রংপুর সিটি কর্পোরেশন -সংবাদ
রংপুর সিটি করপোরেশনে (রসিক) দুই গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তার পদ দীর্ঘদিন শূন্য থাকায় প্রতিষ্ঠানটির প্রায় সবধরনের প্রশাসনিক ও জরুরি সেবা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে করপোরেশনকে ধার-দেনা করে জরুরি সেবা চালাতে হচ্ছে। বারবার লিখিতভাবে জানানো সত্ত্বেও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
এ অবস্থায় চলতি মাসের বেতন নিয়ে আবারও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
সিটি করপোরেশনের দুই হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর দাবি, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পদে নতুন কেউ যোগ না দিলে চলতি মাসের বেতন দেয়া সম্ভব নয়। গত মাসে বিশেষ অনুমতিতে একজন কর্মকর্তার স্বাক্ষর দিয়ে বেতন দেয়া হয়েছিল।
তিনটি পদ দুই মাস ধরে শূন্য
করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী প্রশাসক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার যৌথ স্বাক্ষর ছাড়া কোনো চেক ইস্যু করা যায় না। কিন্তু গত ১৩ অক্টোবর উম্মে ফাতেমা বদলি হয়ে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নতুন কর্মস্থলে যোগ দেন। এর আগে সেপ্টেম্বরে সচিব জয়শ্রী রানী এবং একই মাসে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও বদলি হয়ে অন্যত্র যোগ দেন।
ফলে দীর্ঘ দুই মাস ধরে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, সচিব ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদ শূন্য পড়ে আছে। এখনও এসব পদে কাউকে পদায়ন করা হয়নি।
অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্থবির
প্রশাসনিক বিভাগ জানায়, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রশাসকের যৌথ স্বাক্ষর ছাড়া আর্থিক বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তই কার্যকর হয় না। ফলে উন্নয়ন প্রকল্প, বিল পরিশোধ, জরুরি সড়ক ও ড্রেন মেরামত, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমসহ অধিকাংশ কাজই স্থবির হয়ে পড়েছে।
ইতোমধ্যে বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অভিযোগ করেছে যে, বিল না পাওয়ায় তাদের কাজ ব্যাহত হচ্ছে।
প্রকৌশল শাখার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘নগরীর বেশ কিছু সড়ক ও ড্রেন জরুরিভাবে সংস্কারের প্রয়োজন। কিন্তু অর্থ ছাড় না হওয়ায় কিছুই করা যাচ্ছে না। ধার-দেনায় বা বাকিতে কাজ চালাতে হচ্ছে।’
পরিকল্পনা অনুমোদনও আটকে
নগরবাসীও নানাভাবে ভোগান্তিতে পড়েছে। নগরীর কয়েকশ’ বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মাস্টার প্ল্যান, নকশা অনুমোদনসহ প্রয়োজনীয় নথিপত্র প্রক্রিয়া করা যাচ্ছে না।
খামার এলাকার বাসিন্দা আকবর হোসেন বলেন, ‘মাস্টার প্ল্যানের ফি জমা দেয়ার দুই মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো কাজ হয়নি।’
কেরানীপাড়ার মমতাজ বেগমসহ আরও অনেকে একই অভিযোগ করেছেন।
পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের বেতন অনিশ্চিত
হিসাব শাখা সূত্র জানায়, রংপুর সিটি করপোরেশনে ৮০০-এর বেশি পরিচ্ছন্নতা কর্মী আছেন যাদের দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাদের বেতন দিতে মাসে প্রায় ৪৫ লাখ টাকা প্রয়োজন। একইভাবে দৈনিক হাজিরাভিত্তিক অন্যান্য বিভাগেও আরও আট শতাধিক কর্মচারী আছেন।
গত মাসে বিশেষ পরিস্থিতিতে ১০ নভেম্বর বেতন দেয়া গেলেও এ মাসে আবারও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
প্রশাসকের মন্তব্য
রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি সমস্যার কথা স্বীকার করেন।
তিনি বলেন, ‘দুইজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বদলি হয়ে যাওয়ায় নানা সমস্যা হচ্ছে। নগরবাসীকে জরুরি সেবাও যথাসময়ে দেয়া যাচ্ছে না। তবে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নতুন কর্মকর্তাকে পদায়নের প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে। দ্রুতই সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি।’
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
রংপুর সিটি কর্পোরেশন -সংবাদ
শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৫
রংপুর সিটি করপোরেশনে (রসিক) দুই গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তার পদ দীর্ঘদিন শূন্য থাকায় প্রতিষ্ঠানটির প্রায় সবধরনের প্রশাসনিক ও জরুরি সেবা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে করপোরেশনকে ধার-দেনা করে জরুরি সেবা চালাতে হচ্ছে। বারবার লিখিতভাবে জানানো সত্ত্বেও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
এ অবস্থায় চলতি মাসের বেতন নিয়ে আবারও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
সিটি করপোরেশনের দুই হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর দাবি, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পদে নতুন কেউ যোগ না দিলে চলতি মাসের বেতন দেয়া সম্ভব নয়। গত মাসে বিশেষ অনুমতিতে একজন কর্মকর্তার স্বাক্ষর দিয়ে বেতন দেয়া হয়েছিল।
তিনটি পদ দুই মাস ধরে শূন্য
করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী প্রশাসক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার যৌথ স্বাক্ষর ছাড়া কোনো চেক ইস্যু করা যায় না। কিন্তু গত ১৩ অক্টোবর উম্মে ফাতেমা বদলি হয়ে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নতুন কর্মস্থলে যোগ দেন। এর আগে সেপ্টেম্বরে সচিব জয়শ্রী রানী এবং একই মাসে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও বদলি হয়ে অন্যত্র যোগ দেন।
ফলে দীর্ঘ দুই মাস ধরে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, সচিব ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদ শূন্য পড়ে আছে। এখনও এসব পদে কাউকে পদায়ন করা হয়নি।
অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্থবির
প্রশাসনিক বিভাগ জানায়, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রশাসকের যৌথ স্বাক্ষর ছাড়া আর্থিক বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তই কার্যকর হয় না। ফলে উন্নয়ন প্রকল্প, বিল পরিশোধ, জরুরি সড়ক ও ড্রেন মেরামত, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমসহ অধিকাংশ কাজই স্থবির হয়ে পড়েছে।
ইতোমধ্যে বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অভিযোগ করেছে যে, বিল না পাওয়ায় তাদের কাজ ব্যাহত হচ্ছে।
প্রকৌশল শাখার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘নগরীর বেশ কিছু সড়ক ও ড্রেন জরুরিভাবে সংস্কারের প্রয়োজন। কিন্তু অর্থ ছাড় না হওয়ায় কিছুই করা যাচ্ছে না। ধার-দেনায় বা বাকিতে কাজ চালাতে হচ্ছে।’
পরিকল্পনা অনুমোদনও আটকে
নগরবাসীও নানাভাবে ভোগান্তিতে পড়েছে। নগরীর কয়েকশ’ বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মাস্টার প্ল্যান, নকশা অনুমোদনসহ প্রয়োজনীয় নথিপত্র প্রক্রিয়া করা যাচ্ছে না।
খামার এলাকার বাসিন্দা আকবর হোসেন বলেন, ‘মাস্টার প্ল্যানের ফি জমা দেয়ার দুই মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো কাজ হয়নি।’
কেরানীপাড়ার মমতাজ বেগমসহ আরও অনেকে একই অভিযোগ করেছেন।
পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের বেতন অনিশ্চিত
হিসাব শাখা সূত্র জানায়, রংপুর সিটি করপোরেশনে ৮০০-এর বেশি পরিচ্ছন্নতা কর্মী আছেন যাদের দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাদের বেতন দিতে মাসে প্রায় ৪৫ লাখ টাকা প্রয়োজন। একইভাবে দৈনিক হাজিরাভিত্তিক অন্যান্য বিভাগেও আরও আট শতাধিক কর্মচারী আছেন।
গত মাসে বিশেষ পরিস্থিতিতে ১০ নভেম্বর বেতন দেয়া গেলেও এ মাসে আবারও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
প্রশাসকের মন্তব্য
রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি সমস্যার কথা স্বীকার করেন।
তিনি বলেন, ‘দুইজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বদলি হয়ে যাওয়ায় নানা সমস্যা হচ্ছে। নগরবাসীকে জরুরি সেবাও যথাসময়ে দেয়া যাচ্ছে না। তবে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নতুন কর্মকর্তাকে পদায়নের প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে। দ্রুতই সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি।’