ভয়াবহ আগুনে জ্বলছে বনানীর কড়াইল বস্তি -সংবাদ
ভয়াবহ আগুনে পুড়ছে রাজধানীর মহাখালী এলাকার কড়াইল বস্তি। সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে সেখানে আগুন জ্বললেও পানি সংকটের কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে হচ্ছে ফায়ার সার্ভিসকে। মঙ্গলবার,(২৫ নভেম্বর ২০২৫) বিকেল ৫টা ২২ মিনিটে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। এরপর একে একে ১৯টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে যোগ দেয়। তবে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিস একের পর এক ইউনিট বাড়িয়েও তা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। ভয়াবহ এ আগুনে নিজের ঘর ও সহায় সম্বল পুড়তে দেখে হতবাক হয়ে পড়েছেন সেখানকার বাসিন্দারা।
ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা বলছেন, যানজটের কারণে প্রথমে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে সময় লেগেছে। এরপর সরুগলির কারণে গাড়িগুলো অনেকটা দূরে রেখেই দীর্ঘ পাইপ টেনে পানি ছিটাতে হচ্ছে। পানি সংকটের কারণে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ঘটনাস্থলের পাশে বৌবাজারসংলগ্ন একটি নালায় সেচপাম্প বসিয়ে পানি সরবরাহের চেষ্টা করে ফায়ার সার্ভিস।
এদিকে ঘটনাস্থলের আশপাশে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তারপরও মানুষের ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। বস্তিবাসীর আহাজারীতে আশপাশের পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠেছে। এখনও কোনো হতাহতের খবর না এলেও আগুনে পোড়া অংশের প্রায় সবাই ‘সবকিছু’ পুড়ে যাওয়ার কথা বলেছেন।
বস্তির বাসিন্দা সুমন আহম্মেদ বলেন, ‘আগুনের সময় বাসার বাইরে ছিলাম। আগুনের খবর শুইনা দৌড়াইয়া আইসা দেখি সব শেষ।’ স্ত্রী ও দুই সন্তান নিরাপদে বাসা থেকে বের হতে পারলেও কিছুই সঙ্গে নিয়ে বের হতে পারেননি বলে জানান তিনি। ফজলু নামে আরেকজন বলেন, আগুনে ৫ শতাধিক ঘর পুড়ে গেছে। আগুন লাগা অংশে ‘কিছুই অবশিষ্ট নেই’।
সালেহা বেগমের কান্না যেন থামছিলই না। বার বার বলছিলেন, ‘আমি কেমনে বাঁচমু, আমার সব শেষ হইয়া গেল।’ রাত সাড়ে ৮টার দিকে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন ও মেনটেইন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘উত্তর-পূর্ব দিকে আগুনের তীব্রতা বেশি, সেদিক হয়েই আগুনটা ছড়াচ্ছে। বাকি অংশের আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে।’ তিনি বলেন, শুরুতে মানুষের ভিড় এবং সরুগলির কারণে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে বেগ পেতে হয়েছে। সরুগলি হয়ে পাইপ টানার ‘চ্যালেঞ্জের’ সঙ্গে যোগ হয়েছে কোথাও কোথাও পাইপ কেটে যাওয়ার বিড়ম্বনা। তার ভাষ্য, ‘আমরা আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে যাচ্ছি। আরও শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা করছি।’
### ‘আগুনে পুড়ে আমার সব শেষ’
আগুনে অনেক মানুষের জিনিসপত্র পুড়ে গেছে। ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীদের পাশেই কান্নায় ভেঙে পড়েন বস্তির বাসিন্দা লাভলী বেগম। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘ও ভাই আমার সব পুইড়া শ্যাষ, কিচ্ছু নেই। সাত বছর ধরে এই বস্তিতে আছি। অনেক কষ্টে তিল তিল করে জিনিসপত্র কিনেছিলাম। ঘরে টিভি, ফ্রিজসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র কিনেছিলাম। মাসে মাসে কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে হয়। এ আগুন আমার সব শ্যাষ করে দিল।’ কড়াইল বস্তির বাসিন্দা গার্মেন্টসকর্মী নাসিমা বেগম, বোনের ফোনে খবর পেয়ে দ্রুত বস্তিতে ছুটে আসেন। তিনি বলেন, ‘শুনেছি আমার ঘর পুড়ে গেছে, সব জিনিস শেষ হয়ে গেছে। এখন কীভাবে কি করবো, বুঝতে পারছি না।’
### টিভি-ফ্রিজসহ মূল্যবান জিনিস সরিয়ে নিচ্ছেন বস্তিবাসী
আগুন লাগা ঘরের আশপাশ থেকে আসবাবপত্র সরিয়ে নিচ্ছেন অনেকে। অনেককেই কাঁধে করে টিভি ও ফ্রিজসহ মূল্যবান জিনিসপত্র নিরাপদ স্থানে নিতে দেখা যায়। আকলিমা খাতুন নামে এক বাসিন্দা রাস্তার পাশে কান্নায় ভেঙে পড়েন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমার কিছুই আনতে দিলো না। কষ্ট করে কিছু জিনিসপত্র কিনেছিলাম, সব শেষ হয়ে গেছে। আমার কষ্ট আল্লাহ কেন দেখলো না। এমন কইরা আমাগো কেন মারে আল্লাহ।’
আজিজ শেখ নামের একজন মাথায় টেলিভিশন ও হাতে গ্যাস সিলিন্ডার নিয়ে বের হন। তিনি বলেন, ‘এ দুইডা জিনিস বাইর করতে পেরেছি। বাকি সব পুইড়া গেছে। চোখের সামনে সব পুড়ে গেল।’ স্কুলপড়–য়া শিশু হাসান, তার কাঁধে একটি বড় বস্তা, সঙ্গে তার মা লিমা আক্তার দুই হাতে দুটি বড় ব্যাগ নিয়ে বের হচ্ছেন। হাসানের বাবা বাইরে কাজে থাকায় মা-ছেলে যতটুকু পারে, জিনিসপত্র উদ্ধার করছেন। লিমা আক্তার বলেন, ‘কিছুই বের করতে পারি নাই। আমাদের ঘরেই আগুন লেগেছে। ছয় বছর ধরে বস্তিতে থাকি, দুইবার আগুনের শিকার হয়েছি। আগেরবার খুব বেশি ক্ষতি হয়নি, কিন্তু এবার দামি আসবাবপত্র সব পুড়ে গেছে।’
রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান ও বনানী লাগোয়া প্রায় ৯০ একর জায়গার ওপর ১০ হাজার ঘর রয়েছে এই বস্তিতে। যেখানে প্রায়ই অগ্নিকা- ঘটে। চলতি বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে ওই বস্তিতে লাগা আগুনে পুড়ে যায় অন্তত ডজনখানেক ঘর। গত বছরের ২৪ মার্চ ও ১৮ ডিসেম্বরও আগুনে পুড়ে কড়াইল বস্তি। প্রায় প্রতিবারই অগ্নিনির্বাপক বাহিনী জানিয়েছে, বস্তিতে ঢোকার রাস্তা সংকীর্ণ হওয়ায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢুকতে বেগ পেতে হয়। টিন, বাঁশ, কাঠের ঘরগুলো গায়ে গা লাগিয়ে ওঠানো হয়েছে। যার কারণে এখানে আগুন লাগলে দ্রুত ছড়ায়।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
ভয়াবহ আগুনে জ্বলছে বনানীর কড়াইল বস্তি -সংবাদ
মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৫
ভয়াবহ আগুনে পুড়ছে রাজধানীর মহাখালী এলাকার কড়াইল বস্তি। সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে সেখানে আগুন জ্বললেও পানি সংকটের কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে হচ্ছে ফায়ার সার্ভিসকে। মঙ্গলবার,(২৫ নভেম্বর ২০২৫) বিকেল ৫টা ২২ মিনিটে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। এরপর একে একে ১৯টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে যোগ দেয়। তবে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিস একের পর এক ইউনিট বাড়িয়েও তা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। ভয়াবহ এ আগুনে নিজের ঘর ও সহায় সম্বল পুড়তে দেখে হতবাক হয়ে পড়েছেন সেখানকার বাসিন্দারা।
ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা বলছেন, যানজটের কারণে প্রথমে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে সময় লেগেছে। এরপর সরুগলির কারণে গাড়িগুলো অনেকটা দূরে রেখেই দীর্ঘ পাইপ টেনে পানি ছিটাতে হচ্ছে। পানি সংকটের কারণে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ঘটনাস্থলের পাশে বৌবাজারসংলগ্ন একটি নালায় সেচপাম্প বসিয়ে পানি সরবরাহের চেষ্টা করে ফায়ার সার্ভিস।
এদিকে ঘটনাস্থলের আশপাশে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তারপরও মানুষের ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। বস্তিবাসীর আহাজারীতে আশপাশের পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠেছে। এখনও কোনো হতাহতের খবর না এলেও আগুনে পোড়া অংশের প্রায় সবাই ‘সবকিছু’ পুড়ে যাওয়ার কথা বলেছেন।
বস্তির বাসিন্দা সুমন আহম্মেদ বলেন, ‘আগুনের সময় বাসার বাইরে ছিলাম। আগুনের খবর শুইনা দৌড়াইয়া আইসা দেখি সব শেষ।’ স্ত্রী ও দুই সন্তান নিরাপদে বাসা থেকে বের হতে পারলেও কিছুই সঙ্গে নিয়ে বের হতে পারেননি বলে জানান তিনি। ফজলু নামে আরেকজন বলেন, আগুনে ৫ শতাধিক ঘর পুড়ে গেছে। আগুন লাগা অংশে ‘কিছুই অবশিষ্ট নেই’।
সালেহা বেগমের কান্না যেন থামছিলই না। বার বার বলছিলেন, ‘আমি কেমনে বাঁচমু, আমার সব শেষ হইয়া গেল।’ রাত সাড়ে ৮টার দিকে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন ও মেনটেইন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘উত্তর-পূর্ব দিকে আগুনের তীব্রতা বেশি, সেদিক হয়েই আগুনটা ছড়াচ্ছে। বাকি অংশের আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে।’ তিনি বলেন, শুরুতে মানুষের ভিড় এবং সরুগলির কারণে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে বেগ পেতে হয়েছে। সরুগলি হয়ে পাইপ টানার ‘চ্যালেঞ্জের’ সঙ্গে যোগ হয়েছে কোথাও কোথাও পাইপ কেটে যাওয়ার বিড়ম্বনা। তার ভাষ্য, ‘আমরা আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে যাচ্ছি। আরও শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা করছি।’
### ‘আগুনে পুড়ে আমার সব শেষ’
আগুনে অনেক মানুষের জিনিসপত্র পুড়ে গেছে। ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীদের পাশেই কান্নায় ভেঙে পড়েন বস্তির বাসিন্দা লাভলী বেগম। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘ও ভাই আমার সব পুইড়া শ্যাষ, কিচ্ছু নেই। সাত বছর ধরে এই বস্তিতে আছি। অনেক কষ্টে তিল তিল করে জিনিসপত্র কিনেছিলাম। ঘরে টিভি, ফ্রিজসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র কিনেছিলাম। মাসে মাসে কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে হয়। এ আগুন আমার সব শ্যাষ করে দিল।’ কড়াইল বস্তির বাসিন্দা গার্মেন্টসকর্মী নাসিমা বেগম, বোনের ফোনে খবর পেয়ে দ্রুত বস্তিতে ছুটে আসেন। তিনি বলেন, ‘শুনেছি আমার ঘর পুড়ে গেছে, সব জিনিস শেষ হয়ে গেছে। এখন কীভাবে কি করবো, বুঝতে পারছি না।’
### টিভি-ফ্রিজসহ মূল্যবান জিনিস সরিয়ে নিচ্ছেন বস্তিবাসী
আগুন লাগা ঘরের আশপাশ থেকে আসবাবপত্র সরিয়ে নিচ্ছেন অনেকে। অনেককেই কাঁধে করে টিভি ও ফ্রিজসহ মূল্যবান জিনিসপত্র নিরাপদ স্থানে নিতে দেখা যায়। আকলিমা খাতুন নামে এক বাসিন্দা রাস্তার পাশে কান্নায় ভেঙে পড়েন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমার কিছুই আনতে দিলো না। কষ্ট করে কিছু জিনিসপত্র কিনেছিলাম, সব শেষ হয়ে গেছে। আমার কষ্ট আল্লাহ কেন দেখলো না। এমন কইরা আমাগো কেন মারে আল্লাহ।’
আজিজ শেখ নামের একজন মাথায় টেলিভিশন ও হাতে গ্যাস সিলিন্ডার নিয়ে বের হন। তিনি বলেন, ‘এ দুইডা জিনিস বাইর করতে পেরেছি। বাকি সব পুইড়া গেছে। চোখের সামনে সব পুড়ে গেল।’ স্কুলপড়–য়া শিশু হাসান, তার কাঁধে একটি বড় বস্তা, সঙ্গে তার মা লিমা আক্তার দুই হাতে দুটি বড় ব্যাগ নিয়ে বের হচ্ছেন। হাসানের বাবা বাইরে কাজে থাকায় মা-ছেলে যতটুকু পারে, জিনিসপত্র উদ্ধার করছেন। লিমা আক্তার বলেন, ‘কিছুই বের করতে পারি নাই। আমাদের ঘরেই আগুন লেগেছে। ছয় বছর ধরে বস্তিতে থাকি, দুইবার আগুনের শিকার হয়েছি। আগেরবার খুব বেশি ক্ষতি হয়নি, কিন্তু এবার দামি আসবাবপত্র সব পুড়ে গেছে।’
রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান ও বনানী লাগোয়া প্রায় ৯০ একর জায়গার ওপর ১০ হাজার ঘর রয়েছে এই বস্তিতে। যেখানে প্রায়ই অগ্নিকা- ঘটে। চলতি বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে ওই বস্তিতে লাগা আগুনে পুড়ে যায় অন্তত ডজনখানেক ঘর। গত বছরের ২৪ মার্চ ও ১৮ ডিসেম্বরও আগুনে পুড়ে কড়াইল বস্তি। প্রায় প্রতিবারই অগ্নিনির্বাপক বাহিনী জানিয়েছে, বস্তিতে ঢোকার রাস্তা সংকীর্ণ হওয়ায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢুকতে বেগ পেতে হয়। টিন, বাঁশ, কাঠের ঘরগুলো গায়ে গা লাগিয়ে ওঠানো হয়েছে। যার কারণে এখানে আগুন লাগলে দ্রুত ছড়ায়।