alt

ঢাবির ৫৩ তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত

শিক্ষার্জনকে সমাবর্তন আর সার্টিফিকেটেই সীমাবদ্ধ না রাখার আহ্বান রাষ্ট্রপতির

খালেদ মাহমুদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি : শনিবার, ১৯ নভেম্বর ২০২২

উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩ তম সমাবর্তন। আজ শনিবার (১৯ নভেম্বর) দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত এ সমাবর্তনে সভাপতিত্ব করেন রাষ্ট্রপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর মো. আবদুল হামিদ। সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নোবেলজয়ী ফরাসি অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. জ্যাঁ তিরোল।

সমাবর্তনে ডক্টর অব লজ’ ডিগ্রি প্রদান করা হয় নোবেল বিজয়ী ফরাসি অর্থনীতিবিদ ড. জঁ তিরোলকে। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তার হাতে ডক্টর অব লজের সনদ তুলে দেন। উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান তার হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন।

শিক্ষা ও গবেষণা এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রাখায় সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩১ জন কৃতী শিক্ষক, গবেষক ও শিক্ষার্থীকে ১৫৩টি স্বর্ণপদক দেওয়া হয়। এছাড়া ৯৭ জনকে পিএইচডি, ২ জনকে ডিবিএ এবং ৩৫ জনকে এম ফিল ডিগ্রি প্রদান করা হয়।

সভাপতির বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শুধুমাত্র উচ্চ শিক্ষার একটি প্রতিষ্ঠান নয়। এটি আমাদের নেতৃত্বের প্রতীক, আমাদের পথ প্রদর্শক। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিসংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধসহ বাঙালির প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে গৌরবময় ভূমিকা। প্রতিটি আন্দোলনের নিউক্লিয়াস ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনে প্রথম উত্তোলন করা হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের ঐতিহাসিক নিদর্শন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনও ইতিহাসের অংশ। ইতিহাস ও ঐতিহ্যের নিদর্শন সাথে নিয়েই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে চলেছে স্বমহিমায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও শিক্ষকদের দায়িত্বহীনতার সমালোচনা করে রাষ্ট্রপতি বলেন, একজন উপাচার্যের মূল দায়িত্ব হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রমের তত্ত্বাবধান। কিন্তু ইদানীং পত্রিকা খুললেই মনে হয় পরিবার পরিজন ও অনুগতদের চাকরি দেওয়া ও বিভিন্ন উপায়ে আর্থিক সুযোগ সুবিধা নেওয়াই যেন কিছু উপাচার্যের মূল দায়িত্ব। আবার অনেক শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিটাকে ঐচ্ছিক মনে করেন এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেওয়াকে তারা অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশের সঙ্গে এটি খুবই বেমানান।

রাষ্ট্রপতি বলেন, আমরা চাই উপাচার্যের নেতৃতে ছাত্র-শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা ও উচ্চশিক্ষার প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হোক। শিক্ষকরা হয়ে উঠুন সমাজের সম্মান ও মর্যাদার প্রতীক। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষকসহ যেকোনো নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধা ও যোগ্যতাকে প্রাধান্য দিতে হবে। কিছুসংখ্যক অসাধু লোকের কর্মকাণ্ডের জন্য গোটা শিক্ষক সমাজের মর্যাদা যেন ক্ষুন্ন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

"একসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশেষ মর্যাদার চোখে দেখা হতো। সময়ের বিবর্তনে ক্রমেই যেন সে ঐতিহ্য সংকুচিত হয়ে আসছে। অথচ ছাত্র শিক্ষক ভৌত অবকাঠামো এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা পর্যাপ্ত না হলেও কয়েকগুণ বেড়েছে। সে তুলনায় শিক্ষার গুণগত মান, গবেষণার ক্ষেত্র কতটুকু বেড়েছেও মূল্যায়ন করতে হবে।"

তিনি বলেন, গবেষণার বিষয়ে যেসব খবর প্রচারিত হয় তা দেখলে বা শুনলে অনেক সময় আচার্য হিসেবে আমাকেও লজ্জায় পড়তে হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে জাতির প্রত্যাশা অনেক। জাতিকে এগিয়ে নিতে আপনাদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।

শিক্ষার্জনকে সমাবর্তন আর সার্টিফিকেটেই সীমাবদ্ধ না রাখার আহ্বান জানিয়ে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতি বলেন, সমাবর্তনের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা একদিকে যেমন স্বীকৃতি লাভ করে তাদের মেধা ও প্রতিভার, তেমনি সচেতন হয়ে ওঠে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে। তাদের সুনাগরিক হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে এ ধরনের অনুষ্ঠান ও আনুষ্ঠানিকতার যে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে তা সর্বজনস্বীকৃত। তবে তোমাদের শিক্ষার্জন যেন সমাবর্তন আর সার্টিফিকেটেই সীমাবদ্ধ না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তোমাদের আজকের এই অর্জনের পিছনে বাবা-মা, শিক্ষকমণ্ডলী এবং রাষ্ট্রের যে অবদান ও ত্যাগ রয়েছে, তা হৃদয়ে ধারণ করতে হবে। দেশ ও জনগণের কল্যাণে সর্বদা নিজেকে নিয়োজিত রাখতে হবে।

এ সময় রাষ্ট্রপ্রধান শিক্ষার্থীদের কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার, কাউন্সেলিং অ্যান্ড সাপোর্ট সেন্টার এবং ক্যারিয়ার প্ল্যানিং ইউনিট চালু করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি সেশনজট কমানোর উদ্যোগ হিসেবে লস রিকভারি প্ল্যান, গবেষণা-প্রকাশনা মেলা আয়োজন এবং স্টুডেন্ট প্রমোশন অ্যান্ড সাপোর্ট ইউনিট চালু করায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে সমাবর্তন বক্তা ড. জ্যাঁ তিরোল বলেন, সাফল্যের জন্য তোমাদের নিজেকে বিশ্বাস করতে হবে। তোমাদের মেধা আছে, জ্ঞানের উপকরণ আছে। যতক্ষণ না নিজের সর্বোচ্চ সীমায় পৌছাবে, ততক্ষণ থামবে না। তোমার সংকল্প আর তোমার পারিপার্শ্বিকতাই তোমাকে অনেকদূর নিয়ে যাবে। তোমাদের এই যাত্রাপথে যারা তোমাদের সমর্থন জুগিয়েছে, তাদের প্রতি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবে। নতুন ডিগ্রি তোমার জন্য যেমন অনেক সুযোগ নিয়ে এসেছে, তেমনি এনেছে কিছু কর্তব্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গ্রাজুয়েট হিসেবে তোমাদের নিজের প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্ব করতে হবে।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে উপাচার্য ড মোঃ আখতারুজ্জামান বলেন, বর্তমান পৃথিবী তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর। তোমরা সর্বদা এর ইতিবাচক এবং নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে সচেতন থাকবে। মানব সভ্যতার উন্নয়নে যেই প্রযুক্তি তোমাদের ব্যবহার করার কথা, সচেতন থেকো সেই প্রযুক্তি যেন তোমাদের ব্যবহার করে না ফেলে। নিজেদের সময়কে সর্বোচ্চ সুন্দর এবং সৃষ্টিশীল কাজের পেছনে ব্যয় করো।

ছবি

দাবি মেনে নেওয়ায় অনশন ভাঙলেন জবি শিক্ষার্থীরা

ছবি

রাকসু নির্বাচনকে ঘিরে শিবির ও ছাত্রদলের ভিন্ন ভিন্ন দাবি

ছবি

ফের পোষ্য কোটা পুনর্বহালের দাবি, অন্যথায় ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে লাগাতার কর্মসূচি

ছবি

‘কাকতাড়ুয়া দহন’ কর্মসূচি দিয়ে সড়ক ছাড়লেন কারিগরির শিক্ষার্থীরা

ছবি

জকসু: ২৭ নভেম্বর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচন

ছবি

রাকসু: হাতে ভোট গোণা ও ৫ দাবি ছাত্রদলের, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে ভোটের সিদ্ধান্ত

ছবি

সাজেকে চাঁন্দের গাড়ি খাদে, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর মৃত্যু

ছবি

চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দেওয়ার সময় বাড়ল

ছবি

জগন্নাথ: নির্বাচনসহ ৩ দাবিতে ৪ জনের অনশনে ৩ জন অসুস্থ

চাকসু নির্বাচনে মনোনয়ন নেওয়ার সময় বাড়ল এক দিন

ছবি

গাজীপুরে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের রেলপথ অবরোধ, বিক্ষোভ

ছবি

রাকসু: ১৭ কেন্দ্রে ভোট, নিরাপত্তায় থাকবে দুই হাজার পুলিশ

ছবি

জকসুসহ ৩ দাবিতে বাগছাস ও ছাত্র অধিকারের অনশন

ছবি

ডাকসু নির্বাচন: ভোট হাতে গণনার আবেদন উমামা ফাতেমার

ছবি

এক সপ্তাহের মধ্যে জকসু নির্বাচনের রূপরেখাসহ ৫ দাবি গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের

ছবি

নারায়ণগঞ্জ চারুকলায় মাস্টার্স প্রোগ্রাম চালুর দাবি, প্রো-ভিসির আশ্বাস

ছবি

রাকসু: চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা, ভিপি পদে ১৮

ছবি

জাকসু নির্বাচন নিয়ে ১৬ অভিযোগ: নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি শিক্ষক নেটওয়ার্কের

ছবি

রাকসু: তিন সাবেক সমন্বয়কের ‘আধিপত্যবিরোধী ঐক্য’ প্যানেল, শিবিরের ‘ছায়ার’ গুঞ্জন

ছবি

জাকসু: ভোট গণনায় অসঙ্গতি, বৈধ ভোটের চেয়ে বেশী ভোটের হিসাব, বিজয়ী ঘোষণা করে পরে বাতিল

ছবি

রাকসু: নির্বাচনী প্রচারণায় মানতে হবে যেসব নিয়ম

ছবি

রাকসু: বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৩৯ জন হল সংসদে নির্বাচিত

ছবি

ডাকসুর নির্বাচিত প্রতিনিধিদের আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ

ছবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-রাকসু নির্বাচনে ঘোষিত নয়টি প্যানেল

ছবি

চাকসু নির্বাচনে মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু, প্রথম দিনেই সংগ্রহ ২৮টি

ছবি

রাকসু: স্বতন্ত্র প্রার্থীদের একাংশের প্যানেল, তবে নেই ভিপি, জিএস, এজিএস

ছবি

ডাকসুর প্রথম সভায় সিনেটের জন্য ৫ প্রতিনিধি মনোনীত

ছবি

৩৫ বছর পর চাকসু: মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু

ছবি

রাকসুর নীতিমালা সংশোধন, লটারিতে নির্ধারিত হবে ব্যালট নম্বর

জাকসু নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা হারায়নি: নবনির্বাচিত জিএস মাজহারুল

ছবি

রাকসু: আচরণবিধি ‘লঙ্ঘন’ করে চলছে প্রচার-প্রচারণা

ছবি

অব্যবস্থাপনায় প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনে জাকসুতেও অধিকাংশ শিবির, তবে ভিপি স্বতন্ত্র সাবেক ছাত্রলীগ

ছবি

৩৩ বছর পর জাকসু নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ভিপি, শিবিরের প্রার্থী জিএসে বিজয়ী

ছবি

জাহাঙ্গীরনগর: হল সংসদ নির্বাচনের ফলাফল, বিজয়ীদের তালিকা

ছবি

জাহাঙ্গীরনগর: হল সংসদ নির্বাচনের ফলাফল, বিজয়ীদের তালিকা

ছবি

অব্যবস্থাপনায় প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনে জাকসুতেও অধিকাংশ শিবির, ভিপি স্বতন্ত্র সাবেক ছাত্রলীগ

tab

ঢাবির ৫৩ তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত

শিক্ষার্জনকে সমাবর্তন আর সার্টিফিকেটেই সীমাবদ্ধ না রাখার আহ্বান রাষ্ট্রপতির

খালেদ মাহমুদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি

শনিবার, ১৯ নভেম্বর ২০২২

উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩ তম সমাবর্তন। আজ শনিবার (১৯ নভেম্বর) দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত এ সমাবর্তনে সভাপতিত্ব করেন রাষ্ট্রপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর মো. আবদুল হামিদ। সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নোবেলজয়ী ফরাসি অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. জ্যাঁ তিরোল।

সমাবর্তনে ডক্টর অব লজ’ ডিগ্রি প্রদান করা হয় নোবেল বিজয়ী ফরাসি অর্থনীতিবিদ ড. জঁ তিরোলকে। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তার হাতে ডক্টর অব লজের সনদ তুলে দেন। উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান তার হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন।

শিক্ষা ও গবেষণা এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রাখায় সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩১ জন কৃতী শিক্ষক, গবেষক ও শিক্ষার্থীকে ১৫৩টি স্বর্ণপদক দেওয়া হয়। এছাড়া ৯৭ জনকে পিএইচডি, ২ জনকে ডিবিএ এবং ৩৫ জনকে এম ফিল ডিগ্রি প্রদান করা হয়।

সভাপতির বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শুধুমাত্র উচ্চ শিক্ষার একটি প্রতিষ্ঠান নয়। এটি আমাদের নেতৃত্বের প্রতীক, আমাদের পথ প্রদর্শক। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিসংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধসহ বাঙালির প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে গৌরবময় ভূমিকা। প্রতিটি আন্দোলনের নিউক্লিয়াস ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনে প্রথম উত্তোলন করা হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের ঐতিহাসিক নিদর্শন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনও ইতিহাসের অংশ। ইতিহাস ও ঐতিহ্যের নিদর্শন সাথে নিয়েই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে চলেছে স্বমহিমায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও শিক্ষকদের দায়িত্বহীনতার সমালোচনা করে রাষ্ট্রপতি বলেন, একজন উপাচার্যের মূল দায়িত্ব হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রমের তত্ত্বাবধান। কিন্তু ইদানীং পত্রিকা খুললেই মনে হয় পরিবার পরিজন ও অনুগতদের চাকরি দেওয়া ও বিভিন্ন উপায়ে আর্থিক সুযোগ সুবিধা নেওয়াই যেন কিছু উপাচার্যের মূল দায়িত্ব। আবার অনেক শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিটাকে ঐচ্ছিক মনে করেন এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেওয়াকে তারা অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশের সঙ্গে এটি খুবই বেমানান।

রাষ্ট্রপতি বলেন, আমরা চাই উপাচার্যের নেতৃতে ছাত্র-শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা ও উচ্চশিক্ষার প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হোক। শিক্ষকরা হয়ে উঠুন সমাজের সম্মান ও মর্যাদার প্রতীক। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষকসহ যেকোনো নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধা ও যোগ্যতাকে প্রাধান্য দিতে হবে। কিছুসংখ্যক অসাধু লোকের কর্মকাণ্ডের জন্য গোটা শিক্ষক সমাজের মর্যাদা যেন ক্ষুন্ন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

"একসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশেষ মর্যাদার চোখে দেখা হতো। সময়ের বিবর্তনে ক্রমেই যেন সে ঐতিহ্য সংকুচিত হয়ে আসছে। অথচ ছাত্র শিক্ষক ভৌত অবকাঠামো এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা পর্যাপ্ত না হলেও কয়েকগুণ বেড়েছে। সে তুলনায় শিক্ষার গুণগত মান, গবেষণার ক্ষেত্র কতটুকু বেড়েছেও মূল্যায়ন করতে হবে।"

তিনি বলেন, গবেষণার বিষয়ে যেসব খবর প্রচারিত হয় তা দেখলে বা শুনলে অনেক সময় আচার্য হিসেবে আমাকেও লজ্জায় পড়তে হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে জাতির প্রত্যাশা অনেক। জাতিকে এগিয়ে নিতে আপনাদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।

শিক্ষার্জনকে সমাবর্তন আর সার্টিফিকেটেই সীমাবদ্ধ না রাখার আহ্বান জানিয়ে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতি বলেন, সমাবর্তনের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা একদিকে যেমন স্বীকৃতি লাভ করে তাদের মেধা ও প্রতিভার, তেমনি সচেতন হয়ে ওঠে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে। তাদের সুনাগরিক হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে এ ধরনের অনুষ্ঠান ও আনুষ্ঠানিকতার যে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে তা সর্বজনস্বীকৃত। তবে তোমাদের শিক্ষার্জন যেন সমাবর্তন আর সার্টিফিকেটেই সীমাবদ্ধ না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তোমাদের আজকের এই অর্জনের পিছনে বাবা-মা, শিক্ষকমণ্ডলী এবং রাষ্ট্রের যে অবদান ও ত্যাগ রয়েছে, তা হৃদয়ে ধারণ করতে হবে। দেশ ও জনগণের কল্যাণে সর্বদা নিজেকে নিয়োজিত রাখতে হবে।

এ সময় রাষ্ট্রপ্রধান শিক্ষার্থীদের কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার, কাউন্সেলিং অ্যান্ড সাপোর্ট সেন্টার এবং ক্যারিয়ার প্ল্যানিং ইউনিট চালু করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি সেশনজট কমানোর উদ্যোগ হিসেবে লস রিকভারি প্ল্যান, গবেষণা-প্রকাশনা মেলা আয়োজন এবং স্টুডেন্ট প্রমোশন অ্যান্ড সাপোর্ট ইউনিট চালু করায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে সমাবর্তন বক্তা ড. জ্যাঁ তিরোল বলেন, সাফল্যের জন্য তোমাদের নিজেকে বিশ্বাস করতে হবে। তোমাদের মেধা আছে, জ্ঞানের উপকরণ আছে। যতক্ষণ না নিজের সর্বোচ্চ সীমায় পৌছাবে, ততক্ষণ থামবে না। তোমার সংকল্প আর তোমার পারিপার্শ্বিকতাই তোমাকে অনেকদূর নিয়ে যাবে। তোমাদের এই যাত্রাপথে যারা তোমাদের সমর্থন জুগিয়েছে, তাদের প্রতি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবে। নতুন ডিগ্রি তোমার জন্য যেমন অনেক সুযোগ নিয়ে এসেছে, তেমনি এনেছে কিছু কর্তব্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গ্রাজুয়েট হিসেবে তোমাদের নিজের প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্ব করতে হবে।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে উপাচার্য ড মোঃ আখতারুজ্জামান বলেন, বর্তমান পৃথিবী তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর। তোমরা সর্বদা এর ইতিবাচক এবং নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে সচেতন থাকবে। মানব সভ্যতার উন্নয়নে যেই প্রযুক্তি তোমাদের ব্যবহার করার কথা, সচেতন থেকো সেই প্রযুক্তি যেন তোমাদের ব্যবহার করে না ফেলে। নিজেদের সময়কে সর্বোচ্চ সুন্দর এবং সৃষ্টিশীল কাজের পেছনে ব্যয় করো।

back to top