রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ‘অবৈধ অস্ত্র’ বড় সমস্যা বলে মনে করছে পুলিশ। বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে সম্প্রতি রাজধানীর পুরান ঢাকা ও মিরপুরের পল্লবীতে দুইজনকে হত্যার ঘটনায়। এরই মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় ‘সন্ত্রাসীদের’ গুলিতে সাধারণ মানুষেরও প্রাণ ঝরেছে।
অবৈধ পিস্তল ৭০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা; দেশীয় অস্ত্র ৫-৭ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে
জুলাই আন্দোলনে থানা ভেঙে লুট করা ৫,৭৬৩টি অস্ত্রের মধ্যে উদ্ধার হয়েছে ৪,৪২৩টি; এখনও হদিস
নেই ১৩৪০টির
অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চলছে: পুলিশ সদর দপ্তর
আবার দুর্বৃত্তরা অনেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অঙ্গসংগঠনের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে চাঁদাবাজি, দখল বাণিজ্যসহ নানা অপরাধে জড়িত হচ্ছে।
পুলিশের তথ্য বলছে, সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ গ্রুপগুলো দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে পদ্মার দুর্গম ও বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল পর্যন্ত অবস্থান নিয়ে নানা অপরাধ করছে। তাদের দাপটে চরবাসী থাকে ভীত সন্ত্রন্ত। তাদের মধ্যে কমপক্ষে ১১টি গ্রুপ রয়েছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে পদ্মার দুর্গম চরাঞ্চলে অবস্থান নিয়ে রাজশাহী, নাটোর ও পাবনার সীমান্তবর্তী চরাঞ্চলগুলো নিয়ন্ত্রণ করতো।
সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তর ও রাজশাহী বিভাগীয় পুলিশ পরিকল্পনা করে অভিযান চালিয়ে রিভলবার ও শুটারগান, পাইপগানসহ ১০টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করছে, অন্যান্য ধারালো অস্ত্রও রয়েছে। তিনটি জেলার চরাঞ্চলে যৌথ অভিযান চালিয়ে ৫৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের রাজশাহী বিভাগের ডিআইজি মোহাম্মদ শাহজাহান।
# উদ্ধার অভিযান, লুটের ১৩৪০ অস্ত্রের হদিস নেই
এর আগে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর-আইএসপিআর জানায়, গত ২৬ অক্টোবর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রেলস্টেশনে রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনের একটি বগি তল্লাশি করে বিদেশি পিস্তলসহ গুলি ও বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে।
সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে গোয়েন্দা সংস্থা ও রেলওয়ে পুলিশের সহায়তা উদ্ধারকৃত অস্ত্রের মধ্যে আটটি বিদেশি পিস্তল, ১৬টি ম্যাগজিন, ২৬ রাউন্ড অ্যামুনিশন, ২ দশমিক ৩৯ কেজি গান পাউডার, ২ দশমিক ২৩ কেজি পন্টাস্টিক বিস্ফোরক উদ্ধার করে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ৪ জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
আইএসপিআরের সহকারী পরিচালক রাশেদুল আলম খান জানান, ‘সন্ত্রাস, নাশকতা ও অপরাধ দমনে এ ধরনের সমন্বিত অভিযান অব্যাহত থাকবে।’
চট্টগ্রামের রাউজান থানা পুলিশ দুই দফায় অভিযান ও চেকপোস্টে তল্লাশি চালিয়ে বিদেশি পিস্তল, রিভলবার, থানা থেকে লুট হওয়া একটি চাইনিজ রাইফেল, একটি শটগান, ৪৯ রাউন্ড চাইনিজ রাইফেলের গুলি, ১৭ রাউন্ড শটগানের কার্তুজ, ১৬ রাউন্ড পিস্তলের গুলি উদ্ধার করছে।
পুলিশ সদর দপ্তর থেকে সংবাদকে জানিয়েছে, ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে গত ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সারাদেশে অভিযান চালিয়ে এক হাজার ৪শ’ ১৪টি (১৪১৪টি) আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করছে। সঙ্গে গোলাবারুদও রয়েছে। অভিযানে গত বছর জুলাই অভ্যুত্থ্যানের সময় পুলিশের লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদও উদ্ধার করা হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের সর্বশেষ তথ্যমতে, গত বছর জুলাই অভ্যুত্থানের সময় পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনা থেকে লুট হয়েছে মোট ৫ হাজার ৭শ’ ৬৩টি অস্ত্র। তার মধ্যে উদ্ধার হয়েছে ৪,৪২৩টি। এখনও সন্ধান নেই ১৩৪০টি অস্ত্রের।
পুলিশের লুটকৃত গোলাবারুদের সংখ্যা হলো ৬ লাখ ৫২ হাজার আটটি। উদ্ধার হয়েছে ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৭শ’ ২৮টি। এখনও উদ্ধার হয়নি ২ লাখ ৫৭ হাজার ২৮০টি। তবে পুলিশ জানিয়েছে, বাকি অস্ত্র উদ্ধারে তাদের অভিযান অব্যাহত আছে।
অভিযান চলাকালে প্রতিদিন এক হাজার থেকে ১৫ শতাধিক সন্দেহভাজনকে আটক করা হয়েছে। এ হিসেবে গত ১০ মাসে গড়ে সাড়ে ৪ লাখ ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকেই ‘হত্যা, চাঁদবাজি, মাদকসহ বিভিন্ন মামলার আসামি’।
# অভিনব কায়দা, অস্ত্রের দরদাম
অস্ত্র পরিবহনেও অভিনব কায়দা দেখছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রাজশাহীতে গরুর মাংসের ভিতরে নতুন কৌশলে অস্ত্র রেখে প্রথমে ফ্রিজে রাখা হয়। এরপর তা ব্যাগে করে বহনের সময় তল্লাশিতে ধরা পড়ে। পুলিশ অস্ত্রসহ একজনকে গ্রেপ্তার করে।
পুলিশ সূত্রে অবৈধ অস্ত্র বেচাকেনা প্রসঙ্গে জানা যায়, বিদেশি পিস্তল ও রিভলবার ৭০ হাজার থেকে এক লাখ টাকায় পর্যন্ত বেচাকেনা হয়। দেশে তৈরি পাইপগানসহ অন্যান্য অস্ত্র ৫-৭ হাজার টাকায় কেনাবেচা হয়। গুলিও কেনাবেচা হচ্ছে।
# অস্ত্র আইনে যত মামলা
পুলিশ সদর দপ্তরের এক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, গত জানুয়ারি মাসে ১২৯টি অস্ত্র আইনে মামলা হয়েছে, ৩৫টি বিস্ফোরক আইনের মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। আর ফেব্রুয়ারি মাসে অস্ত্র আইনের ১০১টি মামলা এবং বিস্ফোরক আইনে ৩৭টি মামলা রেকর্ড করা হয়েছে।
গত মার্চ মাসে অস্ত্র আইনে ১৩১টি অভিযোগ এবং ২৯টি অভিযোগ রয়েছে বিস্ফোরক আইনে। গত এপ্রিলে ১৪০টি অস্ত্র আইনের মামলা এবং বিস্ফোরক আইনে ৩৫টি অভিযোগ রেকর্ড রয়েছে।
মে মাসে ১৯৮টি অস্ত্র আইনের অভিযোগ ও ৩৩টি বিস্ফোরক আইনের অভিযোগ রয়েছে। জুনে ২০৩টি অস্ত্র আইনের অভিযোগ ও ২৯টি বিস্ফোরক আইনের অভিযোগ রয়েছে।
জুলাইয়ে অস্ত্র আইনের ১৫৫টি ও বিস্ফোরক আইনে ৩৪টি অভিযোগ; এবং গত আগস্টে ১৪৮টি অস্ত্র আইনে ও ৩২টি বিস্ফোরক আইনের অভিযোগ রেকর্ড করা হয়েছে। আর সেপ্টেম্বরে ১৪৫টি অস্ত্র আইনে ও ২১টি বিস্ফোরক আইনের অভিযোগ রয়েছে।
সর্বশেষ গত ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত অস্ত্র আইনের ১৫৬টি অভিযোগ ও বিস্ফোরক আইনের ৩৬টি অভিযোগ রেকর্ড করা হয়েছে। এইভাবে প্রতি মাসে অভিযোগের তালিকার রেকর্ড বাড়ছে।
# জনমনে উদ্বেগ, পুলিশের ‘অভিযান’
সম্প্রতি পুরানে ঢাকার আদালত পাড়ায় একজনকে দিনে-দুপুরে গুলি করে হত্যা; এরপর পল্লবীতে দোকানে বসা অবস্থায় একজন রাজনৈতিক কর্মীকে গুলি করে হত্যা এ দুই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর জনমনে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে।
প্রশ্ন উঠেছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও। এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে বলা হয়েছে, সারাদেশে পুলিশসহ অন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান অব্যাহত আছে। প্রতিদিন অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার হচ্ছে। অপরাধীদের গ্রেপ্তারও করা হচ্ছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি (মিডিয়া) তালেবুর রহমান জানান, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও চিহ্নিত অপরাধীদের বিরুদ্ধে পুলিশের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত আছে। পুরান ঢাকায় আদালতের অদূরে গুলি করে হত্যার ঘটনায় এরই মধ্যে পাঁচজন এবং পল্লবীর হত্যাকা-ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত আছে বলেও উল্লেখ করেন তালেবুর রহমান।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
সোমবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৫
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ‘অবৈধ অস্ত্র’ বড় সমস্যা বলে মনে করছে পুলিশ। বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে সম্প্রতি রাজধানীর পুরান ঢাকা ও মিরপুরের পল্লবীতে দুইজনকে হত্যার ঘটনায়। এরই মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় ‘সন্ত্রাসীদের’ গুলিতে সাধারণ মানুষেরও প্রাণ ঝরেছে।
অবৈধ পিস্তল ৭০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা; দেশীয় অস্ত্র ৫-৭ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে
জুলাই আন্দোলনে থানা ভেঙে লুট করা ৫,৭৬৩টি অস্ত্রের মধ্যে উদ্ধার হয়েছে ৪,৪২৩টি; এখনও হদিস
নেই ১৩৪০টির
অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চলছে: পুলিশ সদর দপ্তর
আবার দুর্বৃত্তরা অনেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অঙ্গসংগঠনের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে চাঁদাবাজি, দখল বাণিজ্যসহ নানা অপরাধে জড়িত হচ্ছে।
পুলিশের তথ্য বলছে, সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ গ্রুপগুলো দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে পদ্মার দুর্গম ও বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল পর্যন্ত অবস্থান নিয়ে নানা অপরাধ করছে। তাদের দাপটে চরবাসী থাকে ভীত সন্ত্রন্ত। তাদের মধ্যে কমপক্ষে ১১টি গ্রুপ রয়েছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে পদ্মার দুর্গম চরাঞ্চলে অবস্থান নিয়ে রাজশাহী, নাটোর ও পাবনার সীমান্তবর্তী চরাঞ্চলগুলো নিয়ন্ত্রণ করতো।
সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তর ও রাজশাহী বিভাগীয় পুলিশ পরিকল্পনা করে অভিযান চালিয়ে রিভলবার ও শুটারগান, পাইপগানসহ ১০টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করছে, অন্যান্য ধারালো অস্ত্রও রয়েছে। তিনটি জেলার চরাঞ্চলে যৌথ অভিযান চালিয়ে ৫৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের রাজশাহী বিভাগের ডিআইজি মোহাম্মদ শাহজাহান।
# উদ্ধার অভিযান, লুটের ১৩৪০ অস্ত্রের হদিস নেই
এর আগে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর-আইএসপিআর জানায়, গত ২৬ অক্টোবর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রেলস্টেশনে রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনের একটি বগি তল্লাশি করে বিদেশি পিস্তলসহ গুলি ও বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে।
সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে গোয়েন্দা সংস্থা ও রেলওয়ে পুলিশের সহায়তা উদ্ধারকৃত অস্ত্রের মধ্যে আটটি বিদেশি পিস্তল, ১৬টি ম্যাগজিন, ২৬ রাউন্ড অ্যামুনিশন, ২ দশমিক ৩৯ কেজি গান পাউডার, ২ দশমিক ২৩ কেজি পন্টাস্টিক বিস্ফোরক উদ্ধার করে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ৪ জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
আইএসপিআরের সহকারী পরিচালক রাশেদুল আলম খান জানান, ‘সন্ত্রাস, নাশকতা ও অপরাধ দমনে এ ধরনের সমন্বিত অভিযান অব্যাহত থাকবে।’
চট্টগ্রামের রাউজান থানা পুলিশ দুই দফায় অভিযান ও চেকপোস্টে তল্লাশি চালিয়ে বিদেশি পিস্তল, রিভলবার, থানা থেকে লুট হওয়া একটি চাইনিজ রাইফেল, একটি শটগান, ৪৯ রাউন্ড চাইনিজ রাইফেলের গুলি, ১৭ রাউন্ড শটগানের কার্তুজ, ১৬ রাউন্ড পিস্তলের গুলি উদ্ধার করছে।
পুলিশ সদর দপ্তর থেকে সংবাদকে জানিয়েছে, ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে গত ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সারাদেশে অভিযান চালিয়ে এক হাজার ৪শ’ ১৪টি (১৪১৪টি) আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করছে। সঙ্গে গোলাবারুদও রয়েছে। অভিযানে গত বছর জুলাই অভ্যুত্থ্যানের সময় পুলিশের লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদও উদ্ধার করা হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের সর্বশেষ তথ্যমতে, গত বছর জুলাই অভ্যুত্থানের সময় পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনা থেকে লুট হয়েছে মোট ৫ হাজার ৭শ’ ৬৩টি অস্ত্র। তার মধ্যে উদ্ধার হয়েছে ৪,৪২৩টি। এখনও সন্ধান নেই ১৩৪০টি অস্ত্রের।
পুলিশের লুটকৃত গোলাবারুদের সংখ্যা হলো ৬ লাখ ৫২ হাজার আটটি। উদ্ধার হয়েছে ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৭শ’ ২৮টি। এখনও উদ্ধার হয়নি ২ লাখ ৫৭ হাজার ২৮০টি। তবে পুলিশ জানিয়েছে, বাকি অস্ত্র উদ্ধারে তাদের অভিযান অব্যাহত আছে।
অভিযান চলাকালে প্রতিদিন এক হাজার থেকে ১৫ শতাধিক সন্দেহভাজনকে আটক করা হয়েছে। এ হিসেবে গত ১০ মাসে গড়ে সাড়ে ৪ লাখ ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকেই ‘হত্যা, চাঁদবাজি, মাদকসহ বিভিন্ন মামলার আসামি’।
# অভিনব কায়দা, অস্ত্রের দরদাম
অস্ত্র পরিবহনেও অভিনব কায়দা দেখছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রাজশাহীতে গরুর মাংসের ভিতরে নতুন কৌশলে অস্ত্র রেখে প্রথমে ফ্রিজে রাখা হয়। এরপর তা ব্যাগে করে বহনের সময় তল্লাশিতে ধরা পড়ে। পুলিশ অস্ত্রসহ একজনকে গ্রেপ্তার করে।
পুলিশ সূত্রে অবৈধ অস্ত্র বেচাকেনা প্রসঙ্গে জানা যায়, বিদেশি পিস্তল ও রিভলবার ৭০ হাজার থেকে এক লাখ টাকায় পর্যন্ত বেচাকেনা হয়। দেশে তৈরি পাইপগানসহ অন্যান্য অস্ত্র ৫-৭ হাজার টাকায় কেনাবেচা হয়। গুলিও কেনাবেচা হচ্ছে।
# অস্ত্র আইনে যত মামলা
পুলিশ সদর দপ্তরের এক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, গত জানুয়ারি মাসে ১২৯টি অস্ত্র আইনে মামলা হয়েছে, ৩৫টি বিস্ফোরক আইনের মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। আর ফেব্রুয়ারি মাসে অস্ত্র আইনের ১০১টি মামলা এবং বিস্ফোরক আইনে ৩৭টি মামলা রেকর্ড করা হয়েছে।
গত মার্চ মাসে অস্ত্র আইনে ১৩১টি অভিযোগ এবং ২৯টি অভিযোগ রয়েছে বিস্ফোরক আইনে। গত এপ্রিলে ১৪০টি অস্ত্র আইনের মামলা এবং বিস্ফোরক আইনে ৩৫টি অভিযোগ রেকর্ড রয়েছে।
মে মাসে ১৯৮টি অস্ত্র আইনের অভিযোগ ও ৩৩টি বিস্ফোরক আইনের অভিযোগ রয়েছে। জুনে ২০৩টি অস্ত্র আইনের অভিযোগ ও ২৯টি বিস্ফোরক আইনের অভিযোগ রয়েছে।
জুলাইয়ে অস্ত্র আইনের ১৫৫টি ও বিস্ফোরক আইনে ৩৪টি অভিযোগ; এবং গত আগস্টে ১৪৮টি অস্ত্র আইনে ও ৩২টি বিস্ফোরক আইনের অভিযোগ রেকর্ড করা হয়েছে। আর সেপ্টেম্বরে ১৪৫টি অস্ত্র আইনে ও ২১টি বিস্ফোরক আইনের অভিযোগ রয়েছে।
সর্বশেষ গত ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত অস্ত্র আইনের ১৫৬টি অভিযোগ ও বিস্ফোরক আইনের ৩৬টি অভিযোগ রেকর্ড করা হয়েছে। এইভাবে প্রতি মাসে অভিযোগের তালিকার রেকর্ড বাড়ছে।
# জনমনে উদ্বেগ, পুলিশের ‘অভিযান’
সম্প্রতি পুরানে ঢাকার আদালত পাড়ায় একজনকে দিনে-দুপুরে গুলি করে হত্যা; এরপর পল্লবীতে দোকানে বসা অবস্থায় একজন রাজনৈতিক কর্মীকে গুলি করে হত্যা এ দুই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর জনমনে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে।
প্রশ্ন উঠেছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও। এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে বলা হয়েছে, সারাদেশে পুলিশসহ অন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান অব্যাহত আছে। প্রতিদিন অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার হচ্ছে। অপরাধীদের গ্রেপ্তারও করা হচ্ছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি (মিডিয়া) তালেবুর রহমান জানান, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও চিহ্নিত অপরাধীদের বিরুদ্ধে পুলিশের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত আছে। পুরান ঢাকায় আদালতের অদূরে গুলি করে হত্যার ঘটনায় এরই মধ্যে পাঁচজন এবং পল্লবীর হত্যাকা-ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত আছে বলেও উল্লেখ করেন তালেবুর রহমান।