতি নিয়ে হলে প্রবেশ করা প্রার্থীদের ওপর মব সৃষ্টি করে পরিস্থিতি অশান্ত করেছে।” এই ধরনের ঘটনায় অনেকে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার সাহস পাননি।
তবে শুধু নির্বাচনী দিনের পরিস্থিতি নয়, দীর্ঘদিন ধরে গড়ে ওঠা আস্থাহীনতাও শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ কমিয়েছে বলে মন্তব্য করেছে শিক্ষার্থীরা। প্রচারণাকালে উত্তেজনা, পোস্টার ছেঁড়া, প্রার্থীদের হয়রানির মতো ঘটনা শিক্ষার্থীদের মনে সন্দেহ তৈরি করেছে। অনেকেই ভেবেছেন, ভোট দিলেও ফলাফল প্রভাবিত হবে না। বিশেষ করে ছাত্রী হলগুলোতে পোলিং এজেন্টদের বাধা দেওয়া ও বহিরাগতদের উপস্থিতি শিক্ষার্থীদের আরও ভীত করেছে। বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা হলের এক ছাত্রী বলেন, “আমরা ভোট দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু ভেতরে উত্তেজনা দেখে ভয়ে আর নির্বাচনী কেন্দ্রে ঢুকিনি।”
প্রশাসনের দুর্বল তথ্য ব্যবস্থাপনা ও নির্বাচন কমিশনের স্বচ্ছতার অভাবও শিক্ষার্থীদের আস্থা নষ্ট করেছে বলে মত দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। নির্বাচন কমিশন থেকে ভোটকেন্দ্র, নিরাপত্তা ও প্রক্রিয়া নিয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। ক্যাম্পাসে লাইভ সম্প্রচারের জন্য এলইডি স্ক্রিন বসানো হলেও তা কার্যকর ছিল না। অভিযোগগুলোও দ্রুত সমাধান হয়নি। ফলে অনেক শিক্ষার্থী মনে করেছেন, তাদের ভোট দেওয়া অর্থহীন।
সব মিলিয়ে, পরিসংখ্যান অনুযায়ী ভোটার উপস্থিতি সন্তোষজনক মনে হলেও বাস্তবে প্রত্যাশার তুলনায় তা ছিল হতাশাজনক। অনিয়ম, বর্জন, ভীতি ও আস্থাহীনতার কারণে এই নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। দীর্ঘ ৩৩ বছর পর অনুষ্ঠিত জাকসু নির্বাচন তাই গণতান্ত্রিক চর্চার কাঙ্ক্ষিত মানদণ্ডে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিমত অনেকের।
বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে ১০,৮৬১ জন ভোটারের মধ্যে ৭,৩৭৭ জন ভোট দিয়েছেন। সামগ্রিক ভোটার উপস্থিতির হার দাঁড়িয়েছে ৬৭.৭৬ শতাংশ।
দীর্ঘ ৩৩ বছর পর আয়োজিত এই নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিয়ে উচ্চ প্রত্যাশা থাকলেও বাস্তবে সেই তুলনায় ভোটকেন্দ্রে ভিড় কম ছিল।জাকসু নির্বাচন উপলক্ষ্যে তিন দিন ছুটি, নির্বাচন কমিশনের ‘প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা’, ভোটের আগের দিন রাতের কার্যক্রমসহ নানাবিধ কারণে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়নি বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।
হলগুলোর মধ্যে ভোটার উপস্থিতির হারে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য দেখা গেছে। শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হলে মোট ৯১৪ জন ভোটারের মধ্যে ৭৫২ জন ভোট দিয়েছেন, যা ৮২.২৮ শতাংশ। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলে ৯৯১ জন ভোটারের মধ্যে ৮০৭ জন ভোট দিয়েছেন, যা ৮১.৪৩ শতাংশ। এই দুটি হল সর্বোচ্চ ভোটার উপস্থিতি দেখিয়েছে।
আর, নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলে মোট ২৮৭ জন ভোটারের মধ্যে মাত্র ১৩৮ জন ভোট দিয়েছেন, যা ৪৮.০৮ শতাংশ, এবং এটি সর্বনিম্ন উপস্থিতি।
বেগম সুফিয়া কামাল হলে ৪৬০ জন ভোটারের মধ্যে ২৪৬ জন ভোট দিয়েছেন, যা ৫৩.৪৮ শতাংশ। শহীদ সালাম-বরকত হলে ৭৩.৯৩ শতাংশ, মাওলানা ভাসানী হলে ৭৩.৭০ শতাংশ, এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে ৭২.৯১ শতাংশ ভোট পড়েছে।
রোকেয়া হলে ৯৫৭ জন ভোটারের মধ্যে ৬৮০ জন ভোট দিয়েছেন, যা ৭১.০৫ শতাংশ। আল বেরুনী হলে ৭২.৫১ শতাংশ, কামাল উদ্দিন হলে ৭১.৭৭ শতাংশ, শহীদ রফিক-জব্বার হলে ৭১.৬৫ শতাংশ, এবং ১০ নং হলে ৭০.৪৩ শতাংশ ভোটার উপস্থিতি রেকর্ড করা হয়েছে।
ছাত্রী হলগুলোর মধ্যে ১৫ নং হলে ৬০.৬৬ শতাংশ এবং ফজিলাতুন্নেছা হলে ৬০.৪৪ শতাংশ ভোট পড়েছে।
যদিও পরিসংখ্যান বলছে দুই-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী ভোট দিয়েছেন, অনেকেই মনে করছেন বাস্তবে এই অংশগ্রহণ প্রত্যাশার তুলনায় হতাশাজনক। নির্বাচনের আগে থেকেই অনিয়ম, প্রশাসনের পক্ষপাতিত্ব এবং সহিংসতার অভিযোগ শিক্ষার্থীদের আস্থা ক্ষুণ্ন করেছে।
অভিযোগ উঠেছে ভোটকেন্দ্র দখল, ভুয়া ভোট, অতিরিক্ত ব্যালট ছাপানো এবং এজেন্টদের ওপর হামলার মতো ঘটনায় অনেকেই ভোটকেন্দ্রে যাননি।
এক শিক্ষার্থী বলেন, “আমরা ভোট দিতে চাইনি কারণ জানতাম ফলাফল আগেই ঠিক করা আছে।”
একাধিক সংগঠনের ভোট বর্জনের ঘোষণাও শেষের দিকে ভোটারদের নিরুৎসাহিত করেছে। পাঁচটি প্যানেল — ছাত্রদল, স্বতন্ত্র অঙ্গীকার পরিষদ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের আংশিক প্যানেল, সম্প্রীতির ঐক্য ও সংশপ্তক পর্ষদ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোয় তাদের সমর্থকদের বড় অংশ ভোট দেননি।
ছাত্রদল-সমর্থিত জিএস প্রার্থী তানজিলা হোসেন বৈশাখী বলেন, “এটি প্রহসনের নির্বাচন। শিক্ষার্থীদের প্রকৃত মতামতের কোনো প্রতিফলন ঘটছে না।” সংশপ্তক পর্ষদও অভিযোগ করেছে, ছাত্রী হলগুলোতে জাল ভোট, ব্যালট কম পাঠানো এবং বহিরাগতদের উপস্থিতি নির্বাচনের স্বচ্ছতা নষ্ট করেছে।
ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার আরেকটি কারণ ছিল ক্যাম্পাসে নিরাপত্তাহীনতা ও আতঙ্ক। কয়েকটি হলে নির্বাচনে অব্যবস্থাপনা, দায়িত্বশীলদের পক্ষপাতমূলক আচরণ এবং গার্ডদের সঙ্গে বিতণ্ডার ঘটনা শিক্ষার্থীদের মধ্যে শংকা ছড়িয়ে দেয়। সমন্বিত ঐক্য জোটের প্রার্থী হুসনী মোবারক অভিযোগ করেন, “ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা অনুমতি নিয়ে হলে প্রবেশ করা প্রার্থীদের ওপর মব সৃষ্টি করে পরিস্থিতি অশান্ত করেছে।” এই ধরনের ঘটনায় অনেকে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার সাহস পাননি।
তবে শুধু নির্বাচনী দিনের পরিস্থিতি নয়, দীর্ঘদিন ধরে গড়ে ওঠা আস্থাহীনতাও শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ কমিয়েছে বলে মন্তব্য করেছে শিক্ষার্থীরা। প্রচারণাকালে উত্তেজনা, পোস্টার ছেঁড়া, প্রার্থীদের হয়রানির মতো ঘটনা শিক্ষার্থীদের মনে সন্দেহ তৈরি করেছে। অনেকেই ভেবেছেন, ভোট দিলেও ফলাফল প্রভাবিত হবে না। বিশেষ করে ছাত্রী হলগুলোতে পোলিং এজেন্টদের বাধা দেওয়া ও বহিরাগতদের উপস্থিতি শিক্ষার্থীদের আরও ভীত করেছে। বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা হলের এক ছাত্রী বলেন, “আমরা ভোট দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু ভেতরে উত্তেজনা দেখে ভয়ে আর নির্বাচনী কেন্দ্রে ঢুকিনি।”
প্রশাসনের দুর্বল তথ্য ব্যবস্থাপনা ও নির্বাচন কমিশনের স্বচ্ছতার অভাবও শিক্ষার্থীদের আস্থা নষ্ট করেছে বলে মত দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। নির্বাচন কমিশন থেকে ভোটকেন্দ্র, নিরাপত্তা ও প্রক্রিয়া নিয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। ক্যাম্পাসে লাইভ সম্প্রচারের জন্য এলইডি স্ক্রিন বসানো হলেও তা কার্যকর ছিল না। অভিযোগগুলোও দ্রুত সমাধান হয়নি। ফলে অনেক শিক্ষার্থী মনে করেছেন, তাদের ভোট দেওয়া অর্থহীন।
সব মিলিয়ে, পরিসংখ্যান অনুযায়ী ভোটার উপস্থিতি সন্তোষজনক মনে হলেও বাস্তবে প্রত্যাশার তুলনায় তা ছিল হতাশাজনক। অনিয়ম, বর্জন, ভীতি ও আস্থাহীনতার কারণে এই নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। দীর্ঘ ৩৩ বছর পর অনুষ্ঠিত জাকসু নির্বাচন তাই গণতান্ত্রিক চর্চার কাঙ্ক্ষিত মানদণ্ডে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিমত অনেকের।