ভোট বর্জন ও পুনর্নির্বাচনের দাবি পাঁচ প্যানেলের
বৃহস্পতিবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বরে সংবাদ সম্মেলনে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন ৪টি প্যানেলের নেতারা। এর আগে একই অভিযোগ এনে বর্জনের ঘোষণা দেয় ছাত্রদল -সংবাদ
জাকসু নির্বাচনের ভোট গ্রহণে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে। তাদের অভিযোগের মধ্যে ছিল- পোলিং এজেন্টদের কাজ করতে না দেয়া, নারী হলে পুরুষ প্রার্থী প্রবেশ, ভোটার লিস্টে ছবি না থাকা, আঙ্গুলে কালির দাগ না দেয়া, ভোটার হওয়ার পরও তালিকায় নাম না থাকা ইত্যাদি। এছাড়াও ছিল অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা আর গাফিলতি। এসব অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জন ও পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের প্যানেলসহ ৫টি প্যানেলের প্রার্থীরা। এ চারটি প্যানেল হলো- ‘ছাত্রদল’, ‘সম্প্রীতির ঐক্য’, ‘সংশপ্তক পর্ষদ’, ‘স্বতন্ত্র অঙ্গীকার পরিষদ’ ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের আংশিক প্যানেল। বেশ কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী তাদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।
এবারের জাকসু নির্বাচনে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১টি হলকেন্দ্রে ২২৪টি বুথে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ১১ হাজার ৭৪৩ জন, যার মধ্যে ৫ হাজার ৭২৮ জন ছাত্রী এবং ৬ হাজার ১৫ জন ছাত্র। নির্বাচনে কেন্দ্রীয় সংসদের ২৫টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোট ১৭৮ জন প্রার্থী। এর মধ্যে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে ৯ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ৯ জন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (নারী) পদে ৬ জন এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (পুরুষ) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১০ জন প্রার্থী।
ছাত্রদলের অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ
বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদল সমর্থিত প্রার্থীরা অভিযোগ করেন, পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় প্রশাসন নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা বলেন, ভোটকেন্দ্র দখল, ভুয়া ভোট প্রদান, ভোটার তালিকায় ছবির অনুপস্থিতি এবং তাদের এজেন্টদের ওপর শারীরিক হামলার মতো ঘটনা একের পর এক ঘটেছে। এসব ঘটনার ফলে শিক্ষার্থীদের প্রকৃত রায় প্রকাশের সুযোগ বাধাগ্রস্ত হয়েছে, আর ফলাফল আগেই সাজানো ছিল বলে তাদের দাবি।
বিএনপি সমর্থিত প্যানেলের এক প্রার্থী বলেন, ‘নির্বাচনের দিন সকাল থেকেই আমাদের এজেন্টদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। যারা প্রবেশ করেছেন, তাদের অনেককে ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে এবং কয়েকজনকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। এতে ভোটের পরিবেশ পুরোপুরি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।’
চার প্যানেলের অনিয়মের অভিযোগ
ভোটগ্রহণে নানা অনিয়ম হয়েছে অভিযোগ তুলে বৃহস্পতিবার,(১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫) সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ভোট বর্জনের কথা জানান ৪টি
প্যানেলের নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সম্প্রীতির ঐক্য প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থী শরণ এহসান।
লিখিত বক্তব্যে শরণ এহসান বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে ব্যালট বাক্স নিয়ে হট্টগোল থেকে শুরু করে রাত ২টায় পোলিং এজেন্টের ঘোষণা দেয়া, তার ফলে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পোলিং এজেন্ট ম্যানেজ করতে না পারা, পোলিং এজেন্টদের কাজ করতে না দেয়া, নারী হলে পুরুষ প্রার্থী প্রবেশ, ভোটার লিস্টে ছবি না থাকা, আঙ্গুলে কালির দাগ না দেয়া, ভোটার হওয়ার পরও তালিকায় নাম না থাকা ইত্যাদি অনেক অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা আর গাফিলতির কারণে এ নির্বাচনকে ঘিরে অনেক সন্দেহ আর প্রশ্ন ওঠার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এ দায় কেবল এবং কেবলমাত্রই ব্যর্থ, অথর্ব এবং পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন কমিশন আর প্রশাসনের।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এই অনিয়মের নির্বাচনকে বয়কট করেছি এবং দ্রুত সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য প্রক্রিয়ায় নতুন করে তফসিল ঘোষণাসহ পুননির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি।’
শরণ এহসান তার বক্তব্যে বলেন, ‘পুরো নির্বাচনের ক্রেডিবিলিটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একটি সুষ্ঠু প্রক্রিয়ায় জাকসু নির্বাচন আমাদের আজীবনের দাবি। জাহাঙ্গীরনগরের আপামর শিক্ষার্থী অপেক্ষা করেছে এ নির্বাচনের জন্য। কিন্তু চূড়ান্ত রকমভাবে আমরা ক্ষুদ্ধ, হতাশ। আমরা এ অনিয়মের নির্বাচনকে বয়কট করছি এবং দ্রুত সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য প্রক্রিয়ায় পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি।’
জাকসু নির্বাচনে শেষ সময়ে ভোটারদের ভিড় বেড়ে যাওয়ায় নির্ধারিত সময়ের দুই ঘণ্টা পর জাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের দুই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হয়েছে। সন্ধ্যা ৭টার দিকে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হল ও তাজউদ্দিন আহমদ হলে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়।
দুই হলের রিটার্নিং কর্মকর্তারা জানান, বিকেল ৫টার মধ্যে যারা লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন, শুধু তাদের ভোটগ্রহণ করা হয়েছে। অতিরিক্ত সময়েও শুধুমাত্র ওই ভোটারদেরই ভোট নেয়া হয়।
ভোটগ্রহণ শেষে বিকেল ৫টার পর পুরাতন প্রশাসনিক ভবনে ব্যালট বাক্স আনা শুরু হয়। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মুরাদ চত্বর, পুরাতন প্রশাসনিক ভবন, বটতলা, প্রান্তিক গেইট, ডেইরি গেইট, ট্রান্সপোর্টসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
নির্বাচন ঘিরে চতুর্দিক থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল বেশ জোরদার। পুলিশের পাশাপাশি মোতায়েন ছিল- এপিবিএন, বিজিবি এবং র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সদস্যরা।
# ভোট পড়েছে ৬৭ শতাংশ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদে প্রায় ৬৭ শতাংশ ভোট পড়েছে। ২১ হলে ভোটগ্রহণ শেষে বৃহস্পতিবার রাতে জাকসু নির্বাচন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ মাফরুহী সাত্তার সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।
নির্বাচন ঘিরে চতুর্দিক থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল বেশ জোরদার। পুলিশের পাশাপাশি মোতায়েন ছিল- এপিবিএন, বিজিবি এবং র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সদস্যরা।
# প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
ছাত্রদল সমর্থিত নেতারা অভিযোগ করেন, এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে একাধিকবার লিখিত ও মৌখিকভাবে অভিযোগ জানানো হলেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। তারা দাবি করেন, অভিযোগ আমলে না নেয়া এবং বাস্তব পরিস্থিতি উপেক্ষা করেই প্রশাসন নির্বাচনী প্রক্রিয়া চালিয়ে গেছে। এ কারণে নির্বাচনকে তারা ‘প্রহসন ও কারচুপির আয়োজন’ বলে আখ্যায়িত করেন।
# প্রশাসনের অবস্থান
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অভিযোগগুলো অস্বীকার করেছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবেই সম্পন্ন হয়েছে। যে কোনো অভিযোগের ক্ষেত্রে প্রমাণ সাপেক্ষে তদন্ত করা হবে। আল বিরুনী হলের রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, ‘ভোটের দিন সামগ্রিকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ছিল। কোথাও বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।’
# নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে সরে আসার ঘোষণা তিন শিক্ষকের
ভোট শেষ হওয়ার আধ ঘণ্টা আগে নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে সরে আসার ঘোষণা দিয়েছেন তিনজন শিক্ষক। বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে জাকসু নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে সাংবাদিকদের কাছে নির্বাচন থেকে সরে আসার কথা জানান তারা।
শিক্ষক তিনজন হলেন- অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক শামীমা সুলতানা এবং অধ্যাপক নাহরিন ইসলাম খান।
নির্বাচনে ভোট দেয়ার পর হাতে কালির দাগ না থাকা, অতিরিক্ত ব্যালট প্রিন্ট করাসহ নানা অভিযোগ তুলে নির্বাচনের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা জানান তারা। তারা তিনজনই বিএনপিপন্থি শিক্ষক হিসেবে পরিচিত।
ভোট বর্জন ও পুনর্নির্বাচনের দাবি পাঁচ প্যানেলের
বৃহস্পতিবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বরে সংবাদ সম্মেলনে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন ৪টি প্যানেলের নেতারা। এর আগে একই অভিযোগ এনে বর্জনের ঘোষণা দেয় ছাত্রদল -সংবাদ
বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
জাকসু নির্বাচনের ভোট গ্রহণে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে। তাদের অভিযোগের মধ্যে ছিল- পোলিং এজেন্টদের কাজ করতে না দেয়া, নারী হলে পুরুষ প্রার্থী প্রবেশ, ভোটার লিস্টে ছবি না থাকা, আঙ্গুলে কালির দাগ না দেয়া, ভোটার হওয়ার পরও তালিকায় নাম না থাকা ইত্যাদি। এছাড়াও ছিল অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা আর গাফিলতি। এসব অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জন ও পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের প্যানেলসহ ৫টি প্যানেলের প্রার্থীরা। এ চারটি প্যানেল হলো- ‘ছাত্রদল’, ‘সম্প্রীতির ঐক্য’, ‘সংশপ্তক পর্ষদ’, ‘স্বতন্ত্র অঙ্গীকার পরিষদ’ ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের আংশিক প্যানেল। বেশ কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী তাদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।
এবারের জাকসু নির্বাচনে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১টি হলকেন্দ্রে ২২৪টি বুথে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ১১ হাজার ৭৪৩ জন, যার মধ্যে ৫ হাজার ৭২৮ জন ছাত্রী এবং ৬ হাজার ১৫ জন ছাত্র। নির্বাচনে কেন্দ্রীয় সংসদের ২৫টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোট ১৭৮ জন প্রার্থী। এর মধ্যে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে ৯ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ৯ জন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (নারী) পদে ৬ জন এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (পুরুষ) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১০ জন প্রার্থী।
ছাত্রদলের অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ
বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদল সমর্থিত প্রার্থীরা অভিযোগ করেন, পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় প্রশাসন নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা বলেন, ভোটকেন্দ্র দখল, ভুয়া ভোট প্রদান, ভোটার তালিকায় ছবির অনুপস্থিতি এবং তাদের এজেন্টদের ওপর শারীরিক হামলার মতো ঘটনা একের পর এক ঘটেছে। এসব ঘটনার ফলে শিক্ষার্থীদের প্রকৃত রায় প্রকাশের সুযোগ বাধাগ্রস্ত হয়েছে, আর ফলাফল আগেই সাজানো ছিল বলে তাদের দাবি।
বিএনপি সমর্থিত প্যানেলের এক প্রার্থী বলেন, ‘নির্বাচনের দিন সকাল থেকেই আমাদের এজেন্টদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। যারা প্রবেশ করেছেন, তাদের অনেককে ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে এবং কয়েকজনকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। এতে ভোটের পরিবেশ পুরোপুরি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।’
চার প্যানেলের অনিয়মের অভিযোগ
ভোটগ্রহণে নানা অনিয়ম হয়েছে অভিযোগ তুলে বৃহস্পতিবার,(১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫) সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ভোট বর্জনের কথা জানান ৪টি
প্যানেলের নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সম্প্রীতির ঐক্য প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থী শরণ এহসান।
লিখিত বক্তব্যে শরণ এহসান বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে ব্যালট বাক্স নিয়ে হট্টগোল থেকে শুরু করে রাত ২টায় পোলিং এজেন্টের ঘোষণা দেয়া, তার ফলে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পোলিং এজেন্ট ম্যানেজ করতে না পারা, পোলিং এজেন্টদের কাজ করতে না দেয়া, নারী হলে পুরুষ প্রার্থী প্রবেশ, ভোটার লিস্টে ছবি না থাকা, আঙ্গুলে কালির দাগ না দেয়া, ভোটার হওয়ার পরও তালিকায় নাম না থাকা ইত্যাদি অনেক অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা আর গাফিলতির কারণে এ নির্বাচনকে ঘিরে অনেক সন্দেহ আর প্রশ্ন ওঠার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এ দায় কেবল এবং কেবলমাত্রই ব্যর্থ, অথর্ব এবং পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন কমিশন আর প্রশাসনের।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এই অনিয়মের নির্বাচনকে বয়কট করেছি এবং দ্রুত সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য প্রক্রিয়ায় নতুন করে তফসিল ঘোষণাসহ পুননির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি।’
শরণ এহসান তার বক্তব্যে বলেন, ‘পুরো নির্বাচনের ক্রেডিবিলিটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একটি সুষ্ঠু প্রক্রিয়ায় জাকসু নির্বাচন আমাদের আজীবনের দাবি। জাহাঙ্গীরনগরের আপামর শিক্ষার্থী অপেক্ষা করেছে এ নির্বাচনের জন্য। কিন্তু চূড়ান্ত রকমভাবে আমরা ক্ষুদ্ধ, হতাশ। আমরা এ অনিয়মের নির্বাচনকে বয়কট করছি এবং দ্রুত সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য প্রক্রিয়ায় পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি।’
জাকসু নির্বাচনে শেষ সময়ে ভোটারদের ভিড় বেড়ে যাওয়ায় নির্ধারিত সময়ের দুই ঘণ্টা পর জাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের দুই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হয়েছে। সন্ধ্যা ৭টার দিকে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হল ও তাজউদ্দিন আহমদ হলে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়।
দুই হলের রিটার্নিং কর্মকর্তারা জানান, বিকেল ৫টার মধ্যে যারা লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন, শুধু তাদের ভোটগ্রহণ করা হয়েছে। অতিরিক্ত সময়েও শুধুমাত্র ওই ভোটারদেরই ভোট নেয়া হয়।
ভোটগ্রহণ শেষে বিকেল ৫টার পর পুরাতন প্রশাসনিক ভবনে ব্যালট বাক্স আনা শুরু হয়। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মুরাদ চত্বর, পুরাতন প্রশাসনিক ভবন, বটতলা, প্রান্তিক গেইট, ডেইরি গেইট, ট্রান্সপোর্টসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
নির্বাচন ঘিরে চতুর্দিক থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল বেশ জোরদার। পুলিশের পাশাপাশি মোতায়েন ছিল- এপিবিএন, বিজিবি এবং র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সদস্যরা।
# ভোট পড়েছে ৬৭ শতাংশ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদে প্রায় ৬৭ শতাংশ ভোট পড়েছে। ২১ হলে ভোটগ্রহণ শেষে বৃহস্পতিবার রাতে জাকসু নির্বাচন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ মাফরুহী সাত্তার সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।
নির্বাচন ঘিরে চতুর্দিক থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল বেশ জোরদার। পুলিশের পাশাপাশি মোতায়েন ছিল- এপিবিএন, বিজিবি এবং র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সদস্যরা।
# প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
ছাত্রদল সমর্থিত নেতারা অভিযোগ করেন, এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে একাধিকবার লিখিত ও মৌখিকভাবে অভিযোগ জানানো হলেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। তারা দাবি করেন, অভিযোগ আমলে না নেয়া এবং বাস্তব পরিস্থিতি উপেক্ষা করেই প্রশাসন নির্বাচনী প্রক্রিয়া চালিয়ে গেছে। এ কারণে নির্বাচনকে তারা ‘প্রহসন ও কারচুপির আয়োজন’ বলে আখ্যায়িত করেন।
# প্রশাসনের অবস্থান
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অভিযোগগুলো অস্বীকার করেছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবেই সম্পন্ন হয়েছে। যে কোনো অভিযোগের ক্ষেত্রে প্রমাণ সাপেক্ষে তদন্ত করা হবে। আল বিরুনী হলের রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, ‘ভোটের দিন সামগ্রিকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ছিল। কোথাও বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।’
# নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে সরে আসার ঘোষণা তিন শিক্ষকের
ভোট শেষ হওয়ার আধ ঘণ্টা আগে নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে সরে আসার ঘোষণা দিয়েছেন তিনজন শিক্ষক। বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে জাকসু নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে সাংবাদিকদের কাছে নির্বাচন থেকে সরে আসার কথা জানান তারা।
শিক্ষক তিনজন হলেন- অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক শামীমা সুলতানা এবং অধ্যাপক নাহরিন ইসলাম খান।
নির্বাচনে ভোট দেয়ার পর হাতে কালির দাগ না থাকা, অতিরিক্ত ব্যালট প্রিন্ট করাসহ নানা অভিযোগ তুলে নির্বাচনের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা জানান তারা। তারা তিনজনই বিএনপিপন্থি শিক্ষক হিসেবে পরিচিত।