স্লিপার উপড়ে ফেলে আগুন জ্বালিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা
গাজীপুর, ঢাকার পর আবার রেলে নাশকতার চেষ্টা হলো দিনাজপুরের বিরামপুরে। সেখানকার রেলস্টেশনে আউটার লাইনের ওপরে কয়েকটি স্লিপার তুলে রেখেছিল দুর্বৃত্তরা। বিষয়টি রূপসা এক্সপ্রেসের চালক ও তার সহকারীর নজরে এলে তাৎক্ষণিকভাবে ট্রেনটি থামিয়ে ফেলেন তারা।
বাংলাদেশে রেলওয়ের চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার (পশ্চিম) সুজিত কুমার বিশ্বাস গণমাধ্যমকে বলেন, গত মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। তার আগে মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে ওই রেললাইনে আগুন দিয়েও নাশকতার চেষ্টা চালানো হয়। ওই সময় আনসার সদস্যরা পার্বতীপুর থেকে ছেড়ে আসা খুলনাগামী সীমান্ত এক্সপ্রেসকে দ্রুত থামিয়ে দিলে ট্রেনটি দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায়।
ওই স্টেশনের কাছেই রেলের পাত ভেঙে যাওয়ায় বুধবার (২০ ডিসেম্বর) ভোরে এক ঘণ্টার বেশি সময় আটকে থাকে পঞ্চগড় এক্সপ্রেস। বিএনপির ডাকা হরতালের মধ্যে মঙ্গলবার ভোরে ঢাকায় মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে অগ্নি নাশকতার পর ২৪ ঘণ্টা না যেতেই দিনাজপুরের বিরামপুরে এ ঘটনা ঘটলো।
পার্বতীপুর জিআরপি থানার ওসি নুরুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে বিরামপুরে রেললাইনে আগুন দেয়া হয়। ওই সময়ে এলাকায় পাহারায় থাকা আনসার সদস্যরা আগুন দেয়ার ঘটনা টের পেয়ে যান। ‘পার্বতীপুর থেকে ছেড়ে আসা খুলনাগামী সীমান্ত এক্সপ্রেসটিকে আনসার সদস্যরা থামিয়ে দিলে দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায় ট্রেনটি। আনসার সদস্যরাই দ্রুত আগুন নিভিয়ে ফেলেন। ফলে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি এবং ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়নি।’
বিরামপুর উপজেলার জোতবানী ইউনিয়নে আনসার ও ভিডিপির দলনেতা ইফতেখার রহমান (৪৬) গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মঙ্গলবার রাতে সহকর্মীকে নিয়ে ১ নম্বর সিগন্যাল পয়েন্ট থেকে দক্ষিণে হাঁটিছিলাম। তখন হঠাৎ করে রেললাইনের ওপর আগুন জ্বলতে দেখি। কাছে গিয়ে সেখানে রেললাইনের ওপর সিমেন্টের স্লিপারের সঙ্গে বাঁশ ও গাছের ডাল বেঁধে রাখা দেখতে পাই। সঙ্গে সঙ্গে গলা থেকে মাফলার খুলে ট্রেনের দিকে যেতে যেতে ওড়াতে থাকি। হাতে থাকা টর্চলাইট জ্বালিয়ে ট্রেনচালককে ট্রেন থামানোর সংকেত দিই। চালক ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ২০০ গজ দূরে ট্রেন থামান।’
রেললাইনে নাশকতার খবর পেয়ে মঙ্গলবার রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুজহাত তাসনীম, সহকারী পুলিশ সুপার (বিরামপুর সার্কেল) মঞ্জরুল ইসলাম ও থানার ওসি সুব্রত কুমার সরকার। পরে স্থানীয় আনসার সদস্য ও রেলওয়ে কর্মীদের সহযোগিতায় রেললাইনের ওপরে রাখা স্লিপার, বাঁশ, কাঠ ও কচুরিপানা সরিয়ে ফেলা হয়।
এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে বিরামপুর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হায়দার আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলেও জানান রেল পুলিশের এই কর্মকর্তা। এ ঘটনায় জিআরপি থানা পুলিশ বাদী হয়ে বিরামপুর থানায় ৮ জনের নামে মামলা করে। ওই মামলায় হায়দারকে প্রধান আসামি করা হয়।
গত ২৬ অক্টোবর থেকে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর হরতাল-অবরোধের মধ্যে রেলে পাঁচটি বড় ধরনের নাশকতার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় প্রাণ গেছে পাঁচজনের, রেলের কর্মীসহ আহত হয়েছে অনেকে। পুরোপুরি পুড়ে গেছে রেলের সাতটি কোচ, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরও আটটি কোচ এবং একটি ইঞ্জিন। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে রেললাইনে আগুন দেয়া, ফিশপ্লেট তুলে ফেলা, ককটেল বিস্ফোরণের বেশকিছু ঘটনার কথা জানিয়েছে রেলওয়ে।
এই পরিস্থিতিতে ট্রেনে নাশকতা ঠেকাতে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ২৭০০ আনসার সদস্য নিয়োজিত করা হবে বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন।
ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেসে ধোঁয়া, যাত্রীদের মধ্যে আগুন আতঙ্ক
বুধবার সন্ধ্যায় ঢাকার কমলাপুর থেকে জালামপুরের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস ট্রেনে এ ঘটনা ঘটে। ট্রেনটির পাওয়ার কার থেকে ধোঁয়া বের হতে শুরু করলে আতঙ্ক ছড়ায়। পরে ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে ট্রেনটি থামিয়ে আগুন নেভানোর পর আবার গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যায় বলে জানান ঢাকা রেলওয়ে থানার ওসি ফেরদৌস আহমেদ বিশ্বাস। তাদের ধারণা বিষয়টা নাশকতা নয়। দুর্ঘটনাজনিত কারণে ছোট্ট আগুন থেকে ধোঁয়া বের হয়েছে।
ওসি ফেরদৌস বলেন, সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে কমলাপুর থেকে ছেড়ে যাওয়ার পর ব্রহ্মপুত্র ট্রেনটির পাওয়ার কার থেকে ধোঁয়া বের হতে শুরু করলে সেটি ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে থামানো হয়। ‘পরে দেখা যায় পাওয়ার কারের জেনারেটরের ধোঁয়া নির্গমন পাইপের ওপর একটি পুরনো চটের বস্তা পড়ে থাকায় এই ধোঁয়া বের হতে শুরু করে। পরে পানির বোতল দিয়ে আগুন নিভিয়ে ট্রেনটি গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রা করে।’ রেলের কর্মকর্তারা জানান, ট্রেনের পাওয়ার কারে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এক বা একাধিক জেনারেটর থাকে। এগুলো থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ দিয়ে ট্রেনের বাতি, ফ্যান, এসিসহ ইলেকট্রিক যন্ত্রগুলো চলে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
স্লিপার উপড়ে ফেলে আগুন জ্বালিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা
বুধবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৩
গাজীপুর, ঢাকার পর আবার রেলে নাশকতার চেষ্টা হলো দিনাজপুরের বিরামপুরে। সেখানকার রেলস্টেশনে আউটার লাইনের ওপরে কয়েকটি স্লিপার তুলে রেখেছিল দুর্বৃত্তরা। বিষয়টি রূপসা এক্সপ্রেসের চালক ও তার সহকারীর নজরে এলে তাৎক্ষণিকভাবে ট্রেনটি থামিয়ে ফেলেন তারা।
বাংলাদেশে রেলওয়ের চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার (পশ্চিম) সুজিত কুমার বিশ্বাস গণমাধ্যমকে বলেন, গত মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। তার আগে মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে ওই রেললাইনে আগুন দিয়েও নাশকতার চেষ্টা চালানো হয়। ওই সময় আনসার সদস্যরা পার্বতীপুর থেকে ছেড়ে আসা খুলনাগামী সীমান্ত এক্সপ্রেসকে দ্রুত থামিয়ে দিলে ট্রেনটি দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায়।
ওই স্টেশনের কাছেই রেলের পাত ভেঙে যাওয়ায় বুধবার (২০ ডিসেম্বর) ভোরে এক ঘণ্টার বেশি সময় আটকে থাকে পঞ্চগড় এক্সপ্রেস। বিএনপির ডাকা হরতালের মধ্যে মঙ্গলবার ভোরে ঢাকায় মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে অগ্নি নাশকতার পর ২৪ ঘণ্টা না যেতেই দিনাজপুরের বিরামপুরে এ ঘটনা ঘটলো।
পার্বতীপুর জিআরপি থানার ওসি নুরুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে বিরামপুরে রেললাইনে আগুন দেয়া হয়। ওই সময়ে এলাকায় পাহারায় থাকা আনসার সদস্যরা আগুন দেয়ার ঘটনা টের পেয়ে যান। ‘পার্বতীপুর থেকে ছেড়ে আসা খুলনাগামী সীমান্ত এক্সপ্রেসটিকে আনসার সদস্যরা থামিয়ে দিলে দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায় ট্রেনটি। আনসার সদস্যরাই দ্রুত আগুন নিভিয়ে ফেলেন। ফলে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি এবং ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়নি।’
বিরামপুর উপজেলার জোতবানী ইউনিয়নে আনসার ও ভিডিপির দলনেতা ইফতেখার রহমান (৪৬) গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মঙ্গলবার রাতে সহকর্মীকে নিয়ে ১ নম্বর সিগন্যাল পয়েন্ট থেকে দক্ষিণে হাঁটিছিলাম। তখন হঠাৎ করে রেললাইনের ওপর আগুন জ্বলতে দেখি। কাছে গিয়ে সেখানে রেললাইনের ওপর সিমেন্টের স্লিপারের সঙ্গে বাঁশ ও গাছের ডাল বেঁধে রাখা দেখতে পাই। সঙ্গে সঙ্গে গলা থেকে মাফলার খুলে ট্রেনের দিকে যেতে যেতে ওড়াতে থাকি। হাতে থাকা টর্চলাইট জ্বালিয়ে ট্রেনচালককে ট্রেন থামানোর সংকেত দিই। চালক ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ২০০ গজ দূরে ট্রেন থামান।’
রেললাইনে নাশকতার খবর পেয়ে মঙ্গলবার রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুজহাত তাসনীম, সহকারী পুলিশ সুপার (বিরামপুর সার্কেল) মঞ্জরুল ইসলাম ও থানার ওসি সুব্রত কুমার সরকার। পরে স্থানীয় আনসার সদস্য ও রেলওয়ে কর্মীদের সহযোগিতায় রেললাইনের ওপরে রাখা স্লিপার, বাঁশ, কাঠ ও কচুরিপানা সরিয়ে ফেলা হয়।
এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে বিরামপুর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হায়দার আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলেও জানান রেল পুলিশের এই কর্মকর্তা। এ ঘটনায় জিআরপি থানা পুলিশ বাদী হয়ে বিরামপুর থানায় ৮ জনের নামে মামলা করে। ওই মামলায় হায়দারকে প্রধান আসামি করা হয়।
গত ২৬ অক্টোবর থেকে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর হরতাল-অবরোধের মধ্যে রেলে পাঁচটি বড় ধরনের নাশকতার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় প্রাণ গেছে পাঁচজনের, রেলের কর্মীসহ আহত হয়েছে অনেকে। পুরোপুরি পুড়ে গেছে রেলের সাতটি কোচ, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরও আটটি কোচ এবং একটি ইঞ্জিন। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে রেললাইনে আগুন দেয়া, ফিশপ্লেট তুলে ফেলা, ককটেল বিস্ফোরণের বেশকিছু ঘটনার কথা জানিয়েছে রেলওয়ে।
এই পরিস্থিতিতে ট্রেনে নাশকতা ঠেকাতে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ২৭০০ আনসার সদস্য নিয়োজিত করা হবে বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন।
ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেসে ধোঁয়া, যাত্রীদের মধ্যে আগুন আতঙ্ক
বুধবার সন্ধ্যায় ঢাকার কমলাপুর থেকে জালামপুরের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস ট্রেনে এ ঘটনা ঘটে। ট্রেনটির পাওয়ার কার থেকে ধোঁয়া বের হতে শুরু করলে আতঙ্ক ছড়ায়। পরে ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে ট্রেনটি থামিয়ে আগুন নেভানোর পর আবার গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যায় বলে জানান ঢাকা রেলওয়ে থানার ওসি ফেরদৌস আহমেদ বিশ্বাস। তাদের ধারণা বিষয়টা নাশকতা নয়। দুর্ঘটনাজনিত কারণে ছোট্ট আগুন থেকে ধোঁয়া বের হয়েছে।
ওসি ফেরদৌস বলেন, সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে কমলাপুর থেকে ছেড়ে যাওয়ার পর ব্রহ্মপুত্র ট্রেনটির পাওয়ার কার থেকে ধোঁয়া বের হতে শুরু করলে সেটি ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে থামানো হয়। ‘পরে দেখা যায় পাওয়ার কারের জেনারেটরের ধোঁয়া নির্গমন পাইপের ওপর একটি পুরনো চটের বস্তা পড়ে থাকায় এই ধোঁয়া বের হতে শুরু করে। পরে পানির বোতল দিয়ে আগুন নিভিয়ে ট্রেনটি গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রা করে।’ রেলের কর্মকর্তারা জানান, ট্রেনের পাওয়ার কারে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এক বা একাধিক জেনারেটর থাকে। এগুলো থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ দিয়ে ট্রেনের বাতি, ফ্যান, এসিসহ ইলেকট্রিক যন্ত্রগুলো চলে।