রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) নাট্যকলা বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ তুলেছেন এক নিয়োগপ্রার্থী। এ নিয়ে অভিযোগকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, দুদক ও ইউজিসিসহ ৬টি প্রতিষ্ঠানে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
গতকাল রোববার আইনজীবীর মাধ্যমে তিনি উপাচার্য, রেজিস্ট্রারসহ সংশ্লিষ্ট কয়েকজনকে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন ওই নিয়োগপ্রার্থী। আগামী ৭ দিনের ভেতর বিষয়টির তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু না হলে নিয়োগের বিষয়ে আদালতে রিট করা হবে বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী।
অভিযোগকারী ওই চাকরিপ্রার্থীর নাম রাহাত ইসলাম (হৃদয়)। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। রাহাত ইসলাম স্নাতকে ৩ দশমিক ৬৩ ও স্নাতকোত্তরে ৩ দশমিক ৮৬ সিজিপিএ পেয়ে দুটিতেই প্রথম স্থান অধিকার করেছেন। বর্তমানে তিনি রোমানিয়ার ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি অব টিমিসুয়ারার শিক্ষার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৫ সেপ্টেম্বরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগে ২টি প্রভাষক পদে নিয়োগের জন্য লিখিত পরীক্ষা নেয়া হয়। নিয়োগ পরীক্ষায় রোমানিয়া থেকে বাংলাদেশে এসে অংশ নেন রাহাত। কিন্তু তিনি মৌখিক পরীক্ষার (ভাইভা) জন্য মনোনীত হননি।
তার অভিযোগ, নিয়োগ পরীক্ষার আগে তার কাছে অর্থ দাবি করেন ওই বিভাগের দুই ছাত্র আল-আমিন এবং নবাব নাসির। তিনি তা দিতে না পারায় তাকে মৌখিক পরীক্ষায় রাখা হয়নি। এ বিষয়ক আড়াই মিনিটের একটি কল রেকর্ড হৃদয় অভিযোগপত্রের সঙ্গে সংযুক্ত করেছেন।
কল রেকর্ডটিতে বিভাগের চেয়ারম্যানকে চাকুরিপ্রার্থীকে বলতে শোনা যায়, ‘তুই যদি ঢুকতেই চাস। তাহলে তোর মতো করে ভাব। মানে তুই ভাবস যদি আমি এর মধ্যে ইনভলভ আছি। এনগেজড আছি এসবে, তাহলে কোরআন শরিফ অবমাননার মতো পাপ হবে।’
চাকুরি প্রার্থী হৃদয় বলেন, ‘আপনার কথা বলে নাই কিন্তু আমার মনে হয়েছে আপনার সঙ্গে শেয়ার করা উচিত। ওনারা যেটা বললো ওনাদের ভিতরে কিছু বিষয় আছে। একটা কথা আছে না - টাকার কথা মুখে হয় না।’
এর উত্তরে চেয়ারম্যান বলেন, ‘হ্যাঁ। আসলে একটা বিষয় আছে। ওদের প্রেসিডেন্ট, সেক্রেটারি আছে না? ওদের সংগঠনে আছে না? ওখানে কন্ট্রিবিউট করতে হয়।’
চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘হ্যাঁ। নবাব বলে না। সবকিছু আলামিনকে দিয়ে বলায়। ও গোপনে থাকে। এখান থেকে বের হওয়ার সুযোগ নেই। ওটার প্র্যাকটিস না করে রিস্ক হয়ে যাবে। এবং হচ্ছে। তারেককে যখন ইনভলভ করে শুরু হয়েছে ঐ টা দিয়েই। বুঝা গেছে?’
অভিযোগকারী শিক্ষার্থী হৃদয়ের দাবি, নবাব নাসির এবং আল-আমিন বিভাগের চেয়ারম্যানের অনুসারী শিক্ষার্থী। তারা মূলত চেয়ারম্যানের পক্ষ হয়ে তাকে এই প্রস্তাব দিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নবাব নাসির নাট্যকলা বিভাগের দ্বিতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। আর আলামিন ছিলেন একই বিভাগের সপ্তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবির পরিচালিত ‘বিকল্প’ নামের একটি সংগঠনের পরিচালক ছিলেন। এখন বিজ্ঞাপন নির্মাতা। বাড়ি রাজশাহীতেই। নবাবের বিভাগের ‘ছোট ভাই’ আলামিনের বাড়িও রাজশাহী।
অভিযোগ দায়েরের বিষয়ে রাহাত ইসলাম হৃদয় বলেন, নবাব ও আলামিনের সঙ্গে তার দেখা হয়েছিল। আলামিন তাকে জানিয়েছিলেন যে, নিয়োগের জন্য প্রার্থী আগেই চূড়ান্ত হয়ে গেছে। তিনি কত টাকা দিতে পারবেন তা তারা জানতে চান। তিনি বেশি টাকা দিলে তাকেই বিবেচনা করা হবে। তবে তিনি কিছু না জানিয়ে বিভাগের সভাপতির সঙ্গে এই কথা বলেছিলেন। সভাপতি তাদের কথাই শুনতে বলেছিলেন।
এ বিষয়ে কথা বলতে আলামিনকে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি।
তবে নবাব নাসির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘ছাত্রশিবির করার কারণে আওয়ামী লীগ আমাকে ১৫ বছর ক্যাম্পাসেই ঢুকতে দেয়নি। মাস্টার্স করতে পারিনি। তবে এবারের রুয়া নির্বাচনের সময় আমার একটা ভূমিকা ছিল। সে কারণে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমার নাম জড়ানো হয়েছে।’
এ নিয়ে গত ২১ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সালেহ্ হাসান নকীবের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেন রাহাত। অভিযোগের কপি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, শিক্ষা উপদেষ্টার কার্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, শিক্ষা সচিব, দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠান তিনি।
গতকাল রোববার দুপুরে হৃদয় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ নুরুল হুদার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা উপদেষ্টা, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে ডাকযোগে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন।
অভিযোগের বিষয়ে নাট্যকলা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মীর মেহবুব আলম বলেন, ‘এটা মনগড়া অভিযোগ। কী রকম স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ বোর্ডগুলো হচ্ছে, এটা সবাই জানেন। তিনি আমারই ছাত্র। ২৩ জন পরীক্ষা দিয়েছিলেন। কিন্তু ওই ছাত্র প্রথম ১০ জনের মধ্যেই আসতে পারেননি।’
বিশেষজ্ঞ পরিবর্তনের ব্যাপারে এই অধ্যাপক বলেন, ‘এটা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত। এখানে কে আসবেন না আসবেন, এটা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত। তারা এটা বলতে পারবেন।’
কথোপকথনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এখন তো এআই দিয়ে সবকিছু করা যায়। এটা ভিত্তিহীন।’
অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, ‘আমরা অভিযোগটা পেয়েছি। বিষয়টি আমি দেখছি।’
সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) নাট্যকলা বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ তুলেছেন এক নিয়োগপ্রার্থী। এ নিয়ে অভিযোগকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, দুদক ও ইউজিসিসহ ৬টি প্রতিষ্ঠানে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
গতকাল রোববার আইনজীবীর মাধ্যমে তিনি উপাচার্য, রেজিস্ট্রারসহ সংশ্লিষ্ট কয়েকজনকে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন ওই নিয়োগপ্রার্থী। আগামী ৭ দিনের ভেতর বিষয়টির তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু না হলে নিয়োগের বিষয়ে আদালতে রিট করা হবে বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী।
অভিযোগকারী ওই চাকরিপ্রার্থীর নাম রাহাত ইসলাম (হৃদয়)। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। রাহাত ইসলাম স্নাতকে ৩ দশমিক ৬৩ ও স্নাতকোত্তরে ৩ দশমিক ৮৬ সিজিপিএ পেয়ে দুটিতেই প্রথম স্থান অধিকার করেছেন। বর্তমানে তিনি রোমানিয়ার ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি অব টিমিসুয়ারার শিক্ষার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৫ সেপ্টেম্বরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগে ২টি প্রভাষক পদে নিয়োগের জন্য লিখিত পরীক্ষা নেয়া হয়। নিয়োগ পরীক্ষায় রোমানিয়া থেকে বাংলাদেশে এসে অংশ নেন রাহাত। কিন্তু তিনি মৌখিক পরীক্ষার (ভাইভা) জন্য মনোনীত হননি।
তার অভিযোগ, নিয়োগ পরীক্ষার আগে তার কাছে অর্থ দাবি করেন ওই বিভাগের দুই ছাত্র আল-আমিন এবং নবাব নাসির। তিনি তা দিতে না পারায় তাকে মৌখিক পরীক্ষায় রাখা হয়নি। এ বিষয়ক আড়াই মিনিটের একটি কল রেকর্ড হৃদয় অভিযোগপত্রের সঙ্গে সংযুক্ত করেছেন।
কল রেকর্ডটিতে বিভাগের চেয়ারম্যানকে চাকুরিপ্রার্থীকে বলতে শোনা যায়, ‘তুই যদি ঢুকতেই চাস। তাহলে তোর মতো করে ভাব। মানে তুই ভাবস যদি আমি এর মধ্যে ইনভলভ আছি। এনগেজড আছি এসবে, তাহলে কোরআন শরিফ অবমাননার মতো পাপ হবে।’
চাকুরি প্রার্থী হৃদয় বলেন, ‘আপনার কথা বলে নাই কিন্তু আমার মনে হয়েছে আপনার সঙ্গে শেয়ার করা উচিত। ওনারা যেটা বললো ওনাদের ভিতরে কিছু বিষয় আছে। একটা কথা আছে না - টাকার কথা মুখে হয় না।’
এর উত্তরে চেয়ারম্যান বলেন, ‘হ্যাঁ। আসলে একটা বিষয় আছে। ওদের প্রেসিডেন্ট, সেক্রেটারি আছে না? ওদের সংগঠনে আছে না? ওখানে কন্ট্রিবিউট করতে হয়।’
চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘হ্যাঁ। নবাব বলে না। সবকিছু আলামিনকে দিয়ে বলায়। ও গোপনে থাকে। এখান থেকে বের হওয়ার সুযোগ নেই। ওটার প্র্যাকটিস না করে রিস্ক হয়ে যাবে। এবং হচ্ছে। তারেককে যখন ইনভলভ করে শুরু হয়েছে ঐ টা দিয়েই। বুঝা গেছে?’
অভিযোগকারী শিক্ষার্থী হৃদয়ের দাবি, নবাব নাসির এবং আল-আমিন বিভাগের চেয়ারম্যানের অনুসারী শিক্ষার্থী। তারা মূলত চেয়ারম্যানের পক্ষ হয়ে তাকে এই প্রস্তাব দিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নবাব নাসির নাট্যকলা বিভাগের দ্বিতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। আর আলামিন ছিলেন একই বিভাগের সপ্তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবির পরিচালিত ‘বিকল্প’ নামের একটি সংগঠনের পরিচালক ছিলেন। এখন বিজ্ঞাপন নির্মাতা। বাড়ি রাজশাহীতেই। নবাবের বিভাগের ‘ছোট ভাই’ আলামিনের বাড়িও রাজশাহী।
অভিযোগ দায়েরের বিষয়ে রাহাত ইসলাম হৃদয় বলেন, নবাব ও আলামিনের সঙ্গে তার দেখা হয়েছিল। আলামিন তাকে জানিয়েছিলেন যে, নিয়োগের জন্য প্রার্থী আগেই চূড়ান্ত হয়ে গেছে। তিনি কত টাকা দিতে পারবেন তা তারা জানতে চান। তিনি বেশি টাকা দিলে তাকেই বিবেচনা করা হবে। তবে তিনি কিছু না জানিয়ে বিভাগের সভাপতির সঙ্গে এই কথা বলেছিলেন। সভাপতি তাদের কথাই শুনতে বলেছিলেন।
এ বিষয়ে কথা বলতে আলামিনকে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি।
তবে নবাব নাসির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘ছাত্রশিবির করার কারণে আওয়ামী লীগ আমাকে ১৫ বছর ক্যাম্পাসেই ঢুকতে দেয়নি। মাস্টার্স করতে পারিনি। তবে এবারের রুয়া নির্বাচনের সময় আমার একটা ভূমিকা ছিল। সে কারণে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমার নাম জড়ানো হয়েছে।’
এ নিয়ে গত ২১ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সালেহ্ হাসান নকীবের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেন রাহাত। অভিযোগের কপি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, শিক্ষা উপদেষ্টার কার্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, শিক্ষা সচিব, দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠান তিনি।
গতকাল রোববার দুপুরে হৃদয় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ নুরুল হুদার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা উপদেষ্টা, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে ডাকযোগে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন।
অভিযোগের বিষয়ে নাট্যকলা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মীর মেহবুব আলম বলেন, ‘এটা মনগড়া অভিযোগ। কী রকম স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ বোর্ডগুলো হচ্ছে, এটা সবাই জানেন। তিনি আমারই ছাত্র। ২৩ জন পরীক্ষা দিয়েছিলেন। কিন্তু ওই ছাত্র প্রথম ১০ জনের মধ্যেই আসতে পারেননি।’
বিশেষজ্ঞ পরিবর্তনের ব্যাপারে এই অধ্যাপক বলেন, ‘এটা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত। এখানে কে আসবেন না আসবেন, এটা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত। তারা এটা বলতে পারবেন।’
কথোপকথনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এখন তো এআই দিয়ে সবকিছু করা যায়। এটা ভিত্তিহীন।’
অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, ‘আমরা অভিযোগটা পেয়েছি। বিষয়টি আমি দেখছি।’