alt

শতবর্ষের আলোকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

দেশাত্মবোধের চেতনার এক তেজোদীপ্ত আলোকবর্তিকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় : রাষ্ট্রপতি

প্রতিনিধি, ঢাবি : বুধবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২১

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শতবর্ষ পূর্তি ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবের অনুষ্ঠানে অতিথিরা -সংবাদ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি ও মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবের বর্ণাঢ্য উদ্বোধন করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর মো. আবদুল হামিদ বুধবার (১ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে এক জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বঙ্গভবন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত থেকে এই উৎসবের উদ্বোধন করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই লোটে শেরিং ভার্চুয়ালি শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অনুষ্ঠানে সম্মানীয় অতিথি এবং শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন এমপি, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশেনের সভাপতি এ কে আজাদ বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) ও শতবর্ষ উদযাপন কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. এ. এস. এম. মাকসুদ কামাল স্বাগত বক্তব্য দেন।

বাংলাদেশের বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্রিয় অংশগ্রহণের কথা স্মরণ করে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি বলেন, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। ১৯৭১ সালের বর্বরোচিত গণহত্যার লক্ষ্যবস্তু ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক মেধাবী শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী শহীদ হন। স্বাধীনতা পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কালাকানুন খ্যাত আইয়ুব খানের বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডিন্যান্স-১৯৬১ বাতিল করেন এবং ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ ১৯৭৩’ জারি করেন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে চিন্তার স্বাধীনতা ও মুক্তবুদ্ধি চর্চার পরিবেশ নিশ্চিত হয়। বাংলাদেশ সৃষ্টির পূর্বের ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় স্বাধীনতা-উত্তর সময়েও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সব অগণতান্ত্রিক, অপসংস্কৃতি এবং সামরিক স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে চলেছে। এরই স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করা হয়। মুজিব জন্মশতবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর পিস অ্যান্ড লিবার্টি’ স্থাপনও একটি অনন্য উদ্যোগ।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবোজ্জ্বল অবদান তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, বাঙালি জাতির শিক্ষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্য, গবেষণা-উদ্ভাবন, মুক্তবুদ্ধি চর্চা, প্রগতিশীল ভাবনা, জাতি-গঠন ও দেশাত্মবোধের চেতনার এক তেজোদীপ্ত আলোকবর্তিকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বাঙালির আশা আকাক্সক্ষার এক অনন্য বাতিঘর এ প্রতিষ্ঠান। জাতির পিতার জন্মবার্ষিকী ও মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদযাপনকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে তিনি উল্লেখ করেন।

রাষ্ট্রপতি বলেন, বর্তমান শতাব্দীতে উন্নয়নশীল বিশ্বে উচ্চশিক্ষার গতি-প্রকৃতি নিয়ে আমাদের নানাভাবে ভাবতে হচ্ছে। অবকাঠামো, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, ডিপার্টমেন্ট ও ইনস্টিটিউটের সম্প্রসারণ একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। কিন্তু এক্ষেত্রে শিক্ষা ও গবেষণার মানই মূলসূচক। আমাদের সক্ষম, দক্ষ ও মেধাবী জনশক্তি তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে পথিকৃতের ভূমিকা পালনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীরা যাতে তথ্যপ্রযুক্তিসহ জ্ঞান-বিজ্ঞানের সব শাখায় বিশ্বব্যাপী সফলতার সঙ্গে এগিয়ে যেতে পারে, সেভাবে তাদের গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেও কারিকুলাম নির্ধারণ ও পাঠদানের ক্ষেত্রে বিশ্বমানের কথা বিবেচনায় রাখতে হবে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক শ্রম বাজারের চাহিদা বিবেচনা করে শিক্ষার মান ও শিক্ষার্থীদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নেতৃত্ব দিবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, শতবর্ষের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে শিক্ষার মান নিয়ে। শুরুর এক দশকের মধ্যে এ বিশ্ববিদ্যালয় যেভাবে সারা বিশ্বের দরবারে সুনাম অর্জন করেছিল, দুঃখজনক হলেও সত্যি সে অগ্রযাত্রার গতি নানা কারণেই ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। সে কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনার চিন্তা করতে হচ্ছে। এর জন্য প্রয়োজন একাডেমিক মহাপরিকল্পনা।

তিনি আরও বলেন, শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন, শিক্ষার পরিবেশ উন্নয়ন এবং গবেষণার পরিধি সম্প্রসারণের লক্ষ্যে প্রথমবারের মতো প্রণয়ন করা হয়েছে পূর্ণাঙ্গ ভৌত মাস্টারপ্লান। মৌলিক ও প্রায়োগিক গবেষণার ক্ষেত্র জোরদারের উদ্দেশ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ইন্ডাস্ট্রিগুলোর সঙ্গে বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যায়েগুলোর সঙ্গে সহযোগিতার ক্ষেত্র সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমার আবেদন, ভৌত মহাপরিকল্পনার আগে একাডেমিক মহাপরিকল্পনা প্রয়োজন। তা প্রণয়ন করুন। আর তাকে পূর্ণতা দিতে বাস্তবায়িত হবে ভৌত মহাপরিকল্পনা। সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ সহযোগিতা থাকবে।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, শিক্ষিত, বুদ্ধিদীপ্ত, মধ্যবিত্ত শ্রেণীর বিকাশ ঘটিয়ে একটি জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির বিবর্তন ও উন্নয়নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অব্যাহতভাবে অনন্যসাধারণ ভূমিকা রেখে চলেছে। আন্তর্জাতিক জ্ঞানরাজ্যেও এই প্রতিষ্ঠানের অবদান অনস্বীকার্য। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বর্তমান প্রজন্মকে যোগ্য করে গড়ে তোলাই আমাদের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। নৈতিক মূল্যবোধ ও মানবিক আচরণের উৎকর্ষ সাধনের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা’ অর্জন ও সরকারের ‘পরিপ্রেক্ষিত রূপকল্প ২০৪১’ বাস্তবায়নে আমাদের সহায়ক ভূমিকা পালন করতে হবে। এ লক্ষ্যে শিক্ষা কারিকুলাম পুনর্গঠনসহ মৌলিক গবেষণা ও উদ্ভাবন কার্যক্রম জোরদারের বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এসব উদ্যোগ সফল করার ক্ষেত্রে তিনি অ্যালামনাই এবং শিল্প ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন।

উল্লেখ্য, উৎসবের উদ্বোধনী দিনসহ ০২ ডিসেম্বর, ০৩ ডিসেম্বর, ০৪ ডিসেম্বর ও ১২ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে বিকেল ৪টায় আলোচনা সভা এবং সন্ধ্যা সাড়ে ৫টায় খ্যাতিমান শিল্পীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হবে। প্রথিতযশা শিল্পী ও সাংষ্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগ, থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগ এবং নৃত্যকলা বিভাগের শিল্পীরা ও অ্যালামনাইরা সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশগ্রহণ করবেন।

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি ও মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে। প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্রছাত্রীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠেছে পুরো ক্যাম্পাস। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ চত্বর নবীন-প্রবীণের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। উপাচার্য ভবন, কার্জন হল, কলা ভবনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও অভ্যন্তরীণ সড়কে দৃষ্টিনন্দন আলোকসজ্জা শোভা পাচ্ছে। মনোরম ক্যাম্পাসের সর্বত্র এখন উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে।

ছবি

দাবি মেনে নেওয়ায় অনশন ভাঙলেন জবি শিক্ষার্থীরা

ছবি

রাকসু নির্বাচনকে ঘিরে শিবির ও ছাত্রদলের ভিন্ন ভিন্ন দাবি

ছবি

ফের পোষ্য কোটা পুনর্বহালের দাবি, অন্যথায় ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে লাগাতার কর্মসূচি

ছবি

‘কাকতাড়ুয়া দহন’ কর্মসূচি দিয়ে সড়ক ছাড়লেন কারিগরির শিক্ষার্থীরা

ছবি

জকসু: ২৭ নভেম্বর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচন

ছবি

রাকসু: হাতে ভোট গোণা ও ৫ দাবি ছাত্রদলের, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে ভোটের সিদ্ধান্ত

ছবি

সাজেকে চাঁন্দের গাড়ি খাদে, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর মৃত্যু

ছবি

চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দেওয়ার সময় বাড়ল

ছবি

জগন্নাথ: নির্বাচনসহ ৩ দাবিতে ৪ জনের অনশনে ৩ জন অসুস্থ

চাকসু নির্বাচনে মনোনয়ন নেওয়ার সময় বাড়ল এক দিন

ছবি

গাজীপুরে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের রেলপথ অবরোধ, বিক্ষোভ

ছবি

রাকসু: ১৭ কেন্দ্রে ভোট, নিরাপত্তায় থাকবে দুই হাজার পুলিশ

ছবি

জকসুসহ ৩ দাবিতে বাগছাস ও ছাত্র অধিকারের অনশন

ছবি

ডাকসু নির্বাচন: ভোট হাতে গণনার আবেদন উমামা ফাতেমার

ছবি

এক সপ্তাহের মধ্যে জকসু নির্বাচনের রূপরেখাসহ ৫ দাবি গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের

ছবি

নারায়ণগঞ্জ চারুকলায় মাস্টার্স প্রোগ্রাম চালুর দাবি, প্রো-ভিসির আশ্বাস

ছবি

রাকসু: চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা, ভিপি পদে ১৮

ছবি

জাকসু নির্বাচন নিয়ে ১৬ অভিযোগ: নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি শিক্ষক নেটওয়ার্কের

ছবি

রাকসু: তিন সাবেক সমন্বয়কের ‘আধিপত্যবিরোধী ঐক্য’ প্যানেল, শিবিরের ‘ছায়ার’ গুঞ্জন

ছবি

জাকসু: ভোট গণনায় অসঙ্গতি, বৈধ ভোটের চেয়ে বেশী ভোটের হিসাব, বিজয়ী ঘোষণা করে পরে বাতিল

ছবি

রাকসু: নির্বাচনী প্রচারণায় মানতে হবে যেসব নিয়ম

ছবি

রাকসু: বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৩৯ জন হল সংসদে নির্বাচিত

ছবি

ডাকসুর নির্বাচিত প্রতিনিধিদের আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ

ছবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-রাকসু নির্বাচনে ঘোষিত নয়টি প্যানেল

ছবি

চাকসু নির্বাচনে মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু, প্রথম দিনেই সংগ্রহ ২৮টি

ছবি

রাকসু: স্বতন্ত্র প্রার্থীদের একাংশের প্যানেল, তবে নেই ভিপি, জিএস, এজিএস

ছবি

ডাকসুর প্রথম সভায় সিনেটের জন্য ৫ প্রতিনিধি মনোনীত

ছবি

৩৫ বছর পর চাকসু: মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু

ছবি

রাকসুর নীতিমালা সংশোধন, লটারিতে নির্ধারিত হবে ব্যালট নম্বর

জাকসু নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা হারায়নি: নবনির্বাচিত জিএস মাজহারুল

ছবি

রাকসু: আচরণবিধি ‘লঙ্ঘন’ করে চলছে প্রচার-প্রচারণা

ছবি

অব্যবস্থাপনায় প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনে জাকসুতেও অধিকাংশ শিবির, তবে ভিপি স্বতন্ত্র সাবেক ছাত্রলীগ

ছবি

৩৩ বছর পর জাকসু নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ভিপি, শিবিরের প্রার্থী জিএসে বিজয়ী

ছবি

জাহাঙ্গীরনগর: হল সংসদ নির্বাচনের ফলাফল, বিজয়ীদের তালিকা

ছবি

জাহাঙ্গীরনগর: হল সংসদ নির্বাচনের ফলাফল, বিজয়ীদের তালিকা

ছবি

অব্যবস্থাপনায় প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনে জাকসুতেও অধিকাংশ শিবির, ভিপি স্বতন্ত্র সাবেক ছাত্রলীগ

tab

শতবর্ষের আলোকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

দেশাত্মবোধের চেতনার এক তেজোদীপ্ত আলোকবর্তিকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় : রাষ্ট্রপতি

প্রতিনিধি, ঢাবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শতবর্ষ পূর্তি ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবের অনুষ্ঠানে অতিথিরা -সংবাদ

বুধবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২১

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি ও মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবের বর্ণাঢ্য উদ্বোধন করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর মো. আবদুল হামিদ বুধবার (১ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে এক জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বঙ্গভবন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত থেকে এই উৎসবের উদ্বোধন করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই লোটে শেরিং ভার্চুয়ালি শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অনুষ্ঠানে সম্মানীয় অতিথি এবং শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন এমপি, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশেনের সভাপতি এ কে আজাদ বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) ও শতবর্ষ উদযাপন কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. এ. এস. এম. মাকসুদ কামাল স্বাগত বক্তব্য দেন।

বাংলাদেশের বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্রিয় অংশগ্রহণের কথা স্মরণ করে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি বলেন, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। ১৯৭১ সালের বর্বরোচিত গণহত্যার লক্ষ্যবস্তু ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক মেধাবী শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী শহীদ হন। স্বাধীনতা পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কালাকানুন খ্যাত আইয়ুব খানের বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডিন্যান্স-১৯৬১ বাতিল করেন এবং ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ ১৯৭৩’ জারি করেন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে চিন্তার স্বাধীনতা ও মুক্তবুদ্ধি চর্চার পরিবেশ নিশ্চিত হয়। বাংলাদেশ সৃষ্টির পূর্বের ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় স্বাধীনতা-উত্তর সময়েও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সব অগণতান্ত্রিক, অপসংস্কৃতি এবং সামরিক স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে চলেছে। এরই স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করা হয়। মুজিব জন্মশতবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর পিস অ্যান্ড লিবার্টি’ স্থাপনও একটি অনন্য উদ্যোগ।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবোজ্জ্বল অবদান তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, বাঙালি জাতির শিক্ষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্য, গবেষণা-উদ্ভাবন, মুক্তবুদ্ধি চর্চা, প্রগতিশীল ভাবনা, জাতি-গঠন ও দেশাত্মবোধের চেতনার এক তেজোদীপ্ত আলোকবর্তিকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বাঙালির আশা আকাক্সক্ষার এক অনন্য বাতিঘর এ প্রতিষ্ঠান। জাতির পিতার জন্মবার্ষিকী ও মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদযাপনকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে তিনি উল্লেখ করেন।

রাষ্ট্রপতি বলেন, বর্তমান শতাব্দীতে উন্নয়নশীল বিশ্বে উচ্চশিক্ষার গতি-প্রকৃতি নিয়ে আমাদের নানাভাবে ভাবতে হচ্ছে। অবকাঠামো, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, ডিপার্টমেন্ট ও ইনস্টিটিউটের সম্প্রসারণ একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। কিন্তু এক্ষেত্রে শিক্ষা ও গবেষণার মানই মূলসূচক। আমাদের সক্ষম, দক্ষ ও মেধাবী জনশক্তি তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে পথিকৃতের ভূমিকা পালনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীরা যাতে তথ্যপ্রযুক্তিসহ জ্ঞান-বিজ্ঞানের সব শাখায় বিশ্বব্যাপী সফলতার সঙ্গে এগিয়ে যেতে পারে, সেভাবে তাদের গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেও কারিকুলাম নির্ধারণ ও পাঠদানের ক্ষেত্রে বিশ্বমানের কথা বিবেচনায় রাখতে হবে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক শ্রম বাজারের চাহিদা বিবেচনা করে শিক্ষার মান ও শিক্ষার্থীদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নেতৃত্ব দিবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, শতবর্ষের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে শিক্ষার মান নিয়ে। শুরুর এক দশকের মধ্যে এ বিশ্ববিদ্যালয় যেভাবে সারা বিশ্বের দরবারে সুনাম অর্জন করেছিল, দুঃখজনক হলেও সত্যি সে অগ্রযাত্রার গতি নানা কারণেই ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। সে কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনার চিন্তা করতে হচ্ছে। এর জন্য প্রয়োজন একাডেমিক মহাপরিকল্পনা।

তিনি আরও বলেন, শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন, শিক্ষার পরিবেশ উন্নয়ন এবং গবেষণার পরিধি সম্প্রসারণের লক্ষ্যে প্রথমবারের মতো প্রণয়ন করা হয়েছে পূর্ণাঙ্গ ভৌত মাস্টারপ্লান। মৌলিক ও প্রায়োগিক গবেষণার ক্ষেত্র জোরদারের উদ্দেশ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ইন্ডাস্ট্রিগুলোর সঙ্গে বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যায়েগুলোর সঙ্গে সহযোগিতার ক্ষেত্র সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমার আবেদন, ভৌত মহাপরিকল্পনার আগে একাডেমিক মহাপরিকল্পনা প্রয়োজন। তা প্রণয়ন করুন। আর তাকে পূর্ণতা দিতে বাস্তবায়িত হবে ভৌত মহাপরিকল্পনা। সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ সহযোগিতা থাকবে।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, শিক্ষিত, বুদ্ধিদীপ্ত, মধ্যবিত্ত শ্রেণীর বিকাশ ঘটিয়ে একটি জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির বিবর্তন ও উন্নয়নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অব্যাহতভাবে অনন্যসাধারণ ভূমিকা রেখে চলেছে। আন্তর্জাতিক জ্ঞানরাজ্যেও এই প্রতিষ্ঠানের অবদান অনস্বীকার্য। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বর্তমান প্রজন্মকে যোগ্য করে গড়ে তোলাই আমাদের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। নৈতিক মূল্যবোধ ও মানবিক আচরণের উৎকর্ষ সাধনের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা’ অর্জন ও সরকারের ‘পরিপ্রেক্ষিত রূপকল্প ২০৪১’ বাস্তবায়নে আমাদের সহায়ক ভূমিকা পালন করতে হবে। এ লক্ষ্যে শিক্ষা কারিকুলাম পুনর্গঠনসহ মৌলিক গবেষণা ও উদ্ভাবন কার্যক্রম জোরদারের বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এসব উদ্যোগ সফল করার ক্ষেত্রে তিনি অ্যালামনাই এবং শিল্প ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন।

উল্লেখ্য, উৎসবের উদ্বোধনী দিনসহ ০২ ডিসেম্বর, ০৩ ডিসেম্বর, ০৪ ডিসেম্বর ও ১২ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে বিকেল ৪টায় আলোচনা সভা এবং সন্ধ্যা সাড়ে ৫টায় খ্যাতিমান শিল্পীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হবে। প্রথিতযশা শিল্পী ও সাংষ্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগ, থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগ এবং নৃত্যকলা বিভাগের শিল্পীরা ও অ্যালামনাইরা সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশগ্রহণ করবেন।

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি ও মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে। প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্রছাত্রীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠেছে পুরো ক্যাম্পাস। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ চত্বর নবীন-প্রবীণের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। উপাচার্য ভবন, কার্জন হল, কলা ভবনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও অভ্যন্তরীণ সড়কে দৃষ্টিনন্দন আলোকসজ্জা শোভা পাচ্ছে। মনোরম ক্যাম্পাসের সর্বত্র এখন উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে।

back to top