রাশিয়া থেকে জুয়ার সাইট নিয়ন্ত্রণ, দেশে ল্যাব তৈরী করে পরিচালনা
চক্রের এজেন্টসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার
অনলাইন জুয়ার বিনিয়োগের অর্থ কৌশলে চলে যাচ্ছে দেশের বাইরে। কিপ্টো কারেন্সির মাধ্যমে রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে অনলাইন জুয়ার অ্যাপস নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। বাংলাদেশের কয়েকটি এলাকায় এ জুয়ার কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত এজেন্টরা বাসায় ল্যাব তৈরী করে সাইটগুলো পরিচালনা করছে। সম্প্রতি রাশিয়া থেকে নিয়ন্ত্রিত ৩ টি অনলাইন জুয়ার সাইট নজরে আসার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের দেয়া তথ্যে চক্রের মূল নিয়ন্ত্রণ হিসেবে রাশিয়া প্রবাসী বাংলাদেশী এক নাগরিকের নাম পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি।
সিআইডি বলছে, চক্রটি বাংলাদেশ থেকে গত ১ বছর ধরে প্রতিমাসে ২০ কোটি টাকা করে পাচার করেছে বলে তথ্য মিলেছে। চক্রের সদস্যদের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন কোম্পানির মোবাইল ফাইন্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) এর এজেন্ট- কর্মচারীরাও যুক্ত।
সিআইডি জানিয়েছে, সিআইডির সাইবার ইন্টেলিজেন্ট এন্ড রিস্ক ম্যানেজম্যান টিমের সদস্য দীর্ঘদিন ধরে মনিটরিং করার পর অনলাইন প্লাটফর্মে Mel Bet, 1x Bet এবং Bet winner নামের বেটিং সাইটসমূহ নজরে আসে। সিআইডি লক্ষ্য করে সেখানে বাংলাদেশের প্রচুর গ্রাাহক বেটিং বা জুয়া খেলায় অংশগ্রহণ করছে।সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া নির্দেশনায় ওই তিনটি সাইটের বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত এনালাইসিস করে সিআইডি সাইবার ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট-এর একটি টিম।
গত ৩১ আগষ্ট বৃহস্পতিবার সিআইডির সাইবার টিমের পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদের নেতৃত্বাধীণ টিমের সদস্যরা ঢাকার মোহাম্মদপুর, বনশ্রী ও আগারগাঁও এবং সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে মো:রেজাউল করিম (৩১), মো: সৈকত রহমান (৩০), মো: সাদিকুল ইসলাম (২৮), নাজমুল আহসান (৩০), মো: তৌহিদ হোসেন (২৫) এবং মো: জাকির হোসেন (৩৪) আটক করা হয়। গ্রেফতারকালীন সময়ে তাদের কাছ থেকে ১৭ টি বিভিন্ন ব্রান্ডের মোবাইল ফোন, ২১ টি সিম, ল্যাপটপ ৪ টি, ডেস্কটপ কম্পিউটার ৭ টি, ট্যাব ২টি, এবং নগদ প্রায় ৪ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।আটককৃতদের বিরুদ্ধে গতকাল শুক্রবার রাজধানীর পল্টন মডেল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করা হয়েছে।
সিআইডির ভাষ্য, অনলাইন জুয়ায় টাকা দিয়ে খেলায় অংশ নেয় জুয়ারীরা। বেটার রা কিপ্টো কারেন্সির মাধ্যমে টাকা বিনিয়োগ করে অ্যাপসে। আর ওইসব অর্থ কৌশলে চলে যায় দেশের বাইরে। দীর্ঘদিন ধরে অনলাইনে জুয়া খেলার বিভিন্ন অ্যাপসে জুয়ারীদের সংখ্যা বেড়েই যাচ্ছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় জুয়ার সাইটগুলো পরিচালনার জন্য আপস নিয়ন্ত্রণকারীরা বাংলাদেশ তাদের নিজস্ব প্রতিনিধি নিয়োগ করেছে। এসব প্রতিনিধিরা নিজ নিজ বাসায় ডিজিটাল ল্যাব তৈরী করে একাধিক কম্পিউটার বসিয়ে জুয়ার সাইটগুলো পরিচালনা করছে।
সিআইডির তদন্ত সংশ্লিস্টার জানিয়েছেন, অন লাইনে জুয়া খেলায় অংশগ্রহণকারীদের একটি বড় অংশ উঠতি বয়সের তরুন- তরুনীরা। এছাড়া স্কুল- কলেজসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশও এখন অন লাইন জুয়ায় জড়িয়ে পড়েছে। একটি সংঘবদ্ধ চক্র বিভিন্ন ধরনের অ্যাপসে এসব তরুন, তরুনী ও শিক্ষার্থীদের নানা কৌশলে অনলাইনে জুয়া খেলায় সম্পৃক্ত করতে লোভনীয় অপার দিচ্ছে। আর এ ফাঁদে পড়ে অংশগ্রহণকারীরা যে টাকা কিপ্টো কারেন্সির মাধ্যমে দিচ্ছে তা কৌশলে দেশের বাইরে পাচার হচ্ছে। সম্প্রতি মেল বেট ও ওয়ান এক্স বেট এবং বেট উইনার নামে ৩ টি জুয়ার মাধ্যমে দেশ থেকে কোটি টাকা পাচার হওয়ার প্রমাণ পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি।
সিআইডি বলছে, রাশিয়া থেকে মূলত এই সমস্ত অনলাইন জুয়ার ওয়েবসাইট নিয়ন্ত্রণ করা হয়। বিভিন্ন দেশে স্থানীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণের জন্য ম্যানেজার নিয়োগ করা হয়। ম্যানেজার বাংলাদেশে জুয়ার এজেন্ট হিসাবে বিশ্বস্তদের নিয়োগ দেয়। জুয়ার এজেন্ট গন এ সমস্ত অ্যাপস পরিচালনা করতে পারে টেকনিক্যালি দক্ষ এমন লোক রাখেন।
গ্রেফতারকৃত রেজাউল করিম তার বাসায় ৭ টি কম্পিউটার ও ৪ টি ল্যাপটপ নিয়ে টেকনিক্যালি দক্ষ কয়েকজনকে সাথে নিয়ে আইটি ল্যাব তৈরি করে এই জুয়ার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলো। জুয়ার টাকা লেনদেনের জন্য তাদের সাথে যুক্ত হন গ্রেফতারকৃত সাদিকুল ও জাকির হোসেনের মত এমএফএস এজেন্ট। গ্রেফতারকৃত নাজমুল, তৌহিদদের মত এমএফএস ডিস্ট্রিবিউশন হাউসের কিছু অসাধু কর্মচারীর সহযোগিতায় এই চক্র এজেন্ট সিম সংগ্রহ করে অনলাইন জুয়ার কাজ সমূহ নির্বিঘ্নে করতে পারে।
আটককৃত চক্রটি ঢাকার বিভিন্ন এলাকা এবং দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল সমূহে এই জুয়ার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, শরীয়তপুরের বাসিন্দা মতিউর রহমান যিনি রাশিয়ার মস্কোতে অবস্থান করছেন তিনি মূলত এই সাইটসমূহের বাংলাদেশের দায়িত্বে রয়েছেন। তার সহযোগী হিসেবে রয়েছেন যশোরের আশিকুর রহমান।
এই দুইজন এবং গ্রেফতারকৃত সৈকত ও রেজাউল এই চারজনের সমন্বয়ে বাংলাদেশে এ তিনটি ওয়েবসাইটের নিয়ন্ত্রণ করা হয়। তাদের মাধ্যমে জুয়ার এজেন্টরা ওয়েবসাইটে ব্যবহৃত এমএফএস (এজেন্ট সিম) ব্যবহার করে সারা বাংলাদেশ থেকে জুয়াড়িদের টাকা সংগ্রহ করে প্রতিমাসে এই চক্রটি এমএফএস এবং বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকা লেনদেন করে। কমিশন বাবদ তারা টাকার একটা ক্ষুদ্র অংশ পেয়ে জুয়ারীদের কাছ থেকে সংগৃহীত পুরো টাকা অ্যাপস পরিচালনাকারীদের কাছে হুন্ডি কিংবা ক্রিপ্টোকারেন্সিতে কনভার্ট করে রাশিয়াতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
সাইবার টিমের পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ টেলিফোনে সংবাদকে জানান, শরিয়তপুরের বাসিন্দা মতিউর রহমান এ অনলাইন জুয়া চক্রের মূল দলনেতা। গ্রেপ্তারকৃতরা তার অনেকগুলো গ্রুপের একটি গ্রুপ। গ্রেপ্তারকৃত গ্রুপের কাছ থেকে প্রতি মাসে কমপক্ষে ২০ কোটি টাকা পেতো মতিউর। তার এ গ্রুপের রেজাউল ও সৈকত অ্যাপস পরিচালনা করে মাসে ৭০ হাজার টাকা পেতেন। এজেন্টরা টাকা লেনদেন করে একটি কমিশন পেতেন। যে মোবাইল সিমগুলো উদ্ধার হয়েছে প্রতিটি সীমের বিপরীতে ২০ লাখ টাকা করে লেনদেনের তথ্য মিলেছে।
রেজাউল মাসুদ জানান, আমরা ধারণা করছি মতিউরের আরো একাধিক গ্রুপ রয়েছে। যে অ্যাপসগুলো দ্বারা জুয়া চলতো এসব অ্যাপসে অনেক নামীদামী মডেল, অভিনেতা অভিনেত্রীদের বিজ্ঞাপন দিতেও দেখা গেছে। এ রকম আরো জুয়ার সাইট আছে কিনা সে বিষয়ে তদন্ত চলছে।
 
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         ইপেপার
                        
                                                	                            	জাতীয়
                           	                            	সারাদেশ
                           	                            	আন্তর্জাতিক
                           	                            	নগর-মহানগর
                           	                            	খেলা
                           	                            	বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
                           	                            	শিক্ষা
                           	                            	অর্থ-বাণিজ্য
                           	                            	সংস্কৃতি
                           	                            	ক্যাম্পাস
                           	                            	মিডিয়া
                           	                            	অপরাধ ও দুর্নীতি
                           	                            	রাজনীতি
                           	                            	শোক ও স্মরন
                           	                            	প্রবাস
                           	                            নারীর প্রতি সহিংসতা
                            বিনোদন
                                                                        	                            	সম্পাদকীয়
                           	                            	উপ-সম্পাদকীয়
                           	                            	মুক্ত আলোচনা
                           	                            	চিঠিপত্র
                           	                            	পাঠকের চিঠি
                        ইপেপার
                        
                                                	                            	জাতীয়
                           	                            	সারাদেশ
                           	                            	আন্তর্জাতিক
                           	                            	নগর-মহানগর
                           	                            	খেলা
                           	                            	বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
                           	                            	শিক্ষা
                           	                            	অর্থ-বাণিজ্য
                           	                            	সংস্কৃতি
                           	                            	ক্যাম্পাস
                           	                            	মিডিয়া
                           	                            	অপরাধ ও দুর্নীতি
                           	                            	রাজনীতি
                           	                            	শোক ও স্মরন
                           	                            	প্রবাস
                           	                            নারীর প্রতি সহিংসতা
                            বিনোদন
                                                                        	                            	সম্পাদকীয়
                           	                            	উপ-সম্পাদকীয়
                           	                            	মুক্ত আলোচনা
                           	                            	চিঠিপত্র
                           	                            	পাঠকের চিঠি
                           	                                            রাশিয়া থেকে জুয়ার সাইট নিয়ন্ত্রণ, দেশে ল্যাব তৈরী করে পরিচালনা
চক্রের এজেন্টসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার
শুক্রবার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩
অনলাইন জুয়ার বিনিয়োগের অর্থ কৌশলে চলে যাচ্ছে দেশের বাইরে। কিপ্টো কারেন্সির মাধ্যমে রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে অনলাইন জুয়ার অ্যাপস নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। বাংলাদেশের কয়েকটি এলাকায় এ জুয়ার কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত এজেন্টরা বাসায় ল্যাব তৈরী করে সাইটগুলো পরিচালনা করছে। সম্প্রতি রাশিয়া থেকে নিয়ন্ত্রিত ৩ টি অনলাইন জুয়ার সাইট নজরে আসার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের দেয়া তথ্যে চক্রের মূল নিয়ন্ত্রণ হিসেবে রাশিয়া প্রবাসী বাংলাদেশী এক নাগরিকের নাম পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি।
সিআইডি বলছে, চক্রটি বাংলাদেশ থেকে গত ১ বছর ধরে প্রতিমাসে ২০ কোটি টাকা করে পাচার করেছে বলে তথ্য মিলেছে। চক্রের সদস্যদের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন কোম্পানির মোবাইল ফাইন্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) এর এজেন্ট- কর্মচারীরাও যুক্ত।
সিআইডি জানিয়েছে, সিআইডির সাইবার ইন্টেলিজেন্ট এন্ড রিস্ক ম্যানেজম্যান টিমের সদস্য দীর্ঘদিন ধরে মনিটরিং করার পর অনলাইন প্লাটফর্মে Mel Bet, 1x Bet এবং Bet winner নামের বেটিং সাইটসমূহ নজরে আসে। সিআইডি লক্ষ্য করে সেখানে বাংলাদেশের প্রচুর গ্রাাহক বেটিং বা জুয়া খেলায় অংশগ্রহণ করছে।সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া নির্দেশনায় ওই তিনটি সাইটের বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত এনালাইসিস করে সিআইডি সাইবার ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট-এর একটি টিম।
গত ৩১ আগষ্ট বৃহস্পতিবার সিআইডির সাইবার টিমের পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদের নেতৃত্বাধীণ টিমের সদস্যরা ঢাকার মোহাম্মদপুর, বনশ্রী ও আগারগাঁও এবং সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে মো:রেজাউল করিম (৩১), মো: সৈকত রহমান (৩০), মো: সাদিকুল ইসলাম (২৮), নাজমুল আহসান (৩০), মো: তৌহিদ হোসেন (২৫) এবং মো: জাকির হোসেন (৩৪) আটক করা হয়। গ্রেফতারকালীন সময়ে তাদের কাছ থেকে ১৭ টি বিভিন্ন ব্রান্ডের মোবাইল ফোন, ২১ টি সিম, ল্যাপটপ ৪ টি, ডেস্কটপ কম্পিউটার ৭ টি, ট্যাব ২টি, এবং নগদ প্রায় ৪ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।আটককৃতদের বিরুদ্ধে গতকাল শুক্রবার রাজধানীর পল্টন মডেল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করা হয়েছে।
সিআইডির ভাষ্য, অনলাইন জুয়ায় টাকা দিয়ে খেলায় অংশ নেয় জুয়ারীরা। বেটার রা কিপ্টো কারেন্সির মাধ্যমে টাকা বিনিয়োগ করে অ্যাপসে। আর ওইসব অর্থ কৌশলে চলে যায় দেশের বাইরে। দীর্ঘদিন ধরে অনলাইনে জুয়া খেলার বিভিন্ন অ্যাপসে জুয়ারীদের সংখ্যা বেড়েই যাচ্ছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় জুয়ার সাইটগুলো পরিচালনার জন্য আপস নিয়ন্ত্রণকারীরা বাংলাদেশ তাদের নিজস্ব প্রতিনিধি নিয়োগ করেছে। এসব প্রতিনিধিরা নিজ নিজ বাসায় ডিজিটাল ল্যাব তৈরী করে একাধিক কম্পিউটার বসিয়ে জুয়ার সাইটগুলো পরিচালনা করছে।
সিআইডির তদন্ত সংশ্লিস্টার জানিয়েছেন, অন লাইনে জুয়া খেলায় অংশগ্রহণকারীদের একটি বড় অংশ উঠতি বয়সের তরুন- তরুনীরা। এছাড়া স্কুল- কলেজসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশও এখন অন লাইন জুয়ায় জড়িয়ে পড়েছে। একটি সংঘবদ্ধ চক্র বিভিন্ন ধরনের অ্যাপসে এসব তরুন, তরুনী ও শিক্ষার্থীদের নানা কৌশলে অনলাইনে জুয়া খেলায় সম্পৃক্ত করতে লোভনীয় অপার দিচ্ছে। আর এ ফাঁদে পড়ে অংশগ্রহণকারীরা যে টাকা কিপ্টো কারেন্সির মাধ্যমে দিচ্ছে তা কৌশলে দেশের বাইরে পাচার হচ্ছে। সম্প্রতি মেল বেট ও ওয়ান এক্স বেট এবং বেট উইনার নামে ৩ টি জুয়ার মাধ্যমে দেশ থেকে কোটি টাকা পাচার হওয়ার প্রমাণ পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি।
সিআইডি বলছে, রাশিয়া থেকে মূলত এই সমস্ত অনলাইন জুয়ার ওয়েবসাইট নিয়ন্ত্রণ করা হয়। বিভিন্ন দেশে স্থানীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণের জন্য ম্যানেজার নিয়োগ করা হয়। ম্যানেজার বাংলাদেশে জুয়ার এজেন্ট হিসাবে বিশ্বস্তদের নিয়োগ দেয়। জুয়ার এজেন্ট গন এ সমস্ত অ্যাপস পরিচালনা করতে পারে টেকনিক্যালি দক্ষ এমন লোক রাখেন।
গ্রেফতারকৃত রেজাউল করিম তার বাসায় ৭ টি কম্পিউটার ও ৪ টি ল্যাপটপ নিয়ে টেকনিক্যালি দক্ষ কয়েকজনকে সাথে নিয়ে আইটি ল্যাব তৈরি করে এই জুয়ার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলো। জুয়ার টাকা লেনদেনের জন্য তাদের সাথে যুক্ত হন গ্রেফতারকৃত সাদিকুল ও জাকির হোসেনের মত এমএফএস এজেন্ট। গ্রেফতারকৃত নাজমুল, তৌহিদদের মত এমএফএস ডিস্ট্রিবিউশন হাউসের কিছু অসাধু কর্মচারীর সহযোগিতায় এই চক্র এজেন্ট সিম সংগ্রহ করে অনলাইন জুয়ার কাজ সমূহ নির্বিঘ্নে করতে পারে।
আটককৃত চক্রটি ঢাকার বিভিন্ন এলাকা এবং দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল সমূহে এই জুয়ার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, শরীয়তপুরের বাসিন্দা মতিউর রহমান যিনি রাশিয়ার মস্কোতে অবস্থান করছেন তিনি মূলত এই সাইটসমূহের বাংলাদেশের দায়িত্বে রয়েছেন। তার সহযোগী হিসেবে রয়েছেন যশোরের আশিকুর রহমান।
এই দুইজন এবং গ্রেফতারকৃত সৈকত ও রেজাউল এই চারজনের সমন্বয়ে বাংলাদেশে এ তিনটি ওয়েবসাইটের নিয়ন্ত্রণ করা হয়। তাদের মাধ্যমে জুয়ার এজেন্টরা ওয়েবসাইটে ব্যবহৃত এমএফএস (এজেন্ট সিম) ব্যবহার করে সারা বাংলাদেশ থেকে জুয়াড়িদের টাকা সংগ্রহ করে প্রতিমাসে এই চক্রটি এমএফএস এবং বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকা লেনদেন করে। কমিশন বাবদ তারা টাকার একটা ক্ষুদ্র অংশ পেয়ে জুয়ারীদের কাছ থেকে সংগৃহীত পুরো টাকা অ্যাপস পরিচালনাকারীদের কাছে হুন্ডি কিংবা ক্রিপ্টোকারেন্সিতে কনভার্ট করে রাশিয়াতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
সাইবার টিমের পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ টেলিফোনে সংবাদকে জানান, শরিয়তপুরের বাসিন্দা মতিউর রহমান এ অনলাইন জুয়া চক্রের মূল দলনেতা। গ্রেপ্তারকৃতরা তার অনেকগুলো গ্রুপের একটি গ্রুপ। গ্রেপ্তারকৃত গ্রুপের কাছ থেকে প্রতি মাসে কমপক্ষে ২০ কোটি টাকা পেতো মতিউর। তার এ গ্রুপের রেজাউল ও সৈকত অ্যাপস পরিচালনা করে মাসে ৭০ হাজার টাকা পেতেন। এজেন্টরা টাকা লেনদেন করে একটি কমিশন পেতেন। যে মোবাইল সিমগুলো উদ্ধার হয়েছে প্রতিটি সীমের বিপরীতে ২০ লাখ টাকা করে লেনদেনের তথ্য মিলেছে।
রেজাউল মাসুদ জানান, আমরা ধারণা করছি মতিউরের আরো একাধিক গ্রুপ রয়েছে। যে অ্যাপসগুলো দ্বারা জুয়া চলতো এসব অ্যাপসে অনেক নামীদামী মডেল, অভিনেতা অভিনেত্রীদের বিজ্ঞাপন দিতেও দেখা গেছে। এ রকম আরো জুয়ার সাইট আছে কিনা সে বিষয়ে তদন্ত চলছে।
