তৈরি করা হচ্ছে নকল দুধ -সংবাদ
ডিটারজেন্ট পাউডার, সোডা, সায়াবিন তেল, লবন, চিনি ভারতীয় স্কিমমিল্ক পাউডারসহ (পশুখাদ্য) মারাত্মক সব কেমিক্যেল মিশিয়ে তৈরি হচ্ছে মণকে মণ ভেজাল দুধ। দেখতে খাঁটি দুধের মতো সেই নকল দুধের ক্রিম থেকে তৈরি হচ্ছে খাঁটি গাওয়া ঘি। দুধের ছানা থেকে তৈরি হচ্ছে বাহারি সব মিষ্টান্ন। প্রশাসনের অভিযানেও বন্ধ হচ্ছে না নকল দুধ তৈরি।
আবার এই ভেজাল দুধ কৌশলে বিভিন্ন নামি-দামি ব্যান্ডের কোম্পানির মাধ্যমে প্যাকেটজাত হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশে। এই ভেজাল দুধের ছানা ও ঘি তৈরি করে সরবরাহ করা হচ্ছে উত্তরাঞ্চলসহ ঢাকার নামকরা মিষ্টি বিপনী বিতান, নামি দামি রেস্টুরেন্টে। দীর্ঘদিন ধরে কৌশলে ভয়ঙ্কর এই অপকর্ম করে একাধিক শক্তিশালী সিন্ডিকেট সদা দুধের কালো ব্যবসা করে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা।
সাধারণ মানুষকে দুধের তৈরি ঘি, মিষ্টান্ন ও দুধ নামের বিষ খাইয়ে রাতা-রাতি জালিয়াত চক্রটি বনে গেছে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ, কলাগাছ থেকে বটগাছ। এই দুধ ও তার তৈরি মিষ্টি, ঘিসহ মিষ্টান্ন খেয়ে মারাত্মক সব রোগে আক্রান্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। প্রকাশ্যে এই ভয়াবহ অবৈধ কর্মকান্ড চলে আসলেও অজ্ঞাত কারণে বিষয়টি নিয়ে প্রশাসন রয়েছে নির্বিকার। ভয়ঙ্কর এমন কর্মকান্ড হচ্ছে দুগ্ধ ভান্ডার খ্যাত পাবনার সাঁথিয়া, ফরিদপুর, বেড়া, ভাঙ্গুড়া, চাটমোহর সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া, তাড়াশ, কামারখন্দ।
বিভিন্ন সময় এসব এলাকায় ভেজাল কারবারিদের সঙ্গে কথা বলে এবং গোপনে অনুসন্ধান চালিয়ে এই ভয়াবহ কর্মকান্ডের তথ্য প্রমান পাওয়া গেছে। এসব নিয়ে মিডিয়ায় প্রচারের পর কখনো কখনো প্রশাসনের অভিযানে ভেজাল কারবারিরা অর্থদন্ড দিয়ে ছাড়া পেয়ে আবারও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় নকল কারবার অব্যাহত রাখছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সম্প্রতি ভাঙ্গুড়ায় ভবানিপুর প্রাণ কোম্পানির দুধ সংগ্রহ ও শতলীকরণ কেন্দ্রে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাহিদ হাসান খান অভিযান চালিয়ে দেড় বস্তা কস্টিক সোডা ও ১৮ বস্তা চিনি উদ্ধার করে। ক্ষতিকর কেমিক্যাল দিয়ে ভেজাল দুধ তৈরির অপরাধে এজেন্সি ইনচার্জ মাসুদ রানাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া সুজানগর, সাঁথিয়া, বেড়া, উল্লাপাড়া ও শাহজাদপুর উপজেলায় প্রশাসন একাধিকবার অভিযান চালিয়ে জেল জরিমানা করেছে। তারপরও বন্ধ হচ্ছে না এ ব্যবসা। জানা যায়, স্বল্প পুঁজি বিনিযোগ করে অধিক মুনাফার লোভে অসাধু ব্যবসায়ীরা চালিয়ে যাচ্ছে ভেজাল কারবার।
সরেজমিন তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, দেশের গবাদিপশু সমৃদ্ধ পাবনার বেড়া, সাথিয়া, ফরিদপুর, ভাঙ্গুড়া সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর ও উল্লাপাড়া উপজেলায় নকল দুধের রমরমা ব্যবসা চলছে। এই ভেজাল দুধ তৈরিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও কারখানা। এসব কারখানায় চলছে নকল দুধের নানা কারবার। এই ভেজাল দুধ নানা প্রক্রিয়ায় প্রক্রিয়াজাত করে তৈরি করা হচ্ছে ঘি. ছানা, প্যাকেট দুধ। দেশের বাজারে দুগ্ধজাত পণ্যের ব্যাপক চাহিদা থাকায় এটি এখন শিল্পে পরিণত হয়েছে। এসব এলাকায় দুধ উৎপাদনে গড়ে উঠেছে প্রচুর পরিমান দুগ্ধ খামার। এসব খামারে উৎপাদিত প্রচুর পরিমান দুধ। গবাদিপশু পালন ও তা থেকে দুধ উৎপাদন ও বিক্রি করে অনেক খামারি এবং বেকার যুবক-যুবতি স্বাবলম্বি হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছিল।
এদিকে হাঠাৎ করে ভেজাল দুধ উৎপাদনকারি সিন্ডিকেটের কারণে মুখ থুবড়ে পড়তে চলেছে সম্ভাবনাময় এই শিল্প। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে খাঁটি দুধ উৎপাদনকারি খামারিরা এই সিন্ডিকেটের কারণে পথে বসার উপক্রম হয়েছে। দুগ্ধ শিল্পের এই করুন পরিণতির চিত্র খুঁজতে গিয়ে অনুসন্ধানে বেড়িয়ে এসেছে গাঁ শিউরে উঠার মতো এক ভয়ঙ্কর ভেজাল দুধের কারবারের চিত্র।
দুধ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত একাধিক ব্যবসায়ী ও খামারিদের সঙ্গে কথা বলে এবং সরেজমিনে দেখা যায়, প্রকাশ্য দিবালোকে তৈরি হচ্ছে মণকে মণ ভেজাল দুধ। দুধ ব্যবসায়ী দুধ থেকে ক্রিম এবং ছানা উৎপাদনকারী কতিপয় কারখানার মালিক এসব অপকর্ম করছে। তথ্যর সূত্র ধরে সরেজমিন বেড়া উপজেলা সদর থেকে তিন কিলোমিটার দূরের নাকালিয়ার পেঁচাকোলা। নকালিয়া গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে যমুনা নদী। নদীর পূর্বপাড়ের চরের গ্রামগুলোতে প্রচুর দুধ উৎপাদন হয়। এই দুধ ব্যবসায়ী, বিভিন্ন দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারি প্রতিষ্ঠান এবং কয়েকটি ছানা তৈরির কারখানায় দুধ বিক্রি করা হয়। দুধ ব্যবসায়ী ও ছানা কারখানার মালিকরা তৈরি করছে মণকে মণ নকল দুধ।
দুধের ভেজাল কারবারিরা বলেন, দুগ্ধ সংগ্রহ কেন্দ্রের কর্তা ব্যক্তিদের ম্যানেজ করে ভোজাল দুধের লাভের একটা অংশ ধরিয়ে দিলেই তারা অন্য খামারিদের ভাল দুধের সঙ্গে এই দুধ মিশিয়ে দেয়। দুধের ঘনত্ব (ননির ফ্যাট) মেপে টাকা দেয়ায় খামারিরা এই ভেজাল দুধের কারণে দাম কম পায়। কিন্তু ভেজালকারি এবং ক্রয় কেন্দ্রের কর্তা ব্যক্তিরা এই ভেজাল দুধ ভালো দুধের সঙ্গে মিশিয়ে প্রতি মাসে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। এতে উচ্চ মূল্যে গো-খাদ্য কিনে গবাদিপশুকে খাইয়ে দুধ উৎপাদন করে লাভবান হওয়ার পরিবর্তে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে খামারিরা।
দুধে ভেজাল দিয়ে বিভিন্ন পন্থায় বিক্রি করে শুন্য থেকে রাতা-রাতি কোটিপতি বনে গেছেন দুধ ব্যবসায়ী ও সংগ্রাহকরা। এই দুধ ক্রয় বিক্রয়কে কেন্দ্র করে একাধিক ব্যবসায়ী (ফড়িয়া) গ্রুপ গড়ে উঠেছে। এদের সঙ্গে রয়েছে স্থানীয় পর্যায়ে ক্ষমতাসীন দলের কিছু অসাধু নেতাকর্মী। ফলে সংঘবদ্ধ চক্রটি প্রচন্ড শক্তিশালী। এদিকে এই ভেজাল দুধ যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন ঘি ক্রিম ও ছানা তৈরির কারখানায়। এসব কারখানায় দুধের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
ব্যবসায়ীদের কথার সূত্র ধরে সাঁথিয়া উপজেলার আমাইকোলা গোয়ালা ডেইরি অ্যান্ড ফুড প্রোডাক্টস নামের কানাডা প্রবাসী ব্যবসায়ী মির্জা তানজির আহম্মেদ শিশিরের কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, ঘোষ ও ব্যবসাীদের কাছ থেকে পরীক্ষা ছাড়া দুধ কিনে অস্বাস্থ্যকর নোংরা পরিবেশে শতভাগ ননী বের করে সেই দুধ দিয়ে ছানা তৈরি করা হচ্ছে। কারখানার ম্যানেজার রবিউল ইসলাম জানান, প্রতিদিন দুধ ব্যবসায়ী (ফড়িয়া) ও ঘোষদের কাছ থেকে ক্যান দুধ কিনে ননী বের করে ঘি তৈরি করা হয়। আর ননী বিহীন দুধের ছানা তৈরি করে কানাডাসহ ঢাকার প্রসিদ্ধ মিষ্টান্ন ভান্ডারে সরবরাহ করা হয়। এছাড়া কারখানায় তৈরি ছানা দিয়ে কাচা সন্দেশ ও কাচা গোল্লা তৈরি করে ঢাকায় বিভিন্ন মিষ্টি দোকানে সরবরাহ করা হয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সিরাগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার লাহিড়ীমোহনপুর বাল্লাপাড়ার সমিরন ঘোষ, মোনপুর বাজারের রঞ্জন ঘোষ ভেজাল ছানা ঘি তৈরি করছে। অভিযোগ রয়েছে, রঞ্জন ঘোষ ভেজাল ক্রিম (ননী) কিনে এনে ঘি তৈরি করে বগুড়া, ঢাকা, চট্টগ্রামসহ সারাদেশে বাজার জাত করছে।, শাহজাদপুরের বাঘাবাড়ি, রাউতারা, পোরজোনা, কায়েমপুর, চরাচিথুলিয়া পাবনার বেড়ার আমাইকোলা, পেঁচাকোলা, হাটুরিয়া, সাঁথিয়ার সেলন্দা, ফরিদপুরের বড় ডেমরা, পার গোপালপুর, সুজানগর ও ভাঙ্গুড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অসখ্য কারখানা গড়ে তুলে সেখানে এই ভেজাল দুধ দিয়ে ঘি এবং ছানা তৈরি করা হচ্ছে। একই সঙ্গে এই দুধ বিভিন্ন নামীদামী কোম্পানির ক্রয় কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে তাদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। এসব এলাকার অসাধু ব্যবসায়ী ভেজাল দুধ, ঘি, ছানার ব্যবসা করে শুন্য থেকে কোটি কোটি টাকা এবং বিলাশ বহুল বাড়ির মালিক বনে গেছে।
একাধিক খামারি জানান, এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণে গবাদিপশুর মালিকরা পুঁজি হারিয়ে পথে বসছে। আর সুনাম হারাচ্ছে, এ জনপদের প্রসিদ্ধ দুগ্ধ সম্পদ। তারা অসাধু এসব ভেজাল ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা ভেজাল দুধের বিষয়ে জানান, কেমিক্যাল মেশানো এই দুধ ও তার তৈরি মিষ্টান্ন খেয়ে সাধারণ মানুষ মারাত্মক সব রোগে ভুগছেন।
তৈরি করা হচ্ছে নকল দুধ -সংবাদ
শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩
ডিটারজেন্ট পাউডার, সোডা, সায়াবিন তেল, লবন, চিনি ভারতীয় স্কিমমিল্ক পাউডারসহ (পশুখাদ্য) মারাত্মক সব কেমিক্যেল মিশিয়ে তৈরি হচ্ছে মণকে মণ ভেজাল দুধ। দেখতে খাঁটি দুধের মতো সেই নকল দুধের ক্রিম থেকে তৈরি হচ্ছে খাঁটি গাওয়া ঘি। দুধের ছানা থেকে তৈরি হচ্ছে বাহারি সব মিষ্টান্ন। প্রশাসনের অভিযানেও বন্ধ হচ্ছে না নকল দুধ তৈরি।
আবার এই ভেজাল দুধ কৌশলে বিভিন্ন নামি-দামি ব্যান্ডের কোম্পানির মাধ্যমে প্যাকেটজাত হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশে। এই ভেজাল দুধের ছানা ও ঘি তৈরি করে সরবরাহ করা হচ্ছে উত্তরাঞ্চলসহ ঢাকার নামকরা মিষ্টি বিপনী বিতান, নামি দামি রেস্টুরেন্টে। দীর্ঘদিন ধরে কৌশলে ভয়ঙ্কর এই অপকর্ম করে একাধিক শক্তিশালী সিন্ডিকেট সদা দুধের কালো ব্যবসা করে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা।
সাধারণ মানুষকে দুধের তৈরি ঘি, মিষ্টান্ন ও দুধ নামের বিষ খাইয়ে রাতা-রাতি জালিয়াত চক্রটি বনে গেছে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ, কলাগাছ থেকে বটগাছ। এই দুধ ও তার তৈরি মিষ্টি, ঘিসহ মিষ্টান্ন খেয়ে মারাত্মক সব রোগে আক্রান্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। প্রকাশ্যে এই ভয়াবহ অবৈধ কর্মকান্ড চলে আসলেও অজ্ঞাত কারণে বিষয়টি নিয়ে প্রশাসন রয়েছে নির্বিকার। ভয়ঙ্কর এমন কর্মকান্ড হচ্ছে দুগ্ধ ভান্ডার খ্যাত পাবনার সাঁথিয়া, ফরিদপুর, বেড়া, ভাঙ্গুড়া, চাটমোহর সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া, তাড়াশ, কামারখন্দ।
বিভিন্ন সময় এসব এলাকায় ভেজাল কারবারিদের সঙ্গে কথা বলে এবং গোপনে অনুসন্ধান চালিয়ে এই ভয়াবহ কর্মকান্ডের তথ্য প্রমান পাওয়া গেছে। এসব নিয়ে মিডিয়ায় প্রচারের পর কখনো কখনো প্রশাসনের অভিযানে ভেজাল কারবারিরা অর্থদন্ড দিয়ে ছাড়া পেয়ে আবারও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় নকল কারবার অব্যাহত রাখছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সম্প্রতি ভাঙ্গুড়ায় ভবানিপুর প্রাণ কোম্পানির দুধ সংগ্রহ ও শতলীকরণ কেন্দ্রে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাহিদ হাসান খান অভিযান চালিয়ে দেড় বস্তা কস্টিক সোডা ও ১৮ বস্তা চিনি উদ্ধার করে। ক্ষতিকর কেমিক্যাল দিয়ে ভেজাল দুধ তৈরির অপরাধে এজেন্সি ইনচার্জ মাসুদ রানাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া সুজানগর, সাঁথিয়া, বেড়া, উল্লাপাড়া ও শাহজাদপুর উপজেলায় প্রশাসন একাধিকবার অভিযান চালিয়ে জেল জরিমানা করেছে। তারপরও বন্ধ হচ্ছে না এ ব্যবসা। জানা যায়, স্বল্প পুঁজি বিনিযোগ করে অধিক মুনাফার লোভে অসাধু ব্যবসায়ীরা চালিয়ে যাচ্ছে ভেজাল কারবার।
সরেজমিন তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, দেশের গবাদিপশু সমৃদ্ধ পাবনার বেড়া, সাথিয়া, ফরিদপুর, ভাঙ্গুড়া সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর ও উল্লাপাড়া উপজেলায় নকল দুধের রমরমা ব্যবসা চলছে। এই ভেজাল দুধ তৈরিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও কারখানা। এসব কারখানায় চলছে নকল দুধের নানা কারবার। এই ভেজাল দুধ নানা প্রক্রিয়ায় প্রক্রিয়াজাত করে তৈরি করা হচ্ছে ঘি. ছানা, প্যাকেট দুধ। দেশের বাজারে দুগ্ধজাত পণ্যের ব্যাপক চাহিদা থাকায় এটি এখন শিল্পে পরিণত হয়েছে। এসব এলাকায় দুধ উৎপাদনে গড়ে উঠেছে প্রচুর পরিমান দুগ্ধ খামার। এসব খামারে উৎপাদিত প্রচুর পরিমান দুধ। গবাদিপশু পালন ও তা থেকে দুধ উৎপাদন ও বিক্রি করে অনেক খামারি এবং বেকার যুবক-যুবতি স্বাবলম্বি হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছিল।
এদিকে হাঠাৎ করে ভেজাল দুধ উৎপাদনকারি সিন্ডিকেটের কারণে মুখ থুবড়ে পড়তে চলেছে সম্ভাবনাময় এই শিল্প। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে খাঁটি দুধ উৎপাদনকারি খামারিরা এই সিন্ডিকেটের কারণে পথে বসার উপক্রম হয়েছে। দুগ্ধ শিল্পের এই করুন পরিণতির চিত্র খুঁজতে গিয়ে অনুসন্ধানে বেড়িয়ে এসেছে গাঁ শিউরে উঠার মতো এক ভয়ঙ্কর ভেজাল দুধের কারবারের চিত্র।
দুধ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত একাধিক ব্যবসায়ী ও খামারিদের সঙ্গে কথা বলে এবং সরেজমিনে দেখা যায়, প্রকাশ্য দিবালোকে তৈরি হচ্ছে মণকে মণ ভেজাল দুধ। দুধ ব্যবসায়ী দুধ থেকে ক্রিম এবং ছানা উৎপাদনকারী কতিপয় কারখানার মালিক এসব অপকর্ম করছে। তথ্যর সূত্র ধরে সরেজমিন বেড়া উপজেলা সদর থেকে তিন কিলোমিটার দূরের নাকালিয়ার পেঁচাকোলা। নকালিয়া গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে যমুনা নদী। নদীর পূর্বপাড়ের চরের গ্রামগুলোতে প্রচুর দুধ উৎপাদন হয়। এই দুধ ব্যবসায়ী, বিভিন্ন দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারি প্রতিষ্ঠান এবং কয়েকটি ছানা তৈরির কারখানায় দুধ বিক্রি করা হয়। দুধ ব্যবসায়ী ও ছানা কারখানার মালিকরা তৈরি করছে মণকে মণ নকল দুধ।
দুধের ভেজাল কারবারিরা বলেন, দুগ্ধ সংগ্রহ কেন্দ্রের কর্তা ব্যক্তিদের ম্যানেজ করে ভোজাল দুধের লাভের একটা অংশ ধরিয়ে দিলেই তারা অন্য খামারিদের ভাল দুধের সঙ্গে এই দুধ মিশিয়ে দেয়। দুধের ঘনত্ব (ননির ফ্যাট) মেপে টাকা দেয়ায় খামারিরা এই ভেজাল দুধের কারণে দাম কম পায়। কিন্তু ভেজালকারি এবং ক্রয় কেন্দ্রের কর্তা ব্যক্তিরা এই ভেজাল দুধ ভালো দুধের সঙ্গে মিশিয়ে প্রতি মাসে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। এতে উচ্চ মূল্যে গো-খাদ্য কিনে গবাদিপশুকে খাইয়ে দুধ উৎপাদন করে লাভবান হওয়ার পরিবর্তে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে খামারিরা।
দুধে ভেজাল দিয়ে বিভিন্ন পন্থায় বিক্রি করে শুন্য থেকে রাতা-রাতি কোটিপতি বনে গেছেন দুধ ব্যবসায়ী ও সংগ্রাহকরা। এই দুধ ক্রয় বিক্রয়কে কেন্দ্র করে একাধিক ব্যবসায়ী (ফড়িয়া) গ্রুপ গড়ে উঠেছে। এদের সঙ্গে রয়েছে স্থানীয় পর্যায়ে ক্ষমতাসীন দলের কিছু অসাধু নেতাকর্মী। ফলে সংঘবদ্ধ চক্রটি প্রচন্ড শক্তিশালী। এদিকে এই ভেজাল দুধ যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন ঘি ক্রিম ও ছানা তৈরির কারখানায়। এসব কারখানায় দুধের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
ব্যবসায়ীদের কথার সূত্র ধরে সাঁথিয়া উপজেলার আমাইকোলা গোয়ালা ডেইরি অ্যান্ড ফুড প্রোডাক্টস নামের কানাডা প্রবাসী ব্যবসায়ী মির্জা তানজির আহম্মেদ শিশিরের কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, ঘোষ ও ব্যবসাীদের কাছ থেকে পরীক্ষা ছাড়া দুধ কিনে অস্বাস্থ্যকর নোংরা পরিবেশে শতভাগ ননী বের করে সেই দুধ দিয়ে ছানা তৈরি করা হচ্ছে। কারখানার ম্যানেজার রবিউল ইসলাম জানান, প্রতিদিন দুধ ব্যবসায়ী (ফড়িয়া) ও ঘোষদের কাছ থেকে ক্যান দুধ কিনে ননী বের করে ঘি তৈরি করা হয়। আর ননী বিহীন দুধের ছানা তৈরি করে কানাডাসহ ঢাকার প্রসিদ্ধ মিষ্টান্ন ভান্ডারে সরবরাহ করা হয়। এছাড়া কারখানায় তৈরি ছানা দিয়ে কাচা সন্দেশ ও কাচা গোল্লা তৈরি করে ঢাকায় বিভিন্ন মিষ্টি দোকানে সরবরাহ করা হয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সিরাগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার লাহিড়ীমোহনপুর বাল্লাপাড়ার সমিরন ঘোষ, মোনপুর বাজারের রঞ্জন ঘোষ ভেজাল ছানা ঘি তৈরি করছে। অভিযোগ রয়েছে, রঞ্জন ঘোষ ভেজাল ক্রিম (ননী) কিনে এনে ঘি তৈরি করে বগুড়া, ঢাকা, চট্টগ্রামসহ সারাদেশে বাজার জাত করছে।, শাহজাদপুরের বাঘাবাড়ি, রাউতারা, পোরজোনা, কায়েমপুর, চরাচিথুলিয়া পাবনার বেড়ার আমাইকোলা, পেঁচাকোলা, হাটুরিয়া, সাঁথিয়ার সেলন্দা, ফরিদপুরের বড় ডেমরা, পার গোপালপুর, সুজানগর ও ভাঙ্গুড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অসখ্য কারখানা গড়ে তুলে সেখানে এই ভেজাল দুধ দিয়ে ঘি এবং ছানা তৈরি করা হচ্ছে। একই সঙ্গে এই দুধ বিভিন্ন নামীদামী কোম্পানির ক্রয় কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে তাদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। এসব এলাকার অসাধু ব্যবসায়ী ভেজাল দুধ, ঘি, ছানার ব্যবসা করে শুন্য থেকে কোটি কোটি টাকা এবং বিলাশ বহুল বাড়ির মালিক বনে গেছে।
একাধিক খামারি জানান, এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণে গবাদিপশুর মালিকরা পুঁজি হারিয়ে পথে বসছে। আর সুনাম হারাচ্ছে, এ জনপদের প্রসিদ্ধ দুগ্ধ সম্পদ। তারা অসাধু এসব ভেজাল ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা ভেজাল দুধের বিষয়ে জানান, কেমিক্যাল মেশানো এই দুধ ও তার তৈরি মিষ্টান্ন খেয়ে সাধারণ মানুষ মারাত্মক সব রোগে ভুগছেন।