alt

সড়কে মৃত্যু যেন এক মহামারী

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : শুক্রবার, ২৯ জুলাই ২০২২

নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের চতুর্থবার্ষিকীতে খিলক্ষেতে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনকারীদের মানববন্ধন -সংবাদ

সড়কে মৃত্যু যেন এক নীরব মহামারীতে পরিণত হয়েছে। প্রতি বছর বাংলাদেশে বিভিন্ন দুর্ঘটনায় বিশেষ করে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতি লাখে যত মানুষের মৃত্যু হয়, সেই সংখ্যা ধনী দেশগুলোর গড় সংখ্যার দ্বিগুণ। আর সবচেয়ে কম দুর্ঘটনার দেশগুলোর প্রায় পাঁচগুণ।

গেল চার বছর আগে নিরাপদ সড়কের দাবিতে পুরো বাংলাদেশকে অচল করে দিয়েছিল শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের মুখে সরকারের তরফ থেকে পেয়েছে বেশ কিছু প্রতিশ্রুতি। চাপের মুখে একটি আইনও হয়েছে, সেই আইনে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী চালকের শাস্তি বেড়েছে এই যা। এককথায় বলতে হয় পরিস্থিতি বদলেছে, তবে তা সামান্যই। শুক্রবার (২৯ জুলাই) আন্দোলনের চতুর্থ-বার্ষিকী উপলক্ষে নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকায় পদযাত্রা করে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন (নিরআ) পদযাত্রায় নিহতদের স্মরনে মৃত্যুর মিছিল বন্ধে কর্তৃপক্ষের কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানানো হয়।

পুলিশের পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৮ সালে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ২ হাজার ৬৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল। পরের বছর সেই সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে হয় ৪ হাজার ১৩৮ জন। এসব দুর্ঘটনার বেশিরভাগ ঘটে মহাসড়কে, আর অধিকাংশ ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার পর চালক পালিয়ে যান।

এদিকে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলন বলছে, প্রতি বছর চার হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ যাচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনায়। আরও অগনিত মানুষ গুরুতরভাবে আহত হচ্ছে, মেনে নিতে হচ্ছে পঙ্গু জীবন।

২০১৮ সালের ২৯ জুলাই ঢাকার শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের কিছু শিক্ষার্থী কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে ফুটপাথে বিমানবন্দর সড়কে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। একটি বাস থামলে সেটায় ওঠার চেষ্টা করেন তারা।

ঠিক ওই সময় জাবালে নূর পরিবহনের দুটি বাস আগে যাত্রী তোলার জন্য নিজেদের মাঝে প্রতিযোগিতা করতে করতে দ্রুত গতিতে এগিয়ে আসে এবং একটি বাস বেপরোয়াভাবে ফুটপাতে দাঁড়ানো শিক্ষার্থীদের উপর উঠে যায়।

ওই ঘটনায় দুই শিক্ষার্থীর প্রাণ যায়, ১২ জন গুরুতর আহত হয়। বিক্ষুব্ধ সহপাঠীরা রাস্তায় নেমে আসে, নিরাপদ সড়কের দাবিতে সেই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে পুরো দেশে।

শিক্ষার্থীদের সেই আন্দোলন দেখিয়ে দেয়, আইনের রক্ষক যে পুলিশ, তাদের চালকও লাইসেন্স ছাড়া, চলার অনুপযোগী গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামছে।

সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের হিসাবে, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা ছিল ৪৫ লাখ। অথচ লাইসেন্সধারী চালক আছে মোটাদাগে তার অর্ধেক। এর অর্থ হল, বাংলাদেশের অর্ধেক যানবাহনের নিয়ন্ত্রণ এখন লাইসেন্সবিহীন চালকের হাতে। আর সঠিক প্রশিক্ষণের প্রশ্ন তুললে চিত্রটা হবে আরও উদ্বেগজনক। অথচ চালকদের প্রশিক্ষিত করেও বহু প্রাণ বাঁচানো সম্ভব।

২০২০ সালে মহামারীর কারণে দীর্ঘ লকডাউনে মৃত্যুর সংখ্যা সামান্য কমে ৩ হাজার ৯১৮ জন হয়। আর এ বছর সাত মাসেই সে সংখ্যা পৌঁছেছে ৩ হাজার ৫০২ জনে। অর্থাৎ প্রতিদিন সড়কে প্রাণ গেছে অন্তত ১৪ জনের।

বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, গত ৭ বছরে সারাদেশে ১৫ হাজার ১৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১৭ হাজার ৮৮৬ জনের; আরও ৩২ হাজার ৩৩০ জন আহত হয়েছেন।

বাংলাদেশ রোড সেইফটি ফাউন্ডেশনের হিসাবে ২০২১ সালে দেশে ৫ হাজার ৩৭১টি দুর্ঘটনায় অন্তত ৬ হাজার ২৮৪ জনের মৃত্যু হয়; আহত হন আরও ৭ হাজার ৪৬৮ জন। প্রতিবছর বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতি লাখে যত মানুষের মৃত্যু হয়, সেই সংখ্যা ধনী দেশগুলোর গড় সংখ্যার দ্বিগুণ, সবচেয়ে কম দুর্ঘটনার দেশগুলোর প্রায় পাঁচগুণ।

বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক হাদিউজ্জামান। তিনি বলেন, দেশে দুর্ঘটনায় বছরে যত মানুষ মারা যায়, তার ৪৯ শতাংশ পথচারী। এসব দুর্ঘটনার একটি বড় অংশ ঘটে মহাসড়কে। ৫৯ শতাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, ভারী যানবাহনের নিচে পড়ে পথচারীর মৃত্যু হচ্ছে।

এক্ষেত্রে অবকাঠামো নির্মাণের সময় পরিকল্পনার দুর্বলতার বিষয়টি তুলে ধরে অধ্যাপক হাদিউজ্জামান বলেন, ‘আমরা যখন কোন প্রকল্প নিই, সেই প্রকল্পের মূল পরিকল্পনায় অবকাঠামোর বিষয়টা থাকছে না বলে আমি মনে করি। ট্রাফিক ওরিয়েন্টেড পরিকল্পনা করছি এবং সেটা করতে গিয়ে আমরা শুধুমাত্র যানবাহনকে প্রাধান্য দিচ্ছি। কিন্তু ট্রাফিক বলতে পথচারীকেও বোঝায়। পরিকল্পনায় পথচারী গুরুত্ব পায় না।’

এখন এক্সপ্রেসওয়ে হচ্ছে, কীভাবে রাস্তায় যানবাহনের গতি আরও বাড়ানো যায়, কীভাবে একটি গাড়িকে ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার গতিতে ছোটার সুযোগ দেয়া যায়, সেই চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু পথচারীদের কথাটা মাথায় রাখা হয় না, আন্ডারপাস আর ফুটব্রিজ পরিকল্পনায় থাকে না।

ভারী যানবাহনের দক্ষ চালকের যে ঘাটতি দেশে আছে, সেখানেও দুর্ঘটনার ফাঁদ তৈরি হচ্ছে বলে মনে করেন এই প্রকৌশলী।

‘আমাদের এ মুহূর্তে প্রায় আড়াই লাখ নিবন্ধিত ভারী যানবাহন আছে বাস ও ট্রাক মিলে। তার বিপরীতে আমাদের ভারী গাড়ি চালানোর লাইসেন্সধারী চালক আছে দেড় লাখ। তার মানে আমরা সাদা চোখেই দেখতে পাচ্ছি, প্রায় এক লাখ চালকের একটা ঘাটতি আছে।’

আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ী, প্রতিটি ভারী বাহনের বিপরীতে দেড় থেকে দুইজন চালক থাকতে হয়। ওই আদর্শ মান ধরে যদি হিসেব করা হয়, বাংলাদেশে নিবন্ধিত ভারী যানবাহনের ক্ষেত্রে লাইসেন্সধারী চালকের ঘাটতি বেড়ে হবে প্রায় তিন লাখ।

তবে সড়ক নিরাপত্তার কথা যখন আসে, সেটা শুধু সড়ক আর যানবাহনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না।

ছবি

স্বতন্ত্র কাঠামোর দাবিতে তিতুমীর কলেজ শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ

ছবি

যমুনা অভিমুখী বেসরকারি শিক্ষকদের পিটিয়ে সরাল পুলিশ

ছবি

আশুলিয়ায় একই পরিবারের তিনজনের মরদেহ উদ্ধার

ছবি

ধানমন্ডিতে ১২ সাবেক সচিব-অধিকর্তাকে ফ্ল্যাট বরাদ্দ বাতিলের পর দুদকে তলব

ছবি

কার্নিশে ঝুলে থাকা তরুণকে গুলি: অভিযোগ গঠনের আদেশ মঙ্গলবার

ছবি

দুর্গাপূজা নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার মন্তব্য প্রত্যাহার ও ক্ষমা প্রার্থনার দাবি করেছেন ২২ বিশিষ্ট নাগরিক

ছবি

ডাকসু নির্বাচন: রাজধানীতে বন্ধ থাকবে যেসব সড়ক

ছবি

চেক জালিয়াতির মামলায় গ্রেপ্তার পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি শামসুদ্দোহা

ছবি

চানখাঁরপুলে গুলিতে নিহত আনাসের রক্তে ভেসে গিয়েছিল শরীর: ট্রাইব্যুনালে মায়ের সাক্ষ্য

ছবি

ডিএসসিসিতে কোটি টাকার জ্বালানি খরচের ‘অনিয়ম’, দুদকের অভিযান

ছবি

মালিবাগে সোহাগ পরিবহনের কাউন্টার হামলায় আরও দুজন গ্রেপ্তার

ছবি

সোহাগ পরিবহনের কাউন্টার ও মালিকের বাসায় হামলার মামলায় এক আসামি রিমান্ডে, আরেকজন কারাগারে

ছবি

সংস্কারে আরো দৃষ্টিনন্দন করা হচ্ছে ‘চাঁদপুর ইলিশ চত্বর’

ছবি

ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক র‌্যালি

ছবি

আদাবরে সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে গিয়ে পুলিশের গাড়িচালককে কুপিয়ে জখম

ছবি

৩৮ লাখ টাকার অভিযোগে ঢাকার সহকারী কর কমিশনার মিতু সাময়িক বরখাস্ত

ছবি

একাধিক অভিযোগে বরখাস্ত হল চিকিৎসক ফাতেমা দোজা

ছবি

ডিআরইউ আলোচনায় হামলার শিকার অধ্যাপক কার্জনের জামিন নামঞ্জুর

ছবি

সহকারী শিক্ষকদের আল্টিমেটাম :  ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পদক্ষেপ না নিলে আমরণ অনশন

ছবি

কাকরাইলে জাপা কার্যালয়ের সামনে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, আহত কয়েকজন

ছবি

আগারগাঁও অবরোধে শেকৃবি শিক্ষার্থীরা, তিন দফা দাবিতে দুর্ভোগে যাত্রীরা

ছবি

ডিএমপি কমিশনারের দুঃখ প্রকাশের পর শাহবাগ ছাড়লেন প্রকৌশল শিক্ষার্থীরা

ছবি

কাকরাইলে আন্দোলনকারী ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ

ছবি

বুয়েট উপাচার্যের ক্ষোভ: শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ গ্রহণযোগ্য নয়

ছবি

শাহবাগে প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের অবস্থান, পুলিশের হামলার বিরুদ্ধে পাঁচ দফা দাবি

ছবি

বিআইপি অভিযোগ: রাজউক ও গৃহায়ন মন্ত্রণালয় আবাসন ব্যবসায়ীদের পক্ষে কাজ করছে

ছবি

হিজাব বিতর্কে শিক্ষক বরখাস্ত, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ভিকারুননিসা নূন স্কুলে

ছবি

যমুনামুখী হতে চাইলে প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ

ছবি

শাহবাগে দ্বিতীয় দিনের মতো প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের অবরোধ, তীব্র যানজট

ছবি

ঢাকায় ৮ কেজি কোকেনসহ গায়ানার নাগরিক গ্রেপ্তার

ছবি

শাহবাগ মোড়ে প্রকৌশলী শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, তিন দাবিতে সড়ক অবরোধ

ছবি

রাজধানীতে সমাবেশের জন্য ডিএমপির চিহ্নিত ৯১ বিকল্প স্থান

ছবি

সহপাঠীকে মারধরের অভিযোগে বিক্ষুব্ধ বুয়েট শিক্ষার্থীদের যমুনায় যাওয়ার চেষ্টা

ছবি

জুলাই আন্দোলনে চোখের ক্ষতির শিকারদের চিত্র ট্রাইব্যুনালে

ছবি

রামপুরার মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলা : ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুরসহ চারজন পলাতক আসামিকে আত্মসমর্পণের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ

ছবি

বুড়িগঙ্গা থেকে উদ্ধার হওয়া চার লাশের পরিচয় এখনও শনাক্ত হয়নি

tab

news » cities

সড়কে মৃত্যু যেন এক মহামারী

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের চতুর্থবার্ষিকীতে খিলক্ষেতে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনকারীদের মানববন্ধন -সংবাদ

শুক্রবার, ২৯ জুলাই ২০২২

সড়কে মৃত্যু যেন এক নীরব মহামারীতে পরিণত হয়েছে। প্রতি বছর বাংলাদেশে বিভিন্ন দুর্ঘটনায় বিশেষ করে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতি লাখে যত মানুষের মৃত্যু হয়, সেই সংখ্যা ধনী দেশগুলোর গড় সংখ্যার দ্বিগুণ। আর সবচেয়ে কম দুর্ঘটনার দেশগুলোর প্রায় পাঁচগুণ।

গেল চার বছর আগে নিরাপদ সড়কের দাবিতে পুরো বাংলাদেশকে অচল করে দিয়েছিল শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের মুখে সরকারের তরফ থেকে পেয়েছে বেশ কিছু প্রতিশ্রুতি। চাপের মুখে একটি আইনও হয়েছে, সেই আইনে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী চালকের শাস্তি বেড়েছে এই যা। এককথায় বলতে হয় পরিস্থিতি বদলেছে, তবে তা সামান্যই। শুক্রবার (২৯ জুলাই) আন্দোলনের চতুর্থ-বার্ষিকী উপলক্ষে নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকায় পদযাত্রা করে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন (নিরআ) পদযাত্রায় নিহতদের স্মরনে মৃত্যুর মিছিল বন্ধে কর্তৃপক্ষের কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানানো হয়।

পুলিশের পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৮ সালে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ২ হাজার ৬৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল। পরের বছর সেই সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে হয় ৪ হাজার ১৩৮ জন। এসব দুর্ঘটনার বেশিরভাগ ঘটে মহাসড়কে, আর অধিকাংশ ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার পর চালক পালিয়ে যান।

এদিকে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলন বলছে, প্রতি বছর চার হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ যাচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনায়। আরও অগনিত মানুষ গুরুতরভাবে আহত হচ্ছে, মেনে নিতে হচ্ছে পঙ্গু জীবন।

২০১৮ সালের ২৯ জুলাই ঢাকার শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের কিছু শিক্ষার্থী কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে ফুটপাথে বিমানবন্দর সড়কে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। একটি বাস থামলে সেটায় ওঠার চেষ্টা করেন তারা।

ঠিক ওই সময় জাবালে নূর পরিবহনের দুটি বাস আগে যাত্রী তোলার জন্য নিজেদের মাঝে প্রতিযোগিতা করতে করতে দ্রুত গতিতে এগিয়ে আসে এবং একটি বাস বেপরোয়াভাবে ফুটপাতে দাঁড়ানো শিক্ষার্থীদের উপর উঠে যায়।

ওই ঘটনায় দুই শিক্ষার্থীর প্রাণ যায়, ১২ জন গুরুতর আহত হয়। বিক্ষুব্ধ সহপাঠীরা রাস্তায় নেমে আসে, নিরাপদ সড়কের দাবিতে সেই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে পুরো দেশে।

শিক্ষার্থীদের সেই আন্দোলন দেখিয়ে দেয়, আইনের রক্ষক যে পুলিশ, তাদের চালকও লাইসেন্স ছাড়া, চলার অনুপযোগী গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামছে।

সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের হিসাবে, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা ছিল ৪৫ লাখ। অথচ লাইসেন্সধারী চালক আছে মোটাদাগে তার অর্ধেক। এর অর্থ হল, বাংলাদেশের অর্ধেক যানবাহনের নিয়ন্ত্রণ এখন লাইসেন্সবিহীন চালকের হাতে। আর সঠিক প্রশিক্ষণের প্রশ্ন তুললে চিত্রটা হবে আরও উদ্বেগজনক। অথচ চালকদের প্রশিক্ষিত করেও বহু প্রাণ বাঁচানো সম্ভব।

২০২০ সালে মহামারীর কারণে দীর্ঘ লকডাউনে মৃত্যুর সংখ্যা সামান্য কমে ৩ হাজার ৯১৮ জন হয়। আর এ বছর সাত মাসেই সে সংখ্যা পৌঁছেছে ৩ হাজার ৫০২ জনে। অর্থাৎ প্রতিদিন সড়কে প্রাণ গেছে অন্তত ১৪ জনের।

বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, গত ৭ বছরে সারাদেশে ১৫ হাজার ১৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১৭ হাজার ৮৮৬ জনের; আরও ৩২ হাজার ৩৩০ জন আহত হয়েছেন।

বাংলাদেশ রোড সেইফটি ফাউন্ডেশনের হিসাবে ২০২১ সালে দেশে ৫ হাজার ৩৭১টি দুর্ঘটনায় অন্তত ৬ হাজার ২৮৪ জনের মৃত্যু হয়; আহত হন আরও ৭ হাজার ৪৬৮ জন। প্রতিবছর বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতি লাখে যত মানুষের মৃত্যু হয়, সেই সংখ্যা ধনী দেশগুলোর গড় সংখ্যার দ্বিগুণ, সবচেয়ে কম দুর্ঘটনার দেশগুলোর প্রায় পাঁচগুণ।

বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক হাদিউজ্জামান। তিনি বলেন, দেশে দুর্ঘটনায় বছরে যত মানুষ মারা যায়, তার ৪৯ শতাংশ পথচারী। এসব দুর্ঘটনার একটি বড় অংশ ঘটে মহাসড়কে। ৫৯ শতাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, ভারী যানবাহনের নিচে পড়ে পথচারীর মৃত্যু হচ্ছে।

এক্ষেত্রে অবকাঠামো নির্মাণের সময় পরিকল্পনার দুর্বলতার বিষয়টি তুলে ধরে অধ্যাপক হাদিউজ্জামান বলেন, ‘আমরা যখন কোন প্রকল্প নিই, সেই প্রকল্পের মূল পরিকল্পনায় অবকাঠামোর বিষয়টা থাকছে না বলে আমি মনে করি। ট্রাফিক ওরিয়েন্টেড পরিকল্পনা করছি এবং সেটা করতে গিয়ে আমরা শুধুমাত্র যানবাহনকে প্রাধান্য দিচ্ছি। কিন্তু ট্রাফিক বলতে পথচারীকেও বোঝায়। পরিকল্পনায় পথচারী গুরুত্ব পায় না।’

এখন এক্সপ্রেসওয়ে হচ্ছে, কীভাবে রাস্তায় যানবাহনের গতি আরও বাড়ানো যায়, কীভাবে একটি গাড়িকে ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার গতিতে ছোটার সুযোগ দেয়া যায়, সেই চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু পথচারীদের কথাটা মাথায় রাখা হয় না, আন্ডারপাস আর ফুটব্রিজ পরিকল্পনায় থাকে না।

ভারী যানবাহনের দক্ষ চালকের যে ঘাটতি দেশে আছে, সেখানেও দুর্ঘটনার ফাঁদ তৈরি হচ্ছে বলে মনে করেন এই প্রকৌশলী।

‘আমাদের এ মুহূর্তে প্রায় আড়াই লাখ নিবন্ধিত ভারী যানবাহন আছে বাস ও ট্রাক মিলে। তার বিপরীতে আমাদের ভারী গাড়ি চালানোর লাইসেন্সধারী চালক আছে দেড় লাখ। তার মানে আমরা সাদা চোখেই দেখতে পাচ্ছি, প্রায় এক লাখ চালকের একটা ঘাটতি আছে।’

আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ী, প্রতিটি ভারী বাহনের বিপরীতে দেড় থেকে দুইজন চালক থাকতে হয়। ওই আদর্শ মান ধরে যদি হিসেব করা হয়, বাংলাদেশে নিবন্ধিত ভারী যানবাহনের ক্ষেত্রে লাইসেন্সধারী চালকের ঘাটতি বেড়ে হবে প্রায় তিন লাখ।

তবে সড়ক নিরাপত্তার কথা যখন আসে, সেটা শুধু সড়ক আর যানবাহনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না।

back to top