সাড়ে তিন দশক পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন। আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠেয় এ নির্বাচনকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের অন্যতম প্রধান দাবি হিসেবে আবারও সামনে এসেছে আবাসন সংকট। বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থীরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, নির্বাচিত হলে শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ তথ্যকণিকা অনুযায়ী, ১৯৫৩ সালের ৬ জুলাই রাজশাহী কলেজ, বড়কুঠিসহ বিভিন্ন স্থানে যাত্রা শুরু করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। শুরুতে শিক্ষার্থী ছিলেন মাত্র ১৬১ জন। ১৯৫৮ সালে মতিহারে স্থায়ী ক্যাম্পাস গড়ার উদ্যোগ নেওয়া হয় এবং ১৯৬৪ সালে ৭৫৩ একর জায়গাজুড়ে পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম শুরু হয়।
হল সংখ্যা বনাম শিক্ষার্থী
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ১২ অনুষদের আওতায় ৫৯টি বিভাগ ও ৬টি উচ্চতর গবেষণা ইনস্টিটিউট রয়েছে। শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার। তবে ১৭টি আবাসিক হল ও একটি আন্তর্জাতিক ডরমিটরিতে থাকার সুযোগ পাচ্ছেন মাত্র ৯ হাজার ৬৭৩ জন শিক্ষার্থী। অর্থাৎ কেবল ৩২ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন সুবিধা আছে।
ছেলেদের জন্য ১১টি এবং মেয়েদের জন্য ৬টি হল। আন্তর্জাতিক ডরমিটরিতে থাকেন বিদেশি শিক্ষার্থী ও এমফিল-পিএইচডি গবেষকেরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্কাইভস থেকে জানা যায়, ২০০০ সালে শিক্ষার্থী ছিলেন প্রায় ২১ হাজার, বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজারে। অর্থাৎ ২৫ বছরে শিক্ষার্থী বেড়েছে প্রায় ৯ হাজার। তবে এ সময়ে নতুন হল হয়েছে মাত্র তিনটি।
গত ২৫ বছরে ২৩টি নতুন বিভাগ, ৭টি অনুষদ এবং ৪টি ইনস্টিটিউট চালু হলেও আবাসন সমস্যা সমাধানে খুব বেশি পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
ছাত্রী হলে সংকট প্রকট
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়টি ছাত্রী হলে আসনসংকট সবচেয়ে তীব্র। প্রতিটি হলে গণরুম আছে, যেখানে গাদাগাদি করে থাকতে হয় শিক্ষার্থীদের। এতে পড়াশোনা ও বিশ্রাম — দুইই ব্যাহত হয়। রোকেয়া হলের এক শিক্ষার্থী জানান, মেসে থাকার মতো সামর্থ্য না থাকায় শিক্ষকদের সুপারিশে হলে আসন পেয়েছেন, কিন্তু সেখানে ঠাসাঠাসি করে থাকতে হচ্ছে।
বেগম খালেদা জিয়া হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শারমিন হামিদ জানান, তার হলে আসনসংখ্যা ১ হাজার ২০০ হলেও আসনসংকটে অর্ধেক শিক্ষার্থী জায়গা পান না। বাড়তি ১০০ ছাত্রীকে রাখতে গণরুমের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অন্য ছাত্রী হলগুলোর অবস্থাও একই রকম।
দখল ও অনিয়মের অভিযোগ
বিগত সরকারের শেষ মেয়াদে হলের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় বর্তমানে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের হাতে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হলে আসন পেতে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হতো সংগঠনটির নেতাদের। অনেকে নিয়মমাফিক আসন পেলেও তাদের নির্যাতন করে বের করে দেওয়া হতো। অনেক কক্ষ অছাত্র নেতা-কর্মীরা দখল করে রাখতেন।
তবে গত বছরের ৫ আগস্টের পর পরিস্থিতি কিছুটা বদলেছে বলে দাবি প্রশাসনের। এখন তাদের দাবি মেধার ভিত্তিতে আসন দেওয়া হচ্ছে।
নির্মাণে নতুন হল
২০১৮ সালে শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান ও শেখ হাসিনা হলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ২০২২ সালে নির্মাণকাজ শুরু হয়। কামারুজ্জামান হলের ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে, আগামী ডিসেম্বরে শিক্ষার্থীরা উঠতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এতে এক হাজার শিক্ষার্থী জায়গা পাবেন। আর শেখ হাসিনা হলের ৮০০ আসন থাকবে, এ পর্যন্ত ৬০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আগামী জুনে এটির নির্মাণ শেষ হবে বলে প্রত্যাশা।
প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতি
রাকসু নির্বাচন ঘিরে বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থীরা আবাসন সমস্যাকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছেন।
‘আধিপত্যবিরোধী ঐক্য’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী মেহেদী সজীব বলেন, ভর্তি হওয়ার পর থেকেই যেন সব শিক্ষার্থী হলে থাকতে পারেন — এ দাবিকে তারা গুরুত্ব দেবেন।
ছাত্রদল মনোনীত জিএস প্রার্থী নাফিউল ইসলাম (জীবন) বলেন, আবাসনের সুবিধা না থাকায় শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েন। তারা নির্বাচিত হলে নতুন হল নির্মাণের দাবি জানাবেন এবং যারা হলে থাকতে পারে না তাদের জন্য ভর্তুকি চালুর দাবি তুলবেন।
‘সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী তাসিন খান বলেন, নারী শিক্ষার্থীরা হলে আসন না পেয়ে বাইরে থাকতে বাধ্য হলে নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হয়। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এ বিষয়ে সরকারকে অবহিত করতে হবে।
শিবির–সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের জিএস প্রার্থী ফাহিম রেজা বলেন, আবাসনসংকট নিরসন না হওয়া পর্যন্ত প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের আবাসন ভাতা দিতে হবে। এই দাবি বাস্তবায়নে তারা প্রশাসনের ওপর চাপ সৃষ্টি করবেন।
শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সাড়ে তিন দশক পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন। আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠেয় এ নির্বাচনকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের অন্যতম প্রধান দাবি হিসেবে আবারও সামনে এসেছে আবাসন সংকট। বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থীরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, নির্বাচিত হলে শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ তথ্যকণিকা অনুযায়ী, ১৯৫৩ সালের ৬ জুলাই রাজশাহী কলেজ, বড়কুঠিসহ বিভিন্ন স্থানে যাত্রা শুরু করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। শুরুতে শিক্ষার্থী ছিলেন মাত্র ১৬১ জন। ১৯৫৮ সালে মতিহারে স্থায়ী ক্যাম্পাস গড়ার উদ্যোগ নেওয়া হয় এবং ১৯৬৪ সালে ৭৫৩ একর জায়গাজুড়ে পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম শুরু হয়।
হল সংখ্যা বনাম শিক্ষার্থী
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ১২ অনুষদের আওতায় ৫৯টি বিভাগ ও ৬টি উচ্চতর গবেষণা ইনস্টিটিউট রয়েছে। শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার। তবে ১৭টি আবাসিক হল ও একটি আন্তর্জাতিক ডরমিটরিতে থাকার সুযোগ পাচ্ছেন মাত্র ৯ হাজার ৬৭৩ জন শিক্ষার্থী। অর্থাৎ কেবল ৩২ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন সুবিধা আছে।
ছেলেদের জন্য ১১টি এবং মেয়েদের জন্য ৬টি হল। আন্তর্জাতিক ডরমিটরিতে থাকেন বিদেশি শিক্ষার্থী ও এমফিল-পিএইচডি গবেষকেরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্কাইভস থেকে জানা যায়, ২০০০ সালে শিক্ষার্থী ছিলেন প্রায় ২১ হাজার, বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজারে। অর্থাৎ ২৫ বছরে শিক্ষার্থী বেড়েছে প্রায় ৯ হাজার। তবে এ সময়ে নতুন হল হয়েছে মাত্র তিনটি।
গত ২৫ বছরে ২৩টি নতুন বিভাগ, ৭টি অনুষদ এবং ৪টি ইনস্টিটিউট চালু হলেও আবাসন সমস্যা সমাধানে খুব বেশি পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
ছাত্রী হলে সংকট প্রকট
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়টি ছাত্রী হলে আসনসংকট সবচেয়ে তীব্র। প্রতিটি হলে গণরুম আছে, যেখানে গাদাগাদি করে থাকতে হয় শিক্ষার্থীদের। এতে পড়াশোনা ও বিশ্রাম — দুইই ব্যাহত হয়। রোকেয়া হলের এক শিক্ষার্থী জানান, মেসে থাকার মতো সামর্থ্য না থাকায় শিক্ষকদের সুপারিশে হলে আসন পেয়েছেন, কিন্তু সেখানে ঠাসাঠাসি করে থাকতে হচ্ছে।
বেগম খালেদা জিয়া হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শারমিন হামিদ জানান, তার হলে আসনসংখ্যা ১ হাজার ২০০ হলেও আসনসংকটে অর্ধেক শিক্ষার্থী জায়গা পান না। বাড়তি ১০০ ছাত্রীকে রাখতে গণরুমের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অন্য ছাত্রী হলগুলোর অবস্থাও একই রকম।
দখল ও অনিয়মের অভিযোগ
বিগত সরকারের শেষ মেয়াদে হলের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় বর্তমানে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের হাতে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হলে আসন পেতে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হতো সংগঠনটির নেতাদের। অনেকে নিয়মমাফিক আসন পেলেও তাদের নির্যাতন করে বের করে দেওয়া হতো। অনেক কক্ষ অছাত্র নেতা-কর্মীরা দখল করে রাখতেন।
তবে গত বছরের ৫ আগস্টের পর পরিস্থিতি কিছুটা বদলেছে বলে দাবি প্রশাসনের। এখন তাদের দাবি মেধার ভিত্তিতে আসন দেওয়া হচ্ছে।
নির্মাণে নতুন হল
২০১৮ সালে শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান ও শেখ হাসিনা হলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ২০২২ সালে নির্মাণকাজ শুরু হয়। কামারুজ্জামান হলের ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে, আগামী ডিসেম্বরে শিক্ষার্থীরা উঠতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এতে এক হাজার শিক্ষার্থী জায়গা পাবেন। আর শেখ হাসিনা হলের ৮০০ আসন থাকবে, এ পর্যন্ত ৬০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আগামী জুনে এটির নির্মাণ শেষ হবে বলে প্রত্যাশা।
প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতি
রাকসু নির্বাচন ঘিরে বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থীরা আবাসন সমস্যাকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছেন।
‘আধিপত্যবিরোধী ঐক্য’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী মেহেদী সজীব বলেন, ভর্তি হওয়ার পর থেকেই যেন সব শিক্ষার্থী হলে থাকতে পারেন — এ দাবিকে তারা গুরুত্ব দেবেন।
ছাত্রদল মনোনীত জিএস প্রার্থী নাফিউল ইসলাম (জীবন) বলেন, আবাসনের সুবিধা না থাকায় শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েন। তারা নির্বাচিত হলে নতুন হল নির্মাণের দাবি জানাবেন এবং যারা হলে থাকতে পারে না তাদের জন্য ভর্তুকি চালুর দাবি তুলবেন।
‘সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী তাসিন খান বলেন, নারী শিক্ষার্থীরা হলে আসন না পেয়ে বাইরে থাকতে বাধ্য হলে নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হয়। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এ বিষয়ে সরকারকে অবহিত করতে হবে।
শিবির–সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের জিএস প্রার্থী ফাহিম রেজা বলেন, আবাসনসংকট নিরসন না হওয়া পর্যন্ত প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের আবাসন ভাতা দিতে হবে। এই দাবি বাস্তবায়নে তারা প্রশাসনের ওপর চাপ সৃষ্টি করবেন।