দরিদ্রতা থেকে মুক্তি পেতে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে মালয়েশিয়ায় গিয়ে কর্মহীন শত শত বাংলাদেশি মাসের পর মাস চরম মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অভিযোগ উঠেছে, এজেন্সিগুলোর মারপ্যাঁচে পড়ে ফ্রি ভিসার নামে মালয়েশিয়া গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন অনেক মানুষ। দেশ থেকে তাদের বিমানে করে নিয়ে মালয়েশিয়া বিমানবন্দরে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি একাধিক ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা এমন অভিযোগ করেছেন। এ বিষয়ে অহরহ অভিযোগ পড়েছে সৌদি আরবের রিয়াদের অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রমকল্যাণ উইংয়েও। এমন অভিযোগ রয়েছে দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোতেও। ইতোমধ্যে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা অভিযুক্ত এজেন্সি গুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে।
প্রতারণার শিকার যশোরের জুনায়েদ সাকি, সাইফুল ইসলাম, বগুড়ার তাইজুল ইসলাম, কুমিল্লার শাহাদাত হোসেন, কক্সবাজারের আরমান, রাজশাহীর আরিফুল ইসলাম, মাগুরার সালেক উদ্দিন, নওগাঁর সাইদুল ইসলাম, নরসিংদীর সুমন, সিরাজগঞ্জের হাফিজুল ইসলাম, জামালপুরের তুহিন মিয়াসহ কয়েকজন ভুক্তভোগী এ ধরনের অভিযোগ জানান। তারা বলেন, ম্যাক্স ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসেসের (আরএল-১০৮৪) স্বত্বাধিকারী মো. মাহফুজুর রহমান চলতি বছর পাঁচ শতাধিক বাংলাদেশি কর্মীকে মালয়েশিয়ায় পাঠিয়ে কলিং ভিসায় কুয়ালালামপুর এয়ারপোর্ট পার করিয়ে ছেড়ে দেন। কোনো কাজ না পেয়ে তারা মানবেতর জীবনযাপন করতে থাকেন।
নিয়ম অনুযায়ী, কলিং ভিসায় মালয়েশিয়ায় প্রবেশের পর স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে রিক্রুটিং এজেন্সি ও নিয়োগকর্তার মাধ্যমে এক বছরের জন্য ওয়ার্কিং ভিসা পাওয়ার কথা। কিন্তু ‘ম্যাক্স ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসেস এয়ারপোর্ট পার করিয়েই দায় এড়িয়ে যায়। পরে তারা ও নিয়োগকর্তারা বাংলাদেশি কর্মীদের কল রিসিভ করেন না। এ অবস্থায় ভিসা ও কাজ না থাকায় দিনদিন তাদের হতাশা বাড়ছে।
ভুক্তভোগী বাংলাদেশি কর্মীরা জানান, প্রথমে পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে মার্কেটের ভিসা দেবে বলেছিল ম্যাক্স ম্যানেজমেন্ট। কিন্তু এখানে আসার পর দেখি ভিসা তো দূরে থাক, কথা কাজের কোনো মিল নেই। তাদের কাছে পাসপোর্ট-ভিসা কিছুই নেই, খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। কিছু বলতে পারছেন না। প্লেনে উঠার ঠিক আগ মুহূর্তে ম্যাক্স কর্তৃপক্ষ জোরপূর্বক তাদের কাছ থেকে জবানবন্দি নিয়ে ক্যামেরায় ভিডিও ধারণ করেন।
বিদেশ যাবার জন্য বাধ্য হয়ে তারা জবানবন্দি দেন, ভিডিওতে কর্মীরা বলেন ‘তারা ফ্রি ভিসায় মালয়েশিয়ায় গিয়ে কাজ ও থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা নিজেরাই করবেন। মেডিকেলে আনফিট হয়ে দেশে ফিরলে ম্যাক্স ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসেস কর্তৃপক্ষ কোনোভাবেই দায়ী থাকবে না। এমনকি মালয়েশিয়ায় গিয়ে কর্মীরা যদি নিজেদের জবানবন্দি অস্বীকার করে তাহলে দেশে থাকা তাদের পরিবারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে রিক্রুটিং এজেন্সি’। অথচ মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ চুক্তিতে (এমওইউ) উল্লেখ রয়েছে, প্রত্যেক কর্মীর কাজ, বাসস্থান, চিকিৎসা, ভিসা ফি এবং যাতায়াত ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে রিক্রুটিং এজেন্সি ও নিয়োগকর্তা। এখন ভয়ে কিছু বলতে পারছেন না ভুক্তভোগীরা।
তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ম্যাক্সের এমডি মাহফুজুর রহমান। তিনি বলেন, তার প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি করতে একটি স্বার্থেন্বেষী মহল মিথ্যা অভিযোগ দিচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে তার প্রতিষ্ঠান থেকে বিদেশ যাওয়া কোনো কর্মীই প্রতারণার শিকার হননি। যদি এমন ঘটনা ঘটতো তাহলে তার প্রতিষ্ঠানে অভিযোগ দেয়া হতো। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার প্রতিষ্ঠানে এমন অভিযোগ করেননি। এ ব্যপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিআইডির একজন উচ্চপদস্ত কর্মকর্তা বলেন, অবৈধভাবে কর্মী পাঠানো এজেন্সিগুলো চিহ্নিত করে অভিযান চালানো হচ্ছে। কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে ম্যাক্স ম্যানেজমেন্টের বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।
শুক্রবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৩
দরিদ্রতা থেকে মুক্তি পেতে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে মালয়েশিয়ায় গিয়ে কর্মহীন শত শত বাংলাদেশি মাসের পর মাস চরম মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অভিযোগ উঠেছে, এজেন্সিগুলোর মারপ্যাঁচে পড়ে ফ্রি ভিসার নামে মালয়েশিয়া গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন অনেক মানুষ। দেশ থেকে তাদের বিমানে করে নিয়ে মালয়েশিয়া বিমানবন্দরে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি একাধিক ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা এমন অভিযোগ করেছেন। এ বিষয়ে অহরহ অভিযোগ পড়েছে সৌদি আরবের রিয়াদের অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রমকল্যাণ উইংয়েও। এমন অভিযোগ রয়েছে দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোতেও। ইতোমধ্যে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা অভিযুক্ত এজেন্সি গুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে।
প্রতারণার শিকার যশোরের জুনায়েদ সাকি, সাইফুল ইসলাম, বগুড়ার তাইজুল ইসলাম, কুমিল্লার শাহাদাত হোসেন, কক্সবাজারের আরমান, রাজশাহীর আরিফুল ইসলাম, মাগুরার সালেক উদ্দিন, নওগাঁর সাইদুল ইসলাম, নরসিংদীর সুমন, সিরাজগঞ্জের হাফিজুল ইসলাম, জামালপুরের তুহিন মিয়াসহ কয়েকজন ভুক্তভোগী এ ধরনের অভিযোগ জানান। তারা বলেন, ম্যাক্স ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসেসের (আরএল-১০৮৪) স্বত্বাধিকারী মো. মাহফুজুর রহমান চলতি বছর পাঁচ শতাধিক বাংলাদেশি কর্মীকে মালয়েশিয়ায় পাঠিয়ে কলিং ভিসায় কুয়ালালামপুর এয়ারপোর্ট পার করিয়ে ছেড়ে দেন। কোনো কাজ না পেয়ে তারা মানবেতর জীবনযাপন করতে থাকেন।
নিয়ম অনুযায়ী, কলিং ভিসায় মালয়েশিয়ায় প্রবেশের পর স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে রিক্রুটিং এজেন্সি ও নিয়োগকর্তার মাধ্যমে এক বছরের জন্য ওয়ার্কিং ভিসা পাওয়ার কথা। কিন্তু ‘ম্যাক্স ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসেস এয়ারপোর্ট পার করিয়েই দায় এড়িয়ে যায়। পরে তারা ও নিয়োগকর্তারা বাংলাদেশি কর্মীদের কল রিসিভ করেন না। এ অবস্থায় ভিসা ও কাজ না থাকায় দিনদিন তাদের হতাশা বাড়ছে।
ভুক্তভোগী বাংলাদেশি কর্মীরা জানান, প্রথমে পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে মার্কেটের ভিসা দেবে বলেছিল ম্যাক্স ম্যানেজমেন্ট। কিন্তু এখানে আসার পর দেখি ভিসা তো দূরে থাক, কথা কাজের কোনো মিল নেই। তাদের কাছে পাসপোর্ট-ভিসা কিছুই নেই, খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। কিছু বলতে পারছেন না। প্লেনে উঠার ঠিক আগ মুহূর্তে ম্যাক্স কর্তৃপক্ষ জোরপূর্বক তাদের কাছ থেকে জবানবন্দি নিয়ে ক্যামেরায় ভিডিও ধারণ করেন।
বিদেশ যাবার জন্য বাধ্য হয়ে তারা জবানবন্দি দেন, ভিডিওতে কর্মীরা বলেন ‘তারা ফ্রি ভিসায় মালয়েশিয়ায় গিয়ে কাজ ও থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা নিজেরাই করবেন। মেডিকেলে আনফিট হয়ে দেশে ফিরলে ম্যাক্স ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসেস কর্তৃপক্ষ কোনোভাবেই দায়ী থাকবে না। এমনকি মালয়েশিয়ায় গিয়ে কর্মীরা যদি নিজেদের জবানবন্দি অস্বীকার করে তাহলে দেশে থাকা তাদের পরিবারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে রিক্রুটিং এজেন্সি’। অথচ মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ চুক্তিতে (এমওইউ) উল্লেখ রয়েছে, প্রত্যেক কর্মীর কাজ, বাসস্থান, চিকিৎসা, ভিসা ফি এবং যাতায়াত ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে রিক্রুটিং এজেন্সি ও নিয়োগকর্তা। এখন ভয়ে কিছু বলতে পারছেন না ভুক্তভোগীরা।
তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ম্যাক্সের এমডি মাহফুজুর রহমান। তিনি বলেন, তার প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি করতে একটি স্বার্থেন্বেষী মহল মিথ্যা অভিযোগ দিচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে তার প্রতিষ্ঠান থেকে বিদেশ যাওয়া কোনো কর্মীই প্রতারণার শিকার হননি। যদি এমন ঘটনা ঘটতো তাহলে তার প্রতিষ্ঠানে অভিযোগ দেয়া হতো। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার প্রতিষ্ঠানে এমন অভিযোগ করেননি। এ ব্যপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিআইডির একজন উচ্চপদস্ত কর্মকর্তা বলেন, অবৈধভাবে কর্মী পাঠানো এজেন্সিগুলো চিহ্নিত করে অভিযান চালানো হচ্ছে। কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে ম্যাক্স ম্যানেজমেন্টের বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।