শুক্রবার রাতের মধ্যেই জাকসুর ফল ঘোষণা করা সম্ভব বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন নির্বাচন কমিশনের সদস্য সচিব একে এম রাশিদুল আলম; কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি -সংগৃহীত
অব্যবস্থাপনায় প্রশ্নবিদ্ধ জাকসু নির্বাচনের পর ভোট গণনা গতকাল বৃহস্পতিবার সারারাত চলেও শেষ হয়নি। এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর বলা হয়েছিল, রাত ১১টার মধ্যে ভোট গণনা শেষ করে ফলাফল ঘোষণা করা হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। শুক্রবার সারাদিন গণনার পর বলা হচ্ছে শুক্রবার রাত ১১টার মধ্যে ফলাফল ঘোষণা সম্ভব হতে পারে। কিন্তু শুক্রবার রাতেও ফলাফল ঘোষণা হবে কিনা তা নিয়ে সন্দিহান কর্তৃপক্ষ। ভোট গণনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, শুক্রবার রাতেও ভোট গণনা শেষ করা যাবে কিনা বলা সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে ভোট গণনা এবং অন্যান্য প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে একজন রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং নির্বাচন কমিশনের এক সদস্য দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।
ভোট গণনায় দীর্ঘসূত্রতা
দুই নির্বাচন কর্মকর্তার পদত্যাগ
শিক্ষকের মৃত্যু
নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরুর পর যেমন নানা ধরনের অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল তেমনি ভোট গণনা শেষ করে ফলাফল ঘোষণার অপ্রত্যাশিত দেরি নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠেছে। হাতে ভোট গণনার পদ্ধতির সমালোচনা করেছেন ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আব্দুর রশিদ জিতু। দায়িত্বপ্রাপ্তরা কেউ কখন ফলাফল প্রকাশিত করা হবে তা সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলতে পারছেন না। এদিকে ভোট অপ্রত্যাশিত দেরি হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়।
জাকসু নির্বাচনের পুরো প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন বিষয় প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। একজন প্রার্থীর প্রার্থিতা নির্বাচনের ৪ দিন আগে বাতিল করা হয়েছে। অথচ প্রকাশিত খসড়া ও চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় তার নাম ছিল। পরে তার নাম বাদ দেয়া হয়।
ভোট গণনায় দেরি, যা বলেছেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা
জাকসু নির্বাচনের ভোট গ্রহণ গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত চলে। এরপর রাত সোয়া ১০টা থেকে শুরু হওয়া গণনা ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে হওয়ায় ধীরগতিতে এগোচ্ছে। এরপর প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর শুক্রবার রাত ১০টায়ও ভোট গণনার কাজ চলছিল। তেত্রিশ বছর পর অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনের ভোট গণনায় ধীরগতির কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ ও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও নির্বাচন কমিশনের সদস্য সচিব এ কে এম রাশিদুল আলম জানান, প্রাথমিকভাবে গণনায় বিলম্বের যেসব কারণ ছিল, তা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘লোকবল ও প্রস্তুতির ফলে রাত ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে সম্পূর্ণ গণনা শেষ করে বেসরকারিভাবে ফল প্রকাশ করা সম্ভব হবে।’ তবে রাতে তিনি জানিয়েছিলেন, শুক্রবার দুপুরের মধ্যে ফলাফল ঘোষণা করা সম্ভব হবে। কিন্তু দুপুরে গণনা শেষ হয়নি।
রাশিদুল আলম আরও জানান, ওএমআর মেশিনে গণনার প্রস্তুতি থাকলেও বেশ কয়েকজন প্রার্থীর আবেদনের পর ম্যানুয়াল পদ্ধতি অর্থাৎ হাতে গণনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, যা সময় বেশি নিচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ম্যানুয়াল গণনায় প্রাথমিক অভিজ্ঞতার অভাব, পোলিং এজেন্টদের অনুপস্থিতি এবং সিনেট ভবনে প্রথমে ৫টি টেবিলে (পরে ১০টি) গণনা শুরু হওয়ায় ধীরগতি লক্ষ্য করা গেছে। তবে সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হয়েছে।
সরে গেছেন ইসির এক সদস্য, এক রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ৪ শিক্ষক
জাকসু নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে সরে গেছেন নির্বাচন কমিশনার মাফরুহী সাত্তার। এছাড়াও সরে দাঁড়িয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা সুলতানা আকতার ও ৪ জন শিক্ষক।
অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ তুলে সরে দাঁড়িয়েছেন নির্বাচন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার। শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে সাংবাদিকদের ডেকে তিনি বলেন, বিভিন্ন অভিযোগের সুরাহা না করে ভোট গণনা চালিয়ে যাওয়ার প্রতিবাদে তিনি পদত্যাগ করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেন, ‘লেভেল প্ল্যায়িং ফিল্ড বলতে আমরা যা বুঝি, নির্বাচনে সেটি ছিল না। বিভিন্ন অনিয়ম হয়েছে, অভিযোগ উঠেছে। অথচ এসব অভিযোগের সুরাহা না করেই ভোট গণনা চালিয়ে যাওয়া হয়েছে।’ নির্বাচনসংক্রান্ত অনিয়ম ও ত্রুটির বিরুদ্ধে সরব হওয়ায় তাকে নানাভাবে চাপে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
এই ঘোষণা দেন। ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার বিএনপিপন্থি জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন।
নির্বাচনে ওএমআর পদ্ধতি ছাড়া ভোট গণনা করবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলের রিটার্নিং কর্মকর্তা সুলতানা আকতার। নির্বাচন কমিশন অফিসের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমার সহকর্মীর মৃত্যুর জন্য প্রশাসন দায়ী। যদি মেশিনে ভোট গণনা হতো হয়তো আমরা আমাদের সহকর্মীকে হারাতাম না। গত তিন দিন ধরে আমরা অমানুষিক পরিশ্রম করে যাচ্ছি। আমাদের কি পরিবার নেই? শারীরিক-মানসিক ক্লান্তি নেই?’
হঠাৎ অসুস্থ হয়ে শিক্ষকের মৃত্যু, শোকাবহ পরিবেশ
জাকসু নির্বাচনে ভোট গণনা কার্যক্রমে অংশ নিতে এসে অসুস্থ হয়ে শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে ভোট গণনার কক্ষের দরজার সামনে হঠাৎ পড়ে যান তিনি। পরে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও জাকসু নির্বাচনে প্রীতিলতা হলে পোলিং কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন।
এ বিষয়ে চারুকলা বিভাগের সভাপতি শামীম রেজা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি প্রীতিলতা হলে রিটার্নিং অফিসার ও জান্নাতুল ফেরদৌস পোলিং অফিসার হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোটগ্রহণ শেষে সন্ধ্যা ৬টার পর তিনি (জান্নাতুল) বাসায় চলে যান। সকাল সাড়ে সাতটা থেকে আটটার দিকে ভোট গণনার জন্য তিনি সিনেট ভবনে আসেন। এরপর তৃতীয় তলায় ভোট গণনার কক্ষের দরজার সামনে হঠাৎ পড়ে যান। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ভোট গণনার কাজের জন্য আমি সকালেই তাকে ফোন দিয়ে এনেছিলাম।’
জান্নাতুল ফেরদৌসের মৃত্যুর খবরে শুক্রবার সকালে ভোট গণনার কক্ষে শোকাবহ আবহ তৈরি হয়। নির্বাচনের দায়িত্বরত পোলিং কর্মকর্তাদের অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। ওই সময় নির্বাচন কমিশনার রেজোয়ানা করিম (স্নিগ্ধা) মাইকে বলেন, ‘এমন পরিস্থিতিতে আমি আপনাদের সবার কাছে অনুরোধ করব, ওনার (জান্নাতুল) জন্য দোয়া করবেন। এই মুহূর্তে আমরা যেহেতু একটা কাজের মধ্যে আছি, আমরা চাইলেও কাজটি অসম্পূর্ণ রাখতে পারছি না। আমাদের এই কাজটাও চালিয়ে যেতে হবে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ওই শিক্ষক যে হলে (প্রীতিলতা) দায়িত্বরত ছিলেন, সেটির ভোট গণনার প্রক্রিয়াটি এগিয়ে এনে দ্রুত শেষ করার ব্যবস্থা করছি।’
ভোটের ফল ফেইসবুকে, নির্বাচন কমিশনারের ক্ষোভ
জাকসুর ভোট গণনার কাজ তখনও চলছিল। সে সময় গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ফেইসবুকে বেশ কিছু হলের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। তখন পর্যন্ত ১৭টি হলের কিছু পদের অনানুষ্ঠানিক ফলাফল জানা গেছে। আর তা ফেইসবুকে প্রকাশিত হওয়ায় অসন্তোষ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার টিটো। তিনি বলেন, ভোট গণনা শেষ হওয়ার আগেই ফেইসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ফলাফল প্রকাশ অস্বাভাবিক। পরে তিনি তার দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন।
ছাত্রশিবির-সমর্থিত প্যানেলের দাবি
জাকসু নির্বাচনের ফল শুক্রবারের মধ্যেই ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন ইসলামী ছাত্রশিবির-সমর্থিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী মাজহারুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, ‘আমরা স্পষ্ট ভাষায় জানাতে চাই, আজকের (শুক্রবার) মধ্যে যদি ভোট গণনা শেষ না হয় এবং ফল ঘোষণা না করা হয়, আমরা সর্বোচ্চ অবস্থান নেব। কোনোভাবেই নির্বাচন বানচালের চেষ্টা সফল হতে দেয়া হবে না।’ শুক্রবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের সামনে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি অভিযোগ করেন, ‘বিএনপি-সমর্থিত শিক্ষক ও ছাত্রদল নেতারা নানা অজুহাতে ভোট গণনা প্রক্রিয়া স্থগিত করার ষড়যন্ত্র করছেন।’
শুক্রবার রাতের মধ্যেই জাকসুর ফল ঘোষণা করা সম্ভব বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন নির্বাচন কমিশনের সদস্য সচিব একে এম রাশিদুল আলম; কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি -সংগৃহীত
শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
অব্যবস্থাপনায় প্রশ্নবিদ্ধ জাকসু নির্বাচনের পর ভোট গণনা গতকাল বৃহস্পতিবার সারারাত চলেও শেষ হয়নি। এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর বলা হয়েছিল, রাত ১১টার মধ্যে ভোট গণনা শেষ করে ফলাফল ঘোষণা করা হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। শুক্রবার সারাদিন গণনার পর বলা হচ্ছে শুক্রবার রাত ১১টার মধ্যে ফলাফল ঘোষণা সম্ভব হতে পারে। কিন্তু শুক্রবার রাতেও ফলাফল ঘোষণা হবে কিনা তা নিয়ে সন্দিহান কর্তৃপক্ষ। ভোট গণনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, শুক্রবার রাতেও ভোট গণনা শেষ করা যাবে কিনা বলা সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে ভোট গণনা এবং অন্যান্য প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে একজন রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং নির্বাচন কমিশনের এক সদস্য দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।
ভোট গণনায় দীর্ঘসূত্রতা
দুই নির্বাচন কর্মকর্তার পদত্যাগ
শিক্ষকের মৃত্যু
নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরুর পর যেমন নানা ধরনের অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল তেমনি ভোট গণনা শেষ করে ফলাফল ঘোষণার অপ্রত্যাশিত দেরি নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠেছে। হাতে ভোট গণনার পদ্ধতির সমালোচনা করেছেন ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আব্দুর রশিদ জিতু। দায়িত্বপ্রাপ্তরা কেউ কখন ফলাফল প্রকাশিত করা হবে তা সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলতে পারছেন না। এদিকে ভোট অপ্রত্যাশিত দেরি হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়।
জাকসু নির্বাচনের পুরো প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন বিষয় প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। একজন প্রার্থীর প্রার্থিতা নির্বাচনের ৪ দিন আগে বাতিল করা হয়েছে। অথচ প্রকাশিত খসড়া ও চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় তার নাম ছিল। পরে তার নাম বাদ দেয়া হয়।
ভোট গণনায় দেরি, যা বলেছেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা
জাকসু নির্বাচনের ভোট গ্রহণ গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত চলে। এরপর রাত সোয়া ১০টা থেকে শুরু হওয়া গণনা ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে হওয়ায় ধীরগতিতে এগোচ্ছে। এরপর প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর শুক্রবার রাত ১০টায়ও ভোট গণনার কাজ চলছিল। তেত্রিশ বছর পর অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনের ভোট গণনায় ধীরগতির কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ ও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও নির্বাচন কমিশনের সদস্য সচিব এ কে এম রাশিদুল আলম জানান, প্রাথমিকভাবে গণনায় বিলম্বের যেসব কারণ ছিল, তা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘লোকবল ও প্রস্তুতির ফলে রাত ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে সম্পূর্ণ গণনা শেষ করে বেসরকারিভাবে ফল প্রকাশ করা সম্ভব হবে।’ তবে রাতে তিনি জানিয়েছিলেন, শুক্রবার দুপুরের মধ্যে ফলাফল ঘোষণা করা সম্ভব হবে। কিন্তু দুপুরে গণনা শেষ হয়নি।
রাশিদুল আলম আরও জানান, ওএমআর মেশিনে গণনার প্রস্তুতি থাকলেও বেশ কয়েকজন প্রার্থীর আবেদনের পর ম্যানুয়াল পদ্ধতি অর্থাৎ হাতে গণনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, যা সময় বেশি নিচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ম্যানুয়াল গণনায় প্রাথমিক অভিজ্ঞতার অভাব, পোলিং এজেন্টদের অনুপস্থিতি এবং সিনেট ভবনে প্রথমে ৫টি টেবিলে (পরে ১০টি) গণনা শুরু হওয়ায় ধীরগতি লক্ষ্য করা গেছে। তবে সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হয়েছে।
সরে গেছেন ইসির এক সদস্য, এক রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ৪ শিক্ষক
জাকসু নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে সরে গেছেন নির্বাচন কমিশনার মাফরুহী সাত্তার। এছাড়াও সরে দাঁড়িয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা সুলতানা আকতার ও ৪ জন শিক্ষক।
অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ তুলে সরে দাঁড়িয়েছেন নির্বাচন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার। শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে সাংবাদিকদের ডেকে তিনি বলেন, বিভিন্ন অভিযোগের সুরাহা না করে ভোট গণনা চালিয়ে যাওয়ার প্রতিবাদে তিনি পদত্যাগ করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেন, ‘লেভেল প্ল্যায়িং ফিল্ড বলতে আমরা যা বুঝি, নির্বাচনে সেটি ছিল না। বিভিন্ন অনিয়ম হয়েছে, অভিযোগ উঠেছে। অথচ এসব অভিযোগের সুরাহা না করেই ভোট গণনা চালিয়ে যাওয়া হয়েছে।’ নির্বাচনসংক্রান্ত অনিয়ম ও ত্রুটির বিরুদ্ধে সরব হওয়ায় তাকে নানাভাবে চাপে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
এই ঘোষণা দেন। ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার বিএনপিপন্থি জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন।
নির্বাচনে ওএমআর পদ্ধতি ছাড়া ভোট গণনা করবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলের রিটার্নিং কর্মকর্তা সুলতানা আকতার। নির্বাচন কমিশন অফিসের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমার সহকর্মীর মৃত্যুর জন্য প্রশাসন দায়ী। যদি মেশিনে ভোট গণনা হতো হয়তো আমরা আমাদের সহকর্মীকে হারাতাম না। গত তিন দিন ধরে আমরা অমানুষিক পরিশ্রম করে যাচ্ছি। আমাদের কি পরিবার নেই? শারীরিক-মানসিক ক্লান্তি নেই?’
হঠাৎ অসুস্থ হয়ে শিক্ষকের মৃত্যু, শোকাবহ পরিবেশ
জাকসু নির্বাচনে ভোট গণনা কার্যক্রমে অংশ নিতে এসে অসুস্থ হয়ে শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে ভোট গণনার কক্ষের দরজার সামনে হঠাৎ পড়ে যান তিনি। পরে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও জাকসু নির্বাচনে প্রীতিলতা হলে পোলিং কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন।
এ বিষয়ে চারুকলা বিভাগের সভাপতি শামীম রেজা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি প্রীতিলতা হলে রিটার্নিং অফিসার ও জান্নাতুল ফেরদৌস পোলিং অফিসার হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোটগ্রহণ শেষে সন্ধ্যা ৬টার পর তিনি (জান্নাতুল) বাসায় চলে যান। সকাল সাড়ে সাতটা থেকে আটটার দিকে ভোট গণনার জন্য তিনি সিনেট ভবনে আসেন। এরপর তৃতীয় তলায় ভোট গণনার কক্ষের দরজার সামনে হঠাৎ পড়ে যান। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ভোট গণনার কাজের জন্য আমি সকালেই তাকে ফোন দিয়ে এনেছিলাম।’
জান্নাতুল ফেরদৌসের মৃত্যুর খবরে শুক্রবার সকালে ভোট গণনার কক্ষে শোকাবহ আবহ তৈরি হয়। নির্বাচনের দায়িত্বরত পোলিং কর্মকর্তাদের অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। ওই সময় নির্বাচন কমিশনার রেজোয়ানা করিম (স্নিগ্ধা) মাইকে বলেন, ‘এমন পরিস্থিতিতে আমি আপনাদের সবার কাছে অনুরোধ করব, ওনার (জান্নাতুল) জন্য দোয়া করবেন। এই মুহূর্তে আমরা যেহেতু একটা কাজের মধ্যে আছি, আমরা চাইলেও কাজটি অসম্পূর্ণ রাখতে পারছি না। আমাদের এই কাজটাও চালিয়ে যেতে হবে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ওই শিক্ষক যে হলে (প্রীতিলতা) দায়িত্বরত ছিলেন, সেটির ভোট গণনার প্রক্রিয়াটি এগিয়ে এনে দ্রুত শেষ করার ব্যবস্থা করছি।’
ভোটের ফল ফেইসবুকে, নির্বাচন কমিশনারের ক্ষোভ
জাকসুর ভোট গণনার কাজ তখনও চলছিল। সে সময় গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ফেইসবুকে বেশ কিছু হলের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। তখন পর্যন্ত ১৭টি হলের কিছু পদের অনানুষ্ঠানিক ফলাফল জানা গেছে। আর তা ফেইসবুকে প্রকাশিত হওয়ায় অসন্তোষ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার টিটো। তিনি বলেন, ভোট গণনা শেষ হওয়ার আগেই ফেইসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ফলাফল প্রকাশ অস্বাভাবিক। পরে তিনি তার দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন।
ছাত্রশিবির-সমর্থিত প্যানেলের দাবি
জাকসু নির্বাচনের ফল শুক্রবারের মধ্যেই ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন ইসলামী ছাত্রশিবির-সমর্থিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী মাজহারুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, ‘আমরা স্পষ্ট ভাষায় জানাতে চাই, আজকের (শুক্রবার) মধ্যে যদি ভোট গণনা শেষ না হয় এবং ফল ঘোষণা না করা হয়, আমরা সর্বোচ্চ অবস্থান নেব। কোনোভাবেই নির্বাচন বানচালের চেষ্টা সফল হতে দেয়া হবে না।’ শুক্রবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের সামনে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি অভিযোগ করেন, ‘বিএনপি-সমর্থিত শিক্ষক ও ছাত্রদল নেতারা নানা অজুহাতে ভোট গণনা প্রক্রিয়া স্থগিত করার ষড়যন্ত্র করছেন।’