এবার আগুনে পুড়লো মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, নিঃস্ব হলো ব্যবসায়ীরা, অসহায়ের মত দাঁড়িয়ে আছে ধ্বংসস্তুপের উপর। ঋণের টাকায় করা দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেল -সোহরাব আলম
আবারও ভোর রাতের আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেট। এর আগে গত এপ্রিলে ভোরের আগুনেই পুড়ে ছাই হয়ে যায় বঙ্গবাজার ও নিউ মার্কেট। বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টায় মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিসের ১৭টি ইউনিট। ভোর পৌনে ৪টায় মার্কেটের ডানদিকে এই আগুনের সূত্রপাত হয় বলে জানা গেছে। এরপর একে একে ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটগুলো ঘটনাস্থলে যায়। তাদের সঙ্গে আগুন নিয়ন্ত্রণে যোগ দেয় সেনা, নৌ, বিমানবাহিনী, বিজিবি, র্যাব, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা।
প্রায় ৬ ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি, দোকান মালিক সমিতি এবং দোকান ব্যবসায়ী নেতারা, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী ও আঞ্চলিক কর্মকর্তা এবং ঢাকার জেলা প্রশাসক। ভয়াবহ এই আগুনে ওই মার্কেটে থাকা অন্তত ১৮টি জুয়েলারির দোকান পুড়ে গেছে। স্বর্ণের দোকান ছাড়াও মার্কেটটিতে কাপড়, প্লাস্টিকের মালামাল, ক্রোকারিজ ও ব্যাগের দোকান ছিল। আগুনে এসব দোকানও পুড়ে গেছে।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, মার্কেটটিতে সাড়ে ৪শ’র বেশি দোকান ছিল। এসব দোকানে কাজ করতেন প্রায় ২ হাজার মানুষ। এখানে সবজি দোকানের পাশাপাশি জুতা, কাপড় ও স্বর্ণের দোকানসহ অনেক ধরনের দোকান ছিল। মুদি, চাল, তৈজসপত্র, হার্ডওয়্যার, প্লাস্টিক, রূপসজ্জার পণ্যও বিক্রি হতো এখানে। শুধু মার্কেটের এক পাশে থাকা মাছ-মাংসের দোকানগুলোয় আগুন পৌঁছাতে পারেনি। ব্যবসায়ীদের দাবি, পুড়ে যাওয়া দোকানগুলোতে কোটি কোটি টাকার মালামাল ছিল। এই আগুনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ২০০ থেকে ২৫০ কোটি টাকা বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। মার্কেটের নতুন কাঁচা বাজার মালিক সমিতির অফিস সহকারী মুশফিকুর রহমান লিটন জানান, কাঁচা বাজারের প্রবেশমুখে থাকা হক বেকারি থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। তিনি বলেন, গত বুধবার শেষ রাতে এক নিরাপত্তাকর্মী এসে আমাকে জানান- হক বেকারি থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে আমি ছুটে গেলাম। গিয়ে দেখি আগুন ধরে গেছে। পরে অফিসে এসে ফায়ার সার্ভিসকে ফোন দেই। কিন্তু তারা কল ধরে নাই। পরে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ কল দেই। তারা বলে- আমরা তথ্য পেয়েছি। গাড়ি পাঠাচ্ছি। এর আধা ঘণ্টা পর দুইটা ছোট গাড়ি আসে। ততক্ষণে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। তবে আগুনের সূত্রপাত বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে হতে পারে।
আগুনে পুড়েছে যত দোকান
আগুনে মার্কেটের প্রায় ৪ শতাধিক দোকান পুড়ে গেছে বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা। মার্কেট ও কাঁচা বাজারে বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে প্রায় ৭০০-৮০০টি দোকান ছিল। তারা জানান, হক বেকারিতে আগুন লাগার পরই বাতাসে মুহূর্তেই তা ছড়িয়ে পড়ে। মার্কেট বন্ধ থাকায় ফায়ার সার্ভিস প্রথমে এসে ভেতরে ঢুকতে পারেনি। এজন্য আগুন আরও বেশি ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা বলেছেন, অবৈধ দোকানগুলো ছিল ফুটপাতে। সিটি করপোরেশন থেকে দোকান বরাদ্দ দেয়া ছিল ৩১৭টি। এর মধ্যে পুড়েছে ২১৭টি দোকান।
পুড়েছে ১৮টি স্বর্ণের দোকান
অগ্নিকান্ডে পুড়ে যাওয়া ১৮টি স্বর্ণের দোকানের মধ্যে আছে আলিফ জুয়েলার্স, হেনা জুয়েলার্স, দুবাই জুয়েলার্স, সিঙ্গাপুর জুয়েলার্স, মুন জুয়েলার্স, রিয়াদ জুয়েলার্স এবং মা জুয়েলার্স। দুবাই জুয়েলার্সের মালিক আমির হোসেন বলেন, আমার দুটি জুয়েলারির দোকান ছিল। ভোর ৪টায় খবর পেয়ে মার্কেটে আসি। তখনও আমার দোকানে আগুন লাগেনি। মার্কেট বন্ধ থাকায় সামান্য কিছু মালামাল সরাতে পারলেও সব সরাতে পারিনি। দুই দোকানে কয়েক কোটি টাকার জুয়েলারি মালামাল ছিল।
মার্কেটে ছিল না ফায়ার সেফটি
ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরে পরিচালক (অপারেশনস অ্যান্ড মেইনটেনেন্স) লে. কর্নেল মো. তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, এই মার্কেটে কোন ফায়ার সেফটি ছিল না। প্রাথমিক ফায়ার ফাইটিংয়ের কোন ব্যবস্থাই ছিল না। ফুটপাত ও সড়কে থাকা দোকান ও মানুষের কারণে অগ্নি নির্বাপণে সমস্যা হয়েছে। এখানে পানিরও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল না। তিনি বলেন, এই মার্কেটটিকে বার বার নোটিশ দেয়া হয়েছে এবং বিভিন্নভাবে গণসংযোগ করা হয়েছে। সচেতনতার প্রোগ্রাম যেভাবে আমরা করেছি সেভাবে তারা সাড়া দেয়নি। এই মার্কেট কিছুটা বঙ্গবাজার টাইপের। এখানে ভেতরে অনেক সাবওয়ে ছিল ছোট ছোট। রাত ৩টা ৫২ মিনিট থেকে আমরা এখানে আগুন নির্বাপণের কাজ শুরু করি। আমরা সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছি। ১৭টি ইউনিটে ১৫০ জন ফায়ার ফাইটার কাজ করেছেন। আমাদের সঙ্গে বিজিবি, পুলিশ, র্যাব, সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনী সহযোগিতা করেছে।
তবে ঢাকা মহানগর ব্যবসায়ী দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আরিফুর রহমান টিপু দাবি করেছেন, ফায়ার সার্ভিস কিংবা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, কোন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকেই ফায়ার সেফটি বাড়ানোর বিষয়ে কিংবা ‘মার্কেটটি ঝুঁকিপূর্ণ’ এমন নোটিশ ব্যবসায়ীরা পাননি। তিনি বলেন, আগুনে ৩০০ থেকে ৩৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। দোকান মালিক নয়, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের যেন ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়।
ফারুক আহমেদ নামে ওই মার্কেটের এক ব্যবসায়ী বলেন, এই মার্কেট যদি ঝুঁকিপূর্ণই হবে, তবে বন্ধ করা হলো না কেন? আগুন লাগলে, ক্ষতিগ্রস্ত হলে ক্ষতিপূরণ পায় দোকান মালিক, কেন? আগুন লাগলে ক্ষতি তো হয় দোকান ব্যবসায়ীর, দোকান মালিকের হয় না। যারা দোকানের মালিক তারা তো ভাড়া দিচ্ছেন ব্যবসায়ীদের কাছে। তারা ভাড়া নিচ্ছেন, কিন্তু আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দোকানে যিনি ব্যবসা করছেন তার।
তালিকা করা হয় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের
অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ও কর্মচারীদের তালিকা করতে বুথ খুলে ঢাকা জেলা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার বেলা ২টা থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের তালিকা সংগ্রহের কাজ শুরু হয়। ঢাকার জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে সেখানে অস্তায়ীভাবে একটি বুথ বসিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের তালিকা করার জন্য নির্দেশনা দেন।
সরেজমিন দেখা যায়, দোকানের তালিকা করার ক্ষেত্রে মূল মালিকের নামে সিটি করপোরেশনের বরাদ্দপত্র, দোকান ভাড়া দেয়া থাকলে তার প্রমাণপত্র, জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ও ট্রেড লাইসেন্স দেখে নিচ্ছেন জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এছাড়া দোকান কর্মচারীদেরও তালিকা করছেন তারা। এ ক্ষেত্রে কর্মচারীদের পরিচয়পত্র ও বেতনের প্রমাণপত্র দেখা হয়। ঢাকা জেলা প্রশাসনের ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আবদুর রহমান বলেন, আমরা তালিকা করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠাব। সেখান থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রয়োজনীয় নগদ অর্থ কিংবা অন্য সহায়তা দেয়া হবে। ঢাকা জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনও ব্যবসায়ী সমিতির মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের তালিকা করা শুরু করে।
অগ্নিনির্বাপণে ব্যবস্থা নিতে সরকার ব্যর্থ, বলছেন জিএম কাদের বৃহস্পতিবার দুপুরে অগ্নিকান্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি বলেন, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে লাগা আগুন দ্রুত নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকার সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। দেশে বিভিন্ন সময় অগ্নিকান্ড ঘটছে। আগে থেকে প্রতিরোধমূলক কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। এসব ঘটনা যেন না ঘটে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে।
মানবিক সহায়তায় আনসার
অগ্নিকান্ডে মানবিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী। ফায়ার সার্ভিসকে সহায়তা প্রদান, উদ্ধার কার্যক্রমে অংশগ্রহণ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং উদ্ধার কাজে অংশগ্রহণকারীদের মাঝে বাহিনীর পক্ষ থেকে দুপুরের খাবার বিতরণ করা হয়।
উদ্ধার কাজে তৃতীয়লিঙ্গের সদস্যরা
উদ্ধার কাজে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি অংশ নেয় এলাকার তৃতীয়লিঙ্গরাও। জীবনের ঝুঁকি নিয়েই তারা উদ্ধার কাজ করেন। এতে তাদের কেউ আহত হলেও তারা থেমে থাকেননি। তৃতীয়লিঙ্গের সদস্যরা বলছিলেন, এখান থেকে আমাদের পেটে ভাত জুটে। এগুলো আমাদেরই দোকান। আমরা যে যা পারছি তা উদ্ধার করেছি, বাঁচানোর চেষ্টা করেছি।
আশপাশের সড়কে যানজট
আগুনের ঘটনায় মোহাম্মদপুরের কয়েকটি এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর প্রভাব পড়েছে আশপাশের সড়কে। এতে মিরপুর সড়কে দেখা যায় তীব্র যানজট। ফলে ভোগান্তিতে পড়েন এ পথের যাত্রীরা। অনেকে বাস থেকে নেমে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যাওয়া শুরু করেন। বৃহস্পতিবার সকালে কল্যাণপুর, শ্যামলী, আসাদ গেট এলাকায় ধীর গতিতে যানবাহন চলতে দেখা গেছে। মূল সড়কে উঠতে না পেরে অলিগলিতে রিকশা ও ব্যক্তিগত গাড়ির জট দেখা গেছে।
আগুন নিয়ন্ত্রণে ডিএমপি
কৃষি মার্কেটে অগ্নিকান্ডে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের মালামাল, কাপড়-চোপড় নিজের কাঁধে বহন করে উদ্ধারের কাজে অংশগ্রহণ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এছাড়া আশপাশের এলাকার যানজট নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছে ডিএমপির ট্রাফিক পুলিশ।
‘আমরা পাকা মার্কেট চাই, তার অর্থ এই না যে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে পাকা মার্কেট করবো’ : হেলাল উদ্দিন
গত রমজান মাসের পর রাজধানী ঢাকায় যতগুলো মার্কেটে আগুন লেগেছে, এর প্রায় সবগুলোই সিটি করপোরেশনের মার্কেট। এছাড়া সিটি করপোরেশনের যে মার্কেটগুলো ভাঙার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, যে মার্কেটগুলো পাকা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে, সেই মার্কেটগুলোই আগুনে জ্বলছে। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বৃহস্পতিবার বেলা ২টার দিকে আগুনে পোড়া মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট পরিদর্শন শেষে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের এই মার্কেটগুলো কাঁচা মানের অটোমেটিক গড়ে ওঠা মার্কেট। এগুলো পরিকল্পিত মার্কেট না, সেটা আমরা সবাই জানি। অনেক আধুনিক মার্কেটেও অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকে না। সিটি করপোরেশনের যে মার্কেটগুলো ভাঙার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, যে মার্কেটগুলো পাকা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে, সেই মার্কেটগুলোই আগুনে জ্বলছে। আমরা এর আগেও বঙ্গমার্কেটসহ অন্যান্য মার্কেট দেখলাম, এবার দেখলাম কৃষি মার্কেট।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘আমরা পাকা মার্কেট চাই, তার অর্থ এই না আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে আমরা পাকা মার্কেট করবো। এটার কোন যৌক্তিকতা নেই। সিটি করপোরেশন যদি মনে করে, এই মার্কেট চলবে না, তাহলে ১৫ দিন আগে বলতো। আমরা বন্ধ করতে সহযোগিতা করতাম। এখনও যদি তারা মনে করে কোন মার্কেট ভেঙে নতুন করে করবে, সমস্যা নাই। কিন্তু দোকানদারদের দোকান বুঝিয়ে দিতে হবে, কতদিনে দেবেন সেটাও সেটাও বুঝতে হবে, দাম কেমন হবে সেটাও বুঝতে হবে। সিটি করপোরেশন বিল্ডিং করে এমন একটা দাম ধরবে, যেটা আমাদের ক্ষুদ্র দোকানিরা কিনতে পারবে না, এই ভয়টা আমাদের মধ্যে থাকে। এ কারণে আমরা মনে করি ভালো তদন্ত কমিটি দরকার।’
তিনি বলেন, ‘আগুন লাগলেই সিটি করপোরেশন একটা তদন্ত কমিটি করে এবং ফায়ার সার্ভিস তদন্ত শেষে বলে দেয়, শর্টসার্কিট থেকে আগুন লেগেছে। প্রত্যেক মার্কেটে শর্টসার্কিট থেকে আগুন লাগবে, আর সেই আগুন এত ভয়াবহ হবে, আর ফায়ার সার্ভিস যাদের আমরা এত প্রশংসা করি, কই তারা আমাদের কোন দোকান তো বাঁচাতে পারে না। যেহেতু সিটি করপোরেশনের মার্কেট সেহেতু অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থায় তারা দায়িত্বের অবহেলা করছে কি না, এমন প্রশ্নে হেলাল বলেন, ‘অবশ্যই। যখন আগুনে আমাদের সব ধংস হয়ে যায়, আমরা যখন নিঃস্ব হই তখন কথা আসে এখানে অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না। আগুনের ঘটনাগুলো একই সময়ে ঘটছে এবং সব ধ্বংস হচ্ছে। সব মার্কেটের বিদ্যুতের মেইন সুইস বন্ধ করে আমরা বের হয়ে যাই। সেখানে আবার শর্টসার্কিট থেকে কীভাবে আগুন লাগে?’
এবার আগুনে পুড়লো মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, নিঃস্ব হলো ব্যবসায়ীরা, অসহায়ের মত দাঁড়িয়ে আছে ধ্বংসস্তুপের উপর। ঋণের টাকায় করা দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেল -সোহরাব আলম
বৃহস্পতিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩
আবারও ভোর রাতের আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেট। এর আগে গত এপ্রিলে ভোরের আগুনেই পুড়ে ছাই হয়ে যায় বঙ্গবাজার ও নিউ মার্কেট। বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টায় মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিসের ১৭টি ইউনিট। ভোর পৌনে ৪টায় মার্কেটের ডানদিকে এই আগুনের সূত্রপাত হয় বলে জানা গেছে। এরপর একে একে ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটগুলো ঘটনাস্থলে যায়। তাদের সঙ্গে আগুন নিয়ন্ত্রণে যোগ দেয় সেনা, নৌ, বিমানবাহিনী, বিজিবি, র্যাব, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা।
প্রায় ৬ ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি, দোকান মালিক সমিতি এবং দোকান ব্যবসায়ী নেতারা, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী ও আঞ্চলিক কর্মকর্তা এবং ঢাকার জেলা প্রশাসক। ভয়াবহ এই আগুনে ওই মার্কেটে থাকা অন্তত ১৮টি জুয়েলারির দোকান পুড়ে গেছে। স্বর্ণের দোকান ছাড়াও মার্কেটটিতে কাপড়, প্লাস্টিকের মালামাল, ক্রোকারিজ ও ব্যাগের দোকান ছিল। আগুনে এসব দোকানও পুড়ে গেছে।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, মার্কেটটিতে সাড়ে ৪শ’র বেশি দোকান ছিল। এসব দোকানে কাজ করতেন প্রায় ২ হাজার মানুষ। এখানে সবজি দোকানের পাশাপাশি জুতা, কাপড় ও স্বর্ণের দোকানসহ অনেক ধরনের দোকান ছিল। মুদি, চাল, তৈজসপত্র, হার্ডওয়্যার, প্লাস্টিক, রূপসজ্জার পণ্যও বিক্রি হতো এখানে। শুধু মার্কেটের এক পাশে থাকা মাছ-মাংসের দোকানগুলোয় আগুন পৌঁছাতে পারেনি। ব্যবসায়ীদের দাবি, পুড়ে যাওয়া দোকানগুলোতে কোটি কোটি টাকার মালামাল ছিল। এই আগুনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ২০০ থেকে ২৫০ কোটি টাকা বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। মার্কেটের নতুন কাঁচা বাজার মালিক সমিতির অফিস সহকারী মুশফিকুর রহমান লিটন জানান, কাঁচা বাজারের প্রবেশমুখে থাকা হক বেকারি থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। তিনি বলেন, গত বুধবার শেষ রাতে এক নিরাপত্তাকর্মী এসে আমাকে জানান- হক বেকারি থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে আমি ছুটে গেলাম। গিয়ে দেখি আগুন ধরে গেছে। পরে অফিসে এসে ফায়ার সার্ভিসকে ফোন দেই। কিন্তু তারা কল ধরে নাই। পরে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ কল দেই। তারা বলে- আমরা তথ্য পেয়েছি। গাড়ি পাঠাচ্ছি। এর আধা ঘণ্টা পর দুইটা ছোট গাড়ি আসে। ততক্ষণে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। তবে আগুনের সূত্রপাত বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে হতে পারে।
আগুনে পুড়েছে যত দোকান
আগুনে মার্কেটের প্রায় ৪ শতাধিক দোকান পুড়ে গেছে বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা। মার্কেট ও কাঁচা বাজারে বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে প্রায় ৭০০-৮০০টি দোকান ছিল। তারা জানান, হক বেকারিতে আগুন লাগার পরই বাতাসে মুহূর্তেই তা ছড়িয়ে পড়ে। মার্কেট বন্ধ থাকায় ফায়ার সার্ভিস প্রথমে এসে ভেতরে ঢুকতে পারেনি। এজন্য আগুন আরও বেশি ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা বলেছেন, অবৈধ দোকানগুলো ছিল ফুটপাতে। সিটি করপোরেশন থেকে দোকান বরাদ্দ দেয়া ছিল ৩১৭টি। এর মধ্যে পুড়েছে ২১৭টি দোকান।
পুড়েছে ১৮টি স্বর্ণের দোকান
অগ্নিকান্ডে পুড়ে যাওয়া ১৮টি স্বর্ণের দোকানের মধ্যে আছে আলিফ জুয়েলার্স, হেনা জুয়েলার্স, দুবাই জুয়েলার্স, সিঙ্গাপুর জুয়েলার্স, মুন জুয়েলার্স, রিয়াদ জুয়েলার্স এবং মা জুয়েলার্স। দুবাই জুয়েলার্সের মালিক আমির হোসেন বলেন, আমার দুটি জুয়েলারির দোকান ছিল। ভোর ৪টায় খবর পেয়ে মার্কেটে আসি। তখনও আমার দোকানে আগুন লাগেনি। মার্কেট বন্ধ থাকায় সামান্য কিছু মালামাল সরাতে পারলেও সব সরাতে পারিনি। দুই দোকানে কয়েক কোটি টাকার জুয়েলারি মালামাল ছিল।
মার্কেটে ছিল না ফায়ার সেফটি
ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরে পরিচালক (অপারেশনস অ্যান্ড মেইনটেনেন্স) লে. কর্নেল মো. তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, এই মার্কেটে কোন ফায়ার সেফটি ছিল না। প্রাথমিক ফায়ার ফাইটিংয়ের কোন ব্যবস্থাই ছিল না। ফুটপাত ও সড়কে থাকা দোকান ও মানুষের কারণে অগ্নি নির্বাপণে সমস্যা হয়েছে। এখানে পানিরও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল না। তিনি বলেন, এই মার্কেটটিকে বার বার নোটিশ দেয়া হয়েছে এবং বিভিন্নভাবে গণসংযোগ করা হয়েছে। সচেতনতার প্রোগ্রাম যেভাবে আমরা করেছি সেভাবে তারা সাড়া দেয়নি। এই মার্কেট কিছুটা বঙ্গবাজার টাইপের। এখানে ভেতরে অনেক সাবওয়ে ছিল ছোট ছোট। রাত ৩টা ৫২ মিনিট থেকে আমরা এখানে আগুন নির্বাপণের কাজ শুরু করি। আমরা সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছি। ১৭টি ইউনিটে ১৫০ জন ফায়ার ফাইটার কাজ করেছেন। আমাদের সঙ্গে বিজিবি, পুলিশ, র্যাব, সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনী সহযোগিতা করেছে।
তবে ঢাকা মহানগর ব্যবসায়ী দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আরিফুর রহমান টিপু দাবি করেছেন, ফায়ার সার্ভিস কিংবা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, কোন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকেই ফায়ার সেফটি বাড়ানোর বিষয়ে কিংবা ‘মার্কেটটি ঝুঁকিপূর্ণ’ এমন নোটিশ ব্যবসায়ীরা পাননি। তিনি বলেন, আগুনে ৩০০ থেকে ৩৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। দোকান মালিক নয়, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের যেন ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়।
ফারুক আহমেদ নামে ওই মার্কেটের এক ব্যবসায়ী বলেন, এই মার্কেট যদি ঝুঁকিপূর্ণই হবে, তবে বন্ধ করা হলো না কেন? আগুন লাগলে, ক্ষতিগ্রস্ত হলে ক্ষতিপূরণ পায় দোকান মালিক, কেন? আগুন লাগলে ক্ষতি তো হয় দোকান ব্যবসায়ীর, দোকান মালিকের হয় না। যারা দোকানের মালিক তারা তো ভাড়া দিচ্ছেন ব্যবসায়ীদের কাছে। তারা ভাড়া নিচ্ছেন, কিন্তু আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দোকানে যিনি ব্যবসা করছেন তার।
তালিকা করা হয় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের
অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ও কর্মচারীদের তালিকা করতে বুথ খুলে ঢাকা জেলা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার বেলা ২টা থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের তালিকা সংগ্রহের কাজ শুরু হয়। ঢাকার জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে সেখানে অস্তায়ীভাবে একটি বুথ বসিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের তালিকা করার জন্য নির্দেশনা দেন।
সরেজমিন দেখা যায়, দোকানের তালিকা করার ক্ষেত্রে মূল মালিকের নামে সিটি করপোরেশনের বরাদ্দপত্র, দোকান ভাড়া দেয়া থাকলে তার প্রমাণপত্র, জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ও ট্রেড লাইসেন্স দেখে নিচ্ছেন জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এছাড়া দোকান কর্মচারীদেরও তালিকা করছেন তারা। এ ক্ষেত্রে কর্মচারীদের পরিচয়পত্র ও বেতনের প্রমাণপত্র দেখা হয়। ঢাকা জেলা প্রশাসনের ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আবদুর রহমান বলেন, আমরা তালিকা করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠাব। সেখান থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রয়োজনীয় নগদ অর্থ কিংবা অন্য সহায়তা দেয়া হবে। ঢাকা জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনও ব্যবসায়ী সমিতির মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের তালিকা করা শুরু করে।
অগ্নিনির্বাপণে ব্যবস্থা নিতে সরকার ব্যর্থ, বলছেন জিএম কাদের বৃহস্পতিবার দুপুরে অগ্নিকান্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি বলেন, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে লাগা আগুন দ্রুত নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকার সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। দেশে বিভিন্ন সময় অগ্নিকান্ড ঘটছে। আগে থেকে প্রতিরোধমূলক কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। এসব ঘটনা যেন না ঘটে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে।
মানবিক সহায়তায় আনসার
অগ্নিকান্ডে মানবিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী। ফায়ার সার্ভিসকে সহায়তা প্রদান, উদ্ধার কার্যক্রমে অংশগ্রহণ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং উদ্ধার কাজে অংশগ্রহণকারীদের মাঝে বাহিনীর পক্ষ থেকে দুপুরের খাবার বিতরণ করা হয়।
উদ্ধার কাজে তৃতীয়লিঙ্গের সদস্যরা
উদ্ধার কাজে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি অংশ নেয় এলাকার তৃতীয়লিঙ্গরাও। জীবনের ঝুঁকি নিয়েই তারা উদ্ধার কাজ করেন। এতে তাদের কেউ আহত হলেও তারা থেমে থাকেননি। তৃতীয়লিঙ্গের সদস্যরা বলছিলেন, এখান থেকে আমাদের পেটে ভাত জুটে। এগুলো আমাদেরই দোকান। আমরা যে যা পারছি তা উদ্ধার করেছি, বাঁচানোর চেষ্টা করেছি।
আশপাশের সড়কে যানজট
আগুনের ঘটনায় মোহাম্মদপুরের কয়েকটি এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর প্রভাব পড়েছে আশপাশের সড়কে। এতে মিরপুর সড়কে দেখা যায় তীব্র যানজট। ফলে ভোগান্তিতে পড়েন এ পথের যাত্রীরা। অনেকে বাস থেকে নেমে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যাওয়া শুরু করেন। বৃহস্পতিবার সকালে কল্যাণপুর, শ্যামলী, আসাদ গেট এলাকায় ধীর গতিতে যানবাহন চলতে দেখা গেছে। মূল সড়কে উঠতে না পেরে অলিগলিতে রিকশা ও ব্যক্তিগত গাড়ির জট দেখা গেছে।
আগুন নিয়ন্ত্রণে ডিএমপি
কৃষি মার্কেটে অগ্নিকান্ডে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের মালামাল, কাপড়-চোপড় নিজের কাঁধে বহন করে উদ্ধারের কাজে অংশগ্রহণ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এছাড়া আশপাশের এলাকার যানজট নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছে ডিএমপির ট্রাফিক পুলিশ।
‘আমরা পাকা মার্কেট চাই, তার অর্থ এই না যে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে পাকা মার্কেট করবো’ : হেলাল উদ্দিন
গত রমজান মাসের পর রাজধানী ঢাকায় যতগুলো মার্কেটে আগুন লেগেছে, এর প্রায় সবগুলোই সিটি করপোরেশনের মার্কেট। এছাড়া সিটি করপোরেশনের যে মার্কেটগুলো ভাঙার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, যে মার্কেটগুলো পাকা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে, সেই মার্কেটগুলোই আগুনে জ্বলছে। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বৃহস্পতিবার বেলা ২টার দিকে আগুনে পোড়া মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট পরিদর্শন শেষে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের এই মার্কেটগুলো কাঁচা মানের অটোমেটিক গড়ে ওঠা মার্কেট। এগুলো পরিকল্পিত মার্কেট না, সেটা আমরা সবাই জানি। অনেক আধুনিক মার্কেটেও অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকে না। সিটি করপোরেশনের যে মার্কেটগুলো ভাঙার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, যে মার্কেটগুলো পাকা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে, সেই মার্কেটগুলোই আগুনে জ্বলছে। আমরা এর আগেও বঙ্গমার্কেটসহ অন্যান্য মার্কেট দেখলাম, এবার দেখলাম কৃষি মার্কেট।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘আমরা পাকা মার্কেট চাই, তার অর্থ এই না আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে আমরা পাকা মার্কেট করবো। এটার কোন যৌক্তিকতা নেই। সিটি করপোরেশন যদি মনে করে, এই মার্কেট চলবে না, তাহলে ১৫ দিন আগে বলতো। আমরা বন্ধ করতে সহযোগিতা করতাম। এখনও যদি তারা মনে করে কোন মার্কেট ভেঙে নতুন করে করবে, সমস্যা নাই। কিন্তু দোকানদারদের দোকান বুঝিয়ে দিতে হবে, কতদিনে দেবেন সেটাও সেটাও বুঝতে হবে, দাম কেমন হবে সেটাও বুঝতে হবে। সিটি করপোরেশন বিল্ডিং করে এমন একটা দাম ধরবে, যেটা আমাদের ক্ষুদ্র দোকানিরা কিনতে পারবে না, এই ভয়টা আমাদের মধ্যে থাকে। এ কারণে আমরা মনে করি ভালো তদন্ত কমিটি দরকার।’
তিনি বলেন, ‘আগুন লাগলেই সিটি করপোরেশন একটা তদন্ত কমিটি করে এবং ফায়ার সার্ভিস তদন্ত শেষে বলে দেয়, শর্টসার্কিট থেকে আগুন লেগেছে। প্রত্যেক মার্কেটে শর্টসার্কিট থেকে আগুন লাগবে, আর সেই আগুন এত ভয়াবহ হবে, আর ফায়ার সার্ভিস যাদের আমরা এত প্রশংসা করি, কই তারা আমাদের কোন দোকান তো বাঁচাতে পারে না। যেহেতু সিটি করপোরেশনের মার্কেট সেহেতু অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থায় তারা দায়িত্বের অবহেলা করছে কি না, এমন প্রশ্নে হেলাল বলেন, ‘অবশ্যই। যখন আগুনে আমাদের সব ধংস হয়ে যায়, আমরা যখন নিঃস্ব হই তখন কথা আসে এখানে অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না। আগুনের ঘটনাগুলো একই সময়ে ঘটছে এবং সব ধ্বংস হচ্ছে। সব মার্কেটের বিদ্যুতের মেইন সুইস বন্ধ করে আমরা বের হয়ে যাই। সেখানে আবার শর্টসার্কিট থেকে কীভাবে আগুন লাগে?’