alt

অনশন ভাঙলো, আন্দোলন চালানোর ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা ও প্রতিনিধি, শাবিপ্রবি : বুধবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২২

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক দুই শিক্ষক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল ও ইয়াসমিন হক আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙান -সংবাদ

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা অনশন ভেঙেছেন, তবে তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

বুধবার (২৬ জানুয়ারি) সকাল ১০টা ২০ মিনিটে ওই বিশ্ববিদ্যালয়েরে সাবেক দুই শিক্ষক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী ইয়াসমিন হক পানি খাইয়ে শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙান। টানা সাতদিন ধরে অনশন করছিলেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

এদিকে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে অর্থ জোগান দেয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃত সাবেক পাঁচ শিক্ষারর্থীর জামিন আবেদন মঞ্জুর করেছে আদালত। আন্দোলনকারী কয়েকজন জানালেন, অনশনে ছিলেন ২৮ জন। এর মধ্যে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাগিব-রাবেয়া হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেছেন ২৪ জন; বাকি চারজন বাড়িতে গেছেন। তারা বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা নেবেন।

রাগিব-রাবেয়া হাসপাতালে একজন স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষার্থী জানালেন, হাসপাতালে ছয়জনকে ভর্তি করা হয়েছে। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে আরও ২ থেকে ৩ জনকে ভর্তি করানো লাগতে পারে।

ছয়জনের মধ্যে তিনজনের প্রচন্ড জ্বর ও খিঁচুনি আছে। বাকিরা চিকিৎসা নিয়ে সন্ধ্যায় হাসপাতাল থেকে চলে যাবেন। অনেকে সাময়িক চিকিৎসা করে বাড়িতে গিয়ে চিকিৎসা নেবেন।

আটক পাঁচজনের জামিন

বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ২য় আদালতের বিচারক সুমন ভূঁইয়া তাদের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন। সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) বিএম আশরাফ উল্যাহ তাহের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে গত দুইদিনে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) একটি দল। পরে মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) বিকেলে তাদের সিলেটে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

জামিনপ্রাপ্তরা হলেন টাঙ্গাইল জেলার সখীপুর দারিপাকা গ্রামের মতিয়ার রহমান খানের ছেলে হাবিবুর রহমান খান (২৬), বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ থানার লক্ষ্মীমোলা গ্রামের মুইন উদ্দিনের ছেলে রেজা নুর মুইন (৩১), খুলনা জেলার সোনাডাঙ্গার মিজানুর রহমানের ছেলে এএফএম নাজমুল সাকিব (৩২), ঢাকা মিরপুরের মাজার রোডের জব্বার হাউসিং বি-ব্লকের ১৭/৩ বাসার এ কে এম মোশাররফের ছেলে এ কে এম মারুফ হোসেন (২৭) ও কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর থানার নিয়ামতপুর গ্রামের সাদিকুল ইসলামের ছেলে ফয়সল আহমেদ (২৭)।

এদের মধ্যে নাজমুল সাকিব করোনা আক্রান্ত হয়ে সিলেটের শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

যেভাবে ভাঙল অনশন

শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙাতে ভোর ৪টার দিকে জাফর ইকবাল দম্পতি ঢাকা থেকে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পৌঁছান। এরপর অনশনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। সকাল ১০টার কিছু পর তাদের পানি পান করিয়ে অনশন ভাঙান জাফর ইকবাল। এরপর তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন।

উপাচার্যকে উদ্দেশ্য করে জাফর ইকবাল বলেন, ‘আমি তিন বছর আগে যখন অবসরে চলে যাই, তখন একটা চিঠি লিখে উনাকে দিয়ে যাই। সেই চিঠিতে আমি বলে দিয়েছিলাম অনেকগুলো। আমি সেখানে লিখেছিলাম স্পষ্ট করে, আপনি যদি এগুলো না করেন, ছাত্রদের এখন যে ক্ষোভ আছে, তা বিক্ষোভে রূপ নেবে। একদম অক্ষরে অক্ষরে আমার কথাটা ফলেছে।’ ‘মুক্তবুদ্ধির চর্চা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে’ অভিহিত করে শিক্ষার্থীরা একে ‘তালেবানি সিদ্ধান্ত’ বলে মন্তব্য করেছেন। এ বিষয়ে জাফর ইকবাল বলেন, ‘এটাতো অবিশ্বাস্য একটা ব্যাপার যে, একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ কাজগুলো বন্ধ হবে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ট্রেংথ ছিল, আমাদের এমন কোন সংগঠন নাই যেটা নাকি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিল না। সেটা যখন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, তখনই বোঝা গেছে এই মানুষটা আর যাই হোক, উনি একাডেমি বুঝেন না।’

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার সময় অধ্যাপক জাফর ইকবাল বলেন, ‘এখানে আসার আগে একদম উচ্চ মহল থেকে আমাকে বলা হয়েছে তোমাদের দাবি-দাওয়া মেনে নেয়া হবে। সেজন্য আমি এখানে এসেছি। নাহলে আমি এখানে আসতাম না। একটু আগে বলা হয়েছে তোমাদের দাবিগুলো যেন লিখে ওনাদেরকে পৌঁছে দেই। তাদের আশ্বাস না থাকলেও আসতাম। তখন অন্যভাবে আসতাম।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার আর ছাত্রদের মধ্যে কোন পার্থক্য নাই। আমাকে যে কথা দেয়া হয়েছে সেটি আশা করি তারা পূরণ করবেন। আমাকে দেয়া কথা যদি না পূরণ করেন তাহলে মনে করব শুধু শিক্ষার্থীদের সঙ্গে না, আমার সঙ্গে ও দেশের প্রগতিশীল মানুষদের সঙ্গে তারা বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।’

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে তিনি বলেন, ‘সারা বাংলাদেশের সমস্ত তরুণ প্রজন্ম তোমাদের পেছনে। সমস্ত মানুষজন তোমাদের পেছনে। তোমরা সুস্থ হও। উদাহরণ তৈরি করো। যে উদাহরণ বাংলাদেশের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনুসরণ করবে।’

শিক্ষার্থীরা উপাচার্যকে ‘দানব’ বলেছেন। সেই ‘দানবের’ কাছে আপনারা শিক্ষার্থীদের রেখে যাচ্ছেন। এই বিষয়টাকে কিভাবে দেখছেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক জাফর ইকবাল বলেন, ‘শুনেন, ছাত্রদের আন্ডারএস্টিমেট করবেন না। কে, কাকে, কার কাছে রেখে যাচ্ছি, সেটা সময়ই বলে দেবে।’

আন্দোলনে বহিরাগতদের কোন ইন্ধন ছিল বা আছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে জাফর ইকবাল বলেন, ‘আমি দেখেছি যে, এরা সাধারণ শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে কোন উচ্চাভিলাষ নাই। পুলিশ ওদের গায়ে এরকম নির্মমভাবে হাত তুলেছে, কাজেই ওদের মনের ভেতর একটা ক্ষোভ হয়েছে। সেজন্যই তারা এই আন্দোলনটা করছে। এর মধ্যে বিন্দুমাত্র বাড়াবাড়ি নাই, অহেতুক কোন দাবি নাই। ওদের দাবি শতভাগ যৌক্তিক দাবি।’

আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা

অনশন ভাঙলেও উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় ভিসির বাসভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম অপূর্ব এ কথা জানান। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সূত্রপাত ১৩ জানুয়ারি। ওই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েকশ ছাত্রী।

১৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় আন্দোলন চলাকালে ছাত্রীদের ওপর ছাত্রলীগ হামলা চালায় বলে অভিযোগ। ১৬ জানুয়ারি শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। তখন পুলিশ শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করে এবং রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। এতে শিক্ষার্থীসহ ক্যাম্পাসের অন্তত অর্ধশত লোকজন আহত হন। সে ঘটনায় পুলিশ ‘গুলিবর্ষণ ও হত্যার উদ্দেশে মারপিটের অভিযোগ’ এনে অজ্ঞাতপরিচয় ৩০০ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করে।

ওইদিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীরা তা উপেক্ষা করে আন্দোলন চালিয়ে যান। এ ঘটনার পরই উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে রূপ নেয় আন্দোলন। একপর্যায়ে তারা অনশনে যান; ঘোষণা দেন উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাওয়ার। সাত দিন পর সেই অনশন ভাঙালেন জনপ্রিয় লেখক ও শিক্ষক জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী ইয়াসমিন হক।

ছবি

রাবি শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে আমরণ অনশন, তদন্তে কমিটি

ছবি

রাবি: সুইমিংপুলে সাঁতার কাটতে গিয়ে শিক্ষার্থীর মৃত্যু

ছবি

রাবি: শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে আমরণ অনশন, তদন্তে কমিটি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ পদ থেকে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনের নিয়োগ বাতিল

ছাত্র সংসদ এখন থেকে জাতীয় ছাত্রশক্তি

ছবি

বুয়েটের শ্রীশান্তের বিরুদ্ধে মামলায় ধর্মানুভূতিতে আঘাতের ধারা

ছবি

পুলিশের বলা ‘ত্রিভুজ প্রেমের গল্প’ নিয়ে প্রশ্ন জোবায়েদের শিক্ষকের

ছবি

ছাত্রীদের নিয়ে বাজে মন্তব্য: বুয়েটছাত্র শ্রীশান্ত কারাগারে

ছবি

রাবি: সভাপতির অপসরণসহ চার দাবিতে চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের ‘শাটডাউন’

ছবি

রাকসুর গেজেট প্রকাশ, শপথ ‘২৬ অক্টোবর’

ছবি

ব্রিটিশ কাউন্সিল পুরস্কার পেলেন ইংরেজি মাধ্যমের ৪২ শিক্ষার্থী

ছবি

তিস্তা প্রকল্পের দাবিতে রাবিতে ‘তিস্তা বাঁচাও আন্দোলন’ কর্মসূচী

ছবি

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালিত হবে ২৭ অক্টোবর

ছবি

রাতে উত্তাল বুয়েট: ধর্ষণের অভিযোগে এক শিক্ষার্থী সাময়িক বহিষ্কার

ছবি

জবি ছাত্র জোবায়েদ হত্যাকাণ্ড: নেপথ্যে ‘ত্রিভুজ প্রেম’

ছবি

পছন্দের কথা জানতে পেরেই জবি শিক্ষার্থীকে খুন: পুলিশ

ছবি

পুলিশের ধারণা ছাত্রীর প্রেমিকের সন্দেহে জবি ছাত্রদল নেতা জুবায়েদ খুন

ছবি

জবি শিক্ষার্থী খুন: একদিনের শোক ঘোষণা, বিশ্ববিদ্যালয় দিবস স্থগিত

ছবি

ছুরিকাঘাতে জবি ছাত্রদল নেতার খুন, আটক ছাত্রী

পুরান ঢাকায় ছুরিকাঘাতে জবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু

ছবি

রাকসুতেও শিবিরের জয়-জয়কার জাহিদুল ইসলাম

ছবি

রাকসুতে শিবিরের প্যানেল থেকে বিজয়ী হলেন সনাতন ধর্মালম্বী সুজন

ছবি

রাকসু: কোন পদে কে জয়ী

ছবি

একচেটিয়া জয় শিবিরের, ছাত্রদলের ভরাডুবি

ছবি

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়: র‌্যাগিং, শৃঙ্খলাভঙ্গসহ বিভিন্ন দায়ে ১২ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার

ছবি

জবি প্রশাসনের বিরুদ্ধে ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা’ হরণের অভিযোগ হিন্দু শিক্ষার্থীদের

ভিপি-জিএস শিবিরের, এজিএস ছাত্রদলের

ছবি

আনন্দ, অভিযোগে রাকসুর ভোট শেষ, ফলের অপেক্ষা

ছবি

স্টামফোর্ডে সাংবাদিকতায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ক কর্মশালা অনু‌ষ্ঠিত

ছবি

স্টামফোর্ডে নারী স্বাস্থ্য সচেতনতা অনুষ্ঠান: পিসিওএস ও স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে সচেতনতার আহ্বান

ছবি

আনন্দ, অভিযোগে রাকসুর ভোট শেষ, ফলের অপেক্ষা

ছবি

রাকসু: ভোটার আসার আগেই শতাধিক ব্যালটে স্বাক্ষর, কারচুপির অভিযোগ

ছবি

অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগে শেষ হলো রাকসুর ভোট, ফলাফলের অপেক্ষা

ছবি

রাকসু: ৫ ঘণ্টায় ভোট পড়েছে ‘৬০ শতাংশ’

ছবি

রাকসুর ভোট: বাইরে স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াতের অবস্থান

ছবি

রাকসু: ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ ছাত্রদলের

tab

অনশন ভাঙলো, আন্দোলন চালানোর ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা ও প্রতিনিধি, শাবিপ্রবি

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক দুই শিক্ষক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল ও ইয়াসমিন হক আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙান -সংবাদ

বুধবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২২

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা অনশন ভেঙেছেন, তবে তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

বুধবার (২৬ জানুয়ারি) সকাল ১০টা ২০ মিনিটে ওই বিশ্ববিদ্যালয়েরে সাবেক দুই শিক্ষক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী ইয়াসমিন হক পানি খাইয়ে শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙান। টানা সাতদিন ধরে অনশন করছিলেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

এদিকে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে অর্থ জোগান দেয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃত সাবেক পাঁচ শিক্ষারর্থীর জামিন আবেদন মঞ্জুর করেছে আদালত। আন্দোলনকারী কয়েকজন জানালেন, অনশনে ছিলেন ২৮ জন। এর মধ্যে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাগিব-রাবেয়া হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেছেন ২৪ জন; বাকি চারজন বাড়িতে গেছেন। তারা বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা নেবেন।

রাগিব-রাবেয়া হাসপাতালে একজন স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষার্থী জানালেন, হাসপাতালে ছয়জনকে ভর্তি করা হয়েছে। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে আরও ২ থেকে ৩ জনকে ভর্তি করানো লাগতে পারে।

ছয়জনের মধ্যে তিনজনের প্রচন্ড জ্বর ও খিঁচুনি আছে। বাকিরা চিকিৎসা নিয়ে সন্ধ্যায় হাসপাতাল থেকে চলে যাবেন। অনেকে সাময়িক চিকিৎসা করে বাড়িতে গিয়ে চিকিৎসা নেবেন।

আটক পাঁচজনের জামিন

বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ২য় আদালতের বিচারক সুমন ভূঁইয়া তাদের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন। সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) বিএম আশরাফ উল্যাহ তাহের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে গত দুইদিনে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) একটি দল। পরে মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) বিকেলে তাদের সিলেটে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

জামিনপ্রাপ্তরা হলেন টাঙ্গাইল জেলার সখীপুর দারিপাকা গ্রামের মতিয়ার রহমান খানের ছেলে হাবিবুর রহমান খান (২৬), বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ থানার লক্ষ্মীমোলা গ্রামের মুইন উদ্দিনের ছেলে রেজা নুর মুইন (৩১), খুলনা জেলার সোনাডাঙ্গার মিজানুর রহমানের ছেলে এএফএম নাজমুল সাকিব (৩২), ঢাকা মিরপুরের মাজার রোডের জব্বার হাউসিং বি-ব্লকের ১৭/৩ বাসার এ কে এম মোশাররফের ছেলে এ কে এম মারুফ হোসেন (২৭) ও কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর থানার নিয়ামতপুর গ্রামের সাদিকুল ইসলামের ছেলে ফয়সল আহমেদ (২৭)।

এদের মধ্যে নাজমুল সাকিব করোনা আক্রান্ত হয়ে সিলেটের শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

যেভাবে ভাঙল অনশন

শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙাতে ভোর ৪টার দিকে জাফর ইকবাল দম্পতি ঢাকা থেকে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পৌঁছান। এরপর অনশনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। সকাল ১০টার কিছু পর তাদের পানি পান করিয়ে অনশন ভাঙান জাফর ইকবাল। এরপর তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন।

উপাচার্যকে উদ্দেশ্য করে জাফর ইকবাল বলেন, ‘আমি তিন বছর আগে যখন অবসরে চলে যাই, তখন একটা চিঠি লিখে উনাকে দিয়ে যাই। সেই চিঠিতে আমি বলে দিয়েছিলাম অনেকগুলো। আমি সেখানে লিখেছিলাম স্পষ্ট করে, আপনি যদি এগুলো না করেন, ছাত্রদের এখন যে ক্ষোভ আছে, তা বিক্ষোভে রূপ নেবে। একদম অক্ষরে অক্ষরে আমার কথাটা ফলেছে।’ ‘মুক্তবুদ্ধির চর্চা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে’ অভিহিত করে শিক্ষার্থীরা একে ‘তালেবানি সিদ্ধান্ত’ বলে মন্তব্য করেছেন। এ বিষয়ে জাফর ইকবাল বলেন, ‘এটাতো অবিশ্বাস্য একটা ব্যাপার যে, একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ কাজগুলো বন্ধ হবে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ট্রেংথ ছিল, আমাদের এমন কোন সংগঠন নাই যেটা নাকি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিল না। সেটা যখন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, তখনই বোঝা গেছে এই মানুষটা আর যাই হোক, উনি একাডেমি বুঝেন না।’

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার সময় অধ্যাপক জাফর ইকবাল বলেন, ‘এখানে আসার আগে একদম উচ্চ মহল থেকে আমাকে বলা হয়েছে তোমাদের দাবি-দাওয়া মেনে নেয়া হবে। সেজন্য আমি এখানে এসেছি। নাহলে আমি এখানে আসতাম না। একটু আগে বলা হয়েছে তোমাদের দাবিগুলো যেন লিখে ওনাদেরকে পৌঁছে দেই। তাদের আশ্বাস না থাকলেও আসতাম। তখন অন্যভাবে আসতাম।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার আর ছাত্রদের মধ্যে কোন পার্থক্য নাই। আমাকে যে কথা দেয়া হয়েছে সেটি আশা করি তারা পূরণ করবেন। আমাকে দেয়া কথা যদি না পূরণ করেন তাহলে মনে করব শুধু শিক্ষার্থীদের সঙ্গে না, আমার সঙ্গে ও দেশের প্রগতিশীল মানুষদের সঙ্গে তারা বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।’

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে তিনি বলেন, ‘সারা বাংলাদেশের সমস্ত তরুণ প্রজন্ম তোমাদের পেছনে। সমস্ত মানুষজন তোমাদের পেছনে। তোমরা সুস্থ হও। উদাহরণ তৈরি করো। যে উদাহরণ বাংলাদেশের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনুসরণ করবে।’

শিক্ষার্থীরা উপাচার্যকে ‘দানব’ বলেছেন। সেই ‘দানবের’ কাছে আপনারা শিক্ষার্থীদের রেখে যাচ্ছেন। এই বিষয়টাকে কিভাবে দেখছেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক জাফর ইকবাল বলেন, ‘শুনেন, ছাত্রদের আন্ডারএস্টিমেট করবেন না। কে, কাকে, কার কাছে রেখে যাচ্ছি, সেটা সময়ই বলে দেবে।’

আন্দোলনে বহিরাগতদের কোন ইন্ধন ছিল বা আছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে জাফর ইকবাল বলেন, ‘আমি দেখেছি যে, এরা সাধারণ শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে কোন উচ্চাভিলাষ নাই। পুলিশ ওদের গায়ে এরকম নির্মমভাবে হাত তুলেছে, কাজেই ওদের মনের ভেতর একটা ক্ষোভ হয়েছে। সেজন্যই তারা এই আন্দোলনটা করছে। এর মধ্যে বিন্দুমাত্র বাড়াবাড়ি নাই, অহেতুক কোন দাবি নাই। ওদের দাবি শতভাগ যৌক্তিক দাবি।’

আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা

অনশন ভাঙলেও উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় ভিসির বাসভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম অপূর্ব এ কথা জানান। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সূত্রপাত ১৩ জানুয়ারি। ওই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েকশ ছাত্রী।

১৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় আন্দোলন চলাকালে ছাত্রীদের ওপর ছাত্রলীগ হামলা চালায় বলে অভিযোগ। ১৬ জানুয়ারি শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। তখন পুলিশ শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করে এবং রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। এতে শিক্ষার্থীসহ ক্যাম্পাসের অন্তত অর্ধশত লোকজন আহত হন। সে ঘটনায় পুলিশ ‘গুলিবর্ষণ ও হত্যার উদ্দেশে মারপিটের অভিযোগ’ এনে অজ্ঞাতপরিচয় ৩০০ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করে।

ওইদিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীরা তা উপেক্ষা করে আন্দোলন চালিয়ে যান। এ ঘটনার পরই উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে রূপ নেয় আন্দোলন। একপর্যায়ে তারা অনশনে যান; ঘোষণা দেন উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাওয়ার। সাত দিন পর সেই অনশন ভাঙালেন জনপ্রিয় লেখক ও শিক্ষক জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী ইয়াসমিন হক।

back to top