পথনকশা ঘোষণা, নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ২৭ নভেম্বর
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনের পথনকশা ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ২৭ নভেম্বর নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট ফেইসবুক গ্রুপ ও পেইজে শিক্ষার্থীদের মাঝে উচ্ছ্বাস লক্ষ করা গেছে। শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ অনশন কর্মসূচি দিলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রোডম্যাপ ঘোষণা করতে বাধ্য হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় আইনে জকসু না থাকায় নির্বাচন আয়োজন নিয়ে জটিলতা রয়েছে। শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সংবিধি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে যোগ করতে নীতিমালা তৈরি করে সেটি ইতোমধ্যে ইউজিসিতে পাঠানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানায়, শিক্ষার্থীদের মতামত নিয়ে নীতিমালা তৈরি করে সেটি ইতোমধ্যে ইউজিসিতে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। ইউজিসি, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও রাষ্ট্রপতি অনুমোদন দিলে বিশ্ববিদ্যালয় আইনে সেটি যুক্ত হবে এবং নির্বাচন আয়োজনে আর কোনো বাধা থাকবে না।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র মতে, সর্বশেষ ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮৭ সালে। সে নির্বাচনে যথাক্রমে ভিপি-জিএস হন সহোদর মো. আলমগীর শিকদার লোটন ও জাহাঙ্গীর সিকদার জোটন। এরপর গত ৩৮ বছরে ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। ২০০৫ সালে কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনে ছাত্র সংসদের আইন না থাকার অজুহাতে নির্বাচন আয়োজন করেনি প্রশাসন। কিন্তু, ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর গণঅভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষা হিসেবে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের জোর দাবি ওঠে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মাঝেও সে দাবি প্রতিফলিত হয়।
ছাত্র সংগঠন ও শিক্ষার্থীদের
মাঝে উচ্ছ্বাস
বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্রিয় ছাত্র সংগঠন ও শিক্ষার্থীদের মাঝে নির্বাচন নিয়ে কৌতুহল এবং উচ্ছ্বাস লক্ষ করা গেছে। কোন সংগঠনের কারা কোন পদে লড়বেন তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা হচ্ছে। দীর্ঘদিন পর জকসু অনুষ্ঠিত হওয়া এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ডামাডোল শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাসে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রার্থী হিসেবে যারা তরুণ এবং ক্লিন ইমেজের অধিকারী তাদেরকেই বেছে নিবেন তারা।
জীবনে প্রথমবার ভোট দিবেন জানিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সামিহা তাসনিম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমান অধ্যায়নরত শিক্ষার্থী হিসেবে জকসু তো আমার কাছে কোনো উৎসব থেকে কম কিছু নয়! বরং অনেকেরই তারুণ্যের প্রথম ভোট প্রদান তাও বিশ্ববিদ্যালয়েরও প্রথম নির্বাচনে, সত্যিই নিজেদের অনেক ভাগ্যবান মনে হচ্ছে। তবে এই নির্বাচন যেন সত্যিকার অর্থেই শিক্ষার্থী স্বার্থ রক্ষার উদ্দেশ্যকে ধারণ করে এটাই চাওয়া কেননা এখানের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরা অনেক প্রতিভাবান হওয়া সত্ত্বেও প্রশাসনের শিক্ষার্থী অধিকারের প্রতি দীর্ঘদিনের উদাসীনতা ও ব্যর্থতার কারণে তারা দিনের পর দিন পিছিয়ে পড়েছে আর ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছে। ধীরে ধীরেই হোক তবে আশা করছি, এই নির্বাচন এসব ভোগান্তির অবসান ঘটাবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. ইমরান হোসেন বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে জীবনে এই প্রথম জকসু নির্বাচন হতে যাচ্ছে- এটি আমাদের জন্য ঐতিহাসিক সুযোগ। দীর্ঘদিন পর জকসু নির্বাচন হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে। নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে গণতান্ত্রিক চর্চা ফিরে আসবে। সাংস্কৃতিক, ক্রীড়া ও অ্যাকাডেমিক কর্মকাণ্ডে নতুন প্রাণ সঞ্চার হবে। আমাদের প্রথম ও প্রধান চাহিদা হলো- একটি স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। এই নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা চাই আমাদের প্রকৃত প্রতিনিধি উঠে আসুক, যিনি বা যারা শিক্ষার্থীদের সমস্যার কথা অকপটে তুলে ধরবেন এবং সমাধানের জন্য কাজ করবেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক- সদস্য আরিফুল ইসলাম বলেন, জকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা হয়েছে এতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থী খুশি হয়েছে। আমাদের আবাসন সংকট, ক্যাফেটেরিয়ায় স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের সংকট, লাইব্রেরির সংকট। বলতে গেলে আমাদের সংকটের শেষ নেই। যদি জকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তাহলে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা শিক্ষার্থীদের সংকটের কথা তুলে ধরতে পারবেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে চাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এমন প্রার্থীদের বাছাই করে নিক যাদের মধ্যে কাজ করার সক্ষমতা আছে।
জাতীয় রাজনীতির জন্যও যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে উঠবে এই আশা ব্যক্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ জাহেদ বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শাসন আমাদের বাক-স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছিল। যারা বিভিন্ন সময় কথা বলেছে হুমকির সম্মুখীন হতে হয়েছে। তবে অভ্যুত্থানের পর থেকে শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি হয়ে উঠেছে জকসু। আমরা আশাবাদী, জকসু নির্বাচন হবে এক উৎসবমুখর পরিবেশে। প্রার্থীরা তাদের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে শিক্ষার্থীদের দুয়ারে দুয়ারে যাবেন, আর শিক্ষার্থীরা যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করবেন। ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ নিয়ে ব্যাপক উচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে। জকসুর মাধ্যমে শুধু শিক্ষার্থীদের অধিকারই নয়, জাতীয় রাজনীতির জন্যও যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে উঠবে।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি এ কে এম রাকিব বলেন, জকসুর রোডম্যাপ প্রকাশের পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে দারুণ এক উচ্ছ্বাস লক্ষ করা যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তরের পর এই প্রথম ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে তাই স্বাভাবিকভাবেই শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশাও এবার ভিন্নরকম, আর আমরা এক নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে যাচ্ছি। এই ইতিবাচক আবহ ধরে রাখতে হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্ব হবে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন উপহার দেয়া। যেন শিক্ষার্থীরা নির্বিঘ্নে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে এবং নিজের পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারে।
কেন্দ্রীয় সংসদে আরও কয়েকটি সম্পাদক পদ সংযোজনের দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের আহ্বায়ক ফয়সাল মুরাদ বলেন, জকসু ১৮ হাজার শিক্ষার্থীর দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি ছিল। আলহামদুলিল্লাহ, অবশেষে জকসুর রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে, যা নিঃসন্দেহে শিক্ষার্থীদের জন্য আনন্দের বিষয়। আমরা প্রত্যাশা করি, উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে জকসু নির্বাচন সম্পন্ন হবে। তবে, যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র একটি হল সংসদ বিদ্যমান, তাই কেন্দ্রীয় সংসদে অতিরিক্ত কয়েকটি সম্পাদক পদ সংযোজন করা হলে তা সর্বাধিক কল্যাণকর হতো।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট শাখার সভাপতি ইভান তাহসীভ বলেন, জকসু নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হয়েছে এটা সত্যি জবি শিক্ষার্থীদের জন্যে আনন্দের। একটা দীর্ঘ লড়াইয়ের ফসল এটি। তবে আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে এখনও খেয়াল রাখছি। এখন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত যেসব কাজ প্রশাসন করবেন- আচরণবিধি গঠন, তফসিল ঘোষণাসহ বিভিন্ন কাজে যেন শিক্ষার্থীদের স্বার্থবিরোধী কিছু না ঘটে। আমরা চাই না জাকসু নির্বাচনের মতো কোনো বিতর্ক আমাদের জকসু নির্বাচনকে নিয়ে তৈরি হোক। একটা সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্যে প্রহরী হয়ে থাকবো।
পথনকশা ঘোষণা, নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ২৭ নভেম্বর
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
রোববার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনের পথনকশা ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ২৭ নভেম্বর নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট ফেইসবুক গ্রুপ ও পেইজে শিক্ষার্থীদের মাঝে উচ্ছ্বাস লক্ষ করা গেছে। শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ অনশন কর্মসূচি দিলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রোডম্যাপ ঘোষণা করতে বাধ্য হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় আইনে জকসু না থাকায় নির্বাচন আয়োজন নিয়ে জটিলতা রয়েছে। শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সংবিধি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে যোগ করতে নীতিমালা তৈরি করে সেটি ইতোমধ্যে ইউজিসিতে পাঠানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানায়, শিক্ষার্থীদের মতামত নিয়ে নীতিমালা তৈরি করে সেটি ইতোমধ্যে ইউজিসিতে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। ইউজিসি, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও রাষ্ট্রপতি অনুমোদন দিলে বিশ্ববিদ্যালয় আইনে সেটি যুক্ত হবে এবং নির্বাচন আয়োজনে আর কোনো বাধা থাকবে না।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র মতে, সর্বশেষ ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮৭ সালে। সে নির্বাচনে যথাক্রমে ভিপি-জিএস হন সহোদর মো. আলমগীর শিকদার লোটন ও জাহাঙ্গীর সিকদার জোটন। এরপর গত ৩৮ বছরে ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। ২০০৫ সালে কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনে ছাত্র সংসদের আইন না থাকার অজুহাতে নির্বাচন আয়োজন করেনি প্রশাসন। কিন্তু, ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর গণঅভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষা হিসেবে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের জোর দাবি ওঠে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মাঝেও সে দাবি প্রতিফলিত হয়।
ছাত্র সংগঠন ও শিক্ষার্থীদের
মাঝে উচ্ছ্বাস
বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্রিয় ছাত্র সংগঠন ও শিক্ষার্থীদের মাঝে নির্বাচন নিয়ে কৌতুহল এবং উচ্ছ্বাস লক্ষ করা গেছে। কোন সংগঠনের কারা কোন পদে লড়বেন তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা হচ্ছে। দীর্ঘদিন পর জকসু অনুষ্ঠিত হওয়া এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ডামাডোল শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাসে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রার্থী হিসেবে যারা তরুণ এবং ক্লিন ইমেজের অধিকারী তাদেরকেই বেছে নিবেন তারা।
জীবনে প্রথমবার ভোট দিবেন জানিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সামিহা তাসনিম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমান অধ্যায়নরত শিক্ষার্থী হিসেবে জকসু তো আমার কাছে কোনো উৎসব থেকে কম কিছু নয়! বরং অনেকেরই তারুণ্যের প্রথম ভোট প্রদান তাও বিশ্ববিদ্যালয়েরও প্রথম নির্বাচনে, সত্যিই নিজেদের অনেক ভাগ্যবান মনে হচ্ছে। তবে এই নির্বাচন যেন সত্যিকার অর্থেই শিক্ষার্থী স্বার্থ রক্ষার উদ্দেশ্যকে ধারণ করে এটাই চাওয়া কেননা এখানের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরা অনেক প্রতিভাবান হওয়া সত্ত্বেও প্রশাসনের শিক্ষার্থী অধিকারের প্রতি দীর্ঘদিনের উদাসীনতা ও ব্যর্থতার কারণে তারা দিনের পর দিন পিছিয়ে পড়েছে আর ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছে। ধীরে ধীরেই হোক তবে আশা করছি, এই নির্বাচন এসব ভোগান্তির অবসান ঘটাবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. ইমরান হোসেন বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে জীবনে এই প্রথম জকসু নির্বাচন হতে যাচ্ছে- এটি আমাদের জন্য ঐতিহাসিক সুযোগ। দীর্ঘদিন পর জকসু নির্বাচন হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে। নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে গণতান্ত্রিক চর্চা ফিরে আসবে। সাংস্কৃতিক, ক্রীড়া ও অ্যাকাডেমিক কর্মকাণ্ডে নতুন প্রাণ সঞ্চার হবে। আমাদের প্রথম ও প্রধান চাহিদা হলো- একটি স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। এই নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা চাই আমাদের প্রকৃত প্রতিনিধি উঠে আসুক, যিনি বা যারা শিক্ষার্থীদের সমস্যার কথা অকপটে তুলে ধরবেন এবং সমাধানের জন্য কাজ করবেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক- সদস্য আরিফুল ইসলাম বলেন, জকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা হয়েছে এতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থী খুশি হয়েছে। আমাদের আবাসন সংকট, ক্যাফেটেরিয়ায় স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের সংকট, লাইব্রেরির সংকট। বলতে গেলে আমাদের সংকটের শেষ নেই। যদি জকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তাহলে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা শিক্ষার্থীদের সংকটের কথা তুলে ধরতে পারবেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে চাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এমন প্রার্থীদের বাছাই করে নিক যাদের মধ্যে কাজ করার সক্ষমতা আছে।
জাতীয় রাজনীতির জন্যও যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে উঠবে এই আশা ব্যক্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ জাহেদ বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শাসন আমাদের বাক-স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছিল। যারা বিভিন্ন সময় কথা বলেছে হুমকির সম্মুখীন হতে হয়েছে। তবে অভ্যুত্থানের পর থেকে শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি হয়ে উঠেছে জকসু। আমরা আশাবাদী, জকসু নির্বাচন হবে এক উৎসবমুখর পরিবেশে। প্রার্থীরা তাদের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে শিক্ষার্থীদের দুয়ারে দুয়ারে যাবেন, আর শিক্ষার্থীরা যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করবেন। ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ নিয়ে ব্যাপক উচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে। জকসুর মাধ্যমে শুধু শিক্ষার্থীদের অধিকারই নয়, জাতীয় রাজনীতির জন্যও যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে উঠবে।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি এ কে এম রাকিব বলেন, জকসুর রোডম্যাপ প্রকাশের পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে দারুণ এক উচ্ছ্বাস লক্ষ করা যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তরের পর এই প্রথম ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে তাই স্বাভাবিকভাবেই শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশাও এবার ভিন্নরকম, আর আমরা এক নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে যাচ্ছি। এই ইতিবাচক আবহ ধরে রাখতে হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্ব হবে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন উপহার দেয়া। যেন শিক্ষার্থীরা নির্বিঘ্নে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে এবং নিজের পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারে।
কেন্দ্রীয় সংসদে আরও কয়েকটি সম্পাদক পদ সংযোজনের দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের আহ্বায়ক ফয়সাল মুরাদ বলেন, জকসু ১৮ হাজার শিক্ষার্থীর দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি ছিল। আলহামদুলিল্লাহ, অবশেষে জকসুর রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে, যা নিঃসন্দেহে শিক্ষার্থীদের জন্য আনন্দের বিষয়। আমরা প্রত্যাশা করি, উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে জকসু নির্বাচন সম্পন্ন হবে। তবে, যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র একটি হল সংসদ বিদ্যমান, তাই কেন্দ্রীয় সংসদে অতিরিক্ত কয়েকটি সম্পাদক পদ সংযোজন করা হলে তা সর্বাধিক কল্যাণকর হতো।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট শাখার সভাপতি ইভান তাহসীভ বলেন, জকসু নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হয়েছে এটা সত্যি জবি শিক্ষার্থীদের জন্যে আনন্দের। একটা দীর্ঘ লড়াইয়ের ফসল এটি। তবে আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে এখনও খেয়াল রাখছি। এখন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত যেসব কাজ প্রশাসন করবেন- আচরণবিধি গঠন, তফসিল ঘোষণাসহ বিভিন্ন কাজে যেন শিক্ষার্থীদের স্বার্থবিরোধী কিছু না ঘটে। আমরা চাই না জাকসু নির্বাচনের মতো কোনো বিতর্ক আমাদের জকসু নির্বাচনকে নিয়ে তৈরি হোক। একটা সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্যে প্রহরী হয়ে থাকবো।